০৩:৪৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৩ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

করোনার মতোই ধরণ বদলাচ্ছে ডেঙ্গু

* ডেঙ্গুর সঙ্গে করোনার হানা, বিপাকে স্বাস্থ্য খাত
* ডেঙ্গুতে প্লাটিলেট কমলেও বদলাচ্ছে লক্ষণ
* করোনায় নতুন ভ্যারিয়েন্ট, ডেঙ্গুতে বাড়ছে হার্টের জটিলতা

‘আতঙ্কিত না হয়ে মানুষকে সচেতন হতে হবে। ডেঙ্গু ও করোনা প্রতিরোধে সচেতনতাই মূল করণীয়’
-অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক

‘উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ লার্ভার এলাকায় প্রাপ্তবয়স্ক মশা মারতে ফগার মেশিনে ওষুধ ছিটানোর বিকল্প নেই। এ ক্ষেত্রে সিটি করপোরেশনের তৎপরতা যতটুকু থাকা দরকার ছিল, ততটুকু আমাদের চোখে পড়ে না’
– ডা. লেনিন চৌধুরী, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ

২০২০ থেকে ২০২৩ সালের শেষ পর্যন্ত নানান ধরনের ভ্যারিয়েন্টে করোনা ভাইরাস ভুগিয়েছিল দেশবাসীকে। সম্প্রতি আবারও বাড়ছে করোনার সংক্রমণ, তবে ভিন্ন রূপে। করোনার মতোই রূপ পাল্টাচ্ছে ডেঙ্গুও। চিকিৎসকেরা বলছেন, দুই-তিন বছর আগে ডেঙ্গুর যেরকম লক্ষণ দেখা যেত যেমন-১০৪ থেকে ১০৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট তাপমাত্রায় জ্বর, র‌্যশ আসা, চার-পাঁচ দিন পর প্লাটিলেট কমে যাওয়া; সে রকম লক্ষণ এখন দেখা যাচ্ছে না। হঠাৎ করেই জ্বর বা সামান্য জ্বর। দুই-তিন দিনের মধ্যে প্লাটিলেট কমে যাওয়া, রক্তক্ষরণ শুরু হয়ে যাওয়ার মতো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। সবচেয়ে ভয়ঙ্কর দিক হচ্ছে ডেঙ্গুর সঙ্গে পেটে কিংবা বুকে পানি, হার্টের সমস্যার মতো জটিলতা এবার বেশি হচ্ছে। তবুও ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী এডিস মশা নিধনে অনেকটাই নির্ভার ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আতঙ্কিত না হয়ে মানুষকে সচেতন হতে হবে। ডেঙ্গু ও করোনা প্রতিরোধে সচেতনতাই মূল করণীয়। তারা বলছেন, ডেঙ্গু প্রতিরোধে উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ লার্ভার এলাকায় প্রাপ্তবয়স্ক মশা মারতে ফগার মেশিনে ওষুধ ছিটানোর বিকল্প নেই। এ ক্ষেত্রে সিটি করপোরেশনের তৎপরতা অনেকটাই কম বলছেন তারা। করোনা প্রতিরোধেও সবাইকে সচেতন থাকার পরামর্শ তাদের।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জরিপ মতে, মৌসুম শুরুর আগেই ঢাকার দুই সিটির ১৩টি ওয়ার্ডে এডিস মশার লার্ভার ঘনত্ব ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় পাওয়া গেছে। জরিপটি করা হয়েছিল গত ফেব্রুয়ারি মাসে, যা গত বুধবার প্রকাশ করা হয়। কিন্তু সাম্প্রতিক বাস্তবতায় বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রতিটি ওয়ার্ডই ঝুঁকিপূর্ণ। শুধু রাজধানী নয়, এডিসের লার্ভার ঘনত্ব বাড়ায় সারা দেশই ঝুঁকিপূর্ণ। সারা দেশেই এবার ডেঙ্গুর বিস্ফোরণের আশঙ্কা রয়েছে। তাই মশা নিধনে লোক দেখানো আড়ম্ভর না করে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার তাগিদ তাদের। এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু রোগের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা প্রতি বছর তিনটি জরিপ পরিচালনা করত। কিন্তু বর্তমান সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর জরিপগুলো করা হয়নি। বিগত এক বছরে গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মাত্র একটি জরিপ পরিচালনা করে রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর), যা গত বুধবার প্রকাশ করা হয়। কিন্তু ফেব্রুয়ারির জরিপ জুন মাসে কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয় বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
এদিকে, এডিস মশার লার্ভার ঘনত্ব পরিমাপের সূচক ‘ব্রুটো ইনডেক্স’ নামে পরিচিত। সাধারণত এডিস মশার লার্ভার ঘনত্ব পরিমাপের স্বীকৃত পদ্ধতি ‘ব্রুটো ইনডেক্স’-এর মানদণ্ডে লার্ভার ঘনত্ব ২০ শতাংশের বেশি হওয়া মানেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে। দুই সিটির ৯৯টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১৩টিতে ব্রুটো ইনডেক্স ২০-এর বেশি। এই এলাকাগুলো ডেঙ্গুর উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে। উভয় সিটিতেই এডিস মশার লার্ভা সবচেয়ে বেশি পাওয়া গেছে বহুতল ভবনে ৫৮ দশমিক ৮৮ শতাংশ। এ ছাড়া ১৯ দশমিক ৬৩ শতাংশ নির্মাণাধীন ভবনে, একক বাড়িতে ৯ দশমিক ৮ শতাংশ, সেমিপাকা বাড়িতে ৮ দশমিক ৮৮ শতাংশ এবং ফাঁকা স্থানে ২ দশমিক ৮ শতাংশ। কিন্তু শুধু ঢাকা নয়, বরিশালসহ আরও দক্ষিণাঞ্চলের কয়েকটি জেলায় ডেঙ্গুর লার্ভার ঘনত্ব ২০-এর ওপরে পাওয়া গেছে। বতর্মান প্রেক্ষাপটে শুধু ঢাকা নয়, সারা দেশই ঝুঁকিপূর্ণ বলছেন সংশ্লিষ্টরা। বিশেষ করে দেশের ১১টি জেলা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এর মধ্যে এখনো সর্বোচ্চ সংক্রমণ রাজধানী ঢাকায়। বাকি ১০ জেলা ঢাকার বাইরে। এসব জেলায় গত দুই মাসে চারগুণ রোগী বেড়েছে। বিশেষ করে বরগুনা, বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় ডেঙ্গু পরিস্থিতি উদ্বেগজনক হয়ে উঠেছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গত মঙ্গলবার পর্যন্ত দেওয়া তথ্যমতে, এ বছর সর্বোচ্চ রোগী পাওয়া গেছে বরগুনায় ১ হাজার ৮৩২ জন, বছরে রোগীর ২৮ শতাংশ। অথচ দুই মাস আগেও এখানে রোগী ছিল মাত্র ১২৮ জন। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সংক্রমণ রাজধানীতে। এখানে রোগী ১ হাজার ৪৭২ জন, যা বছরে রোগীর ২৩ শতাংশ। এরপর বরিশালে ৫৭৫ জন, পটুয়াখালীতে ৩৭৯, চট্টগ্রামে ৩১২, কুমিল্লায় ২০৪, গাজীপুরে ১৩৭, কক্সবাজারে ১৩৪, মাদারীপুরে ১২৩, পিরোজপুরে ১১৯ ও চাঁদপুরে ১১১ জন রোগী পাওয়া গেছে। এ বছর রোগীর ৮৩ শতাংশ এই ১১ জেলার। বাকি ৪৮ জেলায় ১ হাজার ৬৮ জন রোগী। সর্বোচ্চ রোগী বরিশালে, সর্বনিম্ন সিলেটে।
এদিকে, উত্তর সিটিতে লোক দেখানো মশা নিধনে কিছুটা তৎপরতা দেখলেও সপ্তাহে এক দিন ফগার মেশিনে মশার ওষুধ ছিটাতে দেখেন না দক্ষিণ সিটির বাসিন্দারা। কিন্তু এসব এলাকাতেই রোগী বেশি। এমন অবস্থা চলতে থাকলে করোনার মতো ডেঙ্গুও ভয়াবহ রূপ ধারণ করতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। রাজধানীতে ঝুঁকিপূর্ণ ১৩ এলাকার বাসিন্দারা অভিযোগ করছেন, প্রতি তিন দিন পর পর তো দূরে থাক, সপ্তাহে এক দিনও মশার ওষুধ ছিটাতে দেখেন না কেউ।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেনিন চৌধুরী বলেন, এসব উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ লার্ভার এলাকায় প্রাপ্তবয়স্ক মশা মারতে ফগার মেশিনে ওষুধ ছিটানোর বিকল্প নেই। এ ক্ষেত্রে সিটি করপোরেশনের তৎপরতা যতটুকু থাকা দরকার ছিল, ততটুকু আমাদের চোখে পড়ে না। বিশেষ কিছু এলাকা আছে অটোনোমাস। যেমন- বিমানবন্দর, স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় নিয়মিত মশার ওষুধ ছিটানোর পাশাপাশি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ বলেন, আতঙ্কিত না হয়ে মানুষকে সচেতন হতে হবে। ডেঙ্গু ও করোনা প্রতিরোধে সচেতনতাই মূল করণীয়। সচেতন থাকলে আক্রান্তের হার কমে আসবে।

জনপ্রিয় সংবাদ

সব রেকর্ড ভেঙে স্বর্ণের দামে নতুন ইতিহাস, ভরি ছাড়াল দুই লাখ ২৭ হাজার

করোনার মতোই ধরণ বদলাচ্ছে ডেঙ্গু

আপডেট সময় : ০৮:২৫:১৩ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২০ জুন ২০২৫

* ডেঙ্গুর সঙ্গে করোনার হানা, বিপাকে স্বাস্থ্য খাত
* ডেঙ্গুতে প্লাটিলেট কমলেও বদলাচ্ছে লক্ষণ
* করোনায় নতুন ভ্যারিয়েন্ট, ডেঙ্গুতে বাড়ছে হার্টের জটিলতা

‘আতঙ্কিত না হয়ে মানুষকে সচেতন হতে হবে। ডেঙ্গু ও করোনা প্রতিরোধে সচেতনতাই মূল করণীয়’
-অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক

‘উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ লার্ভার এলাকায় প্রাপ্তবয়স্ক মশা মারতে ফগার মেশিনে ওষুধ ছিটানোর বিকল্প নেই। এ ক্ষেত্রে সিটি করপোরেশনের তৎপরতা যতটুকু থাকা দরকার ছিল, ততটুকু আমাদের চোখে পড়ে না’
– ডা. লেনিন চৌধুরী, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ

২০২০ থেকে ২০২৩ সালের শেষ পর্যন্ত নানান ধরনের ভ্যারিয়েন্টে করোনা ভাইরাস ভুগিয়েছিল দেশবাসীকে। সম্প্রতি আবারও বাড়ছে করোনার সংক্রমণ, তবে ভিন্ন রূপে। করোনার মতোই রূপ পাল্টাচ্ছে ডেঙ্গুও। চিকিৎসকেরা বলছেন, দুই-তিন বছর আগে ডেঙ্গুর যেরকম লক্ষণ দেখা যেত যেমন-১০৪ থেকে ১০৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট তাপমাত্রায় জ্বর, র‌্যশ আসা, চার-পাঁচ দিন পর প্লাটিলেট কমে যাওয়া; সে রকম লক্ষণ এখন দেখা যাচ্ছে না। হঠাৎ করেই জ্বর বা সামান্য জ্বর। দুই-তিন দিনের মধ্যে প্লাটিলেট কমে যাওয়া, রক্তক্ষরণ শুরু হয়ে যাওয়ার মতো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। সবচেয়ে ভয়ঙ্কর দিক হচ্ছে ডেঙ্গুর সঙ্গে পেটে কিংবা বুকে পানি, হার্টের সমস্যার মতো জটিলতা এবার বেশি হচ্ছে। তবুও ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী এডিস মশা নিধনে অনেকটাই নির্ভার ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আতঙ্কিত না হয়ে মানুষকে সচেতন হতে হবে। ডেঙ্গু ও করোনা প্রতিরোধে সচেতনতাই মূল করণীয়। তারা বলছেন, ডেঙ্গু প্রতিরোধে উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ লার্ভার এলাকায় প্রাপ্তবয়স্ক মশা মারতে ফগার মেশিনে ওষুধ ছিটানোর বিকল্প নেই। এ ক্ষেত্রে সিটি করপোরেশনের তৎপরতা অনেকটাই কম বলছেন তারা। করোনা প্রতিরোধেও সবাইকে সচেতন থাকার পরামর্শ তাদের।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জরিপ মতে, মৌসুম শুরুর আগেই ঢাকার দুই সিটির ১৩টি ওয়ার্ডে এডিস মশার লার্ভার ঘনত্ব ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় পাওয়া গেছে। জরিপটি করা হয়েছিল গত ফেব্রুয়ারি মাসে, যা গত বুধবার প্রকাশ করা হয়। কিন্তু সাম্প্রতিক বাস্তবতায় বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রতিটি ওয়ার্ডই ঝুঁকিপূর্ণ। শুধু রাজধানী নয়, এডিসের লার্ভার ঘনত্ব বাড়ায় সারা দেশই ঝুঁকিপূর্ণ। সারা দেশেই এবার ডেঙ্গুর বিস্ফোরণের আশঙ্কা রয়েছে। তাই মশা নিধনে লোক দেখানো আড়ম্ভর না করে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার তাগিদ তাদের। এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু রোগের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা প্রতি বছর তিনটি জরিপ পরিচালনা করত। কিন্তু বর্তমান সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর জরিপগুলো করা হয়নি। বিগত এক বছরে গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মাত্র একটি জরিপ পরিচালনা করে রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর), যা গত বুধবার প্রকাশ করা হয়। কিন্তু ফেব্রুয়ারির জরিপ জুন মাসে কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয় বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
এদিকে, এডিস মশার লার্ভার ঘনত্ব পরিমাপের সূচক ‘ব্রুটো ইনডেক্স’ নামে পরিচিত। সাধারণত এডিস মশার লার্ভার ঘনত্ব পরিমাপের স্বীকৃত পদ্ধতি ‘ব্রুটো ইনডেক্স’-এর মানদণ্ডে লার্ভার ঘনত্ব ২০ শতাংশের বেশি হওয়া মানেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে। দুই সিটির ৯৯টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১৩টিতে ব্রুটো ইনডেক্স ২০-এর বেশি। এই এলাকাগুলো ডেঙ্গুর উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে। উভয় সিটিতেই এডিস মশার লার্ভা সবচেয়ে বেশি পাওয়া গেছে বহুতল ভবনে ৫৮ দশমিক ৮৮ শতাংশ। এ ছাড়া ১৯ দশমিক ৬৩ শতাংশ নির্মাণাধীন ভবনে, একক বাড়িতে ৯ দশমিক ৮ শতাংশ, সেমিপাকা বাড়িতে ৮ দশমিক ৮৮ শতাংশ এবং ফাঁকা স্থানে ২ দশমিক ৮ শতাংশ। কিন্তু শুধু ঢাকা নয়, বরিশালসহ আরও দক্ষিণাঞ্চলের কয়েকটি জেলায় ডেঙ্গুর লার্ভার ঘনত্ব ২০-এর ওপরে পাওয়া গেছে। বতর্মান প্রেক্ষাপটে শুধু ঢাকা নয়, সারা দেশই ঝুঁকিপূর্ণ বলছেন সংশ্লিষ্টরা। বিশেষ করে দেশের ১১টি জেলা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এর মধ্যে এখনো সর্বোচ্চ সংক্রমণ রাজধানী ঢাকায়। বাকি ১০ জেলা ঢাকার বাইরে। এসব জেলায় গত দুই মাসে চারগুণ রোগী বেড়েছে। বিশেষ করে বরগুনা, বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় ডেঙ্গু পরিস্থিতি উদ্বেগজনক হয়ে উঠেছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গত মঙ্গলবার পর্যন্ত দেওয়া তথ্যমতে, এ বছর সর্বোচ্চ রোগী পাওয়া গেছে বরগুনায় ১ হাজার ৮৩২ জন, বছরে রোগীর ২৮ শতাংশ। অথচ দুই মাস আগেও এখানে রোগী ছিল মাত্র ১২৮ জন। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সংক্রমণ রাজধানীতে। এখানে রোগী ১ হাজার ৪৭২ জন, যা বছরে রোগীর ২৩ শতাংশ। এরপর বরিশালে ৫৭৫ জন, পটুয়াখালীতে ৩৭৯, চট্টগ্রামে ৩১২, কুমিল্লায় ২০৪, গাজীপুরে ১৩৭, কক্সবাজারে ১৩৪, মাদারীপুরে ১২৩, পিরোজপুরে ১১৯ ও চাঁদপুরে ১১১ জন রোগী পাওয়া গেছে। এ বছর রোগীর ৮৩ শতাংশ এই ১১ জেলার। বাকি ৪৮ জেলায় ১ হাজার ৬৮ জন রোগী। সর্বোচ্চ রোগী বরিশালে, সর্বনিম্ন সিলেটে।
এদিকে, উত্তর সিটিতে লোক দেখানো মশা নিধনে কিছুটা তৎপরতা দেখলেও সপ্তাহে এক দিন ফগার মেশিনে মশার ওষুধ ছিটাতে দেখেন না দক্ষিণ সিটির বাসিন্দারা। কিন্তু এসব এলাকাতেই রোগী বেশি। এমন অবস্থা চলতে থাকলে করোনার মতো ডেঙ্গুও ভয়াবহ রূপ ধারণ করতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। রাজধানীতে ঝুঁকিপূর্ণ ১৩ এলাকার বাসিন্দারা অভিযোগ করছেন, প্রতি তিন দিন পর পর তো দূরে থাক, সপ্তাহে এক দিনও মশার ওষুধ ছিটাতে দেখেন না কেউ।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেনিন চৌধুরী বলেন, এসব উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ লার্ভার এলাকায় প্রাপ্তবয়স্ক মশা মারতে ফগার মেশিনে ওষুধ ছিটানোর বিকল্প নেই। এ ক্ষেত্রে সিটি করপোরেশনের তৎপরতা যতটুকু থাকা দরকার ছিল, ততটুকু আমাদের চোখে পড়ে না। বিশেষ কিছু এলাকা আছে অটোনোমাস। যেমন- বিমানবন্দর, স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় নিয়মিত মশার ওষুধ ছিটানোর পাশাপাশি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ বলেন, আতঙ্কিত না হয়ে মানুষকে সচেতন হতে হবে। ডেঙ্গু ও করোনা প্রতিরোধে সচেতনতাই মূল করণীয়। সচেতন থাকলে আক্রান্তের হার কমে আসবে।