০২:২৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

লঙ্কায় গেলেই রাবন, সমন্বয়কদেরও কি একই পরিণতি?

“যেই যায় লঙ্কায়, সেই হয় রাবন” প্রবাদ বাক্যটির সর্বাধিক প্রয়োগ রাজনীতির ক্ষেত্রে। আজ যিনি বিরোধী দলে জননন্দিত, কালই তিনি ক্ষমতার গদিতে বসে নিজেই স্বৈরাচার। স্বৈরাচার না হলেও ক্ষমতার স্বাদ পেয়ে আগের সততা ও নীতি-নৈতিকতার পথ থেকে সরে আসেন অধিকাংশ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। এমন পাল্টি দেয়া স্বভাবে সৃষ্টি হয় তার প্রতি গণরোষ। তিনি আর থাকেন না জনতার কাতারে। সে রাজনীতিবিদকে রক্ষায় লাগে নিরাপত্তা বেষ্টনী আর প্রহরী।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অনেকে শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগকে দেশ থেকে বিতাড়িত করার জুলাই অভ্যুত্থানের প্রথম কাতারের নেতা অর্থাৎ সমন্বয়কদের সঙ্গে মিল খুঁজে পাচ্ছেন ৯০ এর এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের ছাত্র নেতৃবর্গের।
এ প্রসঙ্গে ক’জনের নামসহ উদাহরণ দিলে বিষয়টি সহজবোধ্য হয়। ৯০ এর গণঅভ্যুত্থানের প্রথম সারির নেতা ছিলেন সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্যের নেতা আমানুল্লাহ আমান, খাইরুল কবির খোকন, জহিরউদ্দিন স্বপন ও অসীম কুমার উকিল প্রমুখ। তাদের নেতৃত্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রিক ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ৯ বছর গদি আঁকড়ে ধরা এরশাদ ক্ষমতা হস্তান্তরে বাধ্য হন। কিন্তু তিন দশকের বেশি সময় পরও তৎকালীন এই ছাত্রনেতারা জাতীয় রাজনীতিতে তেমন অগ্রসর ভূমিকায় থাকতে পারেননি। আমানুল্লাহ আমান, খায়রুল কবির খোকন, জহিরউদ্দিন স্বপন এখন পর্যন্ত বিএনপির মধ্যম সারির নেতা হিসেবে গণ্য। অসীম কুমার উকিল আওয়ামী লীগের মধ্য সারি পেরোতে পারেননি। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর এখন আছেন ভারতে। জিয়াউদ্দিন বাবলু এখনও করেন সেই এরশাদের দল। জাতীয় পার্টির সিদ্ধান্ত গ্রহণে কোনো গুরুতর ভূমিকায় তিনি নেই।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় ও এরপর থেকে মানুষের কাছে পরিচিত হয়ে ওঠেন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক ও ছাত্রনেতা নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ, সারজিস আলম, হাসনাত আবদুল্লাহ ও মাহফুজ আলম। এর মধ্যে গত ৯ মাসে ধীরে ধীরে ক্ষয় হয়েছে তাদের বিরোধী রাজনীতি করাকালীন ইমেজ। কারও বিরুদ্ধে সরকারের উপদেষ্টা থাকাকালে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। কারও বিরুদ্ধে অতীতের সরকার সমর্থক ছাত্রনেতা সুলভ আচরণ থেকে চাদাবাজির অভিযোগ উঠেছে। যদিও এগুলো অভিযোগ। কেউই দণ্ডিত বা দায়ী হিসেবে কোনো ঘটনায় প্রমাণিত হননি। তবু এটা সবাই মানবেন যে তারা আগের জনপ্রিয়তা হারিয়েছেন বহু গুণে। সামনের জাতীয় রাজনীতিতে এই ছাত্রনেতাদের ভূমিকা কতটা প্রবল হবে তাও প্রশ্নবিদ্ধ আজকের সময়ে।
নন্দিত আর নিন্দিত এর গ্যাঁড়াকলের তীক্ষ্ম গিরিখাদ ধরে যেন রাজনীতির বয়ে চলে। আজকের তরুণ নেতৃত্ব জাতীয় রাজনীতিতে এসে যদি রিয়েল ইমপ্যাক্ট ফ্যাক্টর না হতে পারেন তবে ইতিহাস তাদের ৯০ এর ছাত্রনেতাদের কাতারেই খুঁজে ফিরবে ২৪ এর অভ্যুত্থান উত্তর সময়ে।
জনপ্রিয় সংবাদ

সপরিবারে হিথ্রো বিমানবন্দরে পৌঁছেছেন তারেক রহমান

লঙ্কায় গেলেই রাবন, সমন্বয়কদেরও কি একই পরিণতি?

আপডেট সময় : ১২:৫৮:১৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৬ মে ২০২৫
“যেই যায় লঙ্কায়, সেই হয় রাবন” প্রবাদ বাক্যটির সর্বাধিক প্রয়োগ রাজনীতির ক্ষেত্রে। আজ যিনি বিরোধী দলে জননন্দিত, কালই তিনি ক্ষমতার গদিতে বসে নিজেই স্বৈরাচার। স্বৈরাচার না হলেও ক্ষমতার স্বাদ পেয়ে আগের সততা ও নীতি-নৈতিকতার পথ থেকে সরে আসেন অধিকাংশ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। এমন পাল্টি দেয়া স্বভাবে সৃষ্টি হয় তার প্রতি গণরোষ। তিনি আর থাকেন না জনতার কাতারে। সে রাজনীতিবিদকে রক্ষায় লাগে নিরাপত্তা বেষ্টনী আর প্রহরী।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অনেকে শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগকে দেশ থেকে বিতাড়িত করার জুলাই অভ্যুত্থানের প্রথম কাতারের নেতা অর্থাৎ সমন্বয়কদের সঙ্গে মিল খুঁজে পাচ্ছেন ৯০ এর এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের ছাত্র নেতৃবর্গের।
এ প্রসঙ্গে ক’জনের নামসহ উদাহরণ দিলে বিষয়টি সহজবোধ্য হয়। ৯০ এর গণঅভ্যুত্থানের প্রথম সারির নেতা ছিলেন সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্যের নেতা আমানুল্লাহ আমান, খাইরুল কবির খোকন, জহিরউদ্দিন স্বপন ও অসীম কুমার উকিল প্রমুখ। তাদের নেতৃত্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রিক ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ৯ বছর গদি আঁকড়ে ধরা এরশাদ ক্ষমতা হস্তান্তরে বাধ্য হন। কিন্তু তিন দশকের বেশি সময় পরও তৎকালীন এই ছাত্রনেতারা জাতীয় রাজনীতিতে তেমন অগ্রসর ভূমিকায় থাকতে পারেননি। আমানুল্লাহ আমান, খায়রুল কবির খোকন, জহিরউদ্দিন স্বপন এখন পর্যন্ত বিএনপির মধ্যম সারির নেতা হিসেবে গণ্য। অসীম কুমার উকিল আওয়ামী লীগের মধ্য সারি পেরোতে পারেননি। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর এখন আছেন ভারতে। জিয়াউদ্দিন বাবলু এখনও করেন সেই এরশাদের দল। জাতীয় পার্টির সিদ্ধান্ত গ্রহণে কোনো গুরুতর ভূমিকায় তিনি নেই।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় ও এরপর থেকে মানুষের কাছে পরিচিত হয়ে ওঠেন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক ও ছাত্রনেতা নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ, সারজিস আলম, হাসনাত আবদুল্লাহ ও মাহফুজ আলম। এর মধ্যে গত ৯ মাসে ধীরে ধীরে ক্ষয় হয়েছে তাদের বিরোধী রাজনীতি করাকালীন ইমেজ। কারও বিরুদ্ধে সরকারের উপদেষ্টা থাকাকালে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। কারও বিরুদ্ধে অতীতের সরকার সমর্থক ছাত্রনেতা সুলভ আচরণ থেকে চাদাবাজির অভিযোগ উঠেছে। যদিও এগুলো অভিযোগ। কেউই দণ্ডিত বা দায়ী হিসেবে কোনো ঘটনায় প্রমাণিত হননি। তবু এটা সবাই মানবেন যে তারা আগের জনপ্রিয়তা হারিয়েছেন বহু গুণে। সামনের জাতীয় রাজনীতিতে এই ছাত্রনেতাদের ভূমিকা কতটা প্রবল হবে তাও প্রশ্নবিদ্ধ আজকের সময়ে।
নন্দিত আর নিন্দিত এর গ্যাঁড়াকলের তীক্ষ্ম গিরিখাদ ধরে যেন রাজনীতির বয়ে চলে। আজকের তরুণ নেতৃত্ব জাতীয় রাজনীতিতে এসে যদি রিয়েল ইমপ্যাক্ট ফ্যাক্টর না হতে পারেন তবে ইতিহাস তাদের ৯০ এর ছাত্রনেতাদের কাতারেই খুঁজে ফিরবে ২৪ এর অভ্যুত্থান উত্তর সময়ে।