০১:৪৪ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

৪০০ এ্যাসিস্টের পথে মেসি : এক অনন্য ইতিহাসের দোরগোড়ায়

  • রুমেল খান
  • আপডেট সময় : ১১:৩৯:০৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ৯ অগাস্ট ২০২৫
  • 268

ফুটবল ইতিহাসে বহু কিংবদন্তির আবির্ভাব ঘটেছে, কিন্তু লিওনেল মেসির মতো নিখুঁত ও ধারাবাহিক এক মহারথীর দেখা পাওয়া যেন বিরল। গোল করার ক্ষেত্রে তিনি যে ভয়ংকর, তা তো দীর্ঘদিন আগেই প্রমাণিত। কিন্তু ফুটবল ইতিহাসে তাঁর সবচেয়ে অনন্য ও অবিস্মরণীয় দিক হলো—গোল বানিয়ে দেওয়ার অসামান্য ক্ষমতা। এখন সেই প্রতিভারই এক চূড়ান্ত নিদর্শনের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে আছেন তিনি। আর মাত্র ১২টি অ্যাসিস্ট করলেই লিওনেল মেসি হবেন ইতিহাসের প্রথম ফুটবলার, যিনি ক্যারিয়ারে স্পর্শ করবেন ৪০০ অ্যাসিস্টের মাইলফলক।

প্লেমেকিংয়ের প্রতিভা

লিওনেল মেসির খেলার ধরনই তাঁকে আলাদা করে তোলে। ড্রিবল, ভিশন, পাসিং অ্যাকিউরেসি এবং খেলাকে পড়ার অসাধারণ ক্ষমতার এক দুরন্ত মিশ্রণ মেসিকে শুধু গোলস্কোরার নয়, বরং একজন পরিপূর্ণ প্লেমেকার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। তিনি শুধু নিজে গোল করেন না, বরং দলের অন্য খেলোয়াড়দের জন্য গোলের পথ তৈরি করেন ধারাবাহিকভাবে। তাঁর অনেক অ্যাসিস্টই ‘চিরস্মরণীয়’, কারণ অনেক সময় গোলের চেয়ে বেশি মুগ্ধতা ছড়ায় সেই পাসটিই।

পরিসংখ্যানের চোখে

প্রায় ৩৯০টির মতো অ্যাসিস্ট করে ইতোমধ্যে মেসি নিজেকে বিশ্বের সেরা অ্যাসিস্ট প্রোভাইডারদের তালিকার শীর্ষে তুলে এনেছেন। ইউরোপিয়ান ক্লাব ফুটবল হোক বা জাতীয় দল—সবখানেই তিনি গোল বানানোর কারিগর। সবচেয়ে বেশি অ্যাসিস্ট করেছেন তিনি বার্সেলোনার হয়ে, যেখানে জাভি, ইনিয়েস্তা, সুয়ারেজ, নেইমার, আলবা বা পেদ্রির মতো খেলোয়াড়রা তাঁর এই প্রতিভার অন্যতম উপভোক্তা। এরপর পিএসজি ও বর্তমানে ইন্টার মায়ামিতেও মেসির এই ভিন্নমাত্রার ফুটবল মুগ্ধ করেছে কোটি ভক্তকে।

মেসি বনাম বাকিরা

যেখানে বেশিরভাগ খেলোয়াড় ক্যারিয়ারে ২০০ অ্যাসিস্ট ছুঁতেই হিমশিম খায়, সেখানে মেসি ৪০০-র দ্বারপ্রান্তে। তাঁর কাছাকাছি রয়েছেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো, থমাস মুলার, কেভিন ডি ব্রুইনা ও ওজিলের মতো কিছু নাম, কিন্তু সংখ্যাগত ও নান্দনিকতার বিচারে মেসির অ্যাসিস্টগুলো অনেক এগিয়ে। তাঁর প্রতিটি পাস যেন চোখের আরাম, কল্পনার বাস্তব রূপ।

ভবিষ্যতের বার্তা

৩৮ বছর বয়সে এসেও মেসির খেলার ধার এতটুকু কমেনি। আমেরিকার মেজর লিগ সকারে ইন্টার মায়ামির হয়ে তিনি এখনো প্রতি ম্যাচে গোল ও অ্যাসিস্টের জোড়া ঝলক দেখাচ্ছেন। যদি ইনজুরি না বাধা হয়ে দাঁড়ায়, তাহলে চলতি মৌসুমেই তিনি ৪০০ অ্যাসিস্টের সেই স্বপ্নিল মাইলফলকে পৌঁছে যাবেন। এটা শুধু সংখ্যার মাইলফলক নয়, বরং একটি যুগের সাক্ষ্য, ফুটবলের সৌন্দর্যের উৎস।

উপসংহার

গোল বানানো একধরনের শিল্প, আর লিওনেল মেসি সেই শিল্পের সর্বশ্রেষ্ঠ শিল্পী। ৪০০ অ্যাসিস্টের মাইলফলক তাঁর অতিমানবীয় ফুটবল ক্যারিয়ারের আরেকটি উজ্জ্বল পালক হবে। এই কীর্তি কেবল পরিসংখ্যানের নয়, বরং প্রজন্মের পর প্রজন্মকে অনুপ্রেরণা দেওয়ার এক অনন্য দৃষ্টান্ত। মেসির নামের পাশে তাই শুধু ‘গোলের রাজা’ নয়, ‘অ্যাসিস্টের কিংবদন্তি’ বলাটাও সমানভাবে প্রযোজ্য।

আরকে/সবা

জনপ্রিয় সংবাদ

সানজিদা তন্বীর বিয়ের খবর জানালেন ফেসবুকে নিজের হৃদয়গ্রাহী পোস্টে

৪০০ এ্যাসিস্টের পথে মেসি : এক অনন্য ইতিহাসের দোরগোড়ায়

আপডেট সময় : ১১:৩৯:০৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ৯ অগাস্ট ২০২৫

ফুটবল ইতিহাসে বহু কিংবদন্তির আবির্ভাব ঘটেছে, কিন্তু লিওনেল মেসির মতো নিখুঁত ও ধারাবাহিক এক মহারথীর দেখা পাওয়া যেন বিরল। গোল করার ক্ষেত্রে তিনি যে ভয়ংকর, তা তো দীর্ঘদিন আগেই প্রমাণিত। কিন্তু ফুটবল ইতিহাসে তাঁর সবচেয়ে অনন্য ও অবিস্মরণীয় দিক হলো—গোল বানিয়ে দেওয়ার অসামান্য ক্ষমতা। এখন সেই প্রতিভারই এক চূড়ান্ত নিদর্শনের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে আছেন তিনি। আর মাত্র ১২টি অ্যাসিস্ট করলেই লিওনেল মেসি হবেন ইতিহাসের প্রথম ফুটবলার, যিনি ক্যারিয়ারে স্পর্শ করবেন ৪০০ অ্যাসিস্টের মাইলফলক।

প্লেমেকিংয়ের প্রতিভা

লিওনেল মেসির খেলার ধরনই তাঁকে আলাদা করে তোলে। ড্রিবল, ভিশন, পাসিং অ্যাকিউরেসি এবং খেলাকে পড়ার অসাধারণ ক্ষমতার এক দুরন্ত মিশ্রণ মেসিকে শুধু গোলস্কোরার নয়, বরং একজন পরিপূর্ণ প্লেমেকার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। তিনি শুধু নিজে গোল করেন না, বরং দলের অন্য খেলোয়াড়দের জন্য গোলের পথ তৈরি করেন ধারাবাহিকভাবে। তাঁর অনেক অ্যাসিস্টই ‘চিরস্মরণীয়’, কারণ অনেক সময় গোলের চেয়ে বেশি মুগ্ধতা ছড়ায় সেই পাসটিই।

পরিসংখ্যানের চোখে

প্রায় ৩৯০টির মতো অ্যাসিস্ট করে ইতোমধ্যে মেসি নিজেকে বিশ্বের সেরা অ্যাসিস্ট প্রোভাইডারদের তালিকার শীর্ষে তুলে এনেছেন। ইউরোপিয়ান ক্লাব ফুটবল হোক বা জাতীয় দল—সবখানেই তিনি গোল বানানোর কারিগর। সবচেয়ে বেশি অ্যাসিস্ট করেছেন তিনি বার্সেলোনার হয়ে, যেখানে জাভি, ইনিয়েস্তা, সুয়ারেজ, নেইমার, আলবা বা পেদ্রির মতো খেলোয়াড়রা তাঁর এই প্রতিভার অন্যতম উপভোক্তা। এরপর পিএসজি ও বর্তমানে ইন্টার মায়ামিতেও মেসির এই ভিন্নমাত্রার ফুটবল মুগ্ধ করেছে কোটি ভক্তকে।

মেসি বনাম বাকিরা

যেখানে বেশিরভাগ খেলোয়াড় ক্যারিয়ারে ২০০ অ্যাসিস্ট ছুঁতেই হিমশিম খায়, সেখানে মেসি ৪০০-র দ্বারপ্রান্তে। তাঁর কাছাকাছি রয়েছেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো, থমাস মুলার, কেভিন ডি ব্রুইনা ও ওজিলের মতো কিছু নাম, কিন্তু সংখ্যাগত ও নান্দনিকতার বিচারে মেসির অ্যাসিস্টগুলো অনেক এগিয়ে। তাঁর প্রতিটি পাস যেন চোখের আরাম, কল্পনার বাস্তব রূপ।

ভবিষ্যতের বার্তা

৩৮ বছর বয়সে এসেও মেসির খেলার ধার এতটুকু কমেনি। আমেরিকার মেজর লিগ সকারে ইন্টার মায়ামির হয়ে তিনি এখনো প্রতি ম্যাচে গোল ও অ্যাসিস্টের জোড়া ঝলক দেখাচ্ছেন। যদি ইনজুরি না বাধা হয়ে দাঁড়ায়, তাহলে চলতি মৌসুমেই তিনি ৪০০ অ্যাসিস্টের সেই স্বপ্নিল মাইলফলকে পৌঁছে যাবেন। এটা শুধু সংখ্যার মাইলফলক নয়, বরং একটি যুগের সাক্ষ্য, ফুটবলের সৌন্দর্যের উৎস।

উপসংহার

গোল বানানো একধরনের শিল্প, আর লিওনেল মেসি সেই শিল্পের সর্বশ্রেষ্ঠ শিল্পী। ৪০০ অ্যাসিস্টের মাইলফলক তাঁর অতিমানবীয় ফুটবল ক্যারিয়ারের আরেকটি উজ্জ্বল পালক হবে। এই কীর্তি কেবল পরিসংখ্যানের নয়, বরং প্রজন্মের পর প্রজন্মকে অনুপ্রেরণা দেওয়ার এক অনন্য দৃষ্টান্ত। মেসির নামের পাশে তাই শুধু ‘গোলের রাজা’ নয়, ‘অ্যাসিস্টের কিংবদন্তি’ বলাটাও সমানভাবে প্রযোজ্য।

আরকে/সবা