বাংলা পঞ্জিকা অনুযায়ী আজ পহেলা আষাঢ়। নদীবিধৌত এ জনপদে এক ভিন্ন আবহের স্রষ্টা এ ঋতু। আনুষ্ঠানিকভাবে বর্ষাকালের সূচনা আজ থেকে। যদিও এবার বৃষ্টি হচ্ছে বেশ আগে থেকেই। আরও বৃষ্টির পূর্বাভাস জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা।
কৃষিনির্ভর বাংলাদেশ অনেকভাবে ঋণী এই বর্ষার কাছে। তবে বিপত্তি ঘটে অতিবৃষ্টিতে। একই দশা আবার অনাবৃষ্টিতে। খরা যেন না হয়। তেমন চাই না কারও যত্নে লালিত মাছ ভেসে যাক বর্ষার পানিতে। চাই ইলশে গুঁড়ি বৃষ্টিতে বেশি বেশি ইলিশ উঠুক উজান ভাটি পাড়ি দেওয়া জেলেদের জালে। সে ইলিশ শুধু শহরবাসীর জন্য নয়, জেলেপাড়ায়ও সৌরভ ছড়াক ভাজা ইলিশ।
বাংলা সাহিত্য অপূর্ণ বর্ষা-বন্দনা ছাড়া। কালিদাস থেকে শুরু করে রবীন্দ্রনাথ, নজরুল হয়ে হুমায়ূন, সুনীল ছাড়িয়ে বিস্তৃত বর্ষা কাতরতা। কিন্তু কবিতার আবেগ কতক্ষণ ধরে রাখা যায়? বাস্তবে যখন দেখি প্রাচুর্যে ভরা শহর তলিয়ে একটু বৃষ্টিতে। কিংবা সদ্য তৈরি নতুন রাস্তা আবার গর্ত করে খোড়াখুঁড়ি চালায় সরকারি লোকেরা। তখন বুঝতে হয় বর্ষা কোনো ঘটনা নয়। আসল ঘটনা জুন, জুলাইয়ের বাজেট। বরাদ্দ অর্থের নয়-ছয় করতেই বর্ষাকে দায়ী করার এই তৎপরতা।
বৃষ্টির পানি বিশুদ্ধ। ভূগর্ভের পানি কম ব্যবহার করে বিশেষজ্ঞরা বলছেন বর্ষার পানি জমিয়ে রাখার কথা। আধুনিক স্থাপত্য মণ্ডিত অনেক ভবন হচ্ছে শহরে। যেগুলোকে ডাকা হচ্ছে ‘স্মার্ট বিল্ডিং’ হিসেবে। এর কতটিতে বর্ষার পানি সংরক্ষণের ব্যবস্থা আছে জানি না। এ নিয়ে জোরদার উদ্যোগ দেখতে চাই সরকারি, বেসরকারি সব মহলে।
বর্ষায় মনে হয় বৃষ্টিস্নাত প্রকৃতি যেন কাঁদে আমাদের মানুষের অসহায়ত্বে। একেই কি আমরা “বৃষ্টি” নামে ডাকি? আমরা ঝিরিঝিরি ভিজতে থাকি। পথে নামতে বাধ্য কিন্তু প্যাসেঞ্জার না পাওয়া রিকশাচালকের মতোন। ক্রন্দনের বর্ষা যেন না আসে। প্রশান্তির বর্ষণ যেন সবাইকে ছুঁয়ে যায়। যাতে স্নিগ্ধ হয় চারপাশ। যদিও জানি কবীর সুমনের অব্যর্থ সেই গান “শহুরে বৃষ্টি”র লাইন, …“শহুরে বৃষ্টি শোনে কি কখনও মেঘমল্লার?”

























