◉এখনো সিদ্ধান্ত জানায়নি বিএনপি
◉পদত্যাগ চাইলেও নমনীয় অধিকাংশ দল
◉সাংবিধানিক সংকট সৃষ্টির শঙ্কায় অনেকে
◉বিভিন্ন দলের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের বৈঠক
◉হটকারি সিদ্ধান্ত না নেয়ার আহবান ফখরুলের
◉রাজনৈতিক ঐক্যমত সৃষ্টির সিদ্ধান্ত সরকারের
◉সাংবিধানিক সংকট তৈরি করার পাঁয়তারা চলছে: সালাহউদ্দিন
বেশ কয়েকদিন ধরেই রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচিত হচ্ছে- রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের পদত্যাগ বা অপসারণ প্রসঙ্গ। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ বিভিন্ন মহল থেকে রাষ্ট্রপতির পদত্যাগে আলটিমেটামসহ নানা তৎপরতা চালানো হচ্ছে। তবে এ বিষয়ে এখনো মিশ্র অবস্থান দেখা দিয়েছে রাজনৈতিক দলসহ সংশ্লিষ্ট মহলে। বিশেষ করে রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ বিষয়ে এখনো আনুষ্ঠানিক কোন সিদ্ধান্ত না জানালেও সাংবিধানিক সংকট সৃষ্টির শঙ্কায় দলটি এই মুহূর্তে রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের পক্ষে নয় বলে আভাস দেয়া হয়েছে। এছাড়া জামায়াতসহ অন্যান্য দল রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ চাইলেও এ নিয়ে অনেকটা নমনীয় অবস্থানের রয়েছে তারা। অনেকে আবার বিএনপির মত সাংবিধানিক সংকটের শঙ্কার কথাও জানাচ্ছেন।
এরইমধ্যে গতকাল রাষ্ট্রপতির পদ থেকে মো. সাহাবুদ্দিনকে অপসারণ ইস্যুতে অন্তর্বর্তী সরকারকে হঠকারী কোনো সিদ্ধান্ত না নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এছাড়া দেশে অনেক রকমের সাংবিধানিক সংকট তৈরি করার পাঁয়তারা চলছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমদ। অন্যদিকে রাষ্ট্রপতির অপসারণ বিষয়ে রাজনৈতিক ঐকমত্য সৃষ্টি করা হবে বলে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
তবে রাজনৈতিক দল ও সরকারের এমন অবস্থানের মধ্যেও দ্রুত রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের উদ্যোগ নিতে তৎপরতা চালাচ্ছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। গতকালও তারা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।
রাষ্ট্রপতির অপসারণ বিষয়ে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, “সরকারের অবস্থান হলো এ বিষয়ে রাজনৈতিক ঐকমত্য সৃষ্টি করা হবে। রাজনৈতিক ঐকমত্যের ভিত্তিতেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে রাষ্ট্রপতি থাকবেন, নাকি থাকবেন না। ঐকমত্যের ভিত্তিতে এ বিষয়ে যখন সিদ্ধান্ত হবে, তখন প্রক্রিয়াও গঠন করা হবে।” তিনি আরও বলেন, “রাষ্ট্রপতির বিষয়েও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তাড়াহুড়া করা হবে না, আবার দীর্ঘদিন ঝুলেও থাকবে না। রাজনৈতিক দলের মধ্যে দ্রুত ঐকমত্য তৈরির চেষ্টা চলছে, তারপরই সব বুঝে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।” রিজওয়ানা হাসান বলেন, “এই রাষ্ট্রপতির কাছে শপথ নেওয়ায় কোনো সমস্যা হয়নি। তখন তা–ই প্রয়োজন ছিল। আর কেউ আলোচনারও সুযোগ পাননি যে কার কাছে শপথ নেওয়া হবে। বিএনপি নেতাদের নিজেদের মধ্যেসহ রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এ বিষয়ে ঐকমত্য তৈরির চেষ্টা হচ্ছে।”
রাষ্ট্রপতি অপসারণে হঠকারী সিদ্ধান্ত না নেওয়ার আহ্বান ফখরুলের: রাষ্ট্রপতির পদ থেকে মো. সাহাবুদ্দিনকে অপসারণ ইস্যুতে অন্তর্বর্তী সরকারকে হঠকারী কোনো সিদ্ধান্ত না নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, ‘গণ-অভ্যুত্থানের ফসলকে ঘরে তোলার জন্য বাংলাদেশের বিপ্লবকে যদি সংহত করতে হয়, তাহলে হঠকারী সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে না।’ গতকাল রোববার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের চন্দ্রিমা উদ্যানে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা, প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে মির্জা ফখরুল এ আহ্বান জানান।
গত শনিবার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির নেতারা রাষ্ট্রপতিকে অপসারণে তাদের দাবি নিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে বৈঠক করেন। সেই বৈঠকে আলোচিত রাষ্ট্রপতির অপসারণের বিষয়ে বিএনপির অবস্থান জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বিএনপির যে সর্বোচ্চ ফোরাম রয়েছে, সেই ফোরামে আলোচনা হবে। আলোচনা শেষে আমাদের অবস্থান পরিষ্কার করব।’
সাংবিধানিক সংকট তৈরির পাঁয়তারা চলছে-সালাহ উদ্দিন: দেশে অনেক রকমের সাংবিধানিক সংকট তৈরি করার পাঁয়তারা চলছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমদ। সাংবিধানিক সংকট সামনে রেখে পতিত ফ্যাসিবাদের দোসররা যাতে কোনো সুযোগ না নিতে পারে, সেই বিষয়ে সবাইকে সজাগ থাকতেও বলেছেন তিনি।
গতকাল রোববার দুপুরে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলনে কেন্দ্রে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন সালাহ উদ্দিন আহমদ। সালাহ উদ্দিন আহমদ বলেন, ‘আজ অনেক রকমের সাংবিধানিক সংকট তৈরি করার পাঁয়তারা চলছে। সাংবিধানিক সংকট যদি হয়, রাষ্ট্রীয় সংকট যদি হয়, রাজনৈতিক সংকট যদি হয়, সেই রাজনৈতিক সংকটের পেছনে কী শক্তি আছে, সেটা আগে আমাদের বিশ্লেষণ করতে হবে। তার ফলাফল কী হবে, তা বিশ্লেষণ করতে হবে।’
জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) সাথে শিক্ষার্থীদের বৈঠক: জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি ও রাষ্ট্রপতির পদত্যাগসহ রাজনৈতিক বন্দোবস্তের জন্য আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি।গতকাল রোববার জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর)-এর সাথে বৈঠকে বসেছে সংগঠন দু’টির নেতাকর্মীরা। এরআগে, শনিবার (২৬ অক্টোবর) সন্ধ্যায় বিএনপির সিনিয়র নেতাদের সাথে বৈঠক করেছেন সংগঠন দু’টির প্রতিনিধিরা।
বৈঠক শেষে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ গণমাধ্যমকে জানান, বিএনপির সাথে তিনটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি। প্রথমত. প্রক্লেমেশন অব সেকেন্ড রিপাবলিক কীভাবে করা যায়, সেটি নিয়ে কথা বলেছি। দ্বিতীয়ত, চুপ্পুর অপসারণ দ্রুততম সময়ে কীভাবে করা যায়, রাজনৈতিক চেতনা কীভাবে তৈরি করা যায়, যেকোনো ধরনের সংকট কীভাবে পরিহার করা যায়, সেটা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তৃতীয়ত, জাতীয় ঐক্য কীভাবে ধরে রেখে সরকারের সার্বিক ফাংশনিংয়ের ধারবাহিকতা অব্যাহত রাখা যায়, সেই বিষয়ে কথা বলেছি।
তিনি আরো বলেন, গত দুদিন আমরা বিএনপির পাশাপাশি জামায়াতে ইসলাম এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সাথে বৈঠক করেছি। তাদের সাথেও এসব বিষয়ে কথা বলেছি। তাদের জায়গা থেকে তারা একমত পোষণ করেছেন। ইতোমধ্যে গত ৫ আগস্ট যে জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠা হয়েছে, সেটার ধারাবাহিকতা কীভাবে ধরে রাখা যায়, এর জন্য আমাদের এসব বৈঠক অব্যাহত থাকবে।


























