০৮:০১ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৪ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

এখতিয়ার বহিঃর্ভূত আইনজীবীর পরামর্শ নিয়েছেন উপাচার্য: পদত্যাগপত্রে জাকসু কমিশনার

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনের কমিশনার অধ্যাপক মাফরুহী সাত্তার আনুষ্ঠানিকভাবে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। উপাচার্য বরাবর লিখিত পদত্যাগপত্রে সাত্তার তার উত্থাপিত প্রস্তাবের বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের বাইরের ব্যক্তিদের ব্যবহার করে এখতিয়ার বহিঃর্ভূত ভাবে আইনজীবীর পরামর্শ নিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন।

শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) দুপুরের দিকে উপচার্য বরাবর এই পদত্যাগপত্র পাঠান তিনি।

তিনি বলেন, ‘কারসাজি ও ভোট জালিয়াতির এই নির্বাচন আমার কাছে সুস্পষ্ট হয়ে পড়ায় এবং দেশে প্রচলিত আইনে তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ বিবেচিত হওয়ায়, ন্যায় বিচার ও নিরপেক্ষতার স্বার্থে ও বারংবার সুনির্দিষ্ট মতামত দিয়ে আইন মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণে কমিশনকে অনুরোধের পরও কমিশন যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ না করায়, আমি এর কোনো দায়-দায়িত্ব গ্রহণে অসমর্থক হওয়ায়, দেশের সংবিধানে সংশ্লিষ্ট ধারাসমূহে বর্ণিত আমার সব আইনি অধিকার সংরক্ষণ করে নির্বাচন কমিশন থেকে পদত্যাগ করছি। একইসঙ্গে গত কয়েকদিন যাবত প্রকাশ্যে যে সব হয়রানি ও হুমকি দেওয়া হচ্ছে তা নিরসনে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করছি।’

শুক্রবার (১২ সেপ্টেম্বর) রাত পৌনে ৯টার দিকে তিনি এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে গণমাধ্যমের সামনে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছিলেন।

উপাচার্য বরাবর তার পদত্যাগপত্রটি হুবহু তুলে ধরা হলো-
‘জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) নির্বাচনের উদ্দেশ্যে আপনি জাকসু গঠনতন্ত্রের ৮(খ) ধারা মোতাবেক নির্বাচন কমিশন গঠন করেন এবং এই কমিশনের একজন সদস্য হিসাবে আমাকে নিয়োগ প্রদান করেন, এ জন্য আমি আপনার নিকট কৃজ্ঞতা প্রকাশ করছি। নিয়োগ প্রদানকালে আপনি আমাকে বলেছিলেন যে ‘আপনার মত দক্ষ, পক্ষপাত বিহীন, সিদ্ধান্ত গ্রহণে পারদর্শী এবং আইন বিষয়ে দক্ষতার কারণে এই কমিশনে আপনার উপস্থিতি আবশ্যক।

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীবৃন্দের বৃহত্তর স্বার্থ বিবেচনা করে আমি নির্বাচন কমিশনার হিসাবে দায়িত্ব পালনে সম্মতি প্রকাশ করেছিলাম। যদিও কমিশন গঠনের পূর্ব থেকেই জাকসু নির্বাচনে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা উল্লেখ করে আমি আপনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বিভিন্ন সভায় মত প্রকাশ করে আসছিলাম, যা আজ সত্য প্রমানিত হয়েছে। জাকসু কেন্দ্র করে সুপ্রিয় শিক্ষার্থীবৃন্দের উচ্ছাস ও আগ্রহের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে শুরুতেই আইনগত ত্রুটি (গঠনতন্ত্র সংশোধনে আইনের লঙ্ঘন) থাকা সত্ত্বেও নির্বাচন কমিশনার হিসেবে এই মর্মে দায়িত্ব পালনে সম্মত হই যে, আমার যৌক্তিক ও আইনসম্মত মতামত গ্রহণ করা হবে। আমি ক্রমান্বয়ে দুঃখের সাথে লক্ষ্য করি যে কোন একটি বিশেষ উদ্দেশ্য সাধনের লক্ষ্যে আমার সকল যৌক্তিক ও আইনসম্মত মতামত ক্রমাগতভাবে অগ্রাহ্য করা হচ্ছে। নির্বাচনের দিন বিকালের মধ্যে আমি নিশ্চিত হই যে এই সকল অযৌক্তিক এবং বেআইনি কর্মকান্ডের পিছনে একটি বিশেষ গোষ্ঠীকে এই নির্বাচনে বিজয়ী করার লক্ষ্যেই সকল সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে অথবা গৃহীত সিদ্ধান্তসমূহে কেবলমাত্র একটি বিশেষ গোষ্ঠী লাভবান হয়েছে। এমতাবস্থায়, আমি নির্বাচনী গণনা স্থগিত রেখে নির্বাচনের আগে ও নির্বাচন চলাকালীন সময় পর্যন্ত উত্থাপিত অভিযোগ সমূহ তদন্ত করে নির্বাচনের গণনা শুরুর প্রস্তাব করি।

অত্যন্ত দুঃখের সাথে লক্ষ্য করি যে, আমাকে অগ্রাহ্য করে আমার স্বল্প সময়ের অনুপস্থিতে, আইন মোতাবেক নির্বাচন কমিশনের সভায় সিদ্ধান্ত গ্রহণ না করে ও জাকসু গঠণতন্ত্র লঙ্ঘন করে, গণনা ও ফলাফল প্রকাশের সুনির্দিষ্ট পদ্ধতি নিয়ম মাফিক তৈরি না করেই তড়িঘড়ি করে স্বল্প সময় আমার অনুপস্থিতির সুযোগে, একক সিদ্ধান্তে গণনা শুরু করা হয়েছে। আপনি অবগত আছেন যে, জাকসু গঠনতন্ত্রের যে ধারা মতে আপনি নির্বাচন কমিশন গঠন করেছেন সেখানে সুস্পষ্টভাবে নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব এবং আপনার দায়িত্ব উল্লেখ করা রয়েছে। আপনি আরো অবগত আছেন যে, এই ধারা লঙ্ঘন করে নির্বাচন কমিশনে কমিশনের সিদ্ধান্ত গ্রহণের সময় প্রশাসনের বিভিন্ন কর্মকর্তাসহ উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণে মতামত প্রদান করেছেন। নির্বাচন কমিশনের সভার সিদ্ধান্ত ছাড়াই আমার স্বল্পকালীন অনুপস্থিতির সময় (আপনি আমাকে বিশ্রাম নিতে পরামর্শ দিয়ে কক্ষ থেকে বের হবার অনুমতি দিয়েছিলেন) আপনি আমার উত্থাপিত প্রস্তাবের বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের বাইরের ব্যক্তিবর্গ ব্যবহার করে আইনজীবীর পরামর্শ গ্রহণ করেছেন যা আপনার এখতিয়ার বহিঃর্ভূত। আইনজীবীর লিখিত পরামর্শ ছাড়াই আমাকে পরবর্তীতে অবহিত করা হয়েছে যে, আইনজীবি উত্থাপিত অভিযোগসমূহ ‘তেমন গুরুতর নয়’ মন্তব্য করে গণনা শুরু করতে পরামর্শ দিয়েছেন। একই সাথে ফলাফল ঘোষণার পূর্বে অভিযোগ সমূহের উত্তর আইনজীবীর নিকট প্রেরণের জন্য পরামর্শ দিয়েছেন। উত্তর সমূহ পর্যবেক্ষণ করে তিনি (আইনজীবী) মতামত দিলেই ফলাফল ঘোষণার পরামর্শ আইনজীবী দিয়েছেন। উল্লেখ্য যে, আইনজীবিকে কোন অভিযোগসমূহ পাঠানো হয়েছে তা আমাকে জানানো হয় নি। এ পর্যায়ে আমি অসুস্থ হয়ে পড়লে বাসায় ফেরত আসি (এর পূর্বের অন্তত তিন রাত ছিলো বিরতিহীন নির্ঘুম, আমি হৃদযন্ত্রে স্টেন্টিং সম্পন্ন করা)। আমার সাথে সকাল পর্যন্ত কমিশনের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয়নি। উল্লেখ্য যে, আমাকে কোনরূপ অবহিত না করেই কমিশনের কোন সিদ্ধান্ত না নিয়েই এরই মধ্যে গণনা শুরু করা হয়। সকালে ঘুম থেকে উঠে আমি জানতে পারি যে, আপনার স্থিরকৃত আইনজীবীর পরামর্শ লংঘন করে বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফলাফল ঘোষণা করা হচ্ছে। এতে প্রতিয়মান হয় যে, নির্বাচন কমিশন আপনার স্থিরকৃত আইনজীবীর পরামর্শ পালনে সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়েছে। এর চেয়েও বড় পরিতাপের বিষয় হচ্ছে যে, আপনি নিজেই জাকসু গঠনতন্ত্রের ৮ (জ) ধারায় সুস্পষ্ট উল্লেখ থাকার পরও সরাসরি আইন লঙ্ঘন করে এই পরামর্শ গ্রহণ করেছেন এবং তা নির্বাচন কমিশনের উপর চাপিয়ে দিয়েছেন।

কমিশনে আপনার, মাননীয় প্রো-উপাচার্য দ্বয় ও কোষাধক্ষ্যসহ প্রশাসনের বিভিন্ন কর্মকর্তাদের উপস্থিতি এবং সার্বক্ষণিক নির্বাচন কমিশনকে চাপ প্রদান করে সিদ্ধান্ত গ্রহণে প্রভাবিত করা সম্পূর্ণভাবে বেআইনি।

এ ছাড়াও এই নির্বাচন ঘিরে আরো অনেকগুলি অতি গুরুতর আইন লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে যার কারনে নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপি এবং ভোটারদের প্রকৃত মতামত প্রতিফলিত হওয়ার প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়েছে। আপাতদৃষ্টিতে এ সকল বিষয় কেবল আইনি জটিলতা এবং ভোট প্রদান ও গণনায় কোন প্রকাশ্য বাধা বা হস্তক্ষেপ মনে না হলেও বিগত ১৮ বছরের অভিজ্ঞতায় আমরা জানি এ ধরনের জালিয়াতি প্রমাণ করতে কিছুটা সময়ের প্রয়োজন পড়ে, যা আপনি নিজেই বহুবার গণমাধ্যমে গত অন্তত দশ বছর ধরে বলে এসেছেন। এ প্রসঙ্গে আমি আরো উল্লেখ করছি যে, আইন মোতাবেক যেহেতু এ ধরনের বিষয় নিষ্পত্তির ক্ষমতা সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করা রয়েছে সে কারণে আপনি এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করলে (যদিও এ ধরনের ব্যবস্থা স্বচ্ছ এবং নিরপেক্ষতার স্বার্থে নির্বাচন অনুষ্ঠানের পূর্বেই গ্রহণ করা আবশ্যক ছিলো) আমি যথাযথ প্রমাণসহ কারসাজি ও কারচুপির অভিযোগসমূহ সংশ্লিষ্ট আপিল কমিটির নিকট উপস্থাপন করব। কারসাজি ও ভোট জালিয়াতির এই নির্বাচন আমার কাছে সুস্পষ্ট হয়ে পড়ায় এবং দেশে প্রচলিত আইনে তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ বিবেচিত হওয়ায়, ন্যায় বিচার ও নিরপেক্ষতার স্বার্থে ও বারংবার সুনির্দিষ্ট মতামত দিয়ে আইন মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণে কমিশনকে অনুরোধের পরও কমিশন যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ না করায়, আমি এর কোন দায় দায়িত্ব গ্রহণে অসমর্থক হওয়ায়, দেশের সংবিধানে সংশ্লিষ্ট ধারাসমূহে বর্ণিত আমার সকল আইনি অধিকার সংরক্ষন করে নির্বাচন কমিশন থেকে পদত্যাগ করছি। একই সাথে গত কয়েকদিন যাবৎ প্রকাশ্যে যে সকল হয়রানি ও হুমকি প্রদাণ করা হচ্ছে তা নিরসনে ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ করছি। অতএব, এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের বিশেষ অনুরোধ করছি।’

এমআর/সবা

জনপ্রিয় সংবাদ

বেড়েছে চুরি-নারী নির্যাতন

এখতিয়ার বহিঃর্ভূত আইনজীবীর পরামর্শ নিয়েছেন উপাচার্য: পদত্যাগপত্রে জাকসু কমিশনার

আপডেট সময় : ০৪:২৮:৩৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনের কমিশনার অধ্যাপক মাফরুহী সাত্তার আনুষ্ঠানিকভাবে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। উপাচার্য বরাবর লিখিত পদত্যাগপত্রে সাত্তার তার উত্থাপিত প্রস্তাবের বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের বাইরের ব্যক্তিদের ব্যবহার করে এখতিয়ার বহিঃর্ভূত ভাবে আইনজীবীর পরামর্শ নিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন।

শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) দুপুরের দিকে উপচার্য বরাবর এই পদত্যাগপত্র পাঠান তিনি।

তিনি বলেন, ‘কারসাজি ও ভোট জালিয়াতির এই নির্বাচন আমার কাছে সুস্পষ্ট হয়ে পড়ায় এবং দেশে প্রচলিত আইনে তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ বিবেচিত হওয়ায়, ন্যায় বিচার ও নিরপেক্ষতার স্বার্থে ও বারংবার সুনির্দিষ্ট মতামত দিয়ে আইন মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণে কমিশনকে অনুরোধের পরও কমিশন যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ না করায়, আমি এর কোনো দায়-দায়িত্ব গ্রহণে অসমর্থক হওয়ায়, দেশের সংবিধানে সংশ্লিষ্ট ধারাসমূহে বর্ণিত আমার সব আইনি অধিকার সংরক্ষণ করে নির্বাচন কমিশন থেকে পদত্যাগ করছি। একইসঙ্গে গত কয়েকদিন যাবত প্রকাশ্যে যে সব হয়রানি ও হুমকি দেওয়া হচ্ছে তা নিরসনে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করছি।’

শুক্রবার (১২ সেপ্টেম্বর) রাত পৌনে ৯টার দিকে তিনি এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে গণমাধ্যমের সামনে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছিলেন।

উপাচার্য বরাবর তার পদত্যাগপত্রটি হুবহু তুলে ধরা হলো-
‘জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) নির্বাচনের উদ্দেশ্যে আপনি জাকসু গঠনতন্ত্রের ৮(খ) ধারা মোতাবেক নির্বাচন কমিশন গঠন করেন এবং এই কমিশনের একজন সদস্য হিসাবে আমাকে নিয়োগ প্রদান করেন, এ জন্য আমি আপনার নিকট কৃজ্ঞতা প্রকাশ করছি। নিয়োগ প্রদানকালে আপনি আমাকে বলেছিলেন যে ‘আপনার মত দক্ষ, পক্ষপাত বিহীন, সিদ্ধান্ত গ্রহণে পারদর্শী এবং আইন বিষয়ে দক্ষতার কারণে এই কমিশনে আপনার উপস্থিতি আবশ্যক।

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীবৃন্দের বৃহত্তর স্বার্থ বিবেচনা করে আমি নির্বাচন কমিশনার হিসাবে দায়িত্ব পালনে সম্মতি প্রকাশ করেছিলাম। যদিও কমিশন গঠনের পূর্ব থেকেই জাকসু নির্বাচনে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা উল্লেখ করে আমি আপনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বিভিন্ন সভায় মত প্রকাশ করে আসছিলাম, যা আজ সত্য প্রমানিত হয়েছে। জাকসু কেন্দ্র করে সুপ্রিয় শিক্ষার্থীবৃন্দের উচ্ছাস ও আগ্রহের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে শুরুতেই আইনগত ত্রুটি (গঠনতন্ত্র সংশোধনে আইনের লঙ্ঘন) থাকা সত্ত্বেও নির্বাচন কমিশনার হিসেবে এই মর্মে দায়িত্ব পালনে সম্মত হই যে, আমার যৌক্তিক ও আইনসম্মত মতামত গ্রহণ করা হবে। আমি ক্রমান্বয়ে দুঃখের সাথে লক্ষ্য করি যে কোন একটি বিশেষ উদ্দেশ্য সাধনের লক্ষ্যে আমার সকল যৌক্তিক ও আইনসম্মত মতামত ক্রমাগতভাবে অগ্রাহ্য করা হচ্ছে। নির্বাচনের দিন বিকালের মধ্যে আমি নিশ্চিত হই যে এই সকল অযৌক্তিক এবং বেআইনি কর্মকান্ডের পিছনে একটি বিশেষ গোষ্ঠীকে এই নির্বাচনে বিজয়ী করার লক্ষ্যেই সকল সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে অথবা গৃহীত সিদ্ধান্তসমূহে কেবলমাত্র একটি বিশেষ গোষ্ঠী লাভবান হয়েছে। এমতাবস্থায়, আমি নির্বাচনী গণনা স্থগিত রেখে নির্বাচনের আগে ও নির্বাচন চলাকালীন সময় পর্যন্ত উত্থাপিত অভিযোগ সমূহ তদন্ত করে নির্বাচনের গণনা শুরুর প্রস্তাব করি।

অত্যন্ত দুঃখের সাথে লক্ষ্য করি যে, আমাকে অগ্রাহ্য করে আমার স্বল্প সময়ের অনুপস্থিতে, আইন মোতাবেক নির্বাচন কমিশনের সভায় সিদ্ধান্ত গ্রহণ না করে ও জাকসু গঠণতন্ত্র লঙ্ঘন করে, গণনা ও ফলাফল প্রকাশের সুনির্দিষ্ট পদ্ধতি নিয়ম মাফিক তৈরি না করেই তড়িঘড়ি করে স্বল্প সময় আমার অনুপস্থিতির সুযোগে, একক সিদ্ধান্তে গণনা শুরু করা হয়েছে। আপনি অবগত আছেন যে, জাকসু গঠনতন্ত্রের যে ধারা মতে আপনি নির্বাচন কমিশন গঠন করেছেন সেখানে সুস্পষ্টভাবে নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব এবং আপনার দায়িত্ব উল্লেখ করা রয়েছে। আপনি আরো অবগত আছেন যে, এই ধারা লঙ্ঘন করে নির্বাচন কমিশনে কমিশনের সিদ্ধান্ত গ্রহণের সময় প্রশাসনের বিভিন্ন কর্মকর্তাসহ উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণে মতামত প্রদান করেছেন। নির্বাচন কমিশনের সভার সিদ্ধান্ত ছাড়াই আমার স্বল্পকালীন অনুপস্থিতির সময় (আপনি আমাকে বিশ্রাম নিতে পরামর্শ দিয়ে কক্ষ থেকে বের হবার অনুমতি দিয়েছিলেন) আপনি আমার উত্থাপিত প্রস্তাবের বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের বাইরের ব্যক্তিবর্গ ব্যবহার করে আইনজীবীর পরামর্শ গ্রহণ করেছেন যা আপনার এখতিয়ার বহিঃর্ভূত। আইনজীবীর লিখিত পরামর্শ ছাড়াই আমাকে পরবর্তীতে অবহিত করা হয়েছে যে, আইনজীবি উত্থাপিত অভিযোগসমূহ ‘তেমন গুরুতর নয়’ মন্তব্য করে গণনা শুরু করতে পরামর্শ দিয়েছেন। একই সাথে ফলাফল ঘোষণার পূর্বে অভিযোগ সমূহের উত্তর আইনজীবীর নিকট প্রেরণের জন্য পরামর্শ দিয়েছেন। উত্তর সমূহ পর্যবেক্ষণ করে তিনি (আইনজীবী) মতামত দিলেই ফলাফল ঘোষণার পরামর্শ আইনজীবী দিয়েছেন। উল্লেখ্য যে, আইনজীবিকে কোন অভিযোগসমূহ পাঠানো হয়েছে তা আমাকে জানানো হয় নি। এ পর্যায়ে আমি অসুস্থ হয়ে পড়লে বাসায় ফেরত আসি (এর পূর্বের অন্তত তিন রাত ছিলো বিরতিহীন নির্ঘুম, আমি হৃদযন্ত্রে স্টেন্টিং সম্পন্ন করা)। আমার সাথে সকাল পর্যন্ত কমিশনের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয়নি। উল্লেখ্য যে, আমাকে কোনরূপ অবহিত না করেই কমিশনের কোন সিদ্ধান্ত না নিয়েই এরই মধ্যে গণনা শুরু করা হয়। সকালে ঘুম থেকে উঠে আমি জানতে পারি যে, আপনার স্থিরকৃত আইনজীবীর পরামর্শ লংঘন করে বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফলাফল ঘোষণা করা হচ্ছে। এতে প্রতিয়মান হয় যে, নির্বাচন কমিশন আপনার স্থিরকৃত আইনজীবীর পরামর্শ পালনে সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়েছে। এর চেয়েও বড় পরিতাপের বিষয় হচ্ছে যে, আপনি নিজেই জাকসু গঠনতন্ত্রের ৮ (জ) ধারায় সুস্পষ্ট উল্লেখ থাকার পরও সরাসরি আইন লঙ্ঘন করে এই পরামর্শ গ্রহণ করেছেন এবং তা নির্বাচন কমিশনের উপর চাপিয়ে দিয়েছেন।

কমিশনে আপনার, মাননীয় প্রো-উপাচার্য দ্বয় ও কোষাধক্ষ্যসহ প্রশাসনের বিভিন্ন কর্মকর্তাদের উপস্থিতি এবং সার্বক্ষণিক নির্বাচন কমিশনকে চাপ প্রদান করে সিদ্ধান্ত গ্রহণে প্রভাবিত করা সম্পূর্ণভাবে বেআইনি।

এ ছাড়াও এই নির্বাচন ঘিরে আরো অনেকগুলি অতি গুরুতর আইন লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে যার কারনে নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপি এবং ভোটারদের প্রকৃত মতামত প্রতিফলিত হওয়ার প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়েছে। আপাতদৃষ্টিতে এ সকল বিষয় কেবল আইনি জটিলতা এবং ভোট প্রদান ও গণনায় কোন প্রকাশ্য বাধা বা হস্তক্ষেপ মনে না হলেও বিগত ১৮ বছরের অভিজ্ঞতায় আমরা জানি এ ধরনের জালিয়াতি প্রমাণ করতে কিছুটা সময়ের প্রয়োজন পড়ে, যা আপনি নিজেই বহুবার গণমাধ্যমে গত অন্তত দশ বছর ধরে বলে এসেছেন। এ প্রসঙ্গে আমি আরো উল্লেখ করছি যে, আইন মোতাবেক যেহেতু এ ধরনের বিষয় নিষ্পত্তির ক্ষমতা সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করা রয়েছে সে কারণে আপনি এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করলে (যদিও এ ধরনের ব্যবস্থা স্বচ্ছ এবং নিরপেক্ষতার স্বার্থে নির্বাচন অনুষ্ঠানের পূর্বেই গ্রহণ করা আবশ্যক ছিলো) আমি যথাযথ প্রমাণসহ কারসাজি ও কারচুপির অভিযোগসমূহ সংশ্লিষ্ট আপিল কমিটির নিকট উপস্থাপন করব। কারসাজি ও ভোট জালিয়াতির এই নির্বাচন আমার কাছে সুস্পষ্ট হয়ে পড়ায় এবং দেশে প্রচলিত আইনে তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ বিবেচিত হওয়ায়, ন্যায় বিচার ও নিরপেক্ষতার স্বার্থে ও বারংবার সুনির্দিষ্ট মতামত দিয়ে আইন মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণে কমিশনকে অনুরোধের পরও কমিশন যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ না করায়, আমি এর কোন দায় দায়িত্ব গ্রহণে অসমর্থক হওয়ায়, দেশের সংবিধানে সংশ্লিষ্ট ধারাসমূহে বর্ণিত আমার সকল আইনি অধিকার সংরক্ষন করে নির্বাচন কমিশন থেকে পদত্যাগ করছি। একই সাথে গত কয়েকদিন যাবৎ প্রকাশ্যে যে সকল হয়রানি ও হুমকি প্রদাণ করা হচ্ছে তা নিরসনে ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ করছি। অতএব, এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের বিশেষ অনুরোধ করছি।’

এমআর/সবা