০৪:৪৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৫ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

প্রশাসন ও রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তারে ব্যস্ত বিএনপি-জামায়াত

# দেশব্যাপী দলীয় কর্মসূচিতে তৎপর নেতাকর্মীরা
# অন্তর্বর্তী সরকারকেও দেওয়া হচ্ছে নানা চাপ ও পরামর্শ
# সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদে আস্থাভাজনদের নিয়োগ দিতে চলছে তৎপরতা

ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশের রাজনীতিতে নতুন মাত্রা ফিরে আসে। দীর্ঘদিন রাজনৈতিক অঙ্গনে কোণঠাসা দল বিএনপি এবং জামায়াতে ইসলামীসহ অন্যান্য বিরোধী দল যেন আকস্মিকভাবে প্রাণ ফিরে পায়। বিশেষ করে দেশের অন্যতম প্রধান দল বিএনপি ও জামায়াতের কর্মকাণ্ডে ব্যাপক গতি বেড়ে যায়। সারা দেশে নেতাকর্মীদের মাঝে সৃষ্টি হয় আনন্দ-উচ্ছ্বাস। বিগত দিনে নানাভাবে নির্যাতিতরাও সক্রিয় হয়ে ওঠেন দলীয় কার্যক্রমে। মূলত, শেখ হাসিনার সরকারের পতন ও তার দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার মধ্য দিয়ে দেশের রাজনীতিতে একদিকে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম পুরোপুরি থেমে যায়, অন্যদিকে সোচ্চার হয়ে ওঠে বিএনপি-জামায়াতসহ অন্যরা।

সূত্রমতে, শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তবর্তী সরকার বর্তমানে দেশ পরিচালনা করলেও তাতে অঘোষিতভাবে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা চালাচ্ছে বিএনপি ও জামায়াত। আগামী দিনে রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসার ব্যাপারে অনেকটাই নিশ্চিত মনে করে এখন থেকেই প্রশাসনের সর্বত্র তাদের অবস্থান জানান দেওয়ার চেষ্টা করছে। বর্তমান সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে আওয়ামী লীগের লোকদেরকে সরিয়ে সেখানে নিজেদের আস্থাভাজনদের বসাতে জোর তৎপরতা চালাচ্ছে বিএনপি-জামায়াত। এরই মধ্যে বেশিরভাগ অফিসে বিএনপি-জামায়াত সংশ্লিষ্টরা গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ, পদোন্নতি বা পদায়ন হয়েছেন। বাকিগুলোতেও একই ধরনের কার্যক্রম চলছে। অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের সঙ্গে এ বিষয়ে নানাভাবে যোগাযোগ রক্ষা করে চলছেন বলে জানা গেছে। বর্তমান সরকারও ফ্যাসিবাদিদের সরিয়ে প্রশাসনের সর্বত্র সংস্কার কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। আর এই সুযোগকে কাজে লাগাতে চায় বড় দল দুটি।
এদিকে প্রশাসনের পাশাপাশি দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনেও প্রভাব বিস্তারের জন্য অঘোষিত প্রতিযোগিতা চালাচ্ছে বিএনপি ও জামায়াত। এরই অংশ হিসেবে কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা নানা সাংগঠনিক কাজে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। একের পর এক দেওয়া হচ্ছে দলীয় কর্মসূচি। তাতে কেন্দ্রীয় নেতারা বক্তব্য ও নির্দেশনা দিচ্ছেন। আগামী দিনের ভোটের মাঠে প্রভাব বিস্তারের অংশ হিসেবেই এসব তৎপরতা চলছে বলে সংশ্লিষ্টরা আভাস দিয়েছেন।
সূত্রমতে, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার প্রশাসনে সংস্কার কাজ শেষে একটি জাতীয় নির্বাচন দেওয়ার ব্যাপারে আভাস দিয়েছে। তাই আগামী নির্বাচনকে টার্গেট করেই মূলত রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে দলগুলো। আগামীতে আওয়ামী লীগের নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে অনিশ্চয়তার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে সারা দেশে নেতাকর্মীদের সংগঠিত করছে একসময়ের জোটসঙ্গী বিএনপি ও জামায়াত। বর্তমান সরকারের সংস্কার কাজে যৌক্তিক সময় দেওয়ার ব্যাপারেও ঘোষণা দিয়েছেন দল দুটির নেতারা। তবে এই সংস্কার কাজ দ্রুত, তাদের সব কর্মকাণ্ডের একটা রোডম্যাপ ঘোষণা এবং সংস্কার কাজে রাজনৈতিক দলগুলোর পরামর্শ নেয়ারও দাবি জানাচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা।

এ বিষয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী গতকাল শনিবার বলেছেন, প্রশাসনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে আওয়ামী লীগ সরকারের দোসরদের রেখে রাষ্ট্র সংস্কার সম্ভব নয়। তিনি বলেন, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার শাসনামলের শেষের ৩৬ দিন অর্থাৎ গত ‘জুলাই-আগস্ট’র আন্দোলনে ফ্যাসিস্ট সরকার সারা দেশে প্রায় দুই হাজার মানুষের জীবন কেড়ে নিয়েছে। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের দোসররা এখনো প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদে রয়েছে। যারা হাসিনাকে রক্ষা করতে গিয়ে সাধারণ মানুষের ওপর গুলি চালিয়েছে, তারাই এখনো ক্ষমতায় রয়ে গেছেন। স্বৈরাচারের দোসরদের সরকারের বিভিন্ন পদ থেকে অপসারণের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, হত্যাকারীদের বিচার ছাড়া রাষ্ট্রের কোনো সংস্কার সম্ভব নয়। তবে, রাষ্ট্রের সংস্কার সংক্রান্ত যেকোনো কাজ করার আগে আওয়ামী লীগের দোসররা-যারা এখনো প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদে রয়েছেন, তাদেরকে অপসারণ করতে হবে। একই সঙ্গে যাদের হাতে সাধারণ মানুষের রক্ত তাদের বিচার আগে করতে হবে। তা না হলে শহীদের আত্মা শান্তি পাবে না।

অন্যদিকে আবেগের বশে অন্তর্বর্তী সরকার যেন জাতির প্রত্যাশার বাইরে কাজ না করে, জাতির চেতনাকে তারা যেন ধারণ করে- সেই আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। গতকাল তিনি বলেন, সরকার যেন চব্বিশের বিপ্লবের চেতনাকে তারা যেন সম্মান করে। আমরা তাদের কাছে সেটুকুই আশা করি। তবে আবেগবশত দু-একটা কাজ হয়ে যাচ্ছে। এটা হওয়া উচিত নয়, কী হয়ে যাচ্ছে তা ভেঙে বলতে চাচ্ছি না।

 

 

জনপ্রিয় সংবাদ

নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে সামান্তা শারমিনের নতুন বার্তা

প্রশাসন ও রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তারে ব্যস্ত বিএনপি-জামায়াত

আপডেট সময় : ০৭:৫৩:১৭ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪

# দেশব্যাপী দলীয় কর্মসূচিতে তৎপর নেতাকর্মীরা
# অন্তর্বর্তী সরকারকেও দেওয়া হচ্ছে নানা চাপ ও পরামর্শ
# সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদে আস্থাভাজনদের নিয়োগ দিতে চলছে তৎপরতা

ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশের রাজনীতিতে নতুন মাত্রা ফিরে আসে। দীর্ঘদিন রাজনৈতিক অঙ্গনে কোণঠাসা দল বিএনপি এবং জামায়াতে ইসলামীসহ অন্যান্য বিরোধী দল যেন আকস্মিকভাবে প্রাণ ফিরে পায়। বিশেষ করে দেশের অন্যতম প্রধান দল বিএনপি ও জামায়াতের কর্মকাণ্ডে ব্যাপক গতি বেড়ে যায়। সারা দেশে নেতাকর্মীদের মাঝে সৃষ্টি হয় আনন্দ-উচ্ছ্বাস। বিগত দিনে নানাভাবে নির্যাতিতরাও সক্রিয় হয়ে ওঠেন দলীয় কার্যক্রমে। মূলত, শেখ হাসিনার সরকারের পতন ও তার দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার মধ্য দিয়ে দেশের রাজনীতিতে একদিকে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম পুরোপুরি থেমে যায়, অন্যদিকে সোচ্চার হয়ে ওঠে বিএনপি-জামায়াতসহ অন্যরা।

সূত্রমতে, শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তবর্তী সরকার বর্তমানে দেশ পরিচালনা করলেও তাতে অঘোষিতভাবে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা চালাচ্ছে বিএনপি ও জামায়াত। আগামী দিনে রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসার ব্যাপারে অনেকটাই নিশ্চিত মনে করে এখন থেকেই প্রশাসনের সর্বত্র তাদের অবস্থান জানান দেওয়ার চেষ্টা করছে। বর্তমান সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে আওয়ামী লীগের লোকদেরকে সরিয়ে সেখানে নিজেদের আস্থাভাজনদের বসাতে জোর তৎপরতা চালাচ্ছে বিএনপি-জামায়াত। এরই মধ্যে বেশিরভাগ অফিসে বিএনপি-জামায়াত সংশ্লিষ্টরা গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ, পদোন্নতি বা পদায়ন হয়েছেন। বাকিগুলোতেও একই ধরনের কার্যক্রম চলছে। অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের সঙ্গে এ বিষয়ে নানাভাবে যোগাযোগ রক্ষা করে চলছেন বলে জানা গেছে। বর্তমান সরকারও ফ্যাসিবাদিদের সরিয়ে প্রশাসনের সর্বত্র সংস্কার কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। আর এই সুযোগকে কাজে লাগাতে চায় বড় দল দুটি।
এদিকে প্রশাসনের পাশাপাশি দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনেও প্রভাব বিস্তারের জন্য অঘোষিত প্রতিযোগিতা চালাচ্ছে বিএনপি ও জামায়াত। এরই অংশ হিসেবে কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা নানা সাংগঠনিক কাজে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। একের পর এক দেওয়া হচ্ছে দলীয় কর্মসূচি। তাতে কেন্দ্রীয় নেতারা বক্তব্য ও নির্দেশনা দিচ্ছেন। আগামী দিনের ভোটের মাঠে প্রভাব বিস্তারের অংশ হিসেবেই এসব তৎপরতা চলছে বলে সংশ্লিষ্টরা আভাস দিয়েছেন।
সূত্রমতে, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার প্রশাসনে সংস্কার কাজ শেষে একটি জাতীয় নির্বাচন দেওয়ার ব্যাপারে আভাস দিয়েছে। তাই আগামী নির্বাচনকে টার্গেট করেই মূলত রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে দলগুলো। আগামীতে আওয়ামী লীগের নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে অনিশ্চয়তার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে সারা দেশে নেতাকর্মীদের সংগঠিত করছে একসময়ের জোটসঙ্গী বিএনপি ও জামায়াত। বর্তমান সরকারের সংস্কার কাজে যৌক্তিক সময় দেওয়ার ব্যাপারেও ঘোষণা দিয়েছেন দল দুটির নেতারা। তবে এই সংস্কার কাজ দ্রুত, তাদের সব কর্মকাণ্ডের একটা রোডম্যাপ ঘোষণা এবং সংস্কার কাজে রাজনৈতিক দলগুলোর পরামর্শ নেয়ারও দাবি জানাচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা।

এ বিষয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী গতকাল শনিবার বলেছেন, প্রশাসনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে আওয়ামী লীগ সরকারের দোসরদের রেখে রাষ্ট্র সংস্কার সম্ভব নয়। তিনি বলেন, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার শাসনামলের শেষের ৩৬ দিন অর্থাৎ গত ‘জুলাই-আগস্ট’র আন্দোলনে ফ্যাসিস্ট সরকার সারা দেশে প্রায় দুই হাজার মানুষের জীবন কেড়ে নিয়েছে। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের দোসররা এখনো প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদে রয়েছে। যারা হাসিনাকে রক্ষা করতে গিয়ে সাধারণ মানুষের ওপর গুলি চালিয়েছে, তারাই এখনো ক্ষমতায় রয়ে গেছেন। স্বৈরাচারের দোসরদের সরকারের বিভিন্ন পদ থেকে অপসারণের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, হত্যাকারীদের বিচার ছাড়া রাষ্ট্রের কোনো সংস্কার সম্ভব নয়। তবে, রাষ্ট্রের সংস্কার সংক্রান্ত যেকোনো কাজ করার আগে আওয়ামী লীগের দোসররা-যারা এখনো প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদে রয়েছেন, তাদেরকে অপসারণ করতে হবে। একই সঙ্গে যাদের হাতে সাধারণ মানুষের রক্ত তাদের বিচার আগে করতে হবে। তা না হলে শহীদের আত্মা শান্তি পাবে না।

অন্যদিকে আবেগের বশে অন্তর্বর্তী সরকার যেন জাতির প্রত্যাশার বাইরে কাজ না করে, জাতির চেতনাকে তারা যেন ধারণ করে- সেই আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। গতকাল তিনি বলেন, সরকার যেন চব্বিশের বিপ্লবের চেতনাকে তারা যেন সম্মান করে। আমরা তাদের কাছে সেটুকুই আশা করি। তবে আবেগবশত দু-একটা কাজ হয়ে যাচ্ছে। এটা হওয়া উচিত নয়, কী হয়ে যাচ্ছে তা ভেঙে বলতে চাচ্ছি না।