০৭:০৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৩ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ভরা যৌবনে পাহাড়-প্রকৃতির হাতছানি

নীলাভ হ্রদ ও সবুজ পাহাড়ের মাথার ওপর শরতের মেঘের খেলা দেখতে কে না চায়। সবুজ বৃক্ষ, লতা, গুল্মে ভরে উঠেছে এখানকার উঁচু-নিচু সব পাহাড়। যেদিকে চোখ যায় দেখা মিলছে সবুজের সমারোহ। কাপ্তাই হ্রদ ক্রিস্টাল রঙের পানি যেন বিলাইছড়িকে করেছে টইটম্বুর। নদী আর পাহাড়ের যেন এক অপূর্ব মেলবন্ধন। নৌকা আর বোট চলাচলে নদীর পথে যেন এক নৌপথ। নদী পথে দেখা মিলবে শিক্ষার্থীদের নৌকা দিয়ে বিদ্যালয়ে যাচ্ছে, জেলেরা মাছ ধরছে। এসময় ব্যবসায়ীরা বোট ভর্তি মারফা, কুমড়া এবং অন্যান্য জুমে উৎপাদিত সবজি ও ফলমূল নিয়ে যাচ্ছে বিক্রির উদ্দেশ্যে।

দেখা যাবে হ্রদের মাঝে ছোট ছোট গাছ দাঁড়িয়ে রয়েছে। এগুলো দেখতে খুবই সুন্দর। নদীর মাঝখানে দাঁড়ালে চারদিক থেকে অবিরাম বাতাস দোলা দেয় শরীরে। অন্যদিকে গায়ে বিরামহীনভাবে আছড়ে পড়ছে ছোট ছোট ঢেউয়ের ফোটা। নদীর মাঝ থেকে তাকালে দুরে দেখা যায় সুউচ্চ পাহাড়। আকাশে শুভ্র মেঘের খেলা। এ যেন স্বর্গের অনুভূতি! এই বাতাস, এই আকাশ, এই মেঘ, এই রোদ—সব মিলে পাহাড়ি জনপদ রাঙামাটির বিলাইছড়ি এ সময়ের দৃশ্য যেকোনো সময়ের চেয়ে মনোরম। এজন্য বিলাইছড়ি সহজে ছেড়ে যেতে চান না সুন্দরী রমনী থেকে শুরু করে প্রায় সব বয়সে মানুষ। প্রতিনিয়ত দেখতে আসেন মন্ত্রণালয়ের সচিব থেকে শুরু করে প্রজাতন্ত্রের অন্যান্য উর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও।
অথচ এ দৃশ্য দেখতে প্রতিবছর এই সময় দেশের বাইরে যান প্রচুর মানুষ। রাঙামাটির বিলাইছড়ির প্রাকৃতিক ঝরনাগুলো দেখার উপযুক্ত সময়ও এখনই। সবুজ পাহাড়ের বুক চিরে বয়ে চলা ঝরনা ফিরে পেয়েছে তাদের যৌবন।


কী দেখার আছে বিলাইছড়িতে
বিলাইছড়ির অপূর্ব প্রকৃতি দেখে দু-এক দিনে শেষ করা যায় না। প্রকৃতির কোন বিষয়টি আপনার পছন্দ তার ওপর নির্ভর করছে বিলাইছড়ি দেখতে আপনার সময় লাগবে কত। এছাড়া কোন এলাকায় যাবেন, সেটিও নির্ভর করে পছন্দের ওপর।
যাঁরা ট্রেকিং করতে পছন্দ করেন, তাঁরা বিলাইছড়ি উপজেলায় আসতে পারেন। এ উপজেলা ঝরনার জন্য বিখ্যাত। সেখানে আছে বিখ্যাত ধুপপানি ও নকাটা, মুপ্প্যাচড়া, গাছকটাছড়া ও স্বর্গপুর ঝরনা। রয়েছে রাইংখ্যং বগা লেক। এগুলো দেখতে যাওয়ার পথে দেখা মিলেবে পাহাড়ি গ্রাম ও প্রকৃতির।
যাঁরা মেঘে ঢাকা পাহাড়ের নয়নাভিরাম দৃশ্য দেখতে এবং সীমান্ত সড়ক সাইচল যেতে চান, তাঁদের পরিকল্পনা হবে একেবারে আলাদা। অন্তত দুই দিনের পরিকল্পনা করে সাইচল যাওয়া দরকার।
কোথায় থাকবেন
বিলাইছড়ি উপজেলা বেশ কয়েকটি আবাসিক হোটেল রয়েছে। এছাড়াও রয়েছে নীলাদ্রি রিসোর্ট ও জেলা পরিষদ রেস্ট হাউজ। কোলাহলমুক্ত সম্পূর্ণ নিরিবিলি পরিবেশে থাকারও ব্যবস্থা রয়েছে।
কোথায় খাবেন, কী খাবেন
জুম পাহাড়ে জুমের হরেক রকম সুগন্ধিযুক্ত চাল ও সবজির ভরা মৌসুম চলছে। জুমে উৎপাদিত চিনাল, মারফা, শসা, আঠালো মিষ্টিকুমড়া, সুগন্ধি চাল কুমড়া, ঝিঙে, চিচিঙ্গা, ঢেড়স, জুম আলু, কচু, আঠালো ভুট্টা, টক পাতা, বাঁশ কোড়ল, আদার ফুল, হলুদ ফুলসহ নাম না জানা অনেক প্রকারের সবজির স্বাদ নেওয়ার উপযুক্ত সময় এখন। ছড়ার পানিতে মিলছে কালো-খয়েরি রঙের চিংড়ি, কালো দাঁড় কাঁকড়া। মিলছে ছড়ার মাছও। কালো চিংড়ির বৈশিষ্ট্য হলো, আগুনের হালকা তাপে লালচে হয়ে যায়। এ চিংড়ি অথবা দাঁড় কাঁকড়া দিয়ে আঠালো মিষ্টিকুমড়া, মারফার তরকারির কম্বিনেশন অসাধারণ। এ ছাড়া আছে কাপ্তাই হ্রদের মিঠা পানির মাছ। বাঁশের চোঙায় রান্না করা সে মাছের তরকারি খাওয়া নতুন অভিজ্ঞতা দেবে অনেককে।
এ ছাড়াও বাজারে পাহাড়ি হোটেলগুলো কবরক, জুম, ব্যাম্বু চিকেন, রেস্তোরাঁয় ক্ষুদ্র জাতি গোষ্ঠীর খাবার পাওয়া যাবে। সাধারণ মোরগ পোলাও ও গতানুগতিক খাবার খেতে চাইলে রয়েছে বাঙালী রেস্টুরেন্ট।


কীভাবে যাবেন
দেশের যেকোনো জায়গা থেকে বিলাইছড়ি যাওয়া যাবে, তবে সরাসরি নয়। রাঙামাটি জেলা ও কাপ্তাই উপজেলা হয়ে যেতে হবে। নতুবা রাজস্থলী উপজেলা হয়ে সরাসরি ফারুয়া ইউনিয়নের সীমান্ত সড়ক দিয়ে। সেজন্য প্রথমে ঢাকা বা চট্টগ্রাম আসতে হবে। সেখান থেকে রাঙামাটি নতুবা কাপ্তাই। ঢাকার কলাবাগান, পান্থপথ ও ফকিরাপুল থেকে প্রতিদিন বিভিন্ন কোম্পানির বাস আসে রাঙামাটিতে। সময় লাগে ৮ থেকে ৯ ঘণ্টা। এছাড়া ঢাকা হযরত শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে ৩০ মিনিটে যাওয়া যায় চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দরে। সেখান থেকে ৩ ঘণ্টায় রাঙামাটি নতুবা কাপ্তাই পৌঁছানো যায়। চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দরে মাইক্রোবাস পাওয়া যায়। রাঙামাটি পর্যন্ত যেতে ভাড়া ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা। রাঙামাটির বা কাপ্তাইয়ের বোট ঘাট, পরিচিত বা রিসোর্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আগেভাগে যোগাযোগ করলে ব্যবস্থা করে দিবে।
তাই নেপাল, ভুটান ও তিব্বতের মতো পাহাড়ি দৃশ্য রয়েছে বিলাইছড়িতে। তাহলে আর দেরি কেন? এখনই চলে আসুন, একবার হলেও ঘুরে যান হ্রদ পাহাড়ে ঘেরা সৌন্দর্য্যের রাণী বিলাইছড়ি।
এসএস/সবা

জনপ্রিয় সংবাদ

ভরা যৌবনে পাহাড়-প্রকৃতির হাতছানি

আপডেট সময় : ০৪:০২:২০ অপরাহ্ন, শনিবার, ৩০ অগাস্ট ২০২৫

নীলাভ হ্রদ ও সবুজ পাহাড়ের মাথার ওপর শরতের মেঘের খেলা দেখতে কে না চায়। সবুজ বৃক্ষ, লতা, গুল্মে ভরে উঠেছে এখানকার উঁচু-নিচু সব পাহাড়। যেদিকে চোখ যায় দেখা মিলছে সবুজের সমারোহ। কাপ্তাই হ্রদ ক্রিস্টাল রঙের পানি যেন বিলাইছড়িকে করেছে টইটম্বুর। নদী আর পাহাড়ের যেন এক অপূর্ব মেলবন্ধন। নৌকা আর বোট চলাচলে নদীর পথে যেন এক নৌপথ। নদী পথে দেখা মিলবে শিক্ষার্থীদের নৌকা দিয়ে বিদ্যালয়ে যাচ্ছে, জেলেরা মাছ ধরছে। এসময় ব্যবসায়ীরা বোট ভর্তি মারফা, কুমড়া এবং অন্যান্য জুমে উৎপাদিত সবজি ও ফলমূল নিয়ে যাচ্ছে বিক্রির উদ্দেশ্যে।

দেখা যাবে হ্রদের মাঝে ছোট ছোট গাছ দাঁড়িয়ে রয়েছে। এগুলো দেখতে খুবই সুন্দর। নদীর মাঝখানে দাঁড়ালে চারদিক থেকে অবিরাম বাতাস দোলা দেয় শরীরে। অন্যদিকে গায়ে বিরামহীনভাবে আছড়ে পড়ছে ছোট ছোট ঢেউয়ের ফোটা। নদীর মাঝ থেকে তাকালে দুরে দেখা যায় সুউচ্চ পাহাড়। আকাশে শুভ্র মেঘের খেলা। এ যেন স্বর্গের অনুভূতি! এই বাতাস, এই আকাশ, এই মেঘ, এই রোদ—সব মিলে পাহাড়ি জনপদ রাঙামাটির বিলাইছড়ি এ সময়ের দৃশ্য যেকোনো সময়ের চেয়ে মনোরম। এজন্য বিলাইছড়ি সহজে ছেড়ে যেতে চান না সুন্দরী রমনী থেকে শুরু করে প্রায় সব বয়সে মানুষ। প্রতিনিয়ত দেখতে আসেন মন্ত্রণালয়ের সচিব থেকে শুরু করে প্রজাতন্ত্রের অন্যান্য উর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও।
অথচ এ দৃশ্য দেখতে প্রতিবছর এই সময় দেশের বাইরে যান প্রচুর মানুষ। রাঙামাটির বিলাইছড়ির প্রাকৃতিক ঝরনাগুলো দেখার উপযুক্ত সময়ও এখনই। সবুজ পাহাড়ের বুক চিরে বয়ে চলা ঝরনা ফিরে পেয়েছে তাদের যৌবন।


কী দেখার আছে বিলাইছড়িতে
বিলাইছড়ির অপূর্ব প্রকৃতি দেখে দু-এক দিনে শেষ করা যায় না। প্রকৃতির কোন বিষয়টি আপনার পছন্দ তার ওপর নির্ভর করছে বিলাইছড়ি দেখতে আপনার সময় লাগবে কত। এছাড়া কোন এলাকায় যাবেন, সেটিও নির্ভর করে পছন্দের ওপর।
যাঁরা ট্রেকিং করতে পছন্দ করেন, তাঁরা বিলাইছড়ি উপজেলায় আসতে পারেন। এ উপজেলা ঝরনার জন্য বিখ্যাত। সেখানে আছে বিখ্যাত ধুপপানি ও নকাটা, মুপ্প্যাচড়া, গাছকটাছড়া ও স্বর্গপুর ঝরনা। রয়েছে রাইংখ্যং বগা লেক। এগুলো দেখতে যাওয়ার পথে দেখা মিলেবে পাহাড়ি গ্রাম ও প্রকৃতির।
যাঁরা মেঘে ঢাকা পাহাড়ের নয়নাভিরাম দৃশ্য দেখতে এবং সীমান্ত সড়ক সাইচল যেতে চান, তাঁদের পরিকল্পনা হবে একেবারে আলাদা। অন্তত দুই দিনের পরিকল্পনা করে সাইচল যাওয়া দরকার।
কোথায় থাকবেন
বিলাইছড়ি উপজেলা বেশ কয়েকটি আবাসিক হোটেল রয়েছে। এছাড়াও রয়েছে নীলাদ্রি রিসোর্ট ও জেলা পরিষদ রেস্ট হাউজ। কোলাহলমুক্ত সম্পূর্ণ নিরিবিলি পরিবেশে থাকারও ব্যবস্থা রয়েছে।
কোথায় খাবেন, কী খাবেন
জুম পাহাড়ে জুমের হরেক রকম সুগন্ধিযুক্ত চাল ও সবজির ভরা মৌসুম চলছে। জুমে উৎপাদিত চিনাল, মারফা, শসা, আঠালো মিষ্টিকুমড়া, সুগন্ধি চাল কুমড়া, ঝিঙে, চিচিঙ্গা, ঢেড়স, জুম আলু, কচু, আঠালো ভুট্টা, টক পাতা, বাঁশ কোড়ল, আদার ফুল, হলুদ ফুলসহ নাম না জানা অনেক প্রকারের সবজির স্বাদ নেওয়ার উপযুক্ত সময় এখন। ছড়ার পানিতে মিলছে কালো-খয়েরি রঙের চিংড়ি, কালো দাঁড় কাঁকড়া। মিলছে ছড়ার মাছও। কালো চিংড়ির বৈশিষ্ট্য হলো, আগুনের হালকা তাপে লালচে হয়ে যায়। এ চিংড়ি অথবা দাঁড় কাঁকড়া দিয়ে আঠালো মিষ্টিকুমড়া, মারফার তরকারির কম্বিনেশন অসাধারণ। এ ছাড়া আছে কাপ্তাই হ্রদের মিঠা পানির মাছ। বাঁশের চোঙায় রান্না করা সে মাছের তরকারি খাওয়া নতুন অভিজ্ঞতা দেবে অনেককে।
এ ছাড়াও বাজারে পাহাড়ি হোটেলগুলো কবরক, জুম, ব্যাম্বু চিকেন, রেস্তোরাঁয় ক্ষুদ্র জাতি গোষ্ঠীর খাবার পাওয়া যাবে। সাধারণ মোরগ পোলাও ও গতানুগতিক খাবার খেতে চাইলে রয়েছে বাঙালী রেস্টুরেন্ট।


কীভাবে যাবেন
দেশের যেকোনো জায়গা থেকে বিলাইছড়ি যাওয়া যাবে, তবে সরাসরি নয়। রাঙামাটি জেলা ও কাপ্তাই উপজেলা হয়ে যেতে হবে। নতুবা রাজস্থলী উপজেলা হয়ে সরাসরি ফারুয়া ইউনিয়নের সীমান্ত সড়ক দিয়ে। সেজন্য প্রথমে ঢাকা বা চট্টগ্রাম আসতে হবে। সেখান থেকে রাঙামাটি নতুবা কাপ্তাই। ঢাকার কলাবাগান, পান্থপথ ও ফকিরাপুল থেকে প্রতিদিন বিভিন্ন কোম্পানির বাস আসে রাঙামাটিতে। সময় লাগে ৮ থেকে ৯ ঘণ্টা। এছাড়া ঢাকা হযরত শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে ৩০ মিনিটে যাওয়া যায় চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দরে। সেখান থেকে ৩ ঘণ্টায় রাঙামাটি নতুবা কাপ্তাই পৌঁছানো যায়। চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দরে মাইক্রোবাস পাওয়া যায়। রাঙামাটি পর্যন্ত যেতে ভাড়া ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা। রাঙামাটির বা কাপ্তাইয়ের বোট ঘাট, পরিচিত বা রিসোর্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আগেভাগে যোগাযোগ করলে ব্যবস্থা করে দিবে।
তাই নেপাল, ভুটান ও তিব্বতের মতো পাহাড়ি দৃশ্য রয়েছে বিলাইছড়িতে। তাহলে আর দেরি কেন? এখনই চলে আসুন, একবার হলেও ঘুরে যান হ্রদ পাহাড়ে ঘেরা সৌন্দর্য্যের রাণী বিলাইছড়ি।
এসএস/সবা