০৩:৫২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

নামটি মেয়ের প্রীতিলতা

পরাধীন মাতৃভূমি কে চায়? মায়ের দেশকে স্বাধীন করার স্বপ্ন দেখতে হয় তখন বিপ্লবীদের। তেমনই এক মহান বিপ্লবীর জন্ম দিবস আজ। ১৯১১ সালের ৫ মে চট্টগ্রামের ধলঘাটে জন্মগ্রহণ করেন ‘ফুলতারা’ ছদ্মনামের প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার। এই বীরকন্যা বিবেচিত হন ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম নারী মুক্তিযোদ্ধা ও প্রথম বিপ্লবী শহীদ ব্যক্তিত্ব হিসেবে।

প্রীতিলতার বাবা ছিলেন জগদ্বন্ধু ওয়াদ্দেদার এবং মাতা প্রতিভাদেবী। মা আদর করে তাকে ‘রাণী’ নামে ডাকতেন। পরিণত বয়সে প্রীতিলতা প্রভাবিতও হয়েছিলেন এক বিপ্লবী রাণীর দ্বারা। ডা. খাস্তগীর সরকারী বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তখন তিনি। এর ইতিহাস শিক্ষক পড়াতেন পুরুষের বেশে ঝাঁসীর রাণী লক্ষ্মীবাইয়ের ইংরেজ সৈন্যদের সাথে লড়াইয়ের পর্ব। সে বয়সেই প্রীতিলতার মনে দেশ মুক্তির বীজ রোপিত হয়।

বিপ্লবী সূর্যসেনের দলে জড়িয়ে পড়েন তিনি। ১৯৩২ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর পাহাড়তলী ইউরোপিয়ান ক্লাব দখলের সশস্ত্র লড়াইয়ে ১৫ জনের একটি বিপ্লবী দলের নেতৃত্বে ছিলেন প্রীতিলতা। এ ক্লাবে একটি সাইনবোর্ড ছিল। তাতে লেখা ছিল, ‘কুকুর এবং ভারতীয়দের প্রবেশ নিষেধ।’ লড়াইয়ের এক পর্যায়ে পুলিশের হাতে আটক এড়াতে প্রীতিলতা সায়ানাইড খেয়ে আত্মহত্যা করেন।

আত্মাহুতির আগে একটি চিঠি লেখেন প্রীতিলতা। সহযোদ্ধাদের হাতে ঘুরে যা পরে প্রকাশিত হয়। এর বক্তব্য ছিল এমন-

“আমরা দেশের মুক্তির জন্যই এই সশস্ত্র যুদ্ধ করিতেছি। অদ্যকার পাহাড়তলী ইউরোপিয়ান ক্লাব আক্রমণ স্বাধীনতাযুদ্ধের একটা অংশ।…দেশের মুক্তিসংগ্রামে নারী ও পুরুষের পার্থক্য আমাকে ব্যথিত করিয়াছিল। যদি আমাদের ভাইয়েরা মাতৃভূমির জন্য যুদ্ধে অবতীর্ণ হইতে পারে, আমরা ভগিনীরা কেন উহা পারিব না? নারীরা আজ কঠোর সংকল্প নিয়েছে যে, তাহারা আর পশ্চাতে পড়িয়া থাকিবে না, নিজ মাতৃভূমির মুক্তির জন্য যে কোনো দুরূহ বা ভয়াবহ ব্যাপারে ভাইদের পাশাপাশি দাঁড়াইয়া সংগ্রাম করিতে তাহারা ইচ্ছুক, ইহা প্রমাণ করিবার জন্যই আজিকার এই অভিযানের নেতৃত্ব আমি গ্রহণ করিতেছি।

আমি ঐকান্তিকভাবে আশা করি যে, ‘আমার দেশের ভগিনীরা আর নিজেকে দুর্বল মনে করিবেন না।…এই আশা লইয়াই আমি আজ আত্মদানে অগ্রসর হইলাম।’

কিন্তু মাত্র ২১ বছর বয়সে তার এ অকাল মৃত্যু ইতিহাস ভুলে যায়নি। যুগে যুগে কালে কালে প্রীতিলতা বীরকন্যা হয়ে ফিরে আসেন। জুলুমের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের এক প্রতিশব্দ তাই যেন প্রীতিলতা।

জনপ্রিয় সংবাদ

পথে পথে মানুষের ঢল, লাখো কণ্ঠের উচ্ছ্বাসে তারেক রহমানকে স্বাগত

নামটি মেয়ের প্রীতিলতা

আপডেট সময় : ০৬:২০:৪৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ৫ মে ২০২৫

পরাধীন মাতৃভূমি কে চায়? মায়ের দেশকে স্বাধীন করার স্বপ্ন দেখতে হয় তখন বিপ্লবীদের। তেমনই এক মহান বিপ্লবীর জন্ম দিবস আজ। ১৯১১ সালের ৫ মে চট্টগ্রামের ধলঘাটে জন্মগ্রহণ করেন ‘ফুলতারা’ ছদ্মনামের প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার। এই বীরকন্যা বিবেচিত হন ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম নারী মুক্তিযোদ্ধা ও প্রথম বিপ্লবী শহীদ ব্যক্তিত্ব হিসেবে।

প্রীতিলতার বাবা ছিলেন জগদ্বন্ধু ওয়াদ্দেদার এবং মাতা প্রতিভাদেবী। মা আদর করে তাকে ‘রাণী’ নামে ডাকতেন। পরিণত বয়সে প্রীতিলতা প্রভাবিতও হয়েছিলেন এক বিপ্লবী রাণীর দ্বারা। ডা. খাস্তগীর সরকারী বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তখন তিনি। এর ইতিহাস শিক্ষক পড়াতেন পুরুষের বেশে ঝাঁসীর রাণী লক্ষ্মীবাইয়ের ইংরেজ সৈন্যদের সাথে লড়াইয়ের পর্ব। সে বয়সেই প্রীতিলতার মনে দেশ মুক্তির বীজ রোপিত হয়।

বিপ্লবী সূর্যসেনের দলে জড়িয়ে পড়েন তিনি। ১৯৩২ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর পাহাড়তলী ইউরোপিয়ান ক্লাব দখলের সশস্ত্র লড়াইয়ে ১৫ জনের একটি বিপ্লবী দলের নেতৃত্বে ছিলেন প্রীতিলতা। এ ক্লাবে একটি সাইনবোর্ড ছিল। তাতে লেখা ছিল, ‘কুকুর এবং ভারতীয়দের প্রবেশ নিষেধ।’ লড়াইয়ের এক পর্যায়ে পুলিশের হাতে আটক এড়াতে প্রীতিলতা সায়ানাইড খেয়ে আত্মহত্যা করেন।

আত্মাহুতির আগে একটি চিঠি লেখেন প্রীতিলতা। সহযোদ্ধাদের হাতে ঘুরে যা পরে প্রকাশিত হয়। এর বক্তব্য ছিল এমন-

“আমরা দেশের মুক্তির জন্যই এই সশস্ত্র যুদ্ধ করিতেছি। অদ্যকার পাহাড়তলী ইউরোপিয়ান ক্লাব আক্রমণ স্বাধীনতাযুদ্ধের একটা অংশ।…দেশের মুক্তিসংগ্রামে নারী ও পুরুষের পার্থক্য আমাকে ব্যথিত করিয়াছিল। যদি আমাদের ভাইয়েরা মাতৃভূমির জন্য যুদ্ধে অবতীর্ণ হইতে পারে, আমরা ভগিনীরা কেন উহা পারিব না? নারীরা আজ কঠোর সংকল্প নিয়েছে যে, তাহারা আর পশ্চাতে পড়িয়া থাকিবে না, নিজ মাতৃভূমির মুক্তির জন্য যে কোনো দুরূহ বা ভয়াবহ ব্যাপারে ভাইদের পাশাপাশি দাঁড়াইয়া সংগ্রাম করিতে তাহারা ইচ্ছুক, ইহা প্রমাণ করিবার জন্যই আজিকার এই অভিযানের নেতৃত্ব আমি গ্রহণ করিতেছি।

আমি ঐকান্তিকভাবে আশা করি যে, ‘আমার দেশের ভগিনীরা আর নিজেকে দুর্বল মনে করিবেন না।…এই আশা লইয়াই আমি আজ আত্মদানে অগ্রসর হইলাম।’

কিন্তু মাত্র ২১ বছর বয়সে তার এ অকাল মৃত্যু ইতিহাস ভুলে যায়নি। যুগে যুগে কালে কালে প্রীতিলতা বীরকন্যা হয়ে ফিরে আসেন। জুলুমের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের এক প্রতিশব্দ তাই যেন প্রীতিলতা।