আগামী ৯ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বহুল আলোচিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন। এই নির্বাচন ঘিরে যে শুধু বিশ্ববিদ্যালয় অঙ্গনে নয়, জাতীয় রাজনীতিতেও এক ধরনের উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে—তা এখন আর অস্বীকার করার উপায় নেই। বিশ্লেষকরা বলছেন, ডাকসু নির্বাচন হতে পারে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগাম এক পরীক্ষামঞ্চ।
ডাকসুতে নিষিদ্ধ দলগুলোর ছায়াযুদ্ধ
আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর দল ও এর ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষিত হওয়ায়, এবারের ডাকসু নির্বাচনে তারা সরাসরি অংশ নিচ্ছে না। তবে এ পরিস্থিতিতে তাদের অনুগত ভোটার ও সমর্থকরা অন্য প্যানেলের দিকে ঝুঁকছেন, বিশেষ করে জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র সংগঠন ছাত্রশিবিরকে ঠেকাতে ‘সেকেন্ড বেস্ট’ হিসেবে ছাত্রদলকে সমর্থন জানাচ্ছেন অনেকেই।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আওয়ামীপন্থী অ্যাক্টিভিস্টদের আহ্বান এখন সরাসরিই—শিবিরকে ঠেকাতে হলে ছাত্রদলকে ভোট দিতে হবে।
অ্যাক্টিভিস্ট অমি রহমান পিয়াল লেখেন, “ছাত্রদল যত খারাপই হোক, শিবিরের মতো মুনাফিক না। নব্বইয়ে আমাগো লগে রক্ত দিছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্য রক্ষা করতে হইলে ছাত্রদলরে জয়ী করতেই হইব।”
ছাত্রদল-শিবির মুখোমুখি: কার দিকে যাবে ভোটাররা?
নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ সংশ্লিষ্টদের অনেকে জানিয়েছেন, তারা শিবিরের উত্থান ঠেকাতে যেকোনো বিকল্পকে বেছে নেবেন—তাদের দৃষ্টিতে সবচেয়ে বাস্তবসম্ভব বিকল্প ছাত্রদল। তবে ছাত্রদল দাবি করেছে, এ নিয়ে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের সঙ্গে তাদের কোনো সমঝোতা বা যোগাযোগ হয়নি।
বর্তমানে মাঠে রয়েছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, ছাত্রশিবির, বামপন্থী ছাত্র সংগঠন, গণঅধিকার পরিষদ, ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্রমৈত্রী ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নিয়ে গঠিত নানা প্যানেল। শিবির এবং ছাত্রদল প্যানেল নিয়ে ছাত্ররাজনীতির মাঠে চলছে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই।
জাতীয় রাজনীতিতে পড়বে প্রতিফলন?
বিশ্লেষকদের একটি অংশ মনে করছেন, এই নির্বাচন শুধুমাত্র বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসেই প্রভাব ফেলবে না, বরং আগামী জাতীয় নির্বাচনে ভোটারদের মানসিকতাকেও প্রভাবিত করবে। বিশেষ করে যদি নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগপন্থী ভোটাররা ছাত্রদলকে সমর্থন দেন, তাহলে সেটি বিএনপির জন্য জাতীয় পর্যায়ে একটি কৌশলগত সুবিধা তৈরি করতে পারে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক আইনুল ইসলাম বলেন, “ডাকসু নির্বাচনের ফল জাতীয় রাজনীতিতে প্রভাব ফেলতেই পারে। যেহেতু নির্বাচিতরা পরে জাতীয় রাজনীতির প্রচারণায় অংশ নেবেন, তাই তাদের অবস্থান গুরুত্বপূর্ণ।”
তবে একই বিভাগের অধ্যাপক কাজী মাহবুবুর রহমান ভিন্নমত পোষণ করে বলেন, “এটি শিক্ষার্থীদের নির্বাচন, যার দাবি-দাওয়ার সঙ্গে জাতীয় নির্বাচনের কোনো সরাসরি সম্পর্ক নেই।”
শিবির জিতলে কী বার্তা যাবে?
ছাত্রশিবির যদি শক্ত অবস্থান তৈরি করে ডাকসুতে জিততে পারে, তাহলে সমাজে জামায়াতে ইসলামীর প্রতি ন্যায্যতা বা গ্রহণযোগ্যতার বার্তা যেতে পারে বলে মত বিশ্লেষকদের একাংশের। ফলে ইসলামপন্থী জোটগুলো আগাম জাতীয় নির্বাচনে একটি নতুন অবস্থান নিতে পারে।
ভিপি-জিএস-এজিএস: আলোচনায় কারা?
২৮টি পদের বিপরীতে লড়ছেন ৪৬২ জন প্রার্থী। বিশেষ করে ভিপি, জিএস ও এজিএস পদে রয়েছে নজরকাড়া প্রতিযোগিতা।
ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেল:
ভিপি: আবিদুল ইসলাম খান
জিএস: শেখ তানভীর বারী হামিম
এজিএস: তানভীর আল হাদী মায়েদ
শিবির সমর্থিত প্যানেল (ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট):
ভিপি: আবু সাদিক কায়েম
জিএস: এসএম ফরহাদ
এজিএস: মহিউদ্দিন খান
বামপন্থী প্যানেল ‘প্রতিরোধ পর্ষদ’:
ভিপি: শেখ তাসনিম আফরোজ ইমি
জিএস: মেঘমল্লার বসু
স্বতন্ত্র ভিপি প্রার্থী: শামীম হোসেন
ছাত্রঅধিকার পরিষদ থেকে ভিপি: বিন ইয়ামিন মোল্লা
বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদ:
ভিপি: আবদুল কাদের
জিএস: আবু বাকের মজুমদার
শেষ কথা: ডাকসু এখন শুধু ছাত্র রাজনীতির লড়াই নয়
বিশ্লেষক খোরশেদ আলম বলেন, “ডাকসু নির্বাচন বাংলাদেশের ছাত্র রাজনীতির একটি দিক নির্দেশনা দেয়। কিন্তু এটি জাতীয় রাজনীতির একমাত্র গেম চেঞ্জার নয়।”
তবুও জাতীয় নির্বাচনের আগে এমন একটি প্রতিযোগিতামূলক ছাত্র নির্বাচন, যেখানে জাতীয় রাজনৈতিক দলের ছায়াযুদ্ধ স্পষ্ট, তা যে দেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যতের বার্তা বয়ে আনছে—তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
এমআর/সবা


























