০৮:৪৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ৯ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
বাংলাদেশের বিনিয়োগ পরিসরকে একীভূত করা

অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি ও বৈশ্বিক প্রতিযোগিতার জন্য বিসিক কেন অপরিহার্য

২০৩৫ সালের মধ্যে বাংলাদেশ একটি আঞ্চলিক উৎপাদনকারী শক্তিতে পরিণত হওয়ার দ্বারপ্রান্তে রয়েছে। এই লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য সরকার বিভিন্ন বিনিয়োগ সংক্রান্ত সংস্থাগুলিকে একটি একীভূত করার পরিকল্পনা করছে, যাতে করে বিনিয়োগ প্রক্রিয়াগুলো সহজ হয় এবং বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আকর্ষণ করা যায়। এই দৃষ্টিভঙ্গি সাহসী, কিন্তু এতে একটি গুরুতর ত্রুটি রয়েছে: বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন (বিসিক)-কে সম্ভবত এই একত্রীকরণের আওতার বাইরে রাখা হতে পারে। এই একত্রীকরণ থেকে বিসিককে বাদ দিলে নতুন সংস্থাটিকে দেশের দশকের পর দশক ধরে চলা অভ্যন্তরীণ শিল্প উন্নয়ন থেকে বিচ্ছিন্ন করা হবে, যা কার্যকরভাবে বিদেশি পুঁজিকে আমাদের নিজস্ব অভ্যন্তরীণ সক্ষমতার উপর অগ্রাধিকার দেবে। ১৯৫৭ সালে প্রতিষ্ঠিত, বিসিক- দেশের প্রথম শিল্প উন্নয়ন সংস্থা যা অসংখ্য ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পকে লালন-পালন করেছে। এর বিশাল অভ্যন্তরীণ তৃণমূল নেটওয়ার্ক আমাদের অর্থনীতির ভিত্তি গড়ে তুলেছে। বিসিককে উপেক্ষা করা মানে গ্রামীণ উদ্যোক্তা, ঐতিহ্যবাহী কারুশিল্প এবং হাজার হাজার ছোট দেশীয় বিনিয়োগকারীকে উপেক্ষা করা, যারা দেশের বৃহত্তর অর্থনীতিকে পুষ্টি জোগায়।
এই খাতকে বাদ দিয়ে একটি একীভূত বিনিয়োগ কর্তৃপক্ষ একটি দ্বিস্তর ব্যবস্থা তৈরি করবে, যেখানে বড় বিদেশি প্রকল্পগুলোকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে, অন্যদিকে আমাদের অভ্যন্তরীণ উদ্যোক্তা ও শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো চিরাচরিত পদ্ধতিতে আটকে থেকে অত্যন্ত প্রতিযোগিতামূলক ব্যবসায়িক জগতের সাথে তাল মেলাতে এবং সংযোগ স্থাপনে ব্যর্থ হবে। এক কথায়, বিসিককে প্রান্তিকীকরণ অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধিকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলবে, আঞ্চলিক বৈষম্যকে বাড়িয়ে তুলবে এবং জাতীয় সহনশীলতাকে দুর্বল করে ফেলবে। সুষম সমৃদ্ধি অর্জন করার জন্য- শহর ও গ্রাম উভয় ক্ষেত্রেই সম্পদ বৃদ্ধির জন্য– বিসিককে নতুন বিনিয়োগ কর্তৃপক্ষের সাথে সম্পূর্ণরূপে একীভূত করতে হবে।
বিসিক একটি স্থায়ী উত্তরাধিকারের সাক্ষ্য; এটি স্বাধীন বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য দেশের প্রথম সরকারি সংস্থা হিসাবে তৈরি করা হয়েছিল, যার লক্ষ্য ছিল দেশব্যাপী ক্ষুদ্র, গ্রামীণ ও কুটির শিল্পের উন্নয়নে নিবেদিত হওয়া। এমনকি এর প্রাথমিক বছরগুলিতে, বিসিক যন্ত্রপাতি ও কাঁচামাল আমদানি করত, ঋণ প্রদান করত এবং বিসিকের দিকনির্দেশনায় দেশে নতুন বিনিয়োগ প্রকল্পগুলি বাস্তবায়িত হত। পরবর্তীতে গঠিত সংস্থাগুলি যেখানে বড় বিনিয়োগকারীদের উপর দৃষ্টিপাত করছিল, সেখানে বিসিক বাংলাদেশের শিল্পকে তৃণমূল থেকে তিলে তিলে গড়ে তুলেছে। এই ঐতিহ্য বিসিককে আমাদের জাতীয় শিল্প পরিচয়ের সাথে গভীরভাবে বেঁধে দিয়েছে। নতুন ওচঅ থেকে বিসিককে বাদ দিলে এটিকে তার শিকড় থেকেই বিচ্ছিন্ন করা হবে এবং বিদেশি পুঁজিকে স্থানীয় সক্ষমতার উপর অগ্রাধিকার প্রদান করা হবে। আমরা হারাবো আমাদের শিল্প ঐতিহ্যের ভিত্তি। সুষম প্রবৃদ্ধির জন্য যে কোনও নতুন কৌশলকেই সেই প্রতিষ্ঠানগুলিকে গুরুত্ব প্রদান করতে হবে যারা দেশে শিল্প সমৃদ্ধির ঐ ইতিহাসটি সৃষ্টি করেছিল।
বিসিকের অনন্য শক্তি হল এর ব্যাপ্তি, কারণ এটি দেশব্যাপী ৮২টি শিল্প এস্টেটসহ প্রায় ১৭০টি কার্যালয় পরিচালনা করে, প্রত্যন্ত অঞ্চলের উদ্যোক্তাদের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছে দেয়। এই নেটওয়ার্ক গ্রামীণ সমৃদ্ধির একটি পরীক্ষিত চালিকাশক্তি। উদাহরণস্বরূপ, বিসিক এস্টেটগুলি বাংলাদেশের সম্ভাব্য প্রতিটি খাতেই সফল শিল্প উদ্যোক্তার জন্ম দিয়েছে: স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস (পাবনা) এবং রেডিয়েন্ট ফার্মা (টঙ্গী)’র মতো ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিগুলি এই এস্টেটগুলোতে বিকশিত হয়ে উচ্চ মূল্যের ওষুধ উৎপাদন করছে; প্রাণ-আরএফএল (রংপুর), সম্ভবত বাংলাদেশের প্রতিটি ঘরেই সর্বাধিক পরিচিত নাম যারা খাদ্য ও গৃহস্থালি পণ্য প্রক্রিয়াকরণ এবং আরও অনেক পণ্য উৎপাদন করে থাকে; ভারী বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম এবং ব্যাটারি ফার্ম—বিআরবি ক্যাবলস (কুষ্টিয়া), ন্যাশনাল ফ্যান (টঙ্গী) এবং হ্যামকো ব্যাটারি (খুলনা)—জাতীয় পর্যায়ের শক্তিশালী প্রতিযোগীতে পরিণত হয়েছে; এবং কাদের সিনথেটিক (কোনাবাড়ী) এর মতো উৎপাদন হাব এবং নারায়ণগঞ্জ হোসিয়ারি এস্টেটের হোসিয়ারি ক্লাস্টার আমাদের টেক্সটাইল খাতকে শক্তিশালী করছে। কৃষি ও পরিবেশবান্ধব পণ্য এবং যন্ত্রপাতির জন্য—সিলেটের আলিম এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, ঝিনাইদাহে জামান জুট ডাইভার্সিফাইড মিলস লিমিটেড উচ্চ প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা নিয়ে বিকশিত হচ্ছে। এমনকি অনেক ঐতিহ্যবাহী শিল্পও এস্টেটগুলোতে বিকশিত হয়েছে: নারায়ণগঞ্জের জামদানি শিল্প এস্টেট আমাদের জাতীয় বয়নশিল্প সংরক্ষণ করছে, রাজশাহীর সপুরা সিল্ক একটি আঞ্চলিক কারুশিল্পকে প্রতিনিধিত্ব করছে, এবং বরিশালের সারোং ফার্নিচার ও ফরচুন সুজ দেশের ফার্নিচার ও ফুটওয়্যার উৎপাদনকে এক অন্যন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে। কালুরঘাট (চট্টগ্রাম), নোয়াখালী, ফেনী, কুমিল্লা, বগুড়া, নীলফামারী, সিলেট, ঝিনাইদাহ, ময়মনসিংহ, নরসিংদী, পাবনা, মাদারিপুর, ফরিদপুর এবং যশোরের বিসিক শিল্প এস্টেটগুলিও বিভিন্ন শিল্পকে বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় যোগ্যতাসম্পন্ন করে গড়ে তুলতে ভূমিকা পালন করছে। এমন অসংখ্য শিল্প উদ্যোগের গল্প রয়েছে বিসিকের এস্টেটগুলোতে যা দেশের নিরব শিল্প বিপ্লব ঘটাতে যুগ যুগ ধরে কাজ করে যাচ্ছে।
এই উদাহরণগুলি থেকে বুঝা যায় যে দেশের শিল্পোন্নয়নে বিসিকের গুরুত্বপূর্ণ অবদানকে অস্বীকার করার উপায় নেই। বিসিকের প্রতিটি এস্টেটে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো, গ্যাস-বিদ্যুৎ-পানির মতো পরিষেবা এবং স্থানীয় কারিগরি জ্ঞান মজুত আছে যা বিনিয়োগকারীদের জন্য এটা একটা পরীক্ষিত এবং প্রস্তুত পরিবেশ প্রদান করতে পারে। বিসিককে একীভূত সংস্থার সাথে যুক্ত করা সরকারকে সমতাভিত্তিক আঞ্চলিক উন্নয়ন এবং সিএমএসএমই (ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগ) সহায়তার জন্য একটি প্রস্তুত প্রক্রিয়া দেবে। সংক্ষেপে, বিসিকের নেটওয়ার্ক আমাদের শিল্প অগ্রগতির ভিত্তি; তাই এটি উপেক্ষা করলে আমাদের উন্নয়নের ভিত্তি ভেঙে পড়বে। বিসিকের শক্তি তৃণমূল পর্যায়ে উদ্যোক্তাদের লালন-পালনে নিহিত। এর প্রশিক্ষণ কার্যক্রম- জেলা পর্যায়ের উদ্যোক্তা উন্নয়ন কর্মসূচি (ইডিপি), বিসিক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট, দক্ষতা উন্নয়ন, মৌ-পালন ও পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন কেন্দ্রগুলোর মাধ্যমে শিল্প ও কারু দক্ষতা উন্নয়নে লক্ষাধিক পুরুষ ও মহিলাকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে। মানব পুঁজি উন্নয়নের জন্য—তৃণমূল থেকে দক্ষতা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে বিসিকের কর্মপ্রণালী ও সক্ষমতার সাথে অন্য কোনও সংস্থার তুলনা হয় না। এর কার্যক্রমের প্রভাব বিশাল- বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) একটি জরিপ অনুসারে, প্রায় ৮,৩০,০০০ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প প্রতিষ্ঠানে ২৯ মিলিয়নেরও বেশি লোক নিয়োজিত, যার অর্ধেকেরও বেশি কর্মসংস্থান গ্রামীণ এলাকায়। এই ব্যবসাগুলি গ্রামীণ জীবিকা ও দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য অত্যাবশ্যক। তবুও একত্রীকরণ পরিকল্পনা এই খাতটিকে প্রান্তিক করার চেষ্টা করছে যা হতাশাজনক। বিসিক ছাড়া সেই ফলাফল বাংলাদেশের উদীয়মান অভ্যন্তরীণ উদ্যোক্তা ক্লাস্টারকে ধ্বংস করে দেবে।
বিসিক থেকে যারা প্রশিক্ষণ নিয়েছেন, তারা সুদক্ষ প্রতিভাবান কর্মী। বড় বড় বিদেশি কোম্পানিগুলোর সরবরাহকারী, সাব-কন্ট্রাক্টর এবং গবেষণা ও উন্নয়নের (জ্উ) অংশীদার হিসেবে ঠিক এই ধরনের ছোট ও মাঝারি ব্যবসায়ী (ঝগঊ) প্রয়োজন। বিদেশি বিনিয়োগকারীগণ দেশে নতুন প্রযুক্তি স্থানান্তর করে, তবে এটি আত্মীকরণ তখনই সফল হয় যখন স্থানীয় ফার্মগুলি তা গ্রহণ ও ব্যবহার করতে পারে। বিসিকের কারণে বাংলাদেশে এমন প্রশিক্ষিত উদ্যোক্তা ও কারিগর তৈরি হয়েছে, যারা নতুন নতুন আবিষ্কার বা আধুনিক প্রযুক্তি সহজে গ্রহণ করতে প্রস্তুত। বিসিকের সহায়তা সরিয়ে নিলে, লক্ষাধিক অনুপ্রাণিত স্থানীয় ব্যবসা অর্থায়ন ও জ্ঞানের পথ হারাবে। অন্য কথায়, বিসিক প্রশিক্ষণকে শিল্প প্রবৃদ্ধিতে রূপান্তরিত করে; এই মানুষগুলিকে উপেক্ষা করা শেষ পর্যন্ত মানব পুঁজিতে আমাদের বিনিয়োগকে উপেক্ষা করবে এবং আমাদের দীর্ঘমেয়াদী প্রতিযোগিতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। প্রস্তাবিত ওচঅ এর উদ্দেশ্য – ইওউঅ, ইঊচতঅ, ইঊতঅ, ইঐঞচঅ এর মতো সংস্থাগুলিকে একটি কেন্দ্রীয় বিনিয়োগ কর্তৃপক্ষে একত্রিত করে বিনিয়োগকে স্ট্রিমলাইন করা। কিন্তু একটি ওয়ান-স্টপ সত্তা সত্যিকার অর্থে ওয়ান-স্টপ হতে পারবে না যদি এটি দেশের স্থানীয় শিল্প উন্নয়নকারী অন্যতম স্টেকহোল্ডার- বিসিককে এই উদ্যোগ থেকে বাদ দেয়। যদি একত্রীকরণ এইভাবে এগোয়, তবে নতুন কর্তৃপক্ষ অনিবার্যভাবে বড় বিদেশি প্রকল্পগুলিকে অগ্রাধিকার দেবে, অন্যদিকে অভ্যন্তরীণ ভিত্তিকে পিছনে পড়ে থাকবে। এটি সুষ্পষ্টভাবেই একটি দ্বিস্তর বিনিয়োগ ব্যবস্থা তৈরি করবে। বিদেশি বিনিয়োগকারীরা ওচঅ-এর একক চ্যানেলের মাধ্যমে সহজে পরিচালিত হয়ে প্রণোদনা ও ঝামেলামুক্ত সুবিধা ভোগ করবে, অন্যদিকে দেশীয় এসএমইগুলি- যারা বাংলাদেশের দেশীয় অর্থনীতির সত্যিকারের ভিত্তি– পুরানো, খণ্ডিত ও আমলাতান্ত্রিক চ্যানেলে আটকে থাকবে। এই ফলাফল একত্রীকরণের অন্তর্ভুক্তিমূলক বক্তব্যের সাথে সাংঘর্ষিক।
শুরু থেকেই বিসিকের ম্যান্ডেট ছিল অভ্যন্তরীণ শিল্পের সমর্থন, এখন একটি একীভূত সংস্থাকে অবশ্যই সব খাতকে সুষমভাবে সেবা দিতে হবে অন্যথায় এটি আমাদের অর্থনৈতিক নীতিতে একটি বড় ফাঁক রেখে যাবে। বিসিক ছাড়া, উদ্যোক্তারা অসহায় হয়ে পড়বেন, উদ্ভাবকরা বাদ পড়বেন, অভ্যন্তরীণ ঝঁঢ়ঢ়ষু ঈযধরহ দুর্বল হয়ে পড়বে এবং গ্রামীণ শিল্প ধ্বংস হয়ে যাবে। সংক্ষেপে, একত্রীকরণ থেকে বিসিককে বাদ দেওয়া পুরো অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি, অভ্যন্তরীণ শিল্প কাঠামো, উৎপাদন এবং স্থিতিশীলতাকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিতে পারে। বিসিকের এস্টেটগুলি গুরুত্বপূর্ণ শিল্প সরবরাহ শৃঙ্খলের আধার। টঙ্গী, কোনাবাড়ী, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ এবং কাঁচপুরের বিসিক এস্টেটের হাজার হাজার ছোট কারখানা বাংলাদেশের বিশ্ববিখ্যাত তৈরি পোশাক খাতের জন্য সুতা কাটে এবং পোশাক বুনন করে, যেখানে লাখ লাখ বুননকারী ও দর্জি নিয়োজিত। উদাহরণস্বরূপ, তামিজুদ্দিন টেক্সটাইলস এবং কাদের সিনথেটিক (কোনাবাড়ী)– উভয়ই বিসিক উদ্যোগ যারা পোশাক প্রস্তুতকারকদের নিরবচ্ছিন্নভাবে সুতা সরবরাহ করে, এই স্তম্ভ শিল্পে কাঁচামালের স্থির প্রবাহ নিশ্চিত করে। আরেকটি উদাহরণ হল শতরঞ্জি (রংপুর): একটি ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) সুরক্ষিত হস্তচালিত কার্পেট যা এখন প্রায় ৪০টি দেশে রপ্তানি হয়, একটি ঐতিহ্যবাহী কারুশিল্প যা বিসিকের সহায়তায় লালিত হয়েছে। পোশাকের বাইরেও, বিসিক এস্টেট/পার্কগুলি অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সরবরাহ লাইন লালন করে। মুন্সীগঞ্জে এপিআই (সক্রিয় ফার্মাসিউটিক্যাল উপাদান) শিল্প পার্ক আমদানিতে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার সাশ্রয়ের লক্ষ্যে ফার্মাসিউটিক্যাল উপাদানের অভ্যন্তরীণ উৎপাদনকে বাড়িয়ে তুলবে। চলমান রাসায়নিক শিল্প পার্ক ঢাকা থেকে বিপজ্জনক কারখানাগুলিকে নিরাপদে স্থানান্তর করবে, এবং বাতবায়নাধীন এস্টেট/পার্কগুলি আমাদের মুদ্রণ ও প্যাকেজিং খাতকে শক্তিশালী করবে। এমনকি আজও, বগুড়া, সিলেট, টঙ্গী এবং কোনাবাড়ীর ছোট বিসিক ফার্মগুলি প্যাকেজিং, কৃষি যন্ত্রপাতি এবং খুচরা যন্ত্রাংশের মতো প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র উৎপাদন করে চলেছে। বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য, এই স্থানীয় সরবরাহ নেটওয়ার্কগুলি অমূল্য, কারণ এগুলো ব্যবসার খরচ ও ঝুঁকি কমায়। বিসিকসহ একটি একীভূত ওচঅ বিনিয়োগকারীদের এই প্রতিষ্ঠিত ইকোসিস্টেমে সরাসরি প্রবেশাধিকার দেবে; এটি বাদ দিলে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা যোগ হবে যা ঋউও নিরুৎসাহিত করতে পারে। বাস্তবে, বিসিক হল বাংলাদেশের উৎপাদন ভূদৃশ্যের লুকানো মেরুদণ্ড, যা বৈশ্বিক বিনিয়োগ ও স্থানীয় উদ্যোগকে একটি সহনশীল সম্পূর্ণতায় সংযুক্ত করে।
আমরা যদি অত্যন্ত সফল বিনিয়োগবান্ধব দেশগুলির কাছ থেকে শিক্ষা নেই, তাহলে বাংলাদেশকে এই দেশগুলির মতোই ইতিবাচক পদক্ষেপ নিতে হবে। চীন, ভারত, ভিয়েতনাম এবং দক্ষিণ কোরিয়া আমাদের শিখায় যে অন্তর্ভুক্তিমূলক শিল্প প্রবৃদ্ধি বিদেশি বিনিয়োগের সাথে অভ্যন্তরীণ এসএমইগুলিকে সংযুক্ত করার উপর নির্ভর করে। চীনের শিল্প ক্লাস্টার, ভারতের ওডিওপি (একটি জেলা একটি পণ্য), ভিয়েতনামের এফডিআই সংস্কার এবং কোরিয়ার দ্বৈত-প্রণোদনা নীতি- সবকটিই কৌশলগতভাবে বৈশ্বিক পুঁজিকে স্থানীয় উদ্যোগের সাথে সংযুক্ত করে। বিসিক ইতোমধ্যেই ৮২টি শিল্প এস্টেট পরিচালনা করছে এবং দেশজুড়ে বৃহত্তম এসএমই হাব লালন করে যাচ্ছে। একে ওচঅ-এর সাথে একত্রিত করা সমন্বিত নীতিকে আরও সক্ষম করে করবে যা এফডিআই আকর্ষণ করার পাশাপাশি স্থানীয় ঠধষঁব ঈযধরহ মধ্যে এটিকে যুক্ত করবে। বিসিককে উপেক্ষা করলে ভিয়েতনামের শহর-গ্রাম বৈষম্যের পুনরাবৃত্তি এবং চীনের সফল এসএমই-এমএনসি সহযোগিতার সুযোগ হাতছাড়া হওয়ার ঝুঁকি সৃষ্টি করবে। ইওউঅ-এর একত্রীকরণের প্রস্তাব আরও শক্তি লাভ করবে যদি বিসিককে একটি প্রান্তিক সংস্থা হিসাবে না দেখে সমতাভিত্তিক, উদ্ভাবন-নেতৃত্বাধীন প্রবৃদ্ধির চাবিকাঠি হিসাবে দেখা হয়।
বিসিককে ওচঅ-এর সাথে সম্পূর্ণ একীভূতকরণ অত্যন্ত প্রয়োজন যাতে উদ্যোক্তাদের বিভক্তি এড়ানো যায় এবং বিসিকের ৮২টিরও বেশি এস্টেট/পার্ককে সমতাভিত্তিক উন্নয়ন ও সুষম প্রবৃদ্ধির ইঞ্জিন হিসাবে কাজে লাগানো যায়। বিসিকের এই সম্পদ ও সক্ষমতাসহ একটি একীভূত সংস্থা বিনিয়োগের সুবিধা সারা দেশে ছড়িয়ে দিতে পারে, অত্যধিক শহুরে ঘনত্ব এড়াতে গ্রামীণ অর্থনীতিকে সুরক্ষিত করতে পারে। এটি মূলত দেশের অপ্রকাশিত সম্ভাবনা বিসিক লালিত এসএমইগুলিকে- যৌথ উদ্যোগ, সাবকন্ট্রাক্টিং, স্থানীয় সোর্সিং এবং বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ভাগ করে নেওয়া গবেষণা ও উন্নয়নে সাহায্য করবে, ফলে বাংলাদেশের ব্যবসাগুলিকে বৈশ্বিক ঠধষঁব ঈযধরহ এ সংযুক্ত করবে।
বিনিয়োগ সংস্থাগুলির প্রস্তাবিত একত্রীকরণ একটি গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ- কিন্তু এটি শুধুমাত্র তখনই ফল দেবে যদি এটি বিসিককে একটি অপরিহার্য অংশীদার হিসাবে গ্রহণ করে। বিসিক একটি অপ্রচলিত ধ্বংসাবশেষ নয়; এটি ইতিবাচকভাবে দূরদর্শী, যার রয়েছে দেশব্যাপী বিস্তৃত নেটওয়ার্ক, উদ্যোক্তা ট্যালেন্ট হাব এবং সুবিস্তৃত ঝঁঢ়ঢ়ষু ঈযধরহ যা শিল্প প্রবৃদ্ধিকে চালিত করে। এছাড়াও বিসিকের রয়েছে সহস্রাধিক মেধাবী, দক্ষ ও অভিজ্ঞ জনবল যারা অক্লান্তভাবে শিল্প উন্নয়নের উদ্যোগগুলোকে সরকারের নির্দেশনায় বাস্তবায়ন করে চলেছে। বিসিক অবশ্যই চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি (অব্যবহৃত জমি এবং প্রশাসনিক জটিলতা), তবে এগুলির সমাধান করা উচিত বাদ দেওয়ার মাধ্যমে নয়, বরং একীভূতকরণ ও সংস্কারের মাধ্যমে।
বিসিক বাংলাদেশের শিল্প পরিচয়ের মূর্ত প্রতীক। এর তাঁতি, কারিগর, পোশাক বুননকারী, দর্জি ও যন্ত্র নির্মাতারা আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও সৃজনশীলতার প্রতিফলন। আমরা যদি বিসিককে প্রান্তিক করি, তাহলে আমাদের অর্থনীতির আত্মা হারানোর ঝুঁকি এবং এর সাথে, জাতীয় সহনশীলতা দূর্বল করে তুলবে। মাত্র কয়েকটি জোন বা বিদেশি কারখানার উপর নির্মিত অর্থনীতি একটি ভঙ্গুর ব্যবস্থা; অন্যদিকে হাজার হাজার গ্রাম ও শহরে শিকড় গেড়ে থাকা কটেজ, মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের অর্থনীতি মজবুত। বাংলাদেশের উন্নয়নে উভয়টি প্রয়োজন। বাংলাদেশের বিনিয়োগের ভবিষ্যৎ আজ বিসিকের একীভূতকরণ করা বা না করার পছন্দের উপর নির্ভর করছে। বিসিককে সম্পূর্ণরূপে একীভূত করা বিদেশি ও স্থানীয় পুঁজিকে একটি সুসংগত ইকোসিস্টেমে একত্রিত করবে, ক্ষুদ্র শিল্পের প্রতি আমাদের দীর্ঘমেয়াদী অঙ্গীকারকে সম্মান জানানোর পাশাপাশি সেই পুঁজিকে আকর্ষণ করবে যা প্রবৃদ্ধিকে শক্তি জোগায়। আমরা নীতিনির্ধারক এবং ইওউঅ-এর নেতৃত্বকে এই আহ্বান বিবেচনা করার জন্য অনুরোধ করছি যে বিসিককে অন্তর্ভুক্ত করা আমাদের শিল্প পরিচয়কে শক্তিশালী করবে, জাতীয় সহনশীলতাকে জোরদার করবে এবং অভ্যন্তরীণ শিল্প সমৃদ্ধি নিশ্চিত করবে যা সত্যিকার অর্থে দেশের প্রতিটি প্রান্তে এবং দেশের বাইরেও সের সামর্থের কথা কে পৌঁছে দিবে।

লেখক : শাহজাহান আলী, শিল্পনগরী কর্মকর্তা

জনপ্রিয় সংবাদ

২৫ ডিসেম্বর শাহজালালে পর্যাপ্ত সময় নিয়ে যাত্রীদের পৌঁছানোর অনুরোধ

বাংলাদেশের বিনিয়োগ পরিসরকে একীভূত করা

অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি ও বৈশ্বিক প্রতিযোগিতার জন্য বিসিক কেন অপরিহার্য

আপডেট সময় : ০৯:৪৩:৫৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৮ জুলাই ২০২৫

২০৩৫ সালের মধ্যে বাংলাদেশ একটি আঞ্চলিক উৎপাদনকারী শক্তিতে পরিণত হওয়ার দ্বারপ্রান্তে রয়েছে। এই লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য সরকার বিভিন্ন বিনিয়োগ সংক্রান্ত সংস্থাগুলিকে একটি একীভূত করার পরিকল্পনা করছে, যাতে করে বিনিয়োগ প্রক্রিয়াগুলো সহজ হয় এবং বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আকর্ষণ করা যায়। এই দৃষ্টিভঙ্গি সাহসী, কিন্তু এতে একটি গুরুতর ত্রুটি রয়েছে: বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন (বিসিক)-কে সম্ভবত এই একত্রীকরণের আওতার বাইরে রাখা হতে পারে। এই একত্রীকরণ থেকে বিসিককে বাদ দিলে নতুন সংস্থাটিকে দেশের দশকের পর দশক ধরে চলা অভ্যন্তরীণ শিল্প উন্নয়ন থেকে বিচ্ছিন্ন করা হবে, যা কার্যকরভাবে বিদেশি পুঁজিকে আমাদের নিজস্ব অভ্যন্তরীণ সক্ষমতার উপর অগ্রাধিকার দেবে। ১৯৫৭ সালে প্রতিষ্ঠিত, বিসিক- দেশের প্রথম শিল্প উন্নয়ন সংস্থা যা অসংখ্য ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পকে লালন-পালন করেছে। এর বিশাল অভ্যন্তরীণ তৃণমূল নেটওয়ার্ক আমাদের অর্থনীতির ভিত্তি গড়ে তুলেছে। বিসিককে উপেক্ষা করা মানে গ্রামীণ উদ্যোক্তা, ঐতিহ্যবাহী কারুশিল্প এবং হাজার হাজার ছোট দেশীয় বিনিয়োগকারীকে উপেক্ষা করা, যারা দেশের বৃহত্তর অর্থনীতিকে পুষ্টি জোগায়।
এই খাতকে বাদ দিয়ে একটি একীভূত বিনিয়োগ কর্তৃপক্ষ একটি দ্বিস্তর ব্যবস্থা তৈরি করবে, যেখানে বড় বিদেশি প্রকল্পগুলোকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে, অন্যদিকে আমাদের অভ্যন্তরীণ উদ্যোক্তা ও শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো চিরাচরিত পদ্ধতিতে আটকে থেকে অত্যন্ত প্রতিযোগিতামূলক ব্যবসায়িক জগতের সাথে তাল মেলাতে এবং সংযোগ স্থাপনে ব্যর্থ হবে। এক কথায়, বিসিককে প্রান্তিকীকরণ অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধিকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলবে, আঞ্চলিক বৈষম্যকে বাড়িয়ে তুলবে এবং জাতীয় সহনশীলতাকে দুর্বল করে ফেলবে। সুষম সমৃদ্ধি অর্জন করার জন্য- শহর ও গ্রাম উভয় ক্ষেত্রেই সম্পদ বৃদ্ধির জন্য– বিসিককে নতুন বিনিয়োগ কর্তৃপক্ষের সাথে সম্পূর্ণরূপে একীভূত করতে হবে।
বিসিক একটি স্থায়ী উত্তরাধিকারের সাক্ষ্য; এটি স্বাধীন বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য দেশের প্রথম সরকারি সংস্থা হিসাবে তৈরি করা হয়েছিল, যার লক্ষ্য ছিল দেশব্যাপী ক্ষুদ্র, গ্রামীণ ও কুটির শিল্পের উন্নয়নে নিবেদিত হওয়া। এমনকি এর প্রাথমিক বছরগুলিতে, বিসিক যন্ত্রপাতি ও কাঁচামাল আমদানি করত, ঋণ প্রদান করত এবং বিসিকের দিকনির্দেশনায় দেশে নতুন বিনিয়োগ প্রকল্পগুলি বাস্তবায়িত হত। পরবর্তীতে গঠিত সংস্থাগুলি যেখানে বড় বিনিয়োগকারীদের উপর দৃষ্টিপাত করছিল, সেখানে বিসিক বাংলাদেশের শিল্পকে তৃণমূল থেকে তিলে তিলে গড়ে তুলেছে। এই ঐতিহ্য বিসিককে আমাদের জাতীয় শিল্প পরিচয়ের সাথে গভীরভাবে বেঁধে দিয়েছে। নতুন ওচঅ থেকে বিসিককে বাদ দিলে এটিকে তার শিকড় থেকেই বিচ্ছিন্ন করা হবে এবং বিদেশি পুঁজিকে স্থানীয় সক্ষমতার উপর অগ্রাধিকার প্রদান করা হবে। আমরা হারাবো আমাদের শিল্প ঐতিহ্যের ভিত্তি। সুষম প্রবৃদ্ধির জন্য যে কোনও নতুন কৌশলকেই সেই প্রতিষ্ঠানগুলিকে গুরুত্ব প্রদান করতে হবে যারা দেশে শিল্প সমৃদ্ধির ঐ ইতিহাসটি সৃষ্টি করেছিল।
বিসিকের অনন্য শক্তি হল এর ব্যাপ্তি, কারণ এটি দেশব্যাপী ৮২টি শিল্প এস্টেটসহ প্রায় ১৭০টি কার্যালয় পরিচালনা করে, প্রত্যন্ত অঞ্চলের উদ্যোক্তাদের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছে দেয়। এই নেটওয়ার্ক গ্রামীণ সমৃদ্ধির একটি পরীক্ষিত চালিকাশক্তি। উদাহরণস্বরূপ, বিসিক এস্টেটগুলি বাংলাদেশের সম্ভাব্য প্রতিটি খাতেই সফল শিল্প উদ্যোক্তার জন্ম দিয়েছে: স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস (পাবনা) এবং রেডিয়েন্ট ফার্মা (টঙ্গী)’র মতো ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিগুলি এই এস্টেটগুলোতে বিকশিত হয়ে উচ্চ মূল্যের ওষুধ উৎপাদন করছে; প্রাণ-আরএফএল (রংপুর), সম্ভবত বাংলাদেশের প্রতিটি ঘরেই সর্বাধিক পরিচিত নাম যারা খাদ্য ও গৃহস্থালি পণ্য প্রক্রিয়াকরণ এবং আরও অনেক পণ্য উৎপাদন করে থাকে; ভারী বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম এবং ব্যাটারি ফার্ম—বিআরবি ক্যাবলস (কুষ্টিয়া), ন্যাশনাল ফ্যান (টঙ্গী) এবং হ্যামকো ব্যাটারি (খুলনা)—জাতীয় পর্যায়ের শক্তিশালী প্রতিযোগীতে পরিণত হয়েছে; এবং কাদের সিনথেটিক (কোনাবাড়ী) এর মতো উৎপাদন হাব এবং নারায়ণগঞ্জ হোসিয়ারি এস্টেটের হোসিয়ারি ক্লাস্টার আমাদের টেক্সটাইল খাতকে শক্তিশালী করছে। কৃষি ও পরিবেশবান্ধব পণ্য এবং যন্ত্রপাতির জন্য—সিলেটের আলিম এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, ঝিনাইদাহে জামান জুট ডাইভার্সিফাইড মিলস লিমিটেড উচ্চ প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা নিয়ে বিকশিত হচ্ছে। এমনকি অনেক ঐতিহ্যবাহী শিল্পও এস্টেটগুলোতে বিকশিত হয়েছে: নারায়ণগঞ্জের জামদানি শিল্প এস্টেট আমাদের জাতীয় বয়নশিল্প সংরক্ষণ করছে, রাজশাহীর সপুরা সিল্ক একটি আঞ্চলিক কারুশিল্পকে প্রতিনিধিত্ব করছে, এবং বরিশালের সারোং ফার্নিচার ও ফরচুন সুজ দেশের ফার্নিচার ও ফুটওয়্যার উৎপাদনকে এক অন্যন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে। কালুরঘাট (চট্টগ্রাম), নোয়াখালী, ফেনী, কুমিল্লা, বগুড়া, নীলফামারী, সিলেট, ঝিনাইদাহ, ময়মনসিংহ, নরসিংদী, পাবনা, মাদারিপুর, ফরিদপুর এবং যশোরের বিসিক শিল্প এস্টেটগুলিও বিভিন্ন শিল্পকে বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় যোগ্যতাসম্পন্ন করে গড়ে তুলতে ভূমিকা পালন করছে। এমন অসংখ্য শিল্প উদ্যোগের গল্প রয়েছে বিসিকের এস্টেটগুলোতে যা দেশের নিরব শিল্প বিপ্লব ঘটাতে যুগ যুগ ধরে কাজ করে যাচ্ছে।
এই উদাহরণগুলি থেকে বুঝা যায় যে দেশের শিল্পোন্নয়নে বিসিকের গুরুত্বপূর্ণ অবদানকে অস্বীকার করার উপায় নেই। বিসিকের প্রতিটি এস্টেটে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো, গ্যাস-বিদ্যুৎ-পানির মতো পরিষেবা এবং স্থানীয় কারিগরি জ্ঞান মজুত আছে যা বিনিয়োগকারীদের জন্য এটা একটা পরীক্ষিত এবং প্রস্তুত পরিবেশ প্রদান করতে পারে। বিসিককে একীভূত সংস্থার সাথে যুক্ত করা সরকারকে সমতাভিত্তিক আঞ্চলিক উন্নয়ন এবং সিএমএসএমই (ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগ) সহায়তার জন্য একটি প্রস্তুত প্রক্রিয়া দেবে। সংক্ষেপে, বিসিকের নেটওয়ার্ক আমাদের শিল্প অগ্রগতির ভিত্তি; তাই এটি উপেক্ষা করলে আমাদের উন্নয়নের ভিত্তি ভেঙে পড়বে। বিসিকের শক্তি তৃণমূল পর্যায়ে উদ্যোক্তাদের লালন-পালনে নিহিত। এর প্রশিক্ষণ কার্যক্রম- জেলা পর্যায়ের উদ্যোক্তা উন্নয়ন কর্মসূচি (ইডিপি), বিসিক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট, দক্ষতা উন্নয়ন, মৌ-পালন ও পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন কেন্দ্রগুলোর মাধ্যমে শিল্প ও কারু দক্ষতা উন্নয়নে লক্ষাধিক পুরুষ ও মহিলাকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে। মানব পুঁজি উন্নয়নের জন্য—তৃণমূল থেকে দক্ষতা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে বিসিকের কর্মপ্রণালী ও সক্ষমতার সাথে অন্য কোনও সংস্থার তুলনা হয় না। এর কার্যক্রমের প্রভাব বিশাল- বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) একটি জরিপ অনুসারে, প্রায় ৮,৩০,০০০ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প প্রতিষ্ঠানে ২৯ মিলিয়নেরও বেশি লোক নিয়োজিত, যার অর্ধেকেরও বেশি কর্মসংস্থান গ্রামীণ এলাকায়। এই ব্যবসাগুলি গ্রামীণ জীবিকা ও দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য অত্যাবশ্যক। তবুও একত্রীকরণ পরিকল্পনা এই খাতটিকে প্রান্তিক করার চেষ্টা করছে যা হতাশাজনক। বিসিক ছাড়া সেই ফলাফল বাংলাদেশের উদীয়মান অভ্যন্তরীণ উদ্যোক্তা ক্লাস্টারকে ধ্বংস করে দেবে।
বিসিক থেকে যারা প্রশিক্ষণ নিয়েছেন, তারা সুদক্ষ প্রতিভাবান কর্মী। বড় বড় বিদেশি কোম্পানিগুলোর সরবরাহকারী, সাব-কন্ট্রাক্টর এবং গবেষণা ও উন্নয়নের (জ্উ) অংশীদার হিসেবে ঠিক এই ধরনের ছোট ও মাঝারি ব্যবসায়ী (ঝগঊ) প্রয়োজন। বিদেশি বিনিয়োগকারীগণ দেশে নতুন প্রযুক্তি স্থানান্তর করে, তবে এটি আত্মীকরণ তখনই সফল হয় যখন স্থানীয় ফার্মগুলি তা গ্রহণ ও ব্যবহার করতে পারে। বিসিকের কারণে বাংলাদেশে এমন প্রশিক্ষিত উদ্যোক্তা ও কারিগর তৈরি হয়েছে, যারা নতুন নতুন আবিষ্কার বা আধুনিক প্রযুক্তি সহজে গ্রহণ করতে প্রস্তুত। বিসিকের সহায়তা সরিয়ে নিলে, লক্ষাধিক অনুপ্রাণিত স্থানীয় ব্যবসা অর্থায়ন ও জ্ঞানের পথ হারাবে। অন্য কথায়, বিসিক প্রশিক্ষণকে শিল্প প্রবৃদ্ধিতে রূপান্তরিত করে; এই মানুষগুলিকে উপেক্ষা করা শেষ পর্যন্ত মানব পুঁজিতে আমাদের বিনিয়োগকে উপেক্ষা করবে এবং আমাদের দীর্ঘমেয়াদী প্রতিযোগিতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। প্রস্তাবিত ওচঅ এর উদ্দেশ্য – ইওউঅ, ইঊচতঅ, ইঊতঅ, ইঐঞচঅ এর মতো সংস্থাগুলিকে একটি কেন্দ্রীয় বিনিয়োগ কর্তৃপক্ষে একত্রিত করে বিনিয়োগকে স্ট্রিমলাইন করা। কিন্তু একটি ওয়ান-স্টপ সত্তা সত্যিকার অর্থে ওয়ান-স্টপ হতে পারবে না যদি এটি দেশের স্থানীয় শিল্প উন্নয়নকারী অন্যতম স্টেকহোল্ডার- বিসিককে এই উদ্যোগ থেকে বাদ দেয়। যদি একত্রীকরণ এইভাবে এগোয়, তবে নতুন কর্তৃপক্ষ অনিবার্যভাবে বড় বিদেশি প্রকল্পগুলিকে অগ্রাধিকার দেবে, অন্যদিকে অভ্যন্তরীণ ভিত্তিকে পিছনে পড়ে থাকবে। এটি সুষ্পষ্টভাবেই একটি দ্বিস্তর বিনিয়োগ ব্যবস্থা তৈরি করবে। বিদেশি বিনিয়োগকারীরা ওচঅ-এর একক চ্যানেলের মাধ্যমে সহজে পরিচালিত হয়ে প্রণোদনা ও ঝামেলামুক্ত সুবিধা ভোগ করবে, অন্যদিকে দেশীয় এসএমইগুলি- যারা বাংলাদেশের দেশীয় অর্থনীতির সত্যিকারের ভিত্তি– পুরানো, খণ্ডিত ও আমলাতান্ত্রিক চ্যানেলে আটকে থাকবে। এই ফলাফল একত্রীকরণের অন্তর্ভুক্তিমূলক বক্তব্যের সাথে সাংঘর্ষিক।
শুরু থেকেই বিসিকের ম্যান্ডেট ছিল অভ্যন্তরীণ শিল্পের সমর্থন, এখন একটি একীভূত সংস্থাকে অবশ্যই সব খাতকে সুষমভাবে সেবা দিতে হবে অন্যথায় এটি আমাদের অর্থনৈতিক নীতিতে একটি বড় ফাঁক রেখে যাবে। বিসিক ছাড়া, উদ্যোক্তারা অসহায় হয়ে পড়বেন, উদ্ভাবকরা বাদ পড়বেন, অভ্যন্তরীণ ঝঁঢ়ঢ়ষু ঈযধরহ দুর্বল হয়ে পড়বে এবং গ্রামীণ শিল্প ধ্বংস হয়ে যাবে। সংক্ষেপে, একত্রীকরণ থেকে বিসিককে বাদ দেওয়া পুরো অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি, অভ্যন্তরীণ শিল্প কাঠামো, উৎপাদন এবং স্থিতিশীলতাকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিতে পারে। বিসিকের এস্টেটগুলি গুরুত্বপূর্ণ শিল্প সরবরাহ শৃঙ্খলের আধার। টঙ্গী, কোনাবাড়ী, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ এবং কাঁচপুরের বিসিক এস্টেটের হাজার হাজার ছোট কারখানা বাংলাদেশের বিশ্ববিখ্যাত তৈরি পোশাক খাতের জন্য সুতা কাটে এবং পোশাক বুনন করে, যেখানে লাখ লাখ বুননকারী ও দর্জি নিয়োজিত। উদাহরণস্বরূপ, তামিজুদ্দিন টেক্সটাইলস এবং কাদের সিনথেটিক (কোনাবাড়ী)– উভয়ই বিসিক উদ্যোগ যারা পোশাক প্রস্তুতকারকদের নিরবচ্ছিন্নভাবে সুতা সরবরাহ করে, এই স্তম্ভ শিল্পে কাঁচামালের স্থির প্রবাহ নিশ্চিত করে। আরেকটি উদাহরণ হল শতরঞ্জি (রংপুর): একটি ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) সুরক্ষিত হস্তচালিত কার্পেট যা এখন প্রায় ৪০টি দেশে রপ্তানি হয়, একটি ঐতিহ্যবাহী কারুশিল্প যা বিসিকের সহায়তায় লালিত হয়েছে। পোশাকের বাইরেও, বিসিক এস্টেট/পার্কগুলি অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সরবরাহ লাইন লালন করে। মুন্সীগঞ্জে এপিআই (সক্রিয় ফার্মাসিউটিক্যাল উপাদান) শিল্প পার্ক আমদানিতে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার সাশ্রয়ের লক্ষ্যে ফার্মাসিউটিক্যাল উপাদানের অভ্যন্তরীণ উৎপাদনকে বাড়িয়ে তুলবে। চলমান রাসায়নিক শিল্প পার্ক ঢাকা থেকে বিপজ্জনক কারখানাগুলিকে নিরাপদে স্থানান্তর করবে, এবং বাতবায়নাধীন এস্টেট/পার্কগুলি আমাদের মুদ্রণ ও প্যাকেজিং খাতকে শক্তিশালী করবে। এমনকি আজও, বগুড়া, সিলেট, টঙ্গী এবং কোনাবাড়ীর ছোট বিসিক ফার্মগুলি প্যাকেজিং, কৃষি যন্ত্রপাতি এবং খুচরা যন্ত্রাংশের মতো প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র উৎপাদন করে চলেছে। বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য, এই স্থানীয় সরবরাহ নেটওয়ার্কগুলি অমূল্য, কারণ এগুলো ব্যবসার খরচ ও ঝুঁকি কমায়। বিসিকসহ একটি একীভূত ওচঅ বিনিয়োগকারীদের এই প্রতিষ্ঠিত ইকোসিস্টেমে সরাসরি প্রবেশাধিকার দেবে; এটি বাদ দিলে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা যোগ হবে যা ঋউও নিরুৎসাহিত করতে পারে। বাস্তবে, বিসিক হল বাংলাদেশের উৎপাদন ভূদৃশ্যের লুকানো মেরুদণ্ড, যা বৈশ্বিক বিনিয়োগ ও স্থানীয় উদ্যোগকে একটি সহনশীল সম্পূর্ণতায় সংযুক্ত করে।
আমরা যদি অত্যন্ত সফল বিনিয়োগবান্ধব দেশগুলির কাছ থেকে শিক্ষা নেই, তাহলে বাংলাদেশকে এই দেশগুলির মতোই ইতিবাচক পদক্ষেপ নিতে হবে। চীন, ভারত, ভিয়েতনাম এবং দক্ষিণ কোরিয়া আমাদের শিখায় যে অন্তর্ভুক্তিমূলক শিল্প প্রবৃদ্ধি বিদেশি বিনিয়োগের সাথে অভ্যন্তরীণ এসএমইগুলিকে সংযুক্ত করার উপর নির্ভর করে। চীনের শিল্প ক্লাস্টার, ভারতের ওডিওপি (একটি জেলা একটি পণ্য), ভিয়েতনামের এফডিআই সংস্কার এবং কোরিয়ার দ্বৈত-প্রণোদনা নীতি- সবকটিই কৌশলগতভাবে বৈশ্বিক পুঁজিকে স্থানীয় উদ্যোগের সাথে সংযুক্ত করে। বিসিক ইতোমধ্যেই ৮২টি শিল্প এস্টেট পরিচালনা করছে এবং দেশজুড়ে বৃহত্তম এসএমই হাব লালন করে যাচ্ছে। একে ওচঅ-এর সাথে একত্রিত করা সমন্বিত নীতিকে আরও সক্ষম করে করবে যা এফডিআই আকর্ষণ করার পাশাপাশি স্থানীয় ঠধষঁব ঈযধরহ মধ্যে এটিকে যুক্ত করবে। বিসিককে উপেক্ষা করলে ভিয়েতনামের শহর-গ্রাম বৈষম্যের পুনরাবৃত্তি এবং চীনের সফল এসএমই-এমএনসি সহযোগিতার সুযোগ হাতছাড়া হওয়ার ঝুঁকি সৃষ্টি করবে। ইওউঅ-এর একত্রীকরণের প্রস্তাব আরও শক্তি লাভ করবে যদি বিসিককে একটি প্রান্তিক সংস্থা হিসাবে না দেখে সমতাভিত্তিক, উদ্ভাবন-নেতৃত্বাধীন প্রবৃদ্ধির চাবিকাঠি হিসাবে দেখা হয়।
বিসিককে ওচঅ-এর সাথে সম্পূর্ণ একীভূতকরণ অত্যন্ত প্রয়োজন যাতে উদ্যোক্তাদের বিভক্তি এড়ানো যায় এবং বিসিকের ৮২টিরও বেশি এস্টেট/পার্ককে সমতাভিত্তিক উন্নয়ন ও সুষম প্রবৃদ্ধির ইঞ্জিন হিসাবে কাজে লাগানো যায়। বিসিকের এই সম্পদ ও সক্ষমতাসহ একটি একীভূত সংস্থা বিনিয়োগের সুবিধা সারা দেশে ছড়িয়ে দিতে পারে, অত্যধিক শহুরে ঘনত্ব এড়াতে গ্রামীণ অর্থনীতিকে সুরক্ষিত করতে পারে। এটি মূলত দেশের অপ্রকাশিত সম্ভাবনা বিসিক লালিত এসএমইগুলিকে- যৌথ উদ্যোগ, সাবকন্ট্রাক্টিং, স্থানীয় সোর্সিং এবং বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ভাগ করে নেওয়া গবেষণা ও উন্নয়নে সাহায্য করবে, ফলে বাংলাদেশের ব্যবসাগুলিকে বৈশ্বিক ঠধষঁব ঈযধরহ এ সংযুক্ত করবে।
বিনিয়োগ সংস্থাগুলির প্রস্তাবিত একত্রীকরণ একটি গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ- কিন্তু এটি শুধুমাত্র তখনই ফল দেবে যদি এটি বিসিককে একটি অপরিহার্য অংশীদার হিসাবে গ্রহণ করে। বিসিক একটি অপ্রচলিত ধ্বংসাবশেষ নয়; এটি ইতিবাচকভাবে দূরদর্শী, যার রয়েছে দেশব্যাপী বিস্তৃত নেটওয়ার্ক, উদ্যোক্তা ট্যালেন্ট হাব এবং সুবিস্তৃত ঝঁঢ়ঢ়ষু ঈযধরহ যা শিল্প প্রবৃদ্ধিকে চালিত করে। এছাড়াও বিসিকের রয়েছে সহস্রাধিক মেধাবী, দক্ষ ও অভিজ্ঞ জনবল যারা অক্লান্তভাবে শিল্প উন্নয়নের উদ্যোগগুলোকে সরকারের নির্দেশনায় বাস্তবায়ন করে চলেছে। বিসিক অবশ্যই চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি (অব্যবহৃত জমি এবং প্রশাসনিক জটিলতা), তবে এগুলির সমাধান করা উচিত বাদ দেওয়ার মাধ্যমে নয়, বরং একীভূতকরণ ও সংস্কারের মাধ্যমে।
বিসিক বাংলাদেশের শিল্প পরিচয়ের মূর্ত প্রতীক। এর তাঁতি, কারিগর, পোশাক বুননকারী, দর্জি ও যন্ত্র নির্মাতারা আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও সৃজনশীলতার প্রতিফলন। আমরা যদি বিসিককে প্রান্তিক করি, তাহলে আমাদের অর্থনীতির আত্মা হারানোর ঝুঁকি এবং এর সাথে, জাতীয় সহনশীলতা দূর্বল করে তুলবে। মাত্র কয়েকটি জোন বা বিদেশি কারখানার উপর নির্মিত অর্থনীতি একটি ভঙ্গুর ব্যবস্থা; অন্যদিকে হাজার হাজার গ্রাম ও শহরে শিকড় গেড়ে থাকা কটেজ, মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের অর্থনীতি মজবুত। বাংলাদেশের উন্নয়নে উভয়টি প্রয়োজন। বাংলাদেশের বিনিয়োগের ভবিষ্যৎ আজ বিসিকের একীভূতকরণ করা বা না করার পছন্দের উপর নির্ভর করছে। বিসিককে সম্পূর্ণরূপে একীভূত করা বিদেশি ও স্থানীয় পুঁজিকে একটি সুসংগত ইকোসিস্টেমে একত্রিত করবে, ক্ষুদ্র শিল্পের প্রতি আমাদের দীর্ঘমেয়াদী অঙ্গীকারকে সম্মান জানানোর পাশাপাশি সেই পুঁজিকে আকর্ষণ করবে যা প্রবৃদ্ধিকে শক্তি জোগায়। আমরা নীতিনির্ধারক এবং ইওউঅ-এর নেতৃত্বকে এই আহ্বান বিবেচনা করার জন্য অনুরোধ করছি যে বিসিককে অন্তর্ভুক্ত করা আমাদের শিল্প পরিচয়কে শক্তিশালী করবে, জাতীয় সহনশীলতাকে জোরদার করবে এবং অভ্যন্তরীণ শিল্প সমৃদ্ধি নিশ্চিত করবে যা সত্যিকার অর্থে দেশের প্রতিটি প্রান্তে এবং দেশের বাইরেও সের সামর্থের কথা কে পৌঁছে দিবে।

লেখক : শাহজাহান আলী, শিল্পনগরী কর্মকর্তা