১১:৪৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৬ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

নতুন প্রধানমন্ত্রী দায়িত্ব নেওয়া পর্যন্ত হবে অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ

◉ আইনি কাঠামো দিতে অধ্যাদেশের খসড়ায় চূড়ান্ত অনুমোদন
◉ বৈধতা নিয়ে আদালতে কোনো প্রশ্ন তোলা যাবে না
◉ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মতোই থাকছে প্রধান উপদেষ্টা ও উপদেষ্টাদের পদমর্যাদা
# ২৫ বছরের কম বয়সি কেউ প্রধান উপদেষ্টা ও উপদেষ্টা পদে নিয়োগ পাবেন না

অবশেষে আইনি কাঠামোতে আনা হচ্ছে অধ্যাপক ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার। ইতিমধ্যে ‘অন্তর্র্বতী সরকার অধ্যাদেশ, ২০২৪’-এর খসড়ায় চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ। অধ্যাদেশটি জারি হলে আদালতে বৈধতার প্রশ্ন তুলে বর্তমান অন্তর্র্বতী সরকারকে অবৈধ বা বাতিল করা যাবে না। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন প্রধানমন্ত্রী দায়িত্ব নেওয়ার দিন পর্যন্ত হবে এ সরকারের মেয়াদ। বিলুপ্ত হওয়া তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মতোই থাকছে প্রধান উপদেষ্টা ও উপদেষ্টাদের পদমর্যাদা।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গত ১৯ সেপ্টেম্বর অন্তর্র্বতী সরকার অধ্যাদেশ, ২০২৪-এর চূড়ান্ত অনুমোদন দেয় উপদেষ্টা পরিষদ। তবে কত দিনের মধ্যে জারি হতে পারে, তা নিশ্চিত হওয়া জায়নি।

অন্তর্র্বতী সরকারের কাজ কী হবে সেটিও উল্লেখ আছে খসড়া অধ্যাদেশে। এতে বলা হয়েছে, অন্তর্র্বতী সরকার একটি অস্থায়ী বা সাময়িক সরকার হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে। সরকারি কর্মচারীদের সহায়তায় সরকার কাজ করবে। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক সংসদ সদস্যদের নির্বাচন অনুষ্ঠানে এবং সংবিধান বা অন্য কোনো আইন দিয়ে নির্ধারিত দায়িত্ব পালনের জন্য নির্বাচন কমিশনকে সাহায্য ও সহায়তা দেবে।
এই খসড়া আইন মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ বিভাগে পাঠানো হবে বলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে। এরপর পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে এটি চূড়ান্ত করা হবে। তারপর রাষ্ট্রপতির মাধ্যমে জারি করার ব্যবস্থা হবে।

গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। এরপর ৮ আগস্ট অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্র্বতী সরকার গঠন হয়।
সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিলুপ্ত হওয়ায় বর্তমানে সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক বা অন্তর্র্বতী সরকারব্যবস্থা এবং প্রধান উপদেষ্টা বা উপদেষ্টার পদ বলে কিছু নেই। এ কারণে অন্তর্র্বতী সরকারের আইনি ভিত্তি নিয়ে যাতে প্রশ্ন না ওঠে, সে জন্য অধ্যাদেশ জারি করা হবে। গত ১৯ সেপ্টেম্বর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ।
খসড়ায় বলা হয়, অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানে এবং সংবিধান বা অন্য কোনো আইন দিয়ে নির্ধারিত দায়িত্ব পালনের জন্য নির্বাচন কমিশনকে সাহায্য ও সহায়তা দেবে অন্তর্র্বতী সরকার। বিলুপ্ত হওয়া তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মতোই থাকছে প্রধান উপদেষ্টা ও উপদেষ্টাদের পদমর্যাদা। উপদেষ্টা পরিষদে নিয়োগ পাবেন না ২৫ বছরের কম বয়সীরা। সরকারি কর্মচারীদের সহায়তায় অন্তর্র্বতী সরকার কাজ করবে। অধ্যাদেশ কত দিনের মধ্যে জারি হতে পারে, তা নিশ্চিত করে জানা যায়নি।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একজন অতিরিক্ত সচিব নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে অধ্যাদেশের খসড়া অনুমোদন দেওয়ার পর আমরা বিভিন্ন বিষয় পরীক্ষা করেছি। সরকারের পক্ষ থেকে আর কোনো নির্দেশনা না আসায় খসড়া চূড়ান্ত করা হয়।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আইন মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, অধ্যাদেশের খসড়া প্রস্তুত করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। এই খসড়া আইন মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ বিভাগে পাঠানো হবে। পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে এটি চূড়ান্ত করা হবে। তারপর রাষ্ট্রপতির মাধ্যমে জারি করার ব্যবস্থা হবে।
এদিকে অন্তর্র্বতী সরকার এমন অধ্যাদেশ জারি করলে এটি নিয়ে আইনগত নানা প্রশ্ন উঠতে পারে বলে মনে করছেন আইন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, হঠাৎ করে এমন অধ্যাদেশের প্রয়োজন হলো কেন?

এতে বিলুপ্ত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা, উপদেষ্টাদের মতোই অন্তর্র্বতী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা এবং উপদেষ্টাদের পদমর্যাদা, সুযোগ-সুবিধা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থায় উপদেষ্টাদের সর্বোচ্চ সংখ্যা নির্ধারণ করে দেওয়া থাকলেও এখন উপদেষ্টাদের সর্বোচ্চ সংখ্যা বেঁধে দেওয়া হচ্ছে না। খসড়ায় অন্তর্র্বতী সরকারের মেয়াদ-সংক্রান্ত ধারায় বলা হয়েছে, যে তারিখে প্রধান উপদেষ্টা অন্তর্র্বতী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন, সেই তারিখ থেকে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন প্রধানমন্ত্রী কার্যভার গ্রহণ করার তারিখ পর্যন্ত অন্তর্র্বতী সরকার বহাল থাকবে। এর আগে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার মেয়াদ ছিল ৯০ দিন। অন্তর্র্বতী সরকারের কাজ কী হবে, তা-ও ঠিক করে দেওয়া হচ্ছে অধ্যাদেশে।
এ-সংক্রান্ত ধারায় বলা হয়েছে, অন্তর্র্বতী সরকার একটি অস্থায়ী বা সাময়িক সরকার হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে। সরকারি কর্মচারীদের সহায়তায় সরকার কাজ করবে। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানে এবং সংবিধান বা অন্য কোনো আইন দিয়ে নির্ধারিত দায়িত্ব পালনের জন্য নির্বাচন কমিশনকে সাহায্য ও সহায়তা দেবে। ‘অন্তর্র্বতীকালীন সরকার কর্তৃক প্রণীত অধ্যাদেশ ও কার্যক্রমের বৈধতা’ ধারায় বলা হয়েছে, ‘সংবিধান এবং আপাতত বলবৎ অন্য কোনো আইনে ভিন্নতর যাহা কিছুই থাকুক না কেন, অন্তর্র্বতীকালীন সরকার গঠিত হওয়া এবং নতুন সংসদ গঠিত হইবার পর প্রধানমন্ত্রী যে তারিখে তাঁহার পদের কার্যভার গ্রহণ করিবেন, সেই তারিখের (উভয় দিনসহ) মধ্যবর্তী সময়ে অন্তর্র্বতীকালীন সরকার কর্তৃক প্রয়োগকৃত সকল ক্ষমতা, প্রণীত সকল অধ্যাদেশ, বিধিমালা, প্রবিধানমালা, জারীকৃত প্রজ্ঞাপন, প্রদত্ত আদেশ, কৃতকার্য, গৃহীত ব্যবস্থা আইন অনুযায়ী যথাযথভাবে প্রয়োগকৃত, প্রণীত, জারীকৃত, প্রদত্ত, কৃত এবং গৃহীত হইয়াছে বলিয়া গণ্য হইবে এবং বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টসহ অন্য কোনো আদালত বা কর্তৃপক্ষ ইহাদের বৈধতা সম্পর্কে কোনোভাবেই কোনো প্রশ্ন উত্থাপন কিংবা ইহাদেরকে অবৈধ বা বাতিল করিতে পারিবে না।’

এতে আরও বলা হয়, অন্তর্র্বতীকালীন সরকার গঠন, প্রধান উপদেষ্টা বা উপদেষ্টাদের নিয়োগ নিয়ে ত্রুটি থাকলে সে জন্য কোনো কাজ অবৈধ হবে না। এ জন্য কোনো আদালতে প্রশ্ন উত্থাপন বা মামলা দায়েরও করা যাবে না। অধ্যাদেশের খসড়ায় প্রেসিডেন্টের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা প্রসঙ্গে বলা হয়, বিদ্যমান অন্যান্য আইনে যা কিছুই বলা থাকুক না কেন, অন্তর্র্বতী সরকারের সময় প্রধান উপদেষ্টার পরামর্শ নিয়ে রাষ্ট্রপতিকে কাজ করতে হবে। জরুরি অবস্থা ঘোষণার বৈধতার জন্য প্রধান উপদেষ্টার পরামর্শ নিতে হবে।
উপদেষ্টাদের যোগ্যতা ও সুযোগ-সুবিধা: সংবিধান অনুযায়ী, কারও বয়স ২৫ বছর পূর্ণ না হলে তিনি সংসদ সদস্য হতে পারেন না। সংসদ সদস্যদের মধ্য থেকে মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রী নিয়োগ দেওয়া হয়। অধ্যাদেশের খসড়ায় বলা হয়, অন্তর্র্বতী সরকারে ২৫ বছরের কম বয়সী কেউ প্রধান উপদেষ্টা ও উপদেষ্টা পদে নিয়োগ পাবেন না। কোনো আদালত অপ্রকৃতিস্থ বলে ঘোষণা করলে, দেউলিয়া ঘোষিত হওয়ার পর দায় থেকে অব্যাহতি না পেলে, কোনো বিদেশি রাষ্ট্রের নাগরিকত্ব অর্জন করেন কিংবা কোনো বিদেশি রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য ঘোষণা বা স্বীকার করলে এসব পদে নিয়োগ পাওয়া যাবে না।

এ ছাড়া নৈতিক স্খলনজনিত কোনো ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়ে অন্যূন দুই বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হলে এবং মুক্তি পাওয়ার পর পাঁচ বছর পার না হলেও এসব পদে নিয়োগ পাওয়া যাবে না। এ ছাড়া ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের জনপ্রতিনিধি নির্বাচনে প্রার্থী হবেন না। এ বিষয়ে সম্মত না হলেও প্রধান উপদেষ্টা বা উপদেষ্টা পদে নিয়োগ পাওয়া যাবে না। রাষ্ট্রপতির কাছে লেখা ও স্বাক্ষরযুক্ত পত্রের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা ও উপদেষ্টারা পদত্যাগ করতে পারবেন। পদত্যাগ, মৃত্যু বা অন্য কোনো কারণে প্রধান উপদেষ্টার পদ শূন্য হলে উপদেষ্টাদের মধ্য থেকে একজনকে প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে রাষ্ট্রপতি নিয়োগ দিতে পারবেন। প্রধান উপদেষ্টা প্রধানমন্ত্রীর এবং উপদেষ্টারা মন্ত্রীর পদমর্যাদা, পারিশ্রমিক ও সুযোগ-সুবিধা পাবেন।

অধ্যাদেশ নিয়ে প্রশ্ন: অধ্যাদেশ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না বলেন, ‘এটা যেন নিজের চরিত্র নিয়ে নিজেই সার্টিফিকেট দেওয়ার মতো অবস্থা। আমি কতদিন ক্ষমতায় থাকব, সেটি নিয়ে অধ্যাদেশ জারি করা হলে প্রশ্ন তো উঠতেই পারে।’ এ সরকারের অবস্থা সামরিক জান্তার মতো হয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
এ প্রসঙ্গে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, অন্তর্র্বতী সরকার কী করতে চায়, আমরা বুঝি না। যে পর্যন্ত সংবিধান বলবৎ থাকবে, ততক্ষণ এর বাইরে কারও কিছু করার এখতিয়ার নেই। তিনি বলেন, সুপ্রিম কোর্টের অনুমোদনের পরেই এ সরকার গঠন হয়েছে। তাই জনগণের মতামত ছাড়া এ সরকার কিছুই করতে পারবে না। করলে সেটি হবে অবৈধ।

জনপ্রিয় সংবাদ

সোনারগাঁয়ে অবৈধ গ্যাস ব্যবহার করায় গুড়িয়ে দেয়া হয় দু’টি প্রতিষ্ঠান, একটি প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা

নতুন প্রধানমন্ত্রী দায়িত্ব নেওয়া পর্যন্ত হবে অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ

আপডেট সময় : ০৯:০০:০৭ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৮ নভেম্বর ২০২৪

◉ আইনি কাঠামো দিতে অধ্যাদেশের খসড়ায় চূড়ান্ত অনুমোদন
◉ বৈধতা নিয়ে আদালতে কোনো প্রশ্ন তোলা যাবে না
◉ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মতোই থাকছে প্রধান উপদেষ্টা ও উপদেষ্টাদের পদমর্যাদা
# ২৫ বছরের কম বয়সি কেউ প্রধান উপদেষ্টা ও উপদেষ্টা পদে নিয়োগ পাবেন না

অবশেষে আইনি কাঠামোতে আনা হচ্ছে অধ্যাপক ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার। ইতিমধ্যে ‘অন্তর্র্বতী সরকার অধ্যাদেশ, ২০২৪’-এর খসড়ায় চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ। অধ্যাদেশটি জারি হলে আদালতে বৈধতার প্রশ্ন তুলে বর্তমান অন্তর্র্বতী সরকারকে অবৈধ বা বাতিল করা যাবে না। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন প্রধানমন্ত্রী দায়িত্ব নেওয়ার দিন পর্যন্ত হবে এ সরকারের মেয়াদ। বিলুপ্ত হওয়া তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মতোই থাকছে প্রধান উপদেষ্টা ও উপদেষ্টাদের পদমর্যাদা।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গত ১৯ সেপ্টেম্বর অন্তর্র্বতী সরকার অধ্যাদেশ, ২০২৪-এর চূড়ান্ত অনুমোদন দেয় উপদেষ্টা পরিষদ। তবে কত দিনের মধ্যে জারি হতে পারে, তা নিশ্চিত হওয়া জায়নি।

অন্তর্র্বতী সরকারের কাজ কী হবে সেটিও উল্লেখ আছে খসড়া অধ্যাদেশে। এতে বলা হয়েছে, অন্তর্র্বতী সরকার একটি অস্থায়ী বা সাময়িক সরকার হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে। সরকারি কর্মচারীদের সহায়তায় সরকার কাজ করবে। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক সংসদ সদস্যদের নির্বাচন অনুষ্ঠানে এবং সংবিধান বা অন্য কোনো আইন দিয়ে নির্ধারিত দায়িত্ব পালনের জন্য নির্বাচন কমিশনকে সাহায্য ও সহায়তা দেবে।
এই খসড়া আইন মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ বিভাগে পাঠানো হবে বলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে। এরপর পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে এটি চূড়ান্ত করা হবে। তারপর রাষ্ট্রপতির মাধ্যমে জারি করার ব্যবস্থা হবে।

গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। এরপর ৮ আগস্ট অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্র্বতী সরকার গঠন হয়।
সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিলুপ্ত হওয়ায় বর্তমানে সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক বা অন্তর্র্বতী সরকারব্যবস্থা এবং প্রধান উপদেষ্টা বা উপদেষ্টার পদ বলে কিছু নেই। এ কারণে অন্তর্র্বতী সরকারের আইনি ভিত্তি নিয়ে যাতে প্রশ্ন না ওঠে, সে জন্য অধ্যাদেশ জারি করা হবে। গত ১৯ সেপ্টেম্বর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ।
খসড়ায় বলা হয়, অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানে এবং সংবিধান বা অন্য কোনো আইন দিয়ে নির্ধারিত দায়িত্ব পালনের জন্য নির্বাচন কমিশনকে সাহায্য ও সহায়তা দেবে অন্তর্র্বতী সরকার। বিলুপ্ত হওয়া তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মতোই থাকছে প্রধান উপদেষ্টা ও উপদেষ্টাদের পদমর্যাদা। উপদেষ্টা পরিষদে নিয়োগ পাবেন না ২৫ বছরের কম বয়সীরা। সরকারি কর্মচারীদের সহায়তায় অন্তর্র্বতী সরকার কাজ করবে। অধ্যাদেশ কত দিনের মধ্যে জারি হতে পারে, তা নিশ্চিত করে জানা যায়নি।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একজন অতিরিক্ত সচিব নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে অধ্যাদেশের খসড়া অনুমোদন দেওয়ার পর আমরা বিভিন্ন বিষয় পরীক্ষা করেছি। সরকারের পক্ষ থেকে আর কোনো নির্দেশনা না আসায় খসড়া চূড়ান্ত করা হয়।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আইন মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, অধ্যাদেশের খসড়া প্রস্তুত করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। এই খসড়া আইন মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ বিভাগে পাঠানো হবে। পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে এটি চূড়ান্ত করা হবে। তারপর রাষ্ট্রপতির মাধ্যমে জারি করার ব্যবস্থা হবে।
এদিকে অন্তর্র্বতী সরকার এমন অধ্যাদেশ জারি করলে এটি নিয়ে আইনগত নানা প্রশ্ন উঠতে পারে বলে মনে করছেন আইন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, হঠাৎ করে এমন অধ্যাদেশের প্রয়োজন হলো কেন?

এতে বিলুপ্ত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা, উপদেষ্টাদের মতোই অন্তর্র্বতী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা এবং উপদেষ্টাদের পদমর্যাদা, সুযোগ-সুবিধা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থায় উপদেষ্টাদের সর্বোচ্চ সংখ্যা নির্ধারণ করে দেওয়া থাকলেও এখন উপদেষ্টাদের সর্বোচ্চ সংখ্যা বেঁধে দেওয়া হচ্ছে না। খসড়ায় অন্তর্র্বতী সরকারের মেয়াদ-সংক্রান্ত ধারায় বলা হয়েছে, যে তারিখে প্রধান উপদেষ্টা অন্তর্র্বতী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন, সেই তারিখ থেকে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন প্রধানমন্ত্রী কার্যভার গ্রহণ করার তারিখ পর্যন্ত অন্তর্র্বতী সরকার বহাল থাকবে। এর আগে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার মেয়াদ ছিল ৯০ দিন। অন্তর্র্বতী সরকারের কাজ কী হবে, তা-ও ঠিক করে দেওয়া হচ্ছে অধ্যাদেশে।
এ-সংক্রান্ত ধারায় বলা হয়েছে, অন্তর্র্বতী সরকার একটি অস্থায়ী বা সাময়িক সরকার হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে। সরকারি কর্মচারীদের সহায়তায় সরকার কাজ করবে। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানে এবং সংবিধান বা অন্য কোনো আইন দিয়ে নির্ধারিত দায়িত্ব পালনের জন্য নির্বাচন কমিশনকে সাহায্য ও সহায়তা দেবে। ‘অন্তর্র্বতীকালীন সরকার কর্তৃক প্রণীত অধ্যাদেশ ও কার্যক্রমের বৈধতা’ ধারায় বলা হয়েছে, ‘সংবিধান এবং আপাতত বলবৎ অন্য কোনো আইনে ভিন্নতর যাহা কিছুই থাকুক না কেন, অন্তর্র্বতীকালীন সরকার গঠিত হওয়া এবং নতুন সংসদ গঠিত হইবার পর প্রধানমন্ত্রী যে তারিখে তাঁহার পদের কার্যভার গ্রহণ করিবেন, সেই তারিখের (উভয় দিনসহ) মধ্যবর্তী সময়ে অন্তর্র্বতীকালীন সরকার কর্তৃক প্রয়োগকৃত সকল ক্ষমতা, প্রণীত সকল অধ্যাদেশ, বিধিমালা, প্রবিধানমালা, জারীকৃত প্রজ্ঞাপন, প্রদত্ত আদেশ, কৃতকার্য, গৃহীত ব্যবস্থা আইন অনুযায়ী যথাযথভাবে প্রয়োগকৃত, প্রণীত, জারীকৃত, প্রদত্ত, কৃত এবং গৃহীত হইয়াছে বলিয়া গণ্য হইবে এবং বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টসহ অন্য কোনো আদালত বা কর্তৃপক্ষ ইহাদের বৈধতা সম্পর্কে কোনোভাবেই কোনো প্রশ্ন উত্থাপন কিংবা ইহাদেরকে অবৈধ বা বাতিল করিতে পারিবে না।’

এতে আরও বলা হয়, অন্তর্র্বতীকালীন সরকার গঠন, প্রধান উপদেষ্টা বা উপদেষ্টাদের নিয়োগ নিয়ে ত্রুটি থাকলে সে জন্য কোনো কাজ অবৈধ হবে না। এ জন্য কোনো আদালতে প্রশ্ন উত্থাপন বা মামলা দায়েরও করা যাবে না। অধ্যাদেশের খসড়ায় প্রেসিডেন্টের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা প্রসঙ্গে বলা হয়, বিদ্যমান অন্যান্য আইনে যা কিছুই বলা থাকুক না কেন, অন্তর্র্বতী সরকারের সময় প্রধান উপদেষ্টার পরামর্শ নিয়ে রাষ্ট্রপতিকে কাজ করতে হবে। জরুরি অবস্থা ঘোষণার বৈধতার জন্য প্রধান উপদেষ্টার পরামর্শ নিতে হবে।
উপদেষ্টাদের যোগ্যতা ও সুযোগ-সুবিধা: সংবিধান অনুযায়ী, কারও বয়স ২৫ বছর পূর্ণ না হলে তিনি সংসদ সদস্য হতে পারেন না। সংসদ সদস্যদের মধ্য থেকে মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রী নিয়োগ দেওয়া হয়। অধ্যাদেশের খসড়ায় বলা হয়, অন্তর্র্বতী সরকারে ২৫ বছরের কম বয়সী কেউ প্রধান উপদেষ্টা ও উপদেষ্টা পদে নিয়োগ পাবেন না। কোনো আদালত অপ্রকৃতিস্থ বলে ঘোষণা করলে, দেউলিয়া ঘোষিত হওয়ার পর দায় থেকে অব্যাহতি না পেলে, কোনো বিদেশি রাষ্ট্রের নাগরিকত্ব অর্জন করেন কিংবা কোনো বিদেশি রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য ঘোষণা বা স্বীকার করলে এসব পদে নিয়োগ পাওয়া যাবে না।

এ ছাড়া নৈতিক স্খলনজনিত কোনো ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়ে অন্যূন দুই বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হলে এবং মুক্তি পাওয়ার পর পাঁচ বছর পার না হলেও এসব পদে নিয়োগ পাওয়া যাবে না। এ ছাড়া ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের জনপ্রতিনিধি নির্বাচনে প্রার্থী হবেন না। এ বিষয়ে সম্মত না হলেও প্রধান উপদেষ্টা বা উপদেষ্টা পদে নিয়োগ পাওয়া যাবে না। রাষ্ট্রপতির কাছে লেখা ও স্বাক্ষরযুক্ত পত্রের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা ও উপদেষ্টারা পদত্যাগ করতে পারবেন। পদত্যাগ, মৃত্যু বা অন্য কোনো কারণে প্রধান উপদেষ্টার পদ শূন্য হলে উপদেষ্টাদের মধ্য থেকে একজনকে প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে রাষ্ট্রপতি নিয়োগ দিতে পারবেন। প্রধান উপদেষ্টা প্রধানমন্ত্রীর এবং উপদেষ্টারা মন্ত্রীর পদমর্যাদা, পারিশ্রমিক ও সুযোগ-সুবিধা পাবেন।

অধ্যাদেশ নিয়ে প্রশ্ন: অধ্যাদেশ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না বলেন, ‘এটা যেন নিজের চরিত্র নিয়ে নিজেই সার্টিফিকেট দেওয়ার মতো অবস্থা। আমি কতদিন ক্ষমতায় থাকব, সেটি নিয়ে অধ্যাদেশ জারি করা হলে প্রশ্ন তো উঠতেই পারে।’ এ সরকারের অবস্থা সামরিক জান্তার মতো হয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
এ প্রসঙ্গে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, অন্তর্র্বতী সরকার কী করতে চায়, আমরা বুঝি না। যে পর্যন্ত সংবিধান বলবৎ থাকবে, ততক্ষণ এর বাইরে কারও কিছু করার এখতিয়ার নেই। তিনি বলেন, সুপ্রিম কোর্টের অনুমোদনের পরেই এ সরকার গঠন হয়েছে। তাই জনগণের মতামত ছাড়া এ সরকার কিছুই করতে পারবে না। করলে সেটি হবে অবৈধ।