০১:১২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৩ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
বিশ্ব টেবিল টেনিসের বাছাইপর্ব

জাতীয় টেবিল টেনিস দলের এ কি হাল!

৩০-৩১ জুলাই পর্যন্ত নেপালে অনুষ্ঠিত হয়েছে বিশ্বকাপ বাছাইয়ের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের খেলা। এই প্রতিযোগিতায় শুধু দলগত ইভেন্টই হয়েছে। বাছাইপর্বে অংশ নিতে বাংলাদেশ জাতীয় টেবিল টেনিস পুরুষ ও নারী দল নেপালের কাঠমান্ডু পৌঁছে গত ২৮ জুলাই।

অথচ বিস্ময়কর ব্যাপার হচ্ছে- বাংলাদেশ টেবিল টেনিস ফেডারেশন বিশ্বকাপ বাছাইয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ আসরে বাংলাদেশ টিটি দলকে না পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল! ফেডারেশন খেলোয়াড়দের সিলেকশনের মাধ্যমে দল চূড়ান্ত করতে চেয়েছিল। খেলোয়াড়রা র‌্যাংকিংয়ের ভিত্তিতেই খেলতে চেয়েছিল। দুই পক্ষ দুই অবস্থানে অনড় থাকায় ফেডারেশন আয়োজকদের না খেলার বিষয়টি জানায়।

বিশ্বকাপ বাছাই বাংলাদেশের টেবিল টেনিসের জন্য গুরুত্বপূর্ণ টুর্নামেন্ট। খেলোয়াড়-ফেডারেশনের ‘র‌্যাংকিং-সিলেকশন’ দ্বন্দ্বে দল না পাঠানোর সিদ্ধান্তে গণমাধ্যম ও ক্রীড়াঙ্গনে সমালোচনা হয়। ক্রীড়া প্রশাসনেরও বিষয়টি দৃষ্টি আকর্ষণ হয়েছিল। উদ্ভুত পরিস্থিতিতে ফেডারেশন জরুরি ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে। আসন্ন টুর্নামেন্টের জন্য র‌্যাংকিংয়ের ভিত্তিতেই দল পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়। নির্ধারিত সময়ের পর হলেও অনেক দেন-দরবার করে কয়েক দিন আগে এন্ট্রি নিশ্চিত হয়ে বাংলাদেশের।

পুরুষ দলে রয়েছেন রামহিম লিয়ান বম, হৃদয়, জাভেদ আহমেদ ও ইমন। নারী দলে সোনাম সুলতানা সোমা, মৌ, খৈ খৈ ও ঐশী। এই দলের কোচ সৈয়দ মাহমুদুজ্জামান শাহেদ।

এই টুর্নামেন্টের চ্যাম্পিয়ন দল আগামী বছর ইংল্যান্ডে বিশ্বকাপ টিটিতে খেলার সুযোগ পাবে। ভারত স্বাভাবিকভাবেই চ্যাম্পিয়নের দাবিদার। বাংলাদেশ টেবিল টেনিস খেলোয়াড় ও ফেডারেশনের হিসেবে ভারত এশিয়ান র‌্যাংকিংয়ে এগিয়ে থাকায় সরাসরি খেলার সুযোগ পাবে সেক্ষেত্রে এই টুর্নামেন্টে রানার্স-আপ হলে বাংলাদেশেরও বিশ্বকাপ খেলার সুযোগ ছিল। বাংলাদেশ সেই লক্ষ্যেই মূলত নেপাল গিয়েছিল। কিন্তু লক্ষ্যের ধারেকাছেও যেতে পারেনি তারা! হয়েছে চরম ভরাডুবি!

মাত্র এক বছর আগেই এই দলটি এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে ভারত বাদে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে শীর্ষস্থান অর্জন করেছিল। রামহিম ও তার সতীর্থদের নেতৃত্বে কমনওয়েলথ গেমস ও ইসলামিক সলিডারিটি গেমসে কোয়ার্টার ফাইনাল, দক্ষিণ এশীয় টেবিল টেনিস যুব চ্যাম্পিয়নশিপে ইতিহাস গড়ে প্রথমবারের মতো স্বর্ণপদক জয় এবং দেশের ‘সেরা ফেডারেশন’ নির্বাচিত হওয়া—সব মিলিয়ে বাংলাদেশের টেবিল টেনিস ছিল আশার আলোয় আলোকিত।

কিন্তু এক বছরের ব্যবধানে চিত্র পাল্টে গেছে ভয়াবহভাবে। বিশ্ব টেবিল টেনিস চ্যাম্পিয়নশিপের দক্ষিণ এশিয়ান কোয়ালিফায়ারে বাংলাদেশের ইতিহাসে এই প্রথম পুরুষ দল মালদ্বীপের কাছেও হারার সঙ্গে সঙ্গে, নেপাল, শ্রীলঙ্কা ও ভারতের কাছেও পরাজিত হয়ে পাঁচ দলের মধ্যে সর্বনিম্নে থেকে টুর্নামেন্ট শেষ করেছে! এখানে উল্লেখ্য, এই একই খেলোয়াড়রাই কিন্তু বিগত বছরগুলোয় সাফল্য এনে দিয়েছিলেন। তবে মাঠের খেলার পাশাপাশি দল নির্বাচনে অদূরদর্শী ও অবাঞ্ছিত হস্তক্ষেপ যেন ভরাডুবির চূড়ান্ত রূপ দিয়েছে। দেশের এক নম্বর খেলোয়াড় রামহিমকে নামানো হয় তিন নম্বরে, যেখানে তিনি মাত্র একটি সেট খেলার সুযোগ পান এবং জয়লাভ করেন। বিপরীতে, চার নম্বরে থাকা এক খেলোয়াড়কে খেলানো হয় দুই নম্বরে—যিনি দুটি সেটই হেরে দলকে পিছিয়ে দেন!

আর এই কারণে ইতিহাসে প্রথমবারের মতো মালদ্বীপের কাছে হারে বাংলাদেশ।
এছাড়া বাংলাদেশের নারী দলটিও নেপাল, মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কা, ভারত সবার কাছেই হেরেছে এবার! টেবিল টেনিসের ইতিহাসে এতবড় দুর্যোগ আর কখনোই আসেনি বল্ই মনে করছেন ক্রীড়াপ্রেমীরা।

টেবিল টেনিস বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই ভরাডুবির মূল কারণ-দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার অভাব, খেলোয়াড়দের সঙ্গে শীর্ষ পর্যায়ের দূরত্ব এবং সবচেয়ে বড় কথা, খেলাটির দায়িত্ব যোগ্য ব্যক্তির হাতে না থাকা।

কিছুদিন পূর্বেও সাউথ এশিয়ানে জিতে এশিয়ানে যাওয়া, যেটা ছিল বাংলাদেশের জন্য ডাল ভাত, দুই মাস পূর্বে সেখানেও ব্যর্থতার গ্লানি। বিগত বছর গুলোর মধ্যে প্রথমবার এশিয়ানে কোয়ালিফাই করতে পারেনি।

যেখানে এক বছর আগেও, আন্তর্জাতিক সাফল্যের কারণে, টেবিল টেনিস ফেডারেশন পেয়েছিল দেশের সেরা ফেডারেশনের পুরস্কার, আর এক বছরেই হলো ভরাডুবি।

আরকে/সবা

জনপ্রিয় সংবাদ

সব রেকর্ড ভেঙে স্বর্ণের দামে নতুন ইতিহাস, ভরি ছাড়াল দুই লাখ ২৭ হাজার

বিশ্ব টেবিল টেনিসের বাছাইপর্ব

জাতীয় টেবিল টেনিস দলের এ কি হাল!

আপডেট সময় : ০৯:১৫:২৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই ২০২৫

৩০-৩১ জুলাই পর্যন্ত নেপালে অনুষ্ঠিত হয়েছে বিশ্বকাপ বাছাইয়ের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের খেলা। এই প্রতিযোগিতায় শুধু দলগত ইভেন্টই হয়েছে। বাছাইপর্বে অংশ নিতে বাংলাদেশ জাতীয় টেবিল টেনিস পুরুষ ও নারী দল নেপালের কাঠমান্ডু পৌঁছে গত ২৮ জুলাই।

অথচ বিস্ময়কর ব্যাপার হচ্ছে- বাংলাদেশ টেবিল টেনিস ফেডারেশন বিশ্বকাপ বাছাইয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ আসরে বাংলাদেশ টিটি দলকে না পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল! ফেডারেশন খেলোয়াড়দের সিলেকশনের মাধ্যমে দল চূড়ান্ত করতে চেয়েছিল। খেলোয়াড়রা র‌্যাংকিংয়ের ভিত্তিতেই খেলতে চেয়েছিল। দুই পক্ষ দুই অবস্থানে অনড় থাকায় ফেডারেশন আয়োজকদের না খেলার বিষয়টি জানায়।

বিশ্বকাপ বাছাই বাংলাদেশের টেবিল টেনিসের জন্য গুরুত্বপূর্ণ টুর্নামেন্ট। খেলোয়াড়-ফেডারেশনের ‘র‌্যাংকিং-সিলেকশন’ দ্বন্দ্বে দল না পাঠানোর সিদ্ধান্তে গণমাধ্যম ও ক্রীড়াঙ্গনে সমালোচনা হয়। ক্রীড়া প্রশাসনেরও বিষয়টি দৃষ্টি আকর্ষণ হয়েছিল। উদ্ভুত পরিস্থিতিতে ফেডারেশন জরুরি ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে। আসন্ন টুর্নামেন্টের জন্য র‌্যাংকিংয়ের ভিত্তিতেই দল পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়। নির্ধারিত সময়ের পর হলেও অনেক দেন-দরবার করে কয়েক দিন আগে এন্ট্রি নিশ্চিত হয়ে বাংলাদেশের।

পুরুষ দলে রয়েছেন রামহিম লিয়ান বম, হৃদয়, জাভেদ আহমেদ ও ইমন। নারী দলে সোনাম সুলতানা সোমা, মৌ, খৈ খৈ ও ঐশী। এই দলের কোচ সৈয়দ মাহমুদুজ্জামান শাহেদ।

এই টুর্নামেন্টের চ্যাম্পিয়ন দল আগামী বছর ইংল্যান্ডে বিশ্বকাপ টিটিতে খেলার সুযোগ পাবে। ভারত স্বাভাবিকভাবেই চ্যাম্পিয়নের দাবিদার। বাংলাদেশ টেবিল টেনিস খেলোয়াড় ও ফেডারেশনের হিসেবে ভারত এশিয়ান র‌্যাংকিংয়ে এগিয়ে থাকায় সরাসরি খেলার সুযোগ পাবে সেক্ষেত্রে এই টুর্নামেন্টে রানার্স-আপ হলে বাংলাদেশেরও বিশ্বকাপ খেলার সুযোগ ছিল। বাংলাদেশ সেই লক্ষ্যেই মূলত নেপাল গিয়েছিল। কিন্তু লক্ষ্যের ধারেকাছেও যেতে পারেনি তারা! হয়েছে চরম ভরাডুবি!

মাত্র এক বছর আগেই এই দলটি এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে ভারত বাদে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে শীর্ষস্থান অর্জন করেছিল। রামহিম ও তার সতীর্থদের নেতৃত্বে কমনওয়েলথ গেমস ও ইসলামিক সলিডারিটি গেমসে কোয়ার্টার ফাইনাল, দক্ষিণ এশীয় টেবিল টেনিস যুব চ্যাম্পিয়নশিপে ইতিহাস গড়ে প্রথমবারের মতো স্বর্ণপদক জয় এবং দেশের ‘সেরা ফেডারেশন’ নির্বাচিত হওয়া—সব মিলিয়ে বাংলাদেশের টেবিল টেনিস ছিল আশার আলোয় আলোকিত।

কিন্তু এক বছরের ব্যবধানে চিত্র পাল্টে গেছে ভয়াবহভাবে। বিশ্ব টেবিল টেনিস চ্যাম্পিয়নশিপের দক্ষিণ এশিয়ান কোয়ালিফায়ারে বাংলাদেশের ইতিহাসে এই প্রথম পুরুষ দল মালদ্বীপের কাছেও হারার সঙ্গে সঙ্গে, নেপাল, শ্রীলঙ্কা ও ভারতের কাছেও পরাজিত হয়ে পাঁচ দলের মধ্যে সর্বনিম্নে থেকে টুর্নামেন্ট শেষ করেছে! এখানে উল্লেখ্য, এই একই খেলোয়াড়রাই কিন্তু বিগত বছরগুলোয় সাফল্য এনে দিয়েছিলেন। তবে মাঠের খেলার পাশাপাশি দল নির্বাচনে অদূরদর্শী ও অবাঞ্ছিত হস্তক্ষেপ যেন ভরাডুবির চূড়ান্ত রূপ দিয়েছে। দেশের এক নম্বর খেলোয়াড় রামহিমকে নামানো হয় তিন নম্বরে, যেখানে তিনি মাত্র একটি সেট খেলার সুযোগ পান এবং জয়লাভ করেন। বিপরীতে, চার নম্বরে থাকা এক খেলোয়াড়কে খেলানো হয় দুই নম্বরে—যিনি দুটি সেটই হেরে দলকে পিছিয়ে দেন!

আর এই কারণে ইতিহাসে প্রথমবারের মতো মালদ্বীপের কাছে হারে বাংলাদেশ।
এছাড়া বাংলাদেশের নারী দলটিও নেপাল, মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কা, ভারত সবার কাছেই হেরেছে এবার! টেবিল টেনিসের ইতিহাসে এতবড় দুর্যোগ আর কখনোই আসেনি বল্ই মনে করছেন ক্রীড়াপ্রেমীরা।

টেবিল টেনিস বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই ভরাডুবির মূল কারণ-দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার অভাব, খেলোয়াড়দের সঙ্গে শীর্ষ পর্যায়ের দূরত্ব এবং সবচেয়ে বড় কথা, খেলাটির দায়িত্ব যোগ্য ব্যক্তির হাতে না থাকা।

কিছুদিন পূর্বেও সাউথ এশিয়ানে জিতে এশিয়ানে যাওয়া, যেটা ছিল বাংলাদেশের জন্য ডাল ভাত, দুই মাস পূর্বে সেখানেও ব্যর্থতার গ্লানি। বিগত বছর গুলোর মধ্যে প্রথমবার এশিয়ানে কোয়ালিফাই করতে পারেনি।

যেখানে এক বছর আগেও, আন্তর্জাতিক সাফল্যের কারণে, টেবিল টেনিস ফেডারেশন পেয়েছিল দেশের সেরা ফেডারেশনের পুরস্কার, আর এক বছরেই হলো ভরাডুবি।

আরকে/সবা