রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বেরোবি) প্রতিষ্ঠার ১৭ বছর পার হলেও এখন পর্যন্ত সেখানে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ব্রাকসু) গঠিত হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীরা দীর্ঘদিন ধরে গণতান্ত্রিক অধিকার নিশ্চিতের লক্ষ্যে ছাত্রসংসদ নির্বাচনের দাবি জানিয়ে এলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি।
২০০৮ সালে বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার পর থেকেই রাজনৈতিক ছাত্রসংগঠনগুলোর প্রভাব ছিল দৃশ্যমান। অভিযোগ রয়েছে, এসব সংগঠনের আধিপত্যের ফলে সাধারণ শিক্ষার্থীরা হয়রানি, নির্যাতন ও চাঁদাবাজির শিকার হন। সর্বশেষ ২০২৪ সালের ১৬ জুলাই ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে’ ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী আবু সাঈদের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে হয়ে ওঠে। ওই ঘটনার জন্য ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে।
এ ঘটনার পর শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০৮তম সিন্ডিকেট সভায় ছাত্র ও শিক্ষক রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। পরবর্তী ১১১তম সিন্ডিকেট সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, কেউ রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত প্রমাণিত হলে তার ছাত্রত্ব বাতিলসহ আজীবন বহিষ্কার করা হবে। প্রয়োজনে প্রচলিত আইন অনুযায়ীও ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে।
দীর্ঘদিন ছাত্রসংসদ না থাকায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে গণতান্ত্রিক চর্চার সুযোগ সংকুচিত হয়ে পড়েছে। সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর বেরোবিতেও ছাত্রসংসদের দাবির প্রতি নতুন করে গুরুত্ব দেখা যাচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০০৯ সালের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় আইনে ছাত্রসংসদের কোনো বিধান নেই। এ কারণে নতুনভাবে ‘ছাত্র সংসদ নীতিমালা’ প্রণয়ন করে তা একাডেমিক কাউন্সিল ও সিন্ডিকেটে পাস করা হয়েছে। এখন নীতিমালাটি অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনে (ইউজিসি)। অনুমোদন পেলেই রোডম্যাপ ঘোষণা ও নির্বাচনের প্রস্তুতি কার্যক্রম শুরু হবে বলে জানিয়েছে প্রশাসন। ইতোমধ্যে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের জন্য স্বতন্ত্র ব্যাংক হিসাব খোলা ও ভোটার তালিকা তৈরির কাজ চলমান রয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তর জানিয়েছে, প্রশাসন শিক্ষার্থীদের দাবিকে গুরুত্ব দিয়েই কাজ করছে। অন্যদিকে শিক্ষার্থীরা বলছেন, ক্যাম্পাসে সহিংসতা ও দখলদারিত্বের সংস্কৃতি বন্ধ করতে ছাত্রসংসদ অপরিহার্য। এর মাধ্যমে ভারসাম্যপূর্ণ এবং জবাবদিহিমূলক পরিবেশ গড়ে তোলা সম্ভব।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. শওকত আলী বলেন, “আগে ছাত্রসংসদের কোনো সংবিধি ছিল না। নতুন সংবিধি প্রণয়নের জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে, যা সিন্ডিকেটে অনুমোদন পেয়ে ইউজিসিতে পাঠানো হয়েছে। আমরা শিক্ষার্থীদের দাবির আগেই এই কাজ শুরু করেছি। আশাকরি দ্রুত নীতিমালা অনুমোদিত হবে এবং কার্যক্রম শুরু করা যাবে।”
এমআর/সবা


























