০৭:৫৪ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

চেইনচালিত একটি রিকশা চান অসহায় প্রতিবন্ধী বাচ্চু মিয়া

নান্দাইল (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি 
৩৬ বছর ধরে এক হাতে ভর করে চলেন বাচ্চু মিয়া (৪৬)।বসে বসেই তিনি চলেন তাও আবার এক হাতে ভর করে। জন্মের ১০ বছর বয়স পর্যন্ত ভালো ছিলেন প্রতিবন্ধী বাচ্চু মিয়া। অন্য শিশুদের মতো স্কুলে যাওয়া,খেলাধুলা করা সবকিছুই ছিল তার স্বাভাবিক। কিন্তু যখন তার বয়স ১০ তখন পোলিও  রোগে আক্রান্ত হয়ে শারীরিক ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেন বাচ্চু মিয়া। এরপর অনেক চিকিৎসা করিয়েও আর ভালো হননি তিনি। হয়ে যান একজন অচল মানুষ। সোজা হয়ে দাঁড়াতেও পারেননি। হারিয়ে ফেলেন স্বাভাবিক চলার ক্ষমতা। এরপর থেকে তিনি বসে বসে বাম হাতে ভর করে চলেন।
পরিবারের ভরণপোষণ যোগাতে অক্লান্ত পরিশ্রম করতে হচ্ছে এক হাতে ভর করে চলা বাচ্চু মিয়াকে।এক হাতে ভর করেই মানুষের নিকট থেকে সাহায্য হিসাবে যা পান তা দিয়েই স্ত্রী,৩ ছেলে নিয়ে চলে তার অভাবের সংসার। ৫,৭ ও ১১ বছর বয়সী ৩ ছেলে পড়ে কওমি মাদ্রাসায়। অসহায় হতভাগা প্রতিবন্ধী বাচ্চু মিয়া ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার বীরবেতাগৈর ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের গোপীনাথপুর গ্রামের মুত মকবুল হোসেনের ছেলে।
প্রতিবন্ধী বাচ্চু মিয়া সাহায্যের জন্য মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। ছোট-বড় বাজারের অলি-গলি ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সাহায্য চেয়ে সংসার চালাচ্ছেন। সংসার চালানোর মতো কেউ নেই। তাই তিনিই সংসারের হাল ধরেছেন। একহাতেই ভর করে মানুষের নিকট থেকে সাহায্য চেয়ে কোনোরকম সংসার চলছে তার। প্রতিদিন বাচ্চু মিয়া মানুষের কাছ থেকে চেয়ে ৩-৪শ টাকা পান। ওই টাকা দিয়ে কোনোরকম সংসার চালান। সকালে বাড়ি থেকে বের হন আর ফিরেন গভীর রাতে। কোনদিন বাড়িতে আসেন আবার কোনদিন বাজারেই তিনি শুয়ে রাত কাটান। প্রতিদিন এরকম কষ্টেই চলে তার জীবন ও সংসার। প্রতিবন্ধী বাচ্চু মিয়া বলেন আমার ছোটবেলায় পোলিও হয়েছিল এরপর থেকে অচল হয়ে গেছি। অনেক চিকিৎসা করছি। কিন্তু আর ভালো হইনাই। তিনি বলেন,স্ত্রী ও ৩ সন্তান নিয়ে আমার অভাবের সংসার। মানুষের নিকট থেকে সাহায্য নিয়ে তাদেরকে নিয়ে বেঁচে আছি। একদিন বসে থাকলে সংসার চলে না। সরকারের দেওয়া প্রতিবন্ধী ভাতা ও মানুষের কাছ থেকে সাহায্য হিসাবে যা পান তা দিয়েই তার সংসার চলে। বাচ্চু মিয়া জানান,অনেক কষ্টে তাদের সংসার জীবন চলছে। কেউ তাদের খবর নেয় না। চলার জন্য অনেকের কাছে একটি গাড়ি চেয়েছেন কিন্তু কেউ দেননি। চরম সংকটে দিন কাটছে এ প্রতিবন্ধী পরিবারের। প্রতিবন্ধী বাচ্চু মিয়ার ছোট ভাই রুহুল আমিন বলেন,আমার বড় ভাই খুব কষ্টে আছে।চলতে পারেনা,কাজ করতে পারেনা।এক হাতে ভর করে চলে। মানুষের কাছ থেকে চাইয়া যা আনে তাই দিয়ে চলে তার অভাবের সংসার। তারে যদি কেউ একটা চেইনচালিত রিকশা দিত তবে সে এই রিকশা দিয়া চলতে পারতো।৷তিনি জানান আমাদেরও আর্থিক অবস্থা তেমন ভালো না যে তাদের সহয়তা করবো। সরকারি সুযোগ সুবিধা পেলে ভাইয়ের খুবই উপকার হতো। স্থানীয় ৭ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য নয়ন মিয়া বলেন,বাচ্চু মিয়া খুবই অসহায়। সে চলতে পারেনা। একহাতে ভর করে চলে। কষ্ট করে বিভিন্ন হাটবাজারে,শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যায়। মানুষে যা সাহায্য দেয় তাই দিয়ে খেয়ে না খেয়ে তার সংসার চলে। চলার জন্য তারে কেউ একটি রিকশার ব্যবস্থা করলে সে ভালোভাবে চলতে পারতো। বাচ্চু মিয়ার স্ত্রী রাশিদা বেগম বলেন, আমার স্বামী হাতে ভর দিয়া চলে। এতে তার খুব কষ্ট অয়। একটা চেইনচালিত গাড়ি দিলে তার সুবিধা অইতো। মানুষের নিকট যাইতে পারতো। তিনটা বাচ্চা নিয়া খুব কষ্টে আছি। আমনেরা আমার স্বামীর জন্য একটা গাড়ির ব্যবস্থা কইরা দেইন। সরকারি সাহায্যের ব্যবস্থা কইরা দেইন।
তিনি আরো বলেন,আমার স্বামী কোনদিন  বাড়িতে আসতে রাত একটা,দুইটা বাজে।কোনদিন বাজারে বারান্দায় শুইয়া থাহে। দয়া কইরা তারে একটা গাড়ি দিলে খুব উপকার অইতো,তার কষ্ট কম অইতো।পোলাপানরে লইয়া কষ্টে দিন চলতাছে, অনেক ঝড়- বিপদ যাইতাছে। নান্দাইল উপজেলা নির্বাহী অফিসার অরুন কৃষ্ণ পাল মুঠোফোনে বলেন,তাকে সমাজসেবা অফিসারের সাথে যোগাযোগ করতে বলেন বা আমার নিকট পাঠিয়ে দিন।আমি সমাজসেবা অফিসারকে বলে দিবো।
তিনি আরো বলেন সমাজসেবা অফিসারকে বলা আছে এরকম কেইস থাকলে আমরা সেগুলো লিস্ট করে যতটুকু সম্ভব সাহায্য করা যায় আমরা করবো।
জনপ্রিয় সংবাদ

সানজিদা তন্বীর বিয়ের খবর জানালেন ফেসবুকে নিজের হৃদয়গ্রাহী পোস্টে

চেইনচালিত একটি রিকশা চান অসহায় প্রতিবন্ধী বাচ্চু মিয়া

আপডেট সময় : ০৪:৪১:১২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩ অক্টোবর ২০২৩
নান্দাইল (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি 
৩৬ বছর ধরে এক হাতে ভর করে চলেন বাচ্চু মিয়া (৪৬)।বসে বসেই তিনি চলেন তাও আবার এক হাতে ভর করে। জন্মের ১০ বছর বয়স পর্যন্ত ভালো ছিলেন প্রতিবন্ধী বাচ্চু মিয়া। অন্য শিশুদের মতো স্কুলে যাওয়া,খেলাধুলা করা সবকিছুই ছিল তার স্বাভাবিক। কিন্তু যখন তার বয়স ১০ তখন পোলিও  রোগে আক্রান্ত হয়ে শারীরিক ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেন বাচ্চু মিয়া। এরপর অনেক চিকিৎসা করিয়েও আর ভালো হননি তিনি। হয়ে যান একজন অচল মানুষ। সোজা হয়ে দাঁড়াতেও পারেননি। হারিয়ে ফেলেন স্বাভাবিক চলার ক্ষমতা। এরপর থেকে তিনি বসে বসে বাম হাতে ভর করে চলেন।
পরিবারের ভরণপোষণ যোগাতে অক্লান্ত পরিশ্রম করতে হচ্ছে এক হাতে ভর করে চলা বাচ্চু মিয়াকে।এক হাতে ভর করেই মানুষের নিকট থেকে সাহায্য হিসাবে যা পান তা দিয়েই স্ত্রী,৩ ছেলে নিয়ে চলে তার অভাবের সংসার। ৫,৭ ও ১১ বছর বয়সী ৩ ছেলে পড়ে কওমি মাদ্রাসায়। অসহায় হতভাগা প্রতিবন্ধী বাচ্চু মিয়া ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার বীরবেতাগৈর ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের গোপীনাথপুর গ্রামের মুত মকবুল হোসেনের ছেলে।
প্রতিবন্ধী বাচ্চু মিয়া সাহায্যের জন্য মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। ছোট-বড় বাজারের অলি-গলি ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সাহায্য চেয়ে সংসার চালাচ্ছেন। সংসার চালানোর মতো কেউ নেই। তাই তিনিই সংসারের হাল ধরেছেন। একহাতেই ভর করে মানুষের নিকট থেকে সাহায্য চেয়ে কোনোরকম সংসার চলছে তার। প্রতিদিন বাচ্চু মিয়া মানুষের কাছ থেকে চেয়ে ৩-৪শ টাকা পান। ওই টাকা দিয়ে কোনোরকম সংসার চালান। সকালে বাড়ি থেকে বের হন আর ফিরেন গভীর রাতে। কোনদিন বাড়িতে আসেন আবার কোনদিন বাজারেই তিনি শুয়ে রাত কাটান। প্রতিদিন এরকম কষ্টেই চলে তার জীবন ও সংসার। প্রতিবন্ধী বাচ্চু মিয়া বলেন আমার ছোটবেলায় পোলিও হয়েছিল এরপর থেকে অচল হয়ে গেছি। অনেক চিকিৎসা করছি। কিন্তু আর ভালো হইনাই। তিনি বলেন,স্ত্রী ও ৩ সন্তান নিয়ে আমার অভাবের সংসার। মানুষের নিকট থেকে সাহায্য নিয়ে তাদেরকে নিয়ে বেঁচে আছি। একদিন বসে থাকলে সংসার চলে না। সরকারের দেওয়া প্রতিবন্ধী ভাতা ও মানুষের কাছ থেকে সাহায্য হিসাবে যা পান তা দিয়েই তার সংসার চলে। বাচ্চু মিয়া জানান,অনেক কষ্টে তাদের সংসার জীবন চলছে। কেউ তাদের খবর নেয় না। চলার জন্য অনেকের কাছে একটি গাড়ি চেয়েছেন কিন্তু কেউ দেননি। চরম সংকটে দিন কাটছে এ প্রতিবন্ধী পরিবারের। প্রতিবন্ধী বাচ্চু মিয়ার ছোট ভাই রুহুল আমিন বলেন,আমার বড় ভাই খুব কষ্টে আছে।চলতে পারেনা,কাজ করতে পারেনা।এক হাতে ভর করে চলে। মানুষের কাছ থেকে চাইয়া যা আনে তাই দিয়ে চলে তার অভাবের সংসার। তারে যদি কেউ একটা চেইনচালিত রিকশা দিত তবে সে এই রিকশা দিয়া চলতে পারতো।৷তিনি জানান আমাদেরও আর্থিক অবস্থা তেমন ভালো না যে তাদের সহয়তা করবো। সরকারি সুযোগ সুবিধা পেলে ভাইয়ের খুবই উপকার হতো। স্থানীয় ৭ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য নয়ন মিয়া বলেন,বাচ্চু মিয়া খুবই অসহায়। সে চলতে পারেনা। একহাতে ভর করে চলে। কষ্ট করে বিভিন্ন হাটবাজারে,শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যায়। মানুষে যা সাহায্য দেয় তাই দিয়ে খেয়ে না খেয়ে তার সংসার চলে। চলার জন্য তারে কেউ একটি রিকশার ব্যবস্থা করলে সে ভালোভাবে চলতে পারতো। বাচ্চু মিয়ার স্ত্রী রাশিদা বেগম বলেন, আমার স্বামী হাতে ভর দিয়া চলে। এতে তার খুব কষ্ট অয়। একটা চেইনচালিত গাড়ি দিলে তার সুবিধা অইতো। মানুষের নিকট যাইতে পারতো। তিনটা বাচ্চা নিয়া খুব কষ্টে আছি। আমনেরা আমার স্বামীর জন্য একটা গাড়ির ব্যবস্থা কইরা দেইন। সরকারি সাহায্যের ব্যবস্থা কইরা দেইন।
তিনি আরো বলেন,আমার স্বামী কোনদিন  বাড়িতে আসতে রাত একটা,দুইটা বাজে।কোনদিন বাজারে বারান্দায় শুইয়া থাহে। দয়া কইরা তারে একটা গাড়ি দিলে খুব উপকার অইতো,তার কষ্ট কম অইতো।পোলাপানরে লইয়া কষ্টে দিন চলতাছে, অনেক ঝড়- বিপদ যাইতাছে। নান্দাইল উপজেলা নির্বাহী অফিসার অরুন কৃষ্ণ পাল মুঠোফোনে বলেন,তাকে সমাজসেবা অফিসারের সাথে যোগাযোগ করতে বলেন বা আমার নিকট পাঠিয়ে দিন।আমি সমাজসেবা অফিসারকে বলে দিবো।
তিনি আরো বলেন সমাজসেবা অফিসারকে বলা আছে এরকম কেইস থাকলে আমরা সেগুলো লিস্ট করে যতটুকু সম্ভব সাহায্য করা যায় আমরা করবো।