০৩:০৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

জুমার নামাজে অনুপস্থিত মুসলিম পুরুষদের জন্য কারাদণ্ডের বিধান মালয়েশিয়ায়

মালয়েশিয়ার তেরেঙ্গানু অঙ্গরাজ্যে মুসলিম পুরুষরা বৈধ কারণ ছাড়া যদি জুমার নামাজে না যান, তাহলে তাদের সর্বোচ্চ দুই বছরের কারাদণ্ডের বিধান চালু করা হয়েছে। সম্প্রতি প্রণীত শরিয়া আইনের এই সংশোধনী সোমবার ঘোষণা করেছে রাজ্যের শাসক দল পান মালয়েশিয়ান ইসলামিক পার্টি (পিএএস)। এ খবর দিয়েছে অনলাইন গার্ডিয়ান।

নতুন আইনে বলা হয়েছে, প্রথমবারের অপরাধের ক্ষেত্রেই সর্বোচ্চ দুই বছরের জেল এবং ৩,০০০ রিঙ্গিত (প্রায় ৫২৭ পাউন্ড) জরিমানা বা উভয় দণ্ড হতে পারে। এর আগে টানা তিনটি জুমার নামাজ মিস করলে সর্বোচ্চ ছয় মাস কারাদণ্ড অথবা ১,০০০ রিঙ্গিত (প্রায় ১৭৬ পাউন্ড) জরিমানার বিধান ছিল। মসজিদে সাইনবোর্ডের মাধ্যমে মুসল্লিদেরকে নিয়মগুলো মনে করিয়ে দেয়া হবে এবং জনসাধারণের অভিযোগের পাশাপাশি তেরেঙ্গানু ইসলামিক অ্যাফেয়ার্স ডিপার্টমেন্টের সঙ্গে যৌথ অভিযানে ধর্মীয় টহল দল এ নিয়ম কার্যকর করবে। তবে সমালোচকরা এই পদক্ষেপকে ‘অস্বাভাবিক’ এবং মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন বলে আখ্যা দিয়েছেন।

এশিয়া হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড লেবার অ্যাডভোকেটসের (এএইচআরএলএ) পরিচালক ফিল রবার্টসন বলেন, এ ধরনের আইন ইসলামের ভাবমূর্তি নষ্ট করে। ধর্মীয় স্বাধীনতার মানে শুধু বিশ্বাসের স্বাধীনতা নয়, বরং অবিশ্বাস বা অংশগ্রহণ না করার স্বাধীনতাও। তাই তেরেঙ্গানু কর্তৃপক্ষ একেবারে কর্তৃত্ববাদী পথে মানবাধিকারের অপব্যবহার করছে। তিনি প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমকে শাস্তির বিধান প্রত্যাহারের আহ্বান জানান।

অন্যদিকে তেরেঙ্গানুর রাজ্য আইনসভার সদস্য মুহাম্মদ খলিল আবদুল হাদি স্থানীয় দৈনিক বেরিতা হারিয়ানকে বলেন, এই দণ্ড কেবলমাত্র শেষ উপায় হিসেবে প্রয়োগ করা হবে। তার ভাষায়, জুমার নামাজ কেবল ধর্মীয় প্রতীকই নয়, বরং মুসলমানদের আনুগত্যের প্রকাশ। তেরেঙ্গানু সরকারের পক্ষ থেকে এখনও এ বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক মন্তব্য পাওয়া যায়নি। উল্লেখ্য, এ আইন প্রথম চালু হয় ২০০১ সালে এবং ২০১৬ সালে তা সংশোধন করে রমজান মাসের প্রতি অশ্রদ্ধা প্রদর্শন ও জনসমক্ষে নারীদের হয়রানির মতো অপরাধের জন্য কঠোর শাস্তির বিধান আনা হয়।

মালয়েশিয়ায় দ্বৈত আইনি ব্যবস্থা চালু রয়েছে। সেখানে ইসলাম রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে শরিয়া আইন কার্যকর হলেও সমান্তরালে সিভিল আইনও কার্যকর থাকে। দেশটির মোট ৩৪ মিলিয়ন মানুষের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ মুসলমান। তাদের পারিবারিক ও ব্যক্তিগত বিষয়ে শরিয়া আদালতের এখতিয়ার রয়েছে। তেরেঙ্গানুর এই নতুন পদক্ষেপকে অনেকে মালয়েশিয়ায় ধর্মীয় শাসন ও নাগরিক স্বাধীনতার মধ্যে চলমান দ্বন্দ্বের নতুন দৃষ্টান্ত হিসেবে দেখছেন। পিএএস বর্তমানে তেরেঙ্গানুর ৩২টি আসনের সবকটিতেই ক্ষমতাসীন এবং চারটি অঙ্গরাজ্যে তারা কঠোর ধর্মীয় প্রয়োগ জোরদার করার উদ্যোগ নিচ্ছে।

এমআর/সবা

জনপ্রিয় সংবাদ

স্মৃতিসৌধে তারেক রহমান

জুমার নামাজে অনুপস্থিত মুসলিম পুরুষদের জন্য কারাদণ্ডের বিধান মালয়েশিয়ায়

আপডেট সময় : ০৬:১২:৪১ অপরাহ্ন, বুধবার, ২০ অগাস্ট ২০২৫

মালয়েশিয়ার তেরেঙ্গানু অঙ্গরাজ্যে মুসলিম পুরুষরা বৈধ কারণ ছাড়া যদি জুমার নামাজে না যান, তাহলে তাদের সর্বোচ্চ দুই বছরের কারাদণ্ডের বিধান চালু করা হয়েছে। সম্প্রতি প্রণীত শরিয়া আইনের এই সংশোধনী সোমবার ঘোষণা করেছে রাজ্যের শাসক দল পান মালয়েশিয়ান ইসলামিক পার্টি (পিএএস)। এ খবর দিয়েছে অনলাইন গার্ডিয়ান।

নতুন আইনে বলা হয়েছে, প্রথমবারের অপরাধের ক্ষেত্রেই সর্বোচ্চ দুই বছরের জেল এবং ৩,০০০ রিঙ্গিত (প্রায় ৫২৭ পাউন্ড) জরিমানা বা উভয় দণ্ড হতে পারে। এর আগে টানা তিনটি জুমার নামাজ মিস করলে সর্বোচ্চ ছয় মাস কারাদণ্ড অথবা ১,০০০ রিঙ্গিত (প্রায় ১৭৬ পাউন্ড) জরিমানার বিধান ছিল। মসজিদে সাইনবোর্ডের মাধ্যমে মুসল্লিদেরকে নিয়মগুলো মনে করিয়ে দেয়া হবে এবং জনসাধারণের অভিযোগের পাশাপাশি তেরেঙ্গানু ইসলামিক অ্যাফেয়ার্স ডিপার্টমেন্টের সঙ্গে যৌথ অভিযানে ধর্মীয় টহল দল এ নিয়ম কার্যকর করবে। তবে সমালোচকরা এই পদক্ষেপকে ‘অস্বাভাবিক’ এবং মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন বলে আখ্যা দিয়েছেন।

এশিয়া হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড লেবার অ্যাডভোকেটসের (এএইচআরএলএ) পরিচালক ফিল রবার্টসন বলেন, এ ধরনের আইন ইসলামের ভাবমূর্তি নষ্ট করে। ধর্মীয় স্বাধীনতার মানে শুধু বিশ্বাসের স্বাধীনতা নয়, বরং অবিশ্বাস বা অংশগ্রহণ না করার স্বাধীনতাও। তাই তেরেঙ্গানু কর্তৃপক্ষ একেবারে কর্তৃত্ববাদী পথে মানবাধিকারের অপব্যবহার করছে। তিনি প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমকে শাস্তির বিধান প্রত্যাহারের আহ্বান জানান।

অন্যদিকে তেরেঙ্গানুর রাজ্য আইনসভার সদস্য মুহাম্মদ খলিল আবদুল হাদি স্থানীয় দৈনিক বেরিতা হারিয়ানকে বলেন, এই দণ্ড কেবলমাত্র শেষ উপায় হিসেবে প্রয়োগ করা হবে। তার ভাষায়, জুমার নামাজ কেবল ধর্মীয় প্রতীকই নয়, বরং মুসলমানদের আনুগত্যের প্রকাশ। তেরেঙ্গানু সরকারের পক্ষ থেকে এখনও এ বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক মন্তব্য পাওয়া যায়নি। উল্লেখ্য, এ আইন প্রথম চালু হয় ২০০১ সালে এবং ২০১৬ সালে তা সংশোধন করে রমজান মাসের প্রতি অশ্রদ্ধা প্রদর্শন ও জনসমক্ষে নারীদের হয়রানির মতো অপরাধের জন্য কঠোর শাস্তির বিধান আনা হয়।

মালয়েশিয়ায় দ্বৈত আইনি ব্যবস্থা চালু রয়েছে। সেখানে ইসলাম রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে শরিয়া আইন কার্যকর হলেও সমান্তরালে সিভিল আইনও কার্যকর থাকে। দেশটির মোট ৩৪ মিলিয়ন মানুষের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ মুসলমান। তাদের পারিবারিক ও ব্যক্তিগত বিষয়ে শরিয়া আদালতের এখতিয়ার রয়েছে। তেরেঙ্গানুর এই নতুন পদক্ষেপকে অনেকে মালয়েশিয়ায় ধর্মীয় শাসন ও নাগরিক স্বাধীনতার মধ্যে চলমান দ্বন্দ্বের নতুন দৃষ্টান্ত হিসেবে দেখছেন। পিএএস বর্তমানে তেরেঙ্গানুর ৩২টি আসনের সবকটিতেই ক্ষমতাসীন এবং চারটি অঙ্গরাজ্যে তারা কঠোর ধর্মীয় প্রয়োগ জোরদার করার উদ্যোগ নিচ্ছে।

এমআর/সবা