১২:০৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৩ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
অনূর্ধ্ব-২০ নারী সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ

কাদা মাঠেও শ্রীলঙ্কার জালে বাংলাদেশের গোলবন্যা

বাংলাদেশের জালে লায়ানসিকা জাসোথারান বল ফেলার সঙ্গে সঙ্গেই উল্লাসে ফেটে পড়ে শ্রীলঙ্কার ডাগ আউট। কে বলবে এই দলটি এর আগে হজম করেছে ৮ গোল। বড় ব্যবধানে হারের পরও সামান্য প্রাপ্তি টুকু নিয়ে তৃপ্তির ঢেঁঁকুর তুলছে তারা। তাতে অবশ্য ফিকে হয়নি বাংলাদেশের জয়ের আনন্দ।
অনূর্ধ্ব-২০ নারী সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশ শুরুটা করেছে ফেবারিটের মতো করেই।
শ্রীলঙ্কাকে গুঁড়িয়ে দিয়েছে ৯-১ গোলে। আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট হলেও মাঠের চিত্র দেখে তা বোঝার উপায় ছিল না। মাঠ সংক্রান্ত জটিলতার কারণে ফেব্রুয়ারি থেকে জুলাইয়ে পিছিয়ে আনা হয় সাফ অনূর্ধ্ব-২০ নারী চ্যাম্পিয়নশিপ। কিন্তু বসুন্ধরা কিংস অ্যারেনার বেহাল অবস্থা। এবড়োখেবড়ো এই মাঠে দারুণ শুরু করেছে বাংলাদেশ। ম্যাচের দ্বিতীয় মিনিটে ফ্রিকিক থেকে দারুণ এক গোলে বাংলাদেশকে এগিয়ে দেন স্বপ্না রানী। চতুর্থ মিনিটে বাঁ প্রান্ত দিয়ে এগিয়ে গিয়ে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন মুনকি আক্তার। ২০ মিনিটে সেই মুনকির শট পোস্টে লেগে ফিরে না এলে ব্যবধান ৩-০ হতে পারত। ২৯ মিনিটে বাঁ প্রান্ত থেকে স্বপ্নার ক্রসে মাথা ছোঁয়াতে ব্যর্থ হন সাগরিকা এক মিনিট বক্সের ভেতর তাঁর নেওয়া শট ঠেকিয়ে দেন লঙ্কান গোলরক্ষক থারুশিকা দোদামগোদাগে। গোলের সুযোগ এসেছিল বাংলাদেশ অধিনায়ক আফঈদা খন্দকারের সামনেও। কিন্তু ৩১ মিনিটে বক্সের ভেতর থারুশিকাকে পরাস্ত করতে পারেননি তিনি। ৩৩ মিনিটে উমেলা মারমার দুর্দান্ত এক পাসকে গোলে রূপ দিতে পারেননি সাগরিকা। ৩৭ মিনিটে অবশেষে গোলের দেখা পান তিনি। সিনহা জাহান শিখার ক্রস আটকাতে এগিয়ে আসেন থারুশিকা। বল তার পায়ের ফাঁক দিয়ে চলে যায় সাগরিকার কাছে। ফাঁকা জালে বল ফেলতে কোনো বল করেননি এই ফরোয়ার্ড। বিরতির পর ৪৮ মিনিটে সাগরিকার কাটব্যাক থেকে নিজের দ্বিতীয় গোলের দেখা পান মুনকি। ৫০ মিনিটে শান্তি মার্দির ক্রসে পা লাগিয়ে জাল খুঁজে নেন শিখা। ৫৩ মিনিটে বন্যা খাতুনের পাস থেকে বক্সে ঢুকে দুই ডিফেন্ডারের মাঝখান দিয়ে দলের ষষ্ঠ গোলটি করেন সাগরিকা। ৫৯ মিনিটে হ্যাটট্রিকও পূরণ কর ফেলেন এই ফরোয়ার্ড। পূজা দাসের কাটব্যাক প্রথম স্পর্শেই কাজে লাগান তিনি। ৮৫ মিনিটে গোলের খাতায় নাম লেখান রুপা আক্তার। বন্যা খাতুনের কর্নার ক্লিয়ারের চেষ্টা করেন শ্রীলঙ্কান গাগানি সেল্লাপেরুমাগে। কিন্তু উল্টো বল চলে যায় বক্সের ভেতর থাকা রুপার কাছে। দারুণ শটে দলের হয়ে অষ্টম গোলটি করেন তিনি। যোগ করা সময়ের দ্বিতীয় মিনিটে ওয়ান টু ওয়ান শটে শ্রীলঙ্কাকে গোল এনে দেন জাসোথারান। বাংলাদেশের শেষ গোলটি করেন শান্তি মার্দি।
বড় জয়, সাগরিকার হ্যাটট্রিক নিয়ে তৃপ্তি থাকলেও বাংলাদেশ কোচ পিটার জেমস বাটলারের কথায় উঠে এলো গোলমুখে মুনকি-শিখাদের সুযোগ নষ্টের দিকটি। মাঠের কন্ডিশন নিয়েও নিজের হতাশা আড়াল করেননি এই ইংলিশ কোচ।
‘প্রথমত গতিময় এবং আক্রমণাত্মক খেলার জন্য কন্ডিশন কঠিন ছিল। আমি কেবলই অনুভব করছি, আমরা একটু বেশিই সুযোগ নষ্ট করেছি এবং আমি অল্প কয়েকজনকে খেলার সুযোগ দিতে পেরেছি। আমার দৃষ্টিতে কেউ খুবই ভালো করেছে, অন্যরা হয়তো অতটা ভালো ছিল না। সাগরিকা ছিল দারুণ, নবীরন দৃঢ় মানসিকতার, শিখাও ভালো করেছে।’
‘আসলে, এদের মধ্যে অনেকে দীর্ঘসময় খেলেনি। তবে আমি ভেবেছিলাম, ফিনিশিংয়ে আমরা আরও বেশি কার্যকর হব, কিন্তু মাঠের পরিস্থিতি আমাদের সাহায্যে আসেনি। মাঠ খুবই ভারী ছিল। অবশ্যই, এটা কারো দোষ নয়। কদিন ধরে প্রচুর বৃষ্টি হয়েছিল। মাঠ যেমন ছিল, সেটাই বললাম আরকি। কিন্তু আমরা ৯ গোল করেছি। শেষ দিকে একটা গোল খাওয়ায় একটু হতাশা আছে। তবে স্বস্তির বিষয় ম্যাচটা আমরা শেষ করতে পেরেছি কোনো চোট ছাড়াই।’
খেলার মাঝে শ্রীলঙ্কার একাধিক খেলোয়াড় মাঠ ছেড়েছেন চোট পেয়ে। দলটির কোচ সিরান্থা কে কালহাথ বাংলাদেশের খেলার প্রশংসা করলেও মাঠ নিয়ে ঠিকই জানালেন উষ্মা। ‘
আমি জানি বাংলাদেশ আসলেই খুবই ভালো দল। তারা লম্বা সময় প্রস্তুতি নিয়েছে। আমার দলে তিন জন অভিজ্ঞ, বাকিরা একেবারেই নতুন। তাদের জন্য এটি ভালো অভিজ্ঞতা। আমি মনে করি, মাঠের অবস্থা একটু খারাপ। কিছু চোটও হয়েছে। আমি মেয়েদের বলেছি, এটা তোমাদের জন্য ভালো অভিজ্ঞতা। আমি এটা প্রত্যাশা করিনি। আবহাওয়া বদল করা সম্ভব নয়। তবে আমি আসলেই এমন মাঠ প্রত্যাশা করিনি।’

 

 

জনপ্রিয় সংবাদ

স্মৃতিসৌধে তারেক রহমান

অনূর্ধ্ব-২০ নারী সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ

কাদা মাঠেও শ্রীলঙ্কার জালে বাংলাদেশের গোলবন্যা

আপডেট সময় : ১২:৫৬:৫২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১২ জুলাই ২০২৫

বাংলাদেশের জালে লায়ানসিকা জাসোথারান বল ফেলার সঙ্গে সঙ্গেই উল্লাসে ফেটে পড়ে শ্রীলঙ্কার ডাগ আউট। কে বলবে এই দলটি এর আগে হজম করেছে ৮ গোল। বড় ব্যবধানে হারের পরও সামান্য প্রাপ্তি টুকু নিয়ে তৃপ্তির ঢেঁঁকুর তুলছে তারা। তাতে অবশ্য ফিকে হয়নি বাংলাদেশের জয়ের আনন্দ।
অনূর্ধ্ব-২০ নারী সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশ শুরুটা করেছে ফেবারিটের মতো করেই।
শ্রীলঙ্কাকে গুঁড়িয়ে দিয়েছে ৯-১ গোলে। আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট হলেও মাঠের চিত্র দেখে তা বোঝার উপায় ছিল না। মাঠ সংক্রান্ত জটিলতার কারণে ফেব্রুয়ারি থেকে জুলাইয়ে পিছিয়ে আনা হয় সাফ অনূর্ধ্ব-২০ নারী চ্যাম্পিয়নশিপ। কিন্তু বসুন্ধরা কিংস অ্যারেনার বেহাল অবস্থা। এবড়োখেবড়ো এই মাঠে দারুণ শুরু করেছে বাংলাদেশ। ম্যাচের দ্বিতীয় মিনিটে ফ্রিকিক থেকে দারুণ এক গোলে বাংলাদেশকে এগিয়ে দেন স্বপ্না রানী। চতুর্থ মিনিটে বাঁ প্রান্ত দিয়ে এগিয়ে গিয়ে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন মুনকি আক্তার। ২০ মিনিটে সেই মুনকির শট পোস্টে লেগে ফিরে না এলে ব্যবধান ৩-০ হতে পারত। ২৯ মিনিটে বাঁ প্রান্ত থেকে স্বপ্নার ক্রসে মাথা ছোঁয়াতে ব্যর্থ হন সাগরিকা এক মিনিট বক্সের ভেতর তাঁর নেওয়া শট ঠেকিয়ে দেন লঙ্কান গোলরক্ষক থারুশিকা দোদামগোদাগে। গোলের সুযোগ এসেছিল বাংলাদেশ অধিনায়ক আফঈদা খন্দকারের সামনেও। কিন্তু ৩১ মিনিটে বক্সের ভেতর থারুশিকাকে পরাস্ত করতে পারেননি তিনি। ৩৩ মিনিটে উমেলা মারমার দুর্দান্ত এক পাসকে গোলে রূপ দিতে পারেননি সাগরিকা। ৩৭ মিনিটে অবশেষে গোলের দেখা পান তিনি। সিনহা জাহান শিখার ক্রস আটকাতে এগিয়ে আসেন থারুশিকা। বল তার পায়ের ফাঁক দিয়ে চলে যায় সাগরিকার কাছে। ফাঁকা জালে বল ফেলতে কোনো বল করেননি এই ফরোয়ার্ড। বিরতির পর ৪৮ মিনিটে সাগরিকার কাটব্যাক থেকে নিজের দ্বিতীয় গোলের দেখা পান মুনকি। ৫০ মিনিটে শান্তি মার্দির ক্রসে পা লাগিয়ে জাল খুঁজে নেন শিখা। ৫৩ মিনিটে বন্যা খাতুনের পাস থেকে বক্সে ঢুকে দুই ডিফেন্ডারের মাঝখান দিয়ে দলের ষষ্ঠ গোলটি করেন সাগরিকা। ৫৯ মিনিটে হ্যাটট্রিকও পূরণ কর ফেলেন এই ফরোয়ার্ড। পূজা দাসের কাটব্যাক প্রথম স্পর্শেই কাজে লাগান তিনি। ৮৫ মিনিটে গোলের খাতায় নাম লেখান রুপা আক্তার। বন্যা খাতুনের কর্নার ক্লিয়ারের চেষ্টা করেন শ্রীলঙ্কান গাগানি সেল্লাপেরুমাগে। কিন্তু উল্টো বল চলে যায় বক্সের ভেতর থাকা রুপার কাছে। দারুণ শটে দলের হয়ে অষ্টম গোলটি করেন তিনি। যোগ করা সময়ের দ্বিতীয় মিনিটে ওয়ান টু ওয়ান শটে শ্রীলঙ্কাকে গোল এনে দেন জাসোথারান। বাংলাদেশের শেষ গোলটি করেন শান্তি মার্দি।
বড় জয়, সাগরিকার হ্যাটট্রিক নিয়ে তৃপ্তি থাকলেও বাংলাদেশ কোচ পিটার জেমস বাটলারের কথায় উঠে এলো গোলমুখে মুনকি-শিখাদের সুযোগ নষ্টের দিকটি। মাঠের কন্ডিশন নিয়েও নিজের হতাশা আড়াল করেননি এই ইংলিশ কোচ।
‘প্রথমত গতিময় এবং আক্রমণাত্মক খেলার জন্য কন্ডিশন কঠিন ছিল। আমি কেবলই অনুভব করছি, আমরা একটু বেশিই সুযোগ নষ্ট করেছি এবং আমি অল্প কয়েকজনকে খেলার সুযোগ দিতে পেরেছি। আমার দৃষ্টিতে কেউ খুবই ভালো করেছে, অন্যরা হয়তো অতটা ভালো ছিল না। সাগরিকা ছিল দারুণ, নবীরন দৃঢ় মানসিকতার, শিখাও ভালো করেছে।’
‘আসলে, এদের মধ্যে অনেকে দীর্ঘসময় খেলেনি। তবে আমি ভেবেছিলাম, ফিনিশিংয়ে আমরা আরও বেশি কার্যকর হব, কিন্তু মাঠের পরিস্থিতি আমাদের সাহায্যে আসেনি। মাঠ খুবই ভারী ছিল। অবশ্যই, এটা কারো দোষ নয়। কদিন ধরে প্রচুর বৃষ্টি হয়েছিল। মাঠ যেমন ছিল, সেটাই বললাম আরকি। কিন্তু আমরা ৯ গোল করেছি। শেষ দিকে একটা গোল খাওয়ায় একটু হতাশা আছে। তবে স্বস্তির বিষয় ম্যাচটা আমরা শেষ করতে পেরেছি কোনো চোট ছাড়াই।’
খেলার মাঝে শ্রীলঙ্কার একাধিক খেলোয়াড় মাঠ ছেড়েছেন চোট পেয়ে। দলটির কোচ সিরান্থা কে কালহাথ বাংলাদেশের খেলার প্রশংসা করলেও মাঠ নিয়ে ঠিকই জানালেন উষ্মা। ‘
আমি জানি বাংলাদেশ আসলেই খুবই ভালো দল। তারা লম্বা সময় প্রস্তুতি নিয়েছে। আমার দলে তিন জন অভিজ্ঞ, বাকিরা একেবারেই নতুন। তাদের জন্য এটি ভালো অভিজ্ঞতা। আমি মনে করি, মাঠের অবস্থা একটু খারাপ। কিছু চোটও হয়েছে। আমি মেয়েদের বলেছি, এটা তোমাদের জন্য ভালো অভিজ্ঞতা। আমি এটা প্রত্যাশা করিনি। আবহাওয়া বদল করা সম্ভব নয়। তবে আমি আসলেই এমন মাঠ প্রত্যাশা করিনি।’