বন্যা বাংলাদেশের নিত্য নৈমিত্তক প্রাকৃতিক দুর্যোগ সমুহের একটি। প্রতিবছর দেশের বিভিন্ন অঞ্চল প্লাবিত হয়ে নিঃশেষ করে দেয় তিল তিল করে গড়ে উঠা কৃষকের হাজারো স্বপ্ন।চোখের সামনে ভাসিয়ে নিয়ে যায় পৈতৃক ভিটে বাড়ি।
কয়েক মুহুর্তে নিঃস্ব করে দেয় স্বচ্ছল হাজারো পরিবারকে।দূর অতীতে এই ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা শুধু তিস্তা পাড়ের মানুষের মাঝে সীমাবদ্ধ থাকলেও বর্তমানে তা ছড়িয়ে পড়ছে বাংলার অন্যান্য অঞ্চলের মানুষের মাঝেও। কারণ কথীত বন্ধু প্রতিবেশীদেশ ভারত আমাদের নিরীহ মানুষের জন্য পানিকে ব্যবহার করছে অস্ত্র হিসেবে। তারা আন্তসীমান্তীয় বাংলায় আসা নদীগুলোর উপরে ইচ্ছেমতো বাঁধ দিয়ে সুষ্ক মৌসুমে আমাদের শুকিয়ে মারে আর বর্ষায় আমাদের ডুবিয়ে মারে। ২০২২ সালের সিলেট অঞ্চলের ভয়াবহ বন্যার ঘা শুকিয়ে উঠতে পারিনি আমরা; এর মধ্যে আবারো খুলে দিলো ত্রিপুরা রাজ্যের গজলড়োবা বাঁধ ও ড়ম্বুর জলবিদ্যুত বাঁধ। বানের পানি তলিয়ে দিলো বৃহত্তর নোয়াখালী অঞ্চল তথা ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষীপুর ও কুমিল্লা।
প্লাবিত হয়ে ধ্বংস হয়ে গেছে হাজার হাজার হেক্টর জমির রোপা আমন, ভাসিয়ে নিয়ে গেছে বসত বাড়ী, পকুরের মাছ, খামারের মুরগী ও লক্ষ লক্ষ গবাদী পশু। এক কথায় এসব এলাকার ৮০ শতাংশ মানুষের জীবন নির্বাহের একমাত্র মাধ্যম কৃষি খাত সম্পুর্ণ শেষ। এসব অঞ্চলের মানুষ গোলার চাউলে ভাত, গোয়ালের গাভীর দুধ, গৃহে পালন করা হাঁস মোরগ ও পুকুরের মাছ দিয়ে তাদের নিত্য দিনের আহারের চাহিদা মেটাতেন। কিন্তু চলমান বন্যায় তার কোনোটি আর অক্ষত রাখেনি। সব যেন আজ বিরান মরুময়। গৃহ কর্তা আজ নির্বাক ! চলচল চাহনিতে তাকিয়ে আছে আকাশের দিকে। পানি নামার সাথে সাথে আবারও জাপিয়ে পড়তে চান জীবন বাঁচানোর সংগ্রামে। ফিরে যেতে চাচ্ছে হারানো স্বপ্নময় সচ্চল পুরনো অবস্থায়। কিন্তু!এসবের জন্য যে পুঁজির প্রয়োজন তার কানা কড়িও তার হাতে নাই।
চারিদিক থেকে সবাই আসছেন;দিচ্ছেন শুধু দু একটা শুকনো খাবারের প্যাকেটে।যা ঘুরে দাড়ানোর জন্য মোটেই যথেষ্ট নয়।এসব মানুষের জন্য এখন প্রয়োজন টেকশই পুনর্বাসন। প্রথমত; প্রয়োজনীয় চিকৎসা এবং অন্তত একমাসের খাবারের বন্দোবস্ত। সাথে মাথা রাখার জন্য একটা ঘর,নতুন করে চাষাবাদের জন্য বীজ, সার, কীটনাশক ও প্রয়োজনীয় উপকরণ। গোয়ালের জন্য একটা গাভী ও কিছু নগদ অর্থ। এসব কিছু বাস্তবায়নের জন্য লাগবে প্রয়োজনীয় ফান্ড,সুষ্ঠু পরিকল্পনা, মাঠ পর্যায়ে ভুক্তভোগীদের যথাযথ তালিকা প্রণয়ন ও বিতরণ। যত দ্রুত এই টেকসই -দীর্ঘমেয়াদী পুনর্বাসন করা যাবে ততই দেশ ও জাতির মঙ্গল। কারণ এই মানুষগুলোকে বাদ দিয়ে দেশ চলতে পারেনা।
প্রান্তিক এই কৃষকরাই দেশের প্রধান চালিকা শক্তি। এরা ঘুরে দাড়াতে পারলে ঘুরে দাড়াবে আমাদের জিড়িপি সমৃদ্ধ হবে অর্থনীতি ঘুরে দাড়াবে আমাদের বাংলাদেশ। তাই অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রতি অনুরোধ থাকবে এই মানুষগুলোর জন্য এখনই স্থানীয় প্রশাসন ,জনপ্রতিনীধি ও এনজিও কর্মীদের সমন্বয়ে একটা পরিকল্পনা কমিটি গঠন করে দ্রুত সময়ে তা বাস্তবায়ন করুন। আশাকরি অন্তরবর্তীকালীন সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঠিক প্রদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে আমরা জরুরী অবস্থা কাটিয়ে ফিরে আসতে পারবো স্বাভাবিক জীবনে।আল্লাহ আমাদের মঙ্গল করুন।
লেখক: শাহাদাত গাজী
শিক্ষার্থী চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

























