ভূগর্ভস্থ পানি একটি দেশের জাতীয় সম্পদ। সাধারণত মাটির নিচে,মাটির কৈশিক কণার ফাঁকে ফাঁকে সঞ্চিত বিশুদ্ধ জলই ভূগর্ভস্থ পানি। যা কৃষি, শিল্প এবং দৈনন্দিন জীবনে অপরিহার্য।
তবে অতিরিক্ত ও অপরিকল্পিত ব্যবহার, এবং পানি উত্তোলন ও সংরক্ষণে যথাযথ অব্যবস্থাপনার ফলে এই মূল্যবান সম্পদ দ্রুত হ্রাস পাচ্ছে । যা আমাদের ভবিষ্যৎ পানি নিরাপত্তার জন্য গুরুতর হুমকি। সাধারণত বৃষ্টির পানির পর ভূগর্ভস্থ পানিকেই নিরাপদ পানি বলা হয়। বর্তমানে আমাদের দৈনন্দিন জীবনে যতটুকু পানি ব্যবহার করি তার সবটাই ভূগর্ভস্থ পানির উপর নির্ভরশীল।
এভাবে একনিষ্ঠ ভাবে শুধু ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহার করার ফলে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর দিন দিন নিচে নেমে যাচ্ছে।
আমাদের পানযোগ্য পানি ব্যবহারে উদাসীনতা এবং পানি উত্তোলন ও সংরক্ষণের যথাযথ অব্যবস্থাপনার জন্য দিন দিন এই মিঠা পানিকে হারিয়ে বসতে চলেছি।
বিভিন্ন পত্রিকার ভাষ্যমতে আনুমানিক ২ কোটি ৩০ লাখ মানুষের বাসস্থান ঢাকায় পানির স্তর বছরে ৭ ফুট নেমে যাচ্ছে বলে রেকর্ড করা হয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে, ঢাকার ভাগ্য একদিন কেপটাউন বা জোহানেসবার্গের মতো হতে পারে। এবং রাজধানীর বাইরের পরিস্থিতিও স্বাভাবিক নয়। টিউবওয়েল যেগুলো প্রায় এক দশক আগেও খাবার পানির উৎস হিসেবে ব্যবহৃত হত, সেগুলো এখন আর ১৬৫ ফুট নিচে মিঠা পানি তুলে আনতে পারছে না। উত্তর অঞ্চলে ফাল্গুন – চৈত্র মাসে অবস্থা আরও ভায়াবহ হচ্ছে।
কারণ হিসেবে লক্ষ্য করা যাচ্ছে, যে কেউ চাইলেই বসাতে পারছে বৈদ্যুতিক টিউবওয়েল।
অথচ পার্শ্ববর্তী দেশ চীন, ভারতে টিউবওয়েল দিতে হলে সরকারের যথাযথ অনুমতির প্রয়োজন।
বাড়ি বাড়ি বৈদ্যুতিক টিউবওয়েল বা বৈদ্যুতিক সাবমার্সিবল পাম্প ( ESP) দিয়ে ব্যাপকহারে পানি তুলা হচ্ছে। এবং তার যথাযথ ব্যবহারের কোনো হদিস মিলছে না।
যখন কষ্ট করে হাতে চাপে টিউবওয়েল থেকে পানি তুলে গোসল করা হতো তখন এক বালতি পানি দিয়ে গোসল হয়ে যেত । এখন দুই থেকে তিন বালতি দিয়েও হচ্ছে না। কাপড় কাচাসহ অন্যান্য সকল কাজে গ্রামে পুকুরের পানিই ব্যবহার করা হতো। এখন বৈদ্যুতিক সাবমার্সিবল পাম্প দ্বারা উত্তোলিত পানি ছাড়া হচ্ছে না কাপড় ধুয়া, হচ্ছে না বাড়ির আঙিনায় সবজি ক্ষেতে পানি দেওয়া, হচ্ছে না অন্যান্য কাজগুলোও। সেক্ষেত্রে ভূগর্ভস্থ পানি রক্ষায় ব্যক্তিকেন্দ্রীক সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে ।
গ্রামে আরেকটা বিষয় লক্ষ করা যায় যে, যেসব এলাকায় কৃষি জমির পানি সরবরাহের জন্য ডিপ টিউবওয়েল রয়েছে, ডিপ টিউবওয়েল পরিচালনায় কোনো দক্ষ ড্রেন ম্যান কাজ করছে না। মানছে না কোনো ড্রেনেজ ব্যবস্থা,। এক জমি উপছে পানি নিচ্ছে অন্য জমিতে। যার ফল স্বরূপ পানির লক্ষনীয় অপচয় হচ্ছে। অদক্ষ ড্রেন ম্যান এবং ড্রেনেজ ব্যবস্থার অভাবে উল্টো ডিপ টিউবওয়েলের পানি দিয়ে খাল বিল ভরা হচ্ছে। সেক্ষেত্রে ইরিগেশন এন্ড ওয়াটার মেনজমেন্ট বিভাগের উচিত বিষয়টা নিয়ে প্রান্তিক কৃষকদের সাথে কাজ করা। যথাযথ পানি ব্যবহারের পথ সুগম করা।
শহর অঞ্চলে ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহারেও যথেষ্ট উদাসীনতা রয়েছে। সে ক্ষেত্রে বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান,সরকারি হাসপাতাল এবং সায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান যেমন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের হল এবং বিভিন্ন সরকারি ডরমিটরিয়ামে পানি উত্তোলন ও সংরক্ষণে যথেষ্ট উদাসীনতা লক্ষ করা যায়।
পানির সংরক্ষণাগার উপচে পানি পড়ে অথচ দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিগণ অসচেতন। যার ফল স্বরূপ আমাদের ব্যাপক মিঠা পানির অপচয় এবং ভূগর্ভস্থ স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে ।
সরকারের উচিত ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবস্থাপনা আইন নিয়ে সক্রিয়ভাবে কাজ করা। ভূগর্ভস্থ পানির গুরুত্ব জনগণের মধ্যে পৌঁছে দেওয়া এবং ভূগর্ভস্থ পানির জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা।
আদিব হাসান প্রান্ত
কৃষি প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদ,
দ্বিতীয় বর্ষ
সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়

























