০৪:৫৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

হতাশা-বিষন্নতায় আত্মহত্যা

  • ১৮ শতাংশ মানুষ মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছে
  • ২০২৪ সালে ৩১০ জন শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা
  • ক্যারিয়ার নিয়ে হতাশা, পারিবারিক চাপ ও অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা প্রধান কারণ
  • দুই হাজার মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ দিয়ে চলছে ১৮ কোটি মানুষের সেবা

নানা কারণে হতাশা-বিষন্নতা জেঁকে বসছে তরুণদের মনে। দেশের প্রায় ১৮ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ কোনো না কোনো ভাবে মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছেন। ক্যারিয়ার নিয়ে হতাশা, পারিবারিক চাপ, প্রেমঘটিত সমস্যা ও অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা প্রধান কারণ। যা রূপ নিচ্ছে আত্মহত্যায়। এ তালিকায় সাংবাদিকের সংখ্যাও উল্লেখযোগ্য। দেশে বর্তমানে ২ হাজার মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ দিয়ে চলছে ১৮ কোটি মানুষের সেবা কার্যক্রম। আঁচল ফাউন্ডেশনের প্রেসিডেন্ট তানসেন রোজ বলেন, বাংলাদেশে ৩০০ এর বেশি সাইকিয়াট্রিস্ট। সাইকোলজিস্ট আছেন ২ হাজারের বেশি। এই যে মাত্র আড়াই হাজার মেন্টাল হেলথ স্পেশালিস্ট তাদের দিয়ে ১৮ কোটি জনগণকে কখনোই সার্ভ করা যাবে না।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, বাংলাদেশে ২০১৮ সাল থেকে আত্মহত্যাজনিত মৃত্যুহার ক্রমাগত বেড়েই চলেছে এবং আত্মহত্যার অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে উঠে এসেছে, হতাশা, সম্পর্কচ্ছেদ, পরীক্ষায় অকৃতকার্যতা, মোবাইল আসক্তি, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের নেতিবাচক প্রভাব এবং বাবা-মায়ের সঙ্গে মানসিক দূরত্ব ইত্যাদি। আঁচল ফাউন্ডেশনের তথ্য মতে, শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা ভাবনার পেছনে প্রধান কারণ হলো শিক্ষার্থীদের ক্যারিয়ার নিয়ে হতাশা। এ সকল শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৩০ শতাংশ ক্যারিয়ার নিয়ে হতাশায়, ১৬.২ শতাংশ বাবা-মায়ের সাথে অভিমানের ফলে, ৯.৭ শতাংশ প্রেমঘটিত বিষয়ে, ৯ শতাংশ অর্থনৈতিক সমস্যাগ্রস্ত হয়ে, অন্যরা তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করায় ৪.৩ শতাংশ এবং ৩০.৮ শতাংশ শিক্ষার্থী অন্যান্য বিভিন্ন কারণে আত্মহত্যা করার চিন্তা এসেছে বলে জানিয়েছেন। সংস্থাটির তথ্য মতে, কেবল তরুণরা নয়, দেশের প্রায় ১৮ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ কোনো না কোনো মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছেন। কিন্তু বিশাল একটি জনগোষ্ঠী চিকিৎসাহীন থাকায় ঝুঁকি বাড়ছে আত্মহত্যার। ২০২৪ সালে স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত ৩১০ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন। তবে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে অনেক ঘটনাই গণমাধ্যমে আসেনি। সমাজের বিবেক সাংবাদিকদের মাঝেও হতাশা জেঁকে বসেছে। আজকের পত্রিকার প্রবীণ সাংবাদিক বিভুরঞ্জন সরকার তার শেষ লেখায় বলেছেন, দুঃখই হোক আমার জীবনের শেষ সঙ্গী। আর পৃথিবীর সকল প্রাণী সুখী হোক। গত এক যুগে বাংলাদেশে কমপক্ষে ৮৯ জন সাংবাদিক ও বুদ্ধিজীবী পরিবারের সদস্যের আত্মহননের খবর নথিভুক্ত হয়েছে। তাদের বেশির ভাগই নিজেদের অপমৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছেন প্রধানত পেশাগত ও আর্থিক অনিশ্চয়তা এবং পারিবারিক সংকটের কারণে। এ চিত্র আত্মহত্যার ঘটনাতেই থেমে থাকছে না, আরো ভয়াবহ ছাপ রাখছে সমাজে-রাষ্ট্রে। এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে হবিগঞ্জে পারিবারিক কলহের জেরে দুই সন্তানকে বিষ খাইয়ে হত্যার পর বাবা আত্মহত্যা করে। রাজশাহীর পবায় ১৫ ফেব্রুয়ারি ঋণের দায়ে স্ত্রী ও দুই সন্তানকে হত্যার পর আত্মহত্যার করেন মিনারুল। কুমিল্লা, সাতক্ষীরাতেই সাম্প্রতিক সময়ে ঘটেছে এমন ঘটনা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক মোহাম্মদ সাইফুল আলম চৌধুরী বলেন, সরকার চায় ক্লায়েন্ট তৈরি করতে। যখনই আপনি ক্লায়েন্টিজম সিস্টেম তৈরি করবেন তখন সাংবাদিকদের মধ্যে ফ্রাস্টেশন আসবে। স্বাধীনচেতা সাংবাদিকদের মধ্যে হতাশা আসবে। সে হতাশা পরিবারের মধ্যে পড়বে, সমাজে পড়বে। মোটাদাগে যখন সেটা চক্রাকার হবে তখন কেউ কেউ আত্মহননের দিকে চলে যায়।
বাংলাদেশে আত্মহত্যা একটি গভীর তথ্য সংকটপূর্ণ সমস্যাও। বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী আত্মহত্যা একটি দণ্ডনীয় অপরাধ ও সামাজিক কলঙ্ক হিসেবে বিবেচিত হওয়ায়, আত্মহত্যার অনেক ঘটনা রিপোর্ট হয় না। “জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য নীতি, বাংলাদেশ‑২০২২” এবং “জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য কৌশলগত পরিকল্পনা ২০২০-২০৩০” অনুযায়ী, যদিও বাৎসরিক আত্মহত্যার হার ৫% হ্রাসের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে; তবুও তা বাস্তবায়ন ও পর্যবেক্ষণের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা এখনো তৈরী হয়নি। মনোরোগ বিশেষজ্ঞ সাফিনা বিনতে এনায়েত বলেন, পরিবারের সহযোগিতা প্রথমে যেমন গুরুত্বপূর্ণ একইসঙ্গে আমরা যে কমিউনিটিতে আছি সেখানেও অ্যাটাচমেন্ট দরকার। কিন্তু এ দুটি সম্ভব হবে যদি রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতা থাকে। সেটা কিন্তু আমাদের জীবনের একটি সুন্দর লক্ষ্যে পৌঁছাতে সাহায্য করবে।

 

জনপ্রিয় সংবাদ

সপরিবারে হিথ্রো বিমানবন্দরে পৌঁছেছেন তারেক রহমান

হতাশা-বিষন্নতায় আত্মহত্যা

আপডেট সময় : ০৭:৩৯:০৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৯ অক্টোবর ২০২৫
  • ১৮ শতাংশ মানুষ মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছে
  • ২০২৪ সালে ৩১০ জন শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা
  • ক্যারিয়ার নিয়ে হতাশা, পারিবারিক চাপ ও অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা প্রধান কারণ
  • দুই হাজার মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ দিয়ে চলছে ১৮ কোটি মানুষের সেবা

নানা কারণে হতাশা-বিষন্নতা জেঁকে বসছে তরুণদের মনে। দেশের প্রায় ১৮ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ কোনো না কোনো ভাবে মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছেন। ক্যারিয়ার নিয়ে হতাশা, পারিবারিক চাপ, প্রেমঘটিত সমস্যা ও অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা প্রধান কারণ। যা রূপ নিচ্ছে আত্মহত্যায়। এ তালিকায় সাংবাদিকের সংখ্যাও উল্লেখযোগ্য। দেশে বর্তমানে ২ হাজার মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ দিয়ে চলছে ১৮ কোটি মানুষের সেবা কার্যক্রম। আঁচল ফাউন্ডেশনের প্রেসিডেন্ট তানসেন রোজ বলেন, বাংলাদেশে ৩০০ এর বেশি সাইকিয়াট্রিস্ট। সাইকোলজিস্ট আছেন ২ হাজারের বেশি। এই যে মাত্র আড়াই হাজার মেন্টাল হেলথ স্পেশালিস্ট তাদের দিয়ে ১৮ কোটি জনগণকে কখনোই সার্ভ করা যাবে না।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, বাংলাদেশে ২০১৮ সাল থেকে আত্মহত্যাজনিত মৃত্যুহার ক্রমাগত বেড়েই চলেছে এবং আত্মহত্যার অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে উঠে এসেছে, হতাশা, সম্পর্কচ্ছেদ, পরীক্ষায় অকৃতকার্যতা, মোবাইল আসক্তি, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের নেতিবাচক প্রভাব এবং বাবা-মায়ের সঙ্গে মানসিক দূরত্ব ইত্যাদি। আঁচল ফাউন্ডেশনের তথ্য মতে, শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা ভাবনার পেছনে প্রধান কারণ হলো শিক্ষার্থীদের ক্যারিয়ার নিয়ে হতাশা। এ সকল শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৩০ শতাংশ ক্যারিয়ার নিয়ে হতাশায়, ১৬.২ শতাংশ বাবা-মায়ের সাথে অভিমানের ফলে, ৯.৭ শতাংশ প্রেমঘটিত বিষয়ে, ৯ শতাংশ অর্থনৈতিক সমস্যাগ্রস্ত হয়ে, অন্যরা তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করায় ৪.৩ শতাংশ এবং ৩০.৮ শতাংশ শিক্ষার্থী অন্যান্য বিভিন্ন কারণে আত্মহত্যা করার চিন্তা এসেছে বলে জানিয়েছেন। সংস্থাটির তথ্য মতে, কেবল তরুণরা নয়, দেশের প্রায় ১৮ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ কোনো না কোনো মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছেন। কিন্তু বিশাল একটি জনগোষ্ঠী চিকিৎসাহীন থাকায় ঝুঁকি বাড়ছে আত্মহত্যার। ২০২৪ সালে স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত ৩১০ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন। তবে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে অনেক ঘটনাই গণমাধ্যমে আসেনি। সমাজের বিবেক সাংবাদিকদের মাঝেও হতাশা জেঁকে বসেছে। আজকের পত্রিকার প্রবীণ সাংবাদিক বিভুরঞ্জন সরকার তার শেষ লেখায় বলেছেন, দুঃখই হোক আমার জীবনের শেষ সঙ্গী। আর পৃথিবীর সকল প্রাণী সুখী হোক। গত এক যুগে বাংলাদেশে কমপক্ষে ৮৯ জন সাংবাদিক ও বুদ্ধিজীবী পরিবারের সদস্যের আত্মহননের খবর নথিভুক্ত হয়েছে। তাদের বেশির ভাগই নিজেদের অপমৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছেন প্রধানত পেশাগত ও আর্থিক অনিশ্চয়তা এবং পারিবারিক সংকটের কারণে। এ চিত্র আত্মহত্যার ঘটনাতেই থেমে থাকছে না, আরো ভয়াবহ ছাপ রাখছে সমাজে-রাষ্ট্রে। এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে হবিগঞ্জে পারিবারিক কলহের জেরে দুই সন্তানকে বিষ খাইয়ে হত্যার পর বাবা আত্মহত্যা করে। রাজশাহীর পবায় ১৫ ফেব্রুয়ারি ঋণের দায়ে স্ত্রী ও দুই সন্তানকে হত্যার পর আত্মহত্যার করেন মিনারুল। কুমিল্লা, সাতক্ষীরাতেই সাম্প্রতিক সময়ে ঘটেছে এমন ঘটনা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক মোহাম্মদ সাইফুল আলম চৌধুরী বলেন, সরকার চায় ক্লায়েন্ট তৈরি করতে। যখনই আপনি ক্লায়েন্টিজম সিস্টেম তৈরি করবেন তখন সাংবাদিকদের মধ্যে ফ্রাস্টেশন আসবে। স্বাধীনচেতা সাংবাদিকদের মধ্যে হতাশা আসবে। সে হতাশা পরিবারের মধ্যে পড়বে, সমাজে পড়বে। মোটাদাগে যখন সেটা চক্রাকার হবে তখন কেউ কেউ আত্মহননের দিকে চলে যায়।
বাংলাদেশে আত্মহত্যা একটি গভীর তথ্য সংকটপূর্ণ সমস্যাও। বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী আত্মহত্যা একটি দণ্ডনীয় অপরাধ ও সামাজিক কলঙ্ক হিসেবে বিবেচিত হওয়ায়, আত্মহত্যার অনেক ঘটনা রিপোর্ট হয় না। “জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য নীতি, বাংলাদেশ‑২০২২” এবং “জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য কৌশলগত পরিকল্পনা ২০২০-২০৩০” অনুযায়ী, যদিও বাৎসরিক আত্মহত্যার হার ৫% হ্রাসের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে; তবুও তা বাস্তবায়ন ও পর্যবেক্ষণের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা এখনো তৈরী হয়নি। মনোরোগ বিশেষজ্ঞ সাফিনা বিনতে এনায়েত বলেন, পরিবারের সহযোগিতা প্রথমে যেমন গুরুত্বপূর্ণ একইসঙ্গে আমরা যে কমিউনিটিতে আছি সেখানেও অ্যাটাচমেন্ট দরকার। কিন্তু এ দুটি সম্ভব হবে যদি রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতা থাকে। সেটা কিন্তু আমাদের জীবনের একটি সুন্দর লক্ষ্যে পৌঁছাতে সাহায্য করবে।