- সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের আমানত বেড়েছে ৩৩ গুণ
- অর্থের মালিকদের খোঁজে এসএনবিতে যোগাযোগের চিন্তা
- খতিয়ে দেখা হবে হাসিনা-রেহানার সংশ্লিষ্টতা
সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের অর্থের খোঁজে সরকার সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করবে। এ বিষয়ে জরুরিভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। – শফিকুল আলম, প্রেস সচিব
দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত সম্পদ এবং সেগুলো বিদেশে পাচার হওয়া বন্ধ করতে দুদক ও আদালতকে আরও স্বাধীন করতে হবে। – মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম, সাবেক অর্থ উপদেষ্টা
সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুইস ন্যাশনাল ব্যাংক (এসএনবি) সম্প্রতি প্রকাশিত বার্ষিক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ২০২৪ সালে সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের আমানতের পরিমাণ ৩৩ গুণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৮ কোটি ৯৫ লাখ সুইস ফ্র্যাংক। স্থানীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ প্রায় ৮৮৩৪ কোটি টাকা। আগের বছর এই পরিমাণ ছিল মাত্র ২৬৫ কোটি টাকা। যা বাংলাদেশের ২২টি বেসরকারি ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধনের সমান। দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের পরে এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয়।
এই বিপুল অঙ্কের অর্থ কীভাবে গেল, কারা গেল, কোথা থেকে এলো এবার এসবের উত্তর খুঁজতে সরকারি পর্যায়ে শুরু হয়েছে গঠনমূলক পদক্ষেপ। জানা গেছে, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস নিজেই এই বিষয়ে আন্তর্জাতিক মহলে সক্রিয় হচ্ছেন। নোবেলজয়ী এই অর্থনীতিবিদের কূটনৈতিক গ্রহণযোগ্যতা এবং পরিচিতি ব্যবহার করেই সুইস কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় সূত্র জানায়, সুইস ন্যাশনাল ব্যাংকের সঙ্গে সরাসরি আলোচনা, আন্তর্জাতিক ল ফার্ম নিয়োগ, তথ্য আদান-প্রদান এবং আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের লক্ষ্যে কার্যক্রম পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হবে ১১ সদস্যের টাস্কফোর্স কমিটিকে। এ কমিটিতে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়, বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ), দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স সেল (সিআইসি), সিআইডি, পররাষ্ট্র, অর্থ মন্ত্রণালয়সহ সরকারের একাধিক দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা রয়েছেন। এরই মধ্যে এ কমিটি বিগত সরকারের মন্ত্রী-এমপিসহ বিভিন্ন ব্যক্তি প্রতিষ্ঠানের পাচারের অর্থ ফেরত আনতে কাজ করছে।
সূত্র জানায়, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানা সুইজারল্যান্ড সফরকালে সুইস কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিনিধিদের সঙ্গে কোনো ধরনের বৈঠক হয়েছে কি না, তার খোঁজ নেওয়া হবে। এ ছাড়া এ সময়ে সুইস ব্যাংকের কোনো ধরনের কাগজপত্রে স্বাক্ষর করেছেন কি না তাও খতিয়ে দেখা হবে। এর আগে ভারত সুইস ব্যাংক থেকে সে দেশের অর্থ পাচারকারীদের একটি তালিকা আনতে সক্ষম হয়েছিল। বাংলাদেশ ভারত সরকারের কাজের পদ্ধতি সম্পর্কে খোঁজ নেবে। এ বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের অর্থের খোঁজে সরকার সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করবে। এ বিষয়ে জরুরিভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সরকার প্রধান আন্তর্জাতিক অঙ্গনে অত্যন্ত সুপরিচিত ব্যক্তি। গত বছর ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ফলে সরকার পরিবর্তন হয়। যারা গত ১৫-১৬ বছর দুর্নীতি করে অর্থ জমিয়েছেন তারাই এ পাচারের সঙ্গে জড়িত- এমন ধারণা সামনে রেখে অনুসন্ধান করা হবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, অর্থ পাচার রোধে ডেটা অ্যানালিটিকস, এনবিআর, বিএফআইইউ ও কাস্টমসের সমন্বিত কাজ অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। হুন্ডি, ওভার-ইনভয়েসিং, আন্ডার-ইনভয়েসিং এসব অবৈধ লেনদেন পর্যবেক্ষণে আধুনিক প্রযুক্তি ও তথ্যভিত্তিক নজরদারি না বাড়ালে পাচারকারীরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকবে। অনেক সময় অর্থ পাচারকারীরা প্রভাবশালী হয়। এ জন্য সরকার বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠন করতে হতে পারে- যেটি স্বাধীনভাবে তদন্ত করে, নাম প্রকাশ করতে পারে। সরকার যদি সত্যিই রাজনৈতিক সদিচ্ছা দেখায়, তবে সুইস ব্যাংকে আটকে থাকা অর্থ ফিরিয়ে আনা অসম্ভব নয় বিশেষজ্ঞরা এমনটাই মনে করছেন। সুইজারল্যান্ড ও অন্যান্য দেশ থেকে বাংলাদেশি নাগরিকদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টের তথ্য পেতে হলে বাংলাদেশের উচিত অটোমেটিক এক্সচেঞ্জ অব ইনফরমেশন (এইওআই) এ সম্পর্কে সম্পৃক্ত হতে হবে। এটি বাস্তবায়ন হলে বাংলাদেশ সরকারকে প্রতিবছর স্বয়ংক্রিয়ভাবে বিদেশি ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশি নাগরিকদের অ্যাকাউন্টের তথ্য সরবরাহ করতে বাধ্য হবে।
সাবেক তত্ত্বাধবায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত সম্পদ এবং সেগুলো বিদেশে পাচার হওয়া বন্ধ করতে সরকারকে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও আদালতকে আরও স্বাধীন করতে হবে। তাদের কাজের দক্ষতা আরও বাড়াতে হবে। রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ মুক্ত রাখতে হবে। বিদেশে পাচার হওয়া অর্থের ক্ষেত্রে মানি লন্ডারিং আইনে মামলা করেও সরকার পাচার হওয়া অর্থ পুনরুদ্ধারের উদ্যোগ নিতে পারে।

























