রাজধানীর শাহবাগ ও পল্টনে বৃহৎ দু’টি রাজনৈতিক দলের সমাবেশকে কেন্দ্র করে রাজধানীজুড়ে ব্যাপক যানজট সৃষ্টি হয়েছে। এতে অচল হয়ে পড়েছে রাস্তায় যান চলাচল।
যেকোনো কর্মদিবসে রাজধানীতে সকালের দিকে যানজট বেশি থাকে। যানজট সকাল সাড়ে ৮টা থেকে সাড়ে ১০টা পর্যন্তই বেশি থাকে সাধারণত। তবে আজ সেই যানজটের মাত্রা অনেক বেশি দেখা যায়। যা দুপুর ১টা পর্যন্ত তীব্র আকার ধারণ করে। বিএনপি ও জামায়াতের পৃথক রাজনৈতিক কর্মসূচির কারণে এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক বিভাগ জানিয়েছে, দু’টি বৃহৎ রাজনৈতিক দলের কর্মসূচির কারণে নগরীর প্রধান সড়কগুলোতে যান চলাচল বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে।
বুধবার (২৮ মে) সকাল ৯টার দিকে বিজয় সরণি থেকে সামনে এগিয়ে একেবারে কারওয়ান বাজার পর্যন্ত শুধু যানবাহনের সারি দেখা যায়। গাড়ি একটুও সরছিল না।
কারওয়ান বাজারের সামনে দিয়ে যাওয়া এলিভিটেড এক্সপ্রেসওয়ের যত দূর চোখ যায়, শুধু গাড়ি আর গাড়ি। উঁচু একটি ভবন থেকে দেখা যায়, আটকে থাকা বাসগুলো থেকে অনেকেই হাঁটা শুরু করেছেন।

এরপর সারা শহরে যানজট ছড়িয়ে যায়। বেলা একটার দিকে এই প্রতিবেদন লেখার সময় যানজট তীব্র আকার নেয়। সরেজমিনে দেখা যায়, ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবকদলের উদ্যোগে পল্টনে আয়োজিত বিএনপির ‘তারুণ্যের সমাবেশ’ ঘিরে রাজধানীতে নেতাকর্মীদের ঢল নামে। গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, কুমিল্লাসহ আশপাশের জেলাগুলো থেকে হাজারো নেতাকর্মী বাসে রাজধানীতে প্রবেশ করতে থাকেন। এতে ঢাকার প্রবেশপথগুলোতেও যানজট তৈরি হয়।
সমাবেশের মূল কেন্দ্র পল্টন মাঠ, তবে এর প্রভাব পড়ে আশপাশের এলাকাগুলোতেও। প্রেসক্লাব মোড়, জিরো পয়েন্ট, দৈনিক বাংলা মোড়, বিজয়নগর, নাইটিঙ্গেল, শাহবাগ, সাইন্সল্যাব এবং মতিঝিলে সৃষ্টি হয় দীর্ঘ যানজট। এসব এলাকায় অপরিকল্পিত বাস পার্কিং করে রাখা হয়েছে। এসব গাড়ির যাত্রীদের থেকে জানা যাযয়, তারা সবাই বিএনপির ‘তারুণ্যের সমাবেশে’ যোগ দিতে এসেছে। অন্যদিকে, জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নেতা আজহারুল ইসলামের মুক্তির পর হঠাৎ করে শাহবাগ এলাকায় দলটির নেতাকর্মীরা জড়ো হতে থাকেন। সকাল সাড়ে ৮টার পর থেকেই তাদের অবস্থানকে কেন্দ্র করে শাহবাগ মোড় এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকায় সৃষ্টি হয় ব্যাপক যানজট।
শাহবাগ এলাকায় দায়িত্বরত এক ট্রাফিক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, জামায়াতের নেতাকর্মীরা হঠাৎ করে শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নেওয়ায় মূল সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এ যানজট দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে পল্টন ও রমনা এলাকাতেও।
সকাল ১০টার পর থেকেই মতিঝিল এলাকায় একেবারে স্থবির পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। কর্মব্যস্ত এই এলাকায় হাজারো মানুষ অফিসে যেতে গিয়ে পড়ে চরম দুর্ভোগে। যানজটের কারণে অনেকে হেঁটে বিকল্প রাস্তায় গন্তব্যে পৌঁছানোর চেষ্টা করেন। শান্তিনগর এলাকায় আটকে থাকা যাত্রী মো. আব্দুল কালাম বলেন, সকাল ১১টায় উত্তরা থেকে বের হয়েছি, এখন পর্যন্ত মতিঝিল পৌঁছাতে পারিনি। শান্তিনগরেই আটকে আছি। প্রচণ্ড গরমে এই যানজট একেবারেই অসহনীয়।

নাইটিঙ্গেল মোড়ে যানজটে আটকে থাকা সিএনজি চালক আনোয়ার হোসেন বলেন, আজ খুব খারাপ দিন গেছে। সিএনজির জমার টাকাটাই উঠাতে পারবো না। এখন পর্যন্ত মাত্র একটা টিপ মেরেছি। যানজটের কারণে কাকরাইল-নাইটিঙ্গেল এলাকা থেকে বের হতে পারছি না।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) মো. সরওয়ার আজ বেলা পৌনে ১টার দিকে বলেন, রাজধানীতে আজ বিএনপির তিন সংগঠনের তারুণ্যের সমাবেশ আছে। সেখানে কয়েক লাখ লোক আসার কথা। এ জন্য গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, কুমিল্লা থেকে বাসে করে নেতা-কর্মীরা রাজধানীতে আসছেন। নগরীর আশপাশ থেকেও বাস ভর্তি করে লোকজন আসছেন। শুধু মিরপুর ও উত্তরার কিছু অংশ বাদ দিয়ে পুরো নগরেই আজ যানজট।
মো. সরওয়ার বলেন, আজ সকালে জামায়াতের নেতা আজহারুল ইসলামের মুক্তির পর শাহবাগে বিপুলসংখ্যক লোক জড়ো হন। তখন সেখানে যানজট শুরু হয়। এটাই যানজটের শুরু। এরপর তারুণ্যের সমাবেশ ঘিরে তা আরও বেড়েছে। দুই রাজনৈতিক সমাবেশের কারণেই এত যানজট আজ নগরে।
ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) মো. সরওয়ার বলেন, নগরে ঢোকার সব কটি স্থানে আজ অতিরিক্ত যানবাহনের চাপ। আর এটা সামলাতে ডিএমপির উপকমিশনার থেকে শুরু করে পরিদর্শকদের সবাই মাঠে আছেন। যানজট পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে যথাসাধ্য চেষ্টা করা হচ্ছে।
ট্রাফিক সূত্র জানিয়েছে, সন্ধ্যা পর্যন্ত যানজট পরিস্থিতির উন্নতির সম্ভাবনা খুব একটা নেই।
এমআর/সব


























