০৭:১৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৪ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

রাষ্ট্রদূত করায় নাখোশ আ.লীগ দোসর মু. রিয়াজ মরিয়া পররাষ্ট্র সচিব হতে

আওয়ামী লীগের সুবিধাভোগী পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পশ্চিম জোনের সচিব মু. রিয়াজ হামিদুল্লাহর হঠাৎ ডিগবাজিতে মন্ত্রণালয়জুড়ে বিরাজ করছে চাপা ক্ষোভ-অসন্তোষ। এর মূল কারণ জুলাই অভ্যুত্থানের পর বামপন্থী অবস্থান থেকে ডান বনে যাওয়া এই কর্মকর্তা এখন স্বপ্ন দেখছেন পররাষ্ট্র সচিব হওয়ার। এতেই আপত্তি টানা ১৫ বছর বঞ্চিত কর্মকর্তাদের। তাদের অভিযোগ, আওয়ামী ঘরানার কট্ররপন্থী কর্মকর্তা সচিব হিসেবে পদায়ন পেলে বর্তমান অন্তবর্তী সরকারের রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তা চরমভাবে বিঘ্নিত হবে।
উল্লেখ্য মু. রিয়াজ হামিদুল্লাহকে সম্প্রতি ভারতে বাংলাদেশর রাষ্ট্রদূত হিসেবে পদায়ন করা হয়েছে। আগামী ৭ এপ্রিল সেখানে যোগদানের কথা। কিন্তু আওয়ামী লীগের আস্হাভাজন কর্মকর্তা ছিলেন বিধায় ওই দলের বিপক্ষে দেশের হয়ে দূতিয়ালি না করার জন্য সেখানে যেতে সবোচ্চ লবিং করছেন। বরং এর বদলে পররাষ্ট্র সচিব হওয়ায় মরিয়া হয়ে উঠেছেন। কারন সচিব হতে পারলে শেখ হাসিনার পক্ষ হয়ে দেশের অভ্যন্তরীণ তথ্য ভারতের কাছে পাচার করা তার সহজ হবে।

চরম দলবাজ রিয়াজের উত্থান যেভাবে : শেখ পরিবারের প্রভাবশালী দুই ব্যক্তি শেখ সেলিম ও শেখ হেলাল এবং শেখ মুজিবের ঘনিষ্ট তোফায়েল আহমেদ এর হাত ধরেই মন্ত্রণালয়ে রাতারাতি দোদণ্ডশালী কর্মকর্তা বনে যান বিসিএস-১৫ ব্যাচের এই আমলা। পাশাপাশি পিতা মৃত ফয়জুল্লাহর রাজনৈতিক পরিচয়কে কাজে লাগান তিনি। বর্তমান কারান্তরীণ দিপু মনি পররাষ্ট্র মন্ত্রী হলে তার ব্যক্তিগত সচিব জিষ্ণু রায় চৌধূরীকে ম্যানেজ করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের (মোফা) উপর পুর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেন। এ ক্ষমতার জোরে বিতর্কিত শহীদুল হককে পররাষ্ট্র সচিব করায় ভূমিকা রাখেন মু. রিয়াজ। দিপু মণির পর পররাষ্ট্র মন্ত্রী হন আবুল হাসান মাহমুদ আলী। এর পর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি রিয়াজ গংদের। সচিব শহীদুল ও তিনি মিলে এমওএফএ-র প্রকৃত শাসক হয়ে ওঠেন। পররাষ্ট্র সেবাকে ভেঙে এবং বিদেশী ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নের একটি মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে কার্যকরী ভূমিকা রাখেন।

ক্ষমতা পাকাপক্ত করতে নিজস্ব বলয় তৈরি : নিজের ক্ষমতা স্থায়ী ও পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ব্যাচওয়ারী অনুগত কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে শক্তিশালী সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন। তাদের আর্শিবাদপুষ্টদের পুরস্কার হিসেবে বিদেশ ভ্রমণ থেকে গুরুত্বপূর্ণ পোস্টিং দিয়ে সন্তুষ্ট রাখতেন। সু্বিধাভোগীদের মধ্যে বিসিএস-১৫ ব্যাচ ছিল এগিয়ে। পরবর্তীতে ২০ব্যাচের ফাইয়াজ মুর্শেদ কাজী, আন্দালিব ইলিয়াস, রোকেবুল হক, নায়েমউদ্দিন এবং কাজী আনারকলি, ২১ এর ইকবাল আহমেদ, শঞ্চিতা হক, নাজমুল হাসান (জেদ্দা), খোন্দকার মাসুদুল আলম ও ডি এম সালাহউদ্দিন মাহমুদ, ২৪ এর আলিমুজ্জামান, নিরুপম দেবনাথ, রাশেদুজ্জামান, সেহেলী সাবরিন ও ইসরাত এবং ২৭ ব্যাচের আব্দুল্লাহ আল মামুন ও সামিয়া ইসরাত। এই চক্রের ক্ষমতার উৎস ছিল গণভবন। তাই ৭৫ শতাংশ কর্মকর্তা-কর্মচারি সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত ছিলেন। অনুগতদের বাইরে কেউ প্রাপ্য দাবি নিয়ে ওই চক্রের কাছে গেলে উল্টো নেমে আসত শাস্তির খড়গ। এছাড়া ২০০৯ সালে নির্মম বিডিআর গণহত্যার পরিবারগুলোর গোপন তথ্য এবং ছবি ছিল এই চক্রের হাতে। এটার আলামত নষ্ট করে আরও আস্থায় চলে যান শেখ হাসিনা পরিবারের।

দলবাজি থেকে দুর্বল পররাষ্ট্র নীতি : ক্ষমতায় টিকে থাকতে ভারতের সঙ্গে নতজানু পররাষ্ট্রনীতির কারণে দক্ষিণ-এশিয়ার প্রভাবশালী দেশগুলোর সঙ্গে শক্তিশালী যোগাযোগ তৈরিতে পুর্ণ ব্যর্থ ছিল ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকার। এর বদলে নিজেদের আখের গোছানোয় ছিল বেশি ব্যস্ত। পররাষ্ট্র সচিব শহিদুল হক ও রিয়াজ হামিদুল্লাহ দুজনই প্রশাসনিক এবং রাজনৈতিক কর্তৃত্বে মনোযোগি ছিলেন। এ কারণে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দেশের সম্পর্ক তলানিতে পৌঁছে।

রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশে রিয়াজ গংদের কারসাজি : রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশে শহিদুল হক, সুফিউর রহমান এবং রিয়াজ হামিদুল্লাহ গংদের অন্যতম কারসাজি ছিল। এটাকে পুঁজি করে আর্থিকভাবে হন লাভবান এই চক্ররা। তাদের সুদূর প্রসারী পরিকল্পনায় পূর্ণ সমর্থন ছিল ড. গওহর রিজভীর। ২০১৭ সালে রোহিঙ্গা পরিকল্পনা বাস্তবায়ন শুরু হয়। ফলাফল হলো আজকের জটিল পরিস্থিতি।

আওয়ামী লীগের সুবিধাভোগী রিয়াজের কর্মকান্ড : বর্তমান পররাষ্ট্র সচিব মো. জসিম উদ্দিন এর নিয়োগের শুরু থেকেই চলছে বিতর্ক। এটাকে পুঁজি করে পররাষ্ট্র সচিব হতে তৎপরতা শুরু করেন আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চ বেনিফিসিয়ালি মু. রিয়াজ হামিদুল্লাহ। ৫ আগস্টের আপ পর্যন্ত শেখ পরিবারের নাম ভাঙিয়ে প্রভাব খাটানোয় মোফা-তে তার কেউ বিকল্প হয়ে উঠেনি। এ প্রভাব খাটিয়ে রিয়াজ হামিদুল্লাহ ২০১৬ কলম্বোতে হাইকমিশনারের দায়িত্ব পান। এর আগে টানা চার বছর দায়িত্বে ছিলেন ডিজি মাল্টিল্যাটারাল ইকোনমিক অ্যাফেয়ার্সে। সে সময়ে সমস্ত কর্তৃত্বকে সংশ্লিষ্ট শাখায় কেন্দ্রীভূত করেন এবং পরবর্তীতে একের পর এক তার পছন্দের অনুগতদের পদায়ন করেন মহাপরিচালক, পরিচালক এমনকি সহকারী সচিব পদে – এবং পরবর্তীতে নিউ ইয়র্ক আর জেনেভা মিশনে পদায়নে। গত ১৩ বছর এর কোন ব্যতিক্রম হয়নি।
আর ২০১৯ সালে নেদারল্যান্ডসে যান; সেখানেই ভারতে আশ্রয় নেয়া শেখ হাসিনার পূর্ণ আশীর্বাদপ্রাপ্ত হন। মূলত শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের বিশস্ত ও আস্থাভাজন হিসেবে মানি লন্ডারিংয়ের হাতিয়ার হিসেবে কাজ করতেন। কলম্বো, ব্যাংকক এবং কাঠমান্ডু ছিল তাদের পছন্দের ট্রানজিট পয়েন্ট। সাইমা ওয়াজেদ পুতুল তার জাতিসংঘে নিয়োগের জন্য রিয়াজ হামিদুল্লাহর উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েন। রিয়াজ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের (মোফা) জাতিসংঘ ইন্টারফেসের উপর তার সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ ব্যবহার করে তার নিয়োগ সহজতর করেন এবং সিআরআই সদস্যদের বিভিন্ন ইউরোপীয় দেশে পুনর্বাসনের জন্যও কাজ করেন বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়। আর প্রতিটি সদস্যের মাইগ্রেশনের সঙ্গে সঙ্গে নূন্যতম সর্বনিম্ন ১০ থেকে সর্বোচ্চ ৩০ কোটি টাকা স্থানান্তর করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। পরবর্তীতে সালমান এফ রহমান গ্যাংয়ের সঙ্গে মিলে তিনি ইউরোপ/এয়ারবাস ভিত্তিক একটি ব্যবসায়িক ব্যবস্থা গড়ে তোলেন। এই অনুগত ও অনৈতিক কাজের মাধ্যমে তার লক্ষ্য ছিল, – পররাষ্ট্র সচিব হওয়া। বিভিন্ন পক্ষকে ম্যানেজ করে পররাষ্ট্র সচিব হওয়ার ক্ষেত্র তৈরি করেছেন। বর্তমান সচিবকে সরিয়ে দেয়া হলে সেখানেই এ্ই আওয়ামী লীগের দোসর কর্মকর্তার পদায়ন হওয়ার কথা। শাস্তির কথা ভেবে দীর্ঘদিন বঞ্চিত মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে এ প্রতিবেদককে জানান, আওয়ামী লীগের লেসপ্যান্সার রিয়াজ হামিদুল্লাহ বাদে সজ্জন কেউ পররাষ্ট্র সচিব হোক তাদের আপত্তি নেই। যদি এ ধরণের কেউ জুলাই অভ্যুত্থানের শহীদের রক্তের সঙ্গে মুনাফেকী করা হবে। তাই বৈষম্যের সরকারের কাছে বিনিত অনুরোধ আওয়ামী দোসর কাউকে পররাষ্ট্র সচিব করা যাবে না।

জনপ্রিয় সংবাদ

সব রেকর্ড ভেঙে স্বর্ণের দামে নতুন ইতিহাস, ভরি ছাড়াল দুই লাখ ২৭ হাজার

রাষ্ট্রদূত করায় নাখোশ আ.লীগ দোসর মু. রিয়াজ মরিয়া পররাষ্ট্র সচিব হতে

আপডেট সময় : ১০:৩৪:৩৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১০ এপ্রিল ২০২৫

আওয়ামী লীগের সুবিধাভোগী পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পশ্চিম জোনের সচিব মু. রিয়াজ হামিদুল্লাহর হঠাৎ ডিগবাজিতে মন্ত্রণালয়জুড়ে বিরাজ করছে চাপা ক্ষোভ-অসন্তোষ। এর মূল কারণ জুলাই অভ্যুত্থানের পর বামপন্থী অবস্থান থেকে ডান বনে যাওয়া এই কর্মকর্তা এখন স্বপ্ন দেখছেন পররাষ্ট্র সচিব হওয়ার। এতেই আপত্তি টানা ১৫ বছর বঞ্চিত কর্মকর্তাদের। তাদের অভিযোগ, আওয়ামী ঘরানার কট্ররপন্থী কর্মকর্তা সচিব হিসেবে পদায়ন পেলে বর্তমান অন্তবর্তী সরকারের রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তা চরমভাবে বিঘ্নিত হবে।
উল্লেখ্য মু. রিয়াজ হামিদুল্লাহকে সম্প্রতি ভারতে বাংলাদেশর রাষ্ট্রদূত হিসেবে পদায়ন করা হয়েছে। আগামী ৭ এপ্রিল সেখানে যোগদানের কথা। কিন্তু আওয়ামী লীগের আস্হাভাজন কর্মকর্তা ছিলেন বিধায় ওই দলের বিপক্ষে দেশের হয়ে দূতিয়ালি না করার জন্য সেখানে যেতে সবোচ্চ লবিং করছেন। বরং এর বদলে পররাষ্ট্র সচিব হওয়ায় মরিয়া হয়ে উঠেছেন। কারন সচিব হতে পারলে শেখ হাসিনার পক্ষ হয়ে দেশের অভ্যন্তরীণ তথ্য ভারতের কাছে পাচার করা তার সহজ হবে।

চরম দলবাজ রিয়াজের উত্থান যেভাবে : শেখ পরিবারের প্রভাবশালী দুই ব্যক্তি শেখ সেলিম ও শেখ হেলাল এবং শেখ মুজিবের ঘনিষ্ট তোফায়েল আহমেদ এর হাত ধরেই মন্ত্রণালয়ে রাতারাতি দোদণ্ডশালী কর্মকর্তা বনে যান বিসিএস-১৫ ব্যাচের এই আমলা। পাশাপাশি পিতা মৃত ফয়জুল্লাহর রাজনৈতিক পরিচয়কে কাজে লাগান তিনি। বর্তমান কারান্তরীণ দিপু মনি পররাষ্ট্র মন্ত্রী হলে তার ব্যক্তিগত সচিব জিষ্ণু রায় চৌধূরীকে ম্যানেজ করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের (মোফা) উপর পুর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেন। এ ক্ষমতার জোরে বিতর্কিত শহীদুল হককে পররাষ্ট্র সচিব করায় ভূমিকা রাখেন মু. রিয়াজ। দিপু মণির পর পররাষ্ট্র মন্ত্রী হন আবুল হাসান মাহমুদ আলী। এর পর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি রিয়াজ গংদের। সচিব শহীদুল ও তিনি মিলে এমওএফএ-র প্রকৃত শাসক হয়ে ওঠেন। পররাষ্ট্র সেবাকে ভেঙে এবং বিদেশী ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নের একটি মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে কার্যকরী ভূমিকা রাখেন।

ক্ষমতা পাকাপক্ত করতে নিজস্ব বলয় তৈরি : নিজের ক্ষমতা স্থায়ী ও পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ব্যাচওয়ারী অনুগত কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে শক্তিশালী সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন। তাদের আর্শিবাদপুষ্টদের পুরস্কার হিসেবে বিদেশ ভ্রমণ থেকে গুরুত্বপূর্ণ পোস্টিং দিয়ে সন্তুষ্ট রাখতেন। সু্বিধাভোগীদের মধ্যে বিসিএস-১৫ ব্যাচ ছিল এগিয়ে। পরবর্তীতে ২০ব্যাচের ফাইয়াজ মুর্শেদ কাজী, আন্দালিব ইলিয়াস, রোকেবুল হক, নায়েমউদ্দিন এবং কাজী আনারকলি, ২১ এর ইকবাল আহমেদ, শঞ্চিতা হক, নাজমুল হাসান (জেদ্দা), খোন্দকার মাসুদুল আলম ও ডি এম সালাহউদ্দিন মাহমুদ, ২৪ এর আলিমুজ্জামান, নিরুপম দেবনাথ, রাশেদুজ্জামান, সেহেলী সাবরিন ও ইসরাত এবং ২৭ ব্যাচের আব্দুল্লাহ আল মামুন ও সামিয়া ইসরাত। এই চক্রের ক্ষমতার উৎস ছিল গণভবন। তাই ৭৫ শতাংশ কর্মকর্তা-কর্মচারি সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত ছিলেন। অনুগতদের বাইরে কেউ প্রাপ্য দাবি নিয়ে ওই চক্রের কাছে গেলে উল্টো নেমে আসত শাস্তির খড়গ। এছাড়া ২০০৯ সালে নির্মম বিডিআর গণহত্যার পরিবারগুলোর গোপন তথ্য এবং ছবি ছিল এই চক্রের হাতে। এটার আলামত নষ্ট করে আরও আস্থায় চলে যান শেখ হাসিনা পরিবারের।

দলবাজি থেকে দুর্বল পররাষ্ট্র নীতি : ক্ষমতায় টিকে থাকতে ভারতের সঙ্গে নতজানু পররাষ্ট্রনীতির কারণে দক্ষিণ-এশিয়ার প্রভাবশালী দেশগুলোর সঙ্গে শক্তিশালী যোগাযোগ তৈরিতে পুর্ণ ব্যর্থ ছিল ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকার। এর বদলে নিজেদের আখের গোছানোয় ছিল বেশি ব্যস্ত। পররাষ্ট্র সচিব শহিদুল হক ও রিয়াজ হামিদুল্লাহ দুজনই প্রশাসনিক এবং রাজনৈতিক কর্তৃত্বে মনোযোগি ছিলেন। এ কারণে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দেশের সম্পর্ক তলানিতে পৌঁছে।

রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশে রিয়াজ গংদের কারসাজি : রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশে শহিদুল হক, সুফিউর রহমান এবং রিয়াজ হামিদুল্লাহ গংদের অন্যতম কারসাজি ছিল। এটাকে পুঁজি করে আর্থিকভাবে হন লাভবান এই চক্ররা। তাদের সুদূর প্রসারী পরিকল্পনায় পূর্ণ সমর্থন ছিল ড. গওহর রিজভীর। ২০১৭ সালে রোহিঙ্গা পরিকল্পনা বাস্তবায়ন শুরু হয়। ফলাফল হলো আজকের জটিল পরিস্থিতি।

আওয়ামী লীগের সুবিধাভোগী রিয়াজের কর্মকান্ড : বর্তমান পররাষ্ট্র সচিব মো. জসিম উদ্দিন এর নিয়োগের শুরু থেকেই চলছে বিতর্ক। এটাকে পুঁজি করে পররাষ্ট্র সচিব হতে তৎপরতা শুরু করেন আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চ বেনিফিসিয়ালি মু. রিয়াজ হামিদুল্লাহ। ৫ আগস্টের আপ পর্যন্ত শেখ পরিবারের নাম ভাঙিয়ে প্রভাব খাটানোয় মোফা-তে তার কেউ বিকল্প হয়ে উঠেনি। এ প্রভাব খাটিয়ে রিয়াজ হামিদুল্লাহ ২০১৬ কলম্বোতে হাইকমিশনারের দায়িত্ব পান। এর আগে টানা চার বছর দায়িত্বে ছিলেন ডিজি মাল্টিল্যাটারাল ইকোনমিক অ্যাফেয়ার্সে। সে সময়ে সমস্ত কর্তৃত্বকে সংশ্লিষ্ট শাখায় কেন্দ্রীভূত করেন এবং পরবর্তীতে একের পর এক তার পছন্দের অনুগতদের পদায়ন করেন মহাপরিচালক, পরিচালক এমনকি সহকারী সচিব পদে – এবং পরবর্তীতে নিউ ইয়র্ক আর জেনেভা মিশনে পদায়নে। গত ১৩ বছর এর কোন ব্যতিক্রম হয়নি।
আর ২০১৯ সালে নেদারল্যান্ডসে যান; সেখানেই ভারতে আশ্রয় নেয়া শেখ হাসিনার পূর্ণ আশীর্বাদপ্রাপ্ত হন। মূলত শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের বিশস্ত ও আস্থাভাজন হিসেবে মানি লন্ডারিংয়ের হাতিয়ার হিসেবে কাজ করতেন। কলম্বো, ব্যাংকক এবং কাঠমান্ডু ছিল তাদের পছন্দের ট্রানজিট পয়েন্ট। সাইমা ওয়াজেদ পুতুল তার জাতিসংঘে নিয়োগের জন্য রিয়াজ হামিদুল্লাহর উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েন। রিয়াজ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের (মোফা) জাতিসংঘ ইন্টারফেসের উপর তার সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ ব্যবহার করে তার নিয়োগ সহজতর করেন এবং সিআরআই সদস্যদের বিভিন্ন ইউরোপীয় দেশে পুনর্বাসনের জন্যও কাজ করেন বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়। আর প্রতিটি সদস্যের মাইগ্রেশনের সঙ্গে সঙ্গে নূন্যতম সর্বনিম্ন ১০ থেকে সর্বোচ্চ ৩০ কোটি টাকা স্থানান্তর করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। পরবর্তীতে সালমান এফ রহমান গ্যাংয়ের সঙ্গে মিলে তিনি ইউরোপ/এয়ারবাস ভিত্তিক একটি ব্যবসায়িক ব্যবস্থা গড়ে তোলেন। এই অনুগত ও অনৈতিক কাজের মাধ্যমে তার লক্ষ্য ছিল, – পররাষ্ট্র সচিব হওয়া। বিভিন্ন পক্ষকে ম্যানেজ করে পররাষ্ট্র সচিব হওয়ার ক্ষেত্র তৈরি করেছেন। বর্তমান সচিবকে সরিয়ে দেয়া হলে সেখানেই এ্ই আওয়ামী লীগের দোসর কর্মকর্তার পদায়ন হওয়ার কথা। শাস্তির কথা ভেবে দীর্ঘদিন বঞ্চিত মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে এ প্রতিবেদককে জানান, আওয়ামী লীগের লেসপ্যান্সার রিয়াজ হামিদুল্লাহ বাদে সজ্জন কেউ পররাষ্ট্র সচিব হোক তাদের আপত্তি নেই। যদি এ ধরণের কেউ জুলাই অভ্যুত্থানের শহীদের রক্তের সঙ্গে মুনাফেকী করা হবে। তাই বৈষম্যের সরকারের কাছে বিনিত অনুরোধ আওয়ামী দোসর কাউকে পররাষ্ট্র সচিব করা যাবে না।