০৩:০৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ঋণের চাপে দিশাহারা অনেক দেশ আইএমএফসি

  • ঝুঁকি বাড়ছে বিশ্ব অর্থনীতির
  • চাপ বাড়ছে এবং ভবিষ্যৎ সম্ভাবনার ঝুঁকি ‘নিম্নমুখী’
  • বৈশ্বিক অর্থনীতির সামনে জটিল পথ
  • নিম্নআয়ের ও ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর পরিস্থিতি সংকটজনক

বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এখনও স্থিতিশীল থাকলেও, চাপ দিন দিন বাড়ছে এবং ভবিষ্যতের অর্থনৈতিক সম্ভাবনার দিকনির্দেশ ‘নিম্নমুখী’। বাণিজ্য নীতির হঠাৎ পরিবর্তন, ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা, জলবায়ু বিপর্যয়, এবং দ্রুত প্রযুক্তিগত রূপান্তর সব মিলিয়ে বিশ্ব অর্থনীতির সামনে জটিল ও অনিশ্চিত পথ তৈরি করছে। সম্প্রতি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) নীতিনির্ধারক পরামর্শক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল মানিটারি অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল কমিটি (আইএমএফসি) তাদের সর্বশেষ বৈঠক শেষে এক বিবৃতিতে বিশ্ব অর্থনীতির ওপর বাড়তে থাকা ঝুঁকি এবং ঋণ সংকট নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। আইএমএফসি সতর্ক করে বলেছে, মূল্যস্ফীতি ধীরে ধীরে কমলেও তা সব দেশে সমানভাবে ঘটছে না। অনেক দেশে ঋণের পরিমাণ উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে, বিশেষ করে নিম্নআয়ের দেশ ও অর্থনৈতিকভাবে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর জন্য পরিস্থিতি সংকটজনক। আমরা এমন আর্থিক নীতি গ্রহণ করবো যা আস্থা জাগায়, অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখে এবং ঋণকে টেকসই রাখে। একই সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি কৌশল নির্ধারণ করে ঘাটতি কমানো এবং আর্থিক রিজার্ভ গঠন করা অপরিহার্য। আইএমএফসি স্বীকার করেছে, স্বাধীন কেন্দ্রীয় ব্যাংকই নীতির স্থায়িত্ব ও বিশ্বাসযোগ্যতার ভিত্তি। তবে আর্থিক ব্যবস্থার দ্রুত পরিবর্তন এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (অও), ডিজিটাল অ্যাসেট এবং ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ঝুঁকি মোকাবিলা করতেও বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে,আমরা কাঠামোগত সংস্কার অব্যাহত রাখবো যা ব্যবসার পরিবেশ উন্নত করবে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করবে এবং প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনকে উৎসাহিত করবে। কমিটি বলেছে, আমরা এমন আর্থিক নীতি গ্রহণ করবো যা আস্থা গড়ে তোলে, স্থিতিশীলতা বজায় রাখে এবং ঋণ টেকসই রাখতে সাহায্য করে।’ একই সঙ্গে তারা দীর্ঘমেয়াদি কৌশল নির্ধারণের মাধ্যমে ঘাটতি কমাতে এবং আর্থিক রিজার্ভ গড়ে তুলতে আহ্বান জানিয়েছে।
কমিটি স্বাধীন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভূমিকাকে ‘বিশ্বাসযোগ্যতা ও নীতির স্থায়িত্বের ভিত্তি’ বলে স্বীকার করেছে এবং মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে দৃঢ় অবস্থানে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তবে আর্থিক ব্যবস্থার দ্রুত পরিবর্তনের কথা স্বীকার করে আইএমএফসি বলেছে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই), ডিজিটাল অ্যাসেট এবং ব্যাংক-বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কারণে সৃষ্ট ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি প্রযুক্তির সুফলও কাজে লাগাতে হবে। আমরা কাঠামোগত সংস্কার অব্যাহত রাখবো যা ব্যবসার পরিবেশ উন্নত করবে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়বে এবং প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনকে উৎসাহিত করবে, বলা হয়েছে বিবৃতিতে। আইএমএফসি যুদ্ধবিধ্বস্ত, দরিদ্র ও ক্ষুদ্র উন্নয়নশীল দেশগুলোর ঋণ সংকটের প্রতি বিশেষ মনোযোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। গঠনতান্ত্রিক সংস্কারের মাধ্যমে এসব দেশকে অর্থনৈতিক পুনর্গঠনে সহায়তা করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। কমিটি জি-২০ এর ‘কমন ফ্রেমওয়ার্ক’ এর অগ্রগতি স্বাগত জানিয়েছে এবং আরও “সমন্বিত, দ্রুত ও পূর্বানুমানযোগ্য” ঋণ নিরসন প্রক্রিয়া নিশ্চিত করতে বলেছে। কমিটি আইএমএফের কোটাভিত্তিক কাঠামো বজায় রাখার পক্ষে অবস্থান নিয়েছে এবং ১৬তম সাধারণ কোটার পর্যালোচনার অধীনে কোটার বৃদ্ধি দ্রুত বাস্তবায়নের আহ্বান জানিয়েছে। তারা বলেছে, কোটা বণ্টনের পরবর্তী পুনর্বিন্যাস এমনভাবে করতে হবে যাতে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে সদস্য দেশগুলোর প্রকৃত অবস্থান প্রতিফলিত হয়, তবে দরিদ্র দেশগুলোর অংশ যাতে সুরক্ষিত থাকে, তা নিশ্চিত করতে হবে। আইএমএফ কর্মীদের কাজের প্রশংসা করে কমিটি কর্মীদের মধ্যে আঞ্চলিক বৈচিত্র্য ও নারীদের অংশগ্রহণ আরও বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছে, বিশেষ করে নির্বাহী বোর্ড ও নেতৃত্বের স্তরে।
এই বৈঠক এমন এক সময়ে অনুষ্ঠিত হলো, যখন বৈশ্বিক অর্থনীতির গতি ধীর হয়ে আসছে এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও নীতিগত সমন্বয় আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি জরুরি হয়ে পড়েছে। আইএমএফসির স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে, এক অনিশ্চিত ও পরিবর্তনশীল বিশ্বের জন্য কেবলমাত্র দেশীয় পদক্ষেপ যথেষ্ট নয়, বিশ্বব্যাপী ঐক্যবদ্ধ ও সুসমন্বিত নীতিই ভবিষ্যৎ স্থিতিশীলতার চাবিকাঠি।

জনপ্রিয় সংবাদ

স্মৃতিসৌধে তারেক রহমান

ঋণের চাপে দিশাহারা অনেক দেশ আইএমএফসি

আপডেট সময় : ০৭:১৯:০১ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২০ অক্টোবর ২০২৫
  • ঝুঁকি বাড়ছে বিশ্ব অর্থনীতির
  • চাপ বাড়ছে এবং ভবিষ্যৎ সম্ভাবনার ঝুঁকি ‘নিম্নমুখী’
  • বৈশ্বিক অর্থনীতির সামনে জটিল পথ
  • নিম্নআয়ের ও ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর পরিস্থিতি সংকটজনক

বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এখনও স্থিতিশীল থাকলেও, চাপ দিন দিন বাড়ছে এবং ভবিষ্যতের অর্থনৈতিক সম্ভাবনার দিকনির্দেশ ‘নিম্নমুখী’। বাণিজ্য নীতির হঠাৎ পরিবর্তন, ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা, জলবায়ু বিপর্যয়, এবং দ্রুত প্রযুক্তিগত রূপান্তর সব মিলিয়ে বিশ্ব অর্থনীতির সামনে জটিল ও অনিশ্চিত পথ তৈরি করছে। সম্প্রতি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) নীতিনির্ধারক পরামর্শক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল মানিটারি অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল কমিটি (আইএমএফসি) তাদের সর্বশেষ বৈঠক শেষে এক বিবৃতিতে বিশ্ব অর্থনীতির ওপর বাড়তে থাকা ঝুঁকি এবং ঋণ সংকট নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। আইএমএফসি সতর্ক করে বলেছে, মূল্যস্ফীতি ধীরে ধীরে কমলেও তা সব দেশে সমানভাবে ঘটছে না। অনেক দেশে ঋণের পরিমাণ উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে, বিশেষ করে নিম্নআয়ের দেশ ও অর্থনৈতিকভাবে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর জন্য পরিস্থিতি সংকটজনক। আমরা এমন আর্থিক নীতি গ্রহণ করবো যা আস্থা জাগায়, অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখে এবং ঋণকে টেকসই রাখে। একই সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি কৌশল নির্ধারণ করে ঘাটতি কমানো এবং আর্থিক রিজার্ভ গঠন করা অপরিহার্য। আইএমএফসি স্বীকার করেছে, স্বাধীন কেন্দ্রীয় ব্যাংকই নীতির স্থায়িত্ব ও বিশ্বাসযোগ্যতার ভিত্তি। তবে আর্থিক ব্যবস্থার দ্রুত পরিবর্তন এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (অও), ডিজিটাল অ্যাসেট এবং ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ঝুঁকি মোকাবিলা করতেও বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে,আমরা কাঠামোগত সংস্কার অব্যাহত রাখবো যা ব্যবসার পরিবেশ উন্নত করবে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করবে এবং প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনকে উৎসাহিত করবে। কমিটি বলেছে, আমরা এমন আর্থিক নীতি গ্রহণ করবো যা আস্থা গড়ে তোলে, স্থিতিশীলতা বজায় রাখে এবং ঋণ টেকসই রাখতে সাহায্য করে।’ একই সঙ্গে তারা দীর্ঘমেয়াদি কৌশল নির্ধারণের মাধ্যমে ঘাটতি কমাতে এবং আর্থিক রিজার্ভ গড়ে তুলতে আহ্বান জানিয়েছে।
কমিটি স্বাধীন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভূমিকাকে ‘বিশ্বাসযোগ্যতা ও নীতির স্থায়িত্বের ভিত্তি’ বলে স্বীকার করেছে এবং মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে দৃঢ় অবস্থানে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তবে আর্থিক ব্যবস্থার দ্রুত পরিবর্তনের কথা স্বীকার করে আইএমএফসি বলেছে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই), ডিজিটাল অ্যাসেট এবং ব্যাংক-বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কারণে সৃষ্ট ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি প্রযুক্তির সুফলও কাজে লাগাতে হবে। আমরা কাঠামোগত সংস্কার অব্যাহত রাখবো যা ব্যবসার পরিবেশ উন্নত করবে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়বে এবং প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনকে উৎসাহিত করবে, বলা হয়েছে বিবৃতিতে। আইএমএফসি যুদ্ধবিধ্বস্ত, দরিদ্র ও ক্ষুদ্র উন্নয়নশীল দেশগুলোর ঋণ সংকটের প্রতি বিশেষ মনোযোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। গঠনতান্ত্রিক সংস্কারের মাধ্যমে এসব দেশকে অর্থনৈতিক পুনর্গঠনে সহায়তা করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। কমিটি জি-২০ এর ‘কমন ফ্রেমওয়ার্ক’ এর অগ্রগতি স্বাগত জানিয়েছে এবং আরও “সমন্বিত, দ্রুত ও পূর্বানুমানযোগ্য” ঋণ নিরসন প্রক্রিয়া নিশ্চিত করতে বলেছে। কমিটি আইএমএফের কোটাভিত্তিক কাঠামো বজায় রাখার পক্ষে অবস্থান নিয়েছে এবং ১৬তম সাধারণ কোটার পর্যালোচনার অধীনে কোটার বৃদ্ধি দ্রুত বাস্তবায়নের আহ্বান জানিয়েছে। তারা বলেছে, কোটা বণ্টনের পরবর্তী পুনর্বিন্যাস এমনভাবে করতে হবে যাতে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে সদস্য দেশগুলোর প্রকৃত অবস্থান প্রতিফলিত হয়, তবে দরিদ্র দেশগুলোর অংশ যাতে সুরক্ষিত থাকে, তা নিশ্চিত করতে হবে। আইএমএফ কর্মীদের কাজের প্রশংসা করে কমিটি কর্মীদের মধ্যে আঞ্চলিক বৈচিত্র্য ও নারীদের অংশগ্রহণ আরও বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছে, বিশেষ করে নির্বাহী বোর্ড ও নেতৃত্বের স্তরে।
এই বৈঠক এমন এক সময়ে অনুষ্ঠিত হলো, যখন বৈশ্বিক অর্থনীতির গতি ধীর হয়ে আসছে এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও নীতিগত সমন্বয় আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি জরুরি হয়ে পড়েছে। আইএমএফসির স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে, এক অনিশ্চিত ও পরিবর্তনশীল বিশ্বের জন্য কেবলমাত্র দেশীয় পদক্ষেপ যথেষ্ট নয়, বিশ্বব্যাপী ঐক্যবদ্ধ ও সুসমন্বিত নীতিই ভবিষ্যৎ স্থিতিশীলতার চাবিকাঠি।