জামালপুর-৪ আসন (সরিষাবাড়ী) জেলার পাঁচটি আসনের মধ্যে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি আসন। এই আসনেই রয়েছে দক্ষিন এশিয়ার বৃহৎ সার কারখানা, প্রাচ্যের ড্যান্ডি নামে খ্যাত পাটকল। রয়েছে রেলপথ, নদীপথ, সড়কপথ। তবে এই জনপথটি গত ২৫ বছর যাবৎ অবহেলিত একটি আসন।
আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) কাস্তে প্রতীকে এমপি প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করবেন উদীয়মান যুব নেতা মেরিন ইঞ্জিনিয়ার কমরেড মাহবুব জামান জুয়েল। বাবা ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা স্কুল মাস্টার কমরেড দৌলতুজ্জামান। জেলা কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি ছিলেন। সরিষাবাড়ীর সাধারণ মানুষ চিনতেন কমিউনিস্ট, গরীব- মেহনতী মানুষের নেতা দৌলত মাস্টার হিসেবে। রাজনীতি করবে এমন চিন্তা থেকেই সরকারী বড় কর্মকর্তার চাকরী ছেড়ে এলাকায় এসে একটি হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক হয়ে রাজনীতি করে গেছেন শেষ জীবন পর্যন্ত। ছিলেন সরিষাবাড়ীর সাহসী এবং প্রভাবশালী কমিউনিস্ট নেতা।
বাবার কাছে থেকেই গরীব, মেহনতী, ক্ষেতমজুর, দিনমজুর, শ্রমিকশ্রণির কমিউনিস্ট আন্দোলনের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছেন কমরেড মাহবুব জামান জুয়েল।
বর্তমানে বাংলাদেশ যুব ইউনিয়ন কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এবং জেলা কমিটির সভাপতি। উপজেলা কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি।
মেরিন ইঞ্জিনিয়ার কমরেড মাহবুব জামান জুয়েল জন্মগ্রহণ করেন নদীমাতৃক সরিষাবাড়ীর সুবর্ণখালী এবং যমুনা নদীর মাঝামাঝি চর পোগলদিঘা গ্রামে। ছোট বেলা থেকে কাদা-মাটির সাথে ছিল তার মিতালী। গ্রামের এবং পিছিয়ে পড়া চরাঞ্চলের সহজ সরল খেটে খাওয়া, মেহনতী মানুষের দুঃখ-কষ্ট দেখেছেন খুব কাছ থেকেই। স্থানীয় একটি স্কুল থেকে প্রাথমিক শিক্ষা শেষে ভর্তি হন ময়মনসিংহের খ্যাতনামা মুকুল নিকেতন স্কুলে। ১৯৯৮ সালে এসএসসি সমাপ্ত করে কলেজ অফ ডেভেলপমেন্ট অল্টারনেটিভ (CODA) থেকে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা শেষ করেন। তিনি চট্টগ্রামের বাংলাদেশ মেরিটাইম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মেরিটাইম সায়েন্সে স্নাতক (BMS) ডিগ্রি অর্জন করেছেন। এছাড়া তিনি সিঙ্গাপুরে মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং অফিসার কোর্স সম্পন্ন করেছেন। যা তাকে মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পেশাদার ভূমিকার জন্য যোগ্য করে তুলেছে।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, কমরেড জুয়েল তরুণ, যুবক এবং ক্ষেতমজুর, দিনমজুর, কৃষক ও মেহনতী মানুষের কাছে খুব জনপ্রিয় একজন ব্যক্তিত্ব হয়ে উঠেছেন। তিনি আগামী নির্বাচনে বাবা দৌলত মাস্টারের জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগাতে চাচ্ছেন এমনটাই জানান কমিউনিস্ট পার্টির তৃণমূল পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা।
নির্বাচন সম্পর্কে মেরিন ইঞ্জিনিয়ার জুয়েলের ভাবনা কি জানতে চাইলে তিনি সাবলীল ভাষায় বলেন, আমি আসলে কৃষক, শ্রমিক, ক্ষেতমজুর, মেহনতী মানুষের রাজনীতি করি। অতএব, আগামী নির্বাচনে এই শ্রমিক শ্রেণীকে নিয়েই আমার ভাবনাটা একটু বেশি। এছাড়া সবশ্রেণির মানুষই আমার কাছে প্রাধান্য পাবে। আমি নির্বাচনকে শুধু নির্বাচন হিসেবেই দেখি না। নির্বাচন হচ্ছে সর্বস্তরের মানুষের অধিকার আদায়ের একটি আন্দোলন। জনগণ ভোট দিবে তার অধিকারের জন্য। যে পার্লামেন্টে গিয়ে অবহেলিত, খেটে খাওয়া মানুষ, পিছিয়ে থাকা জনপথের কথা বলবে এবং এলাকার উন্নয়ন করবে তাকেই বেছে নিবে সাধারণ ভোটারা। আমরা দেখেছি নির্বাচনের পূর্বে সাধারণ জনতা প্রার্থীদের দেখতে পায় কিন্তু জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হওয়ার পর আর খুঁজে পাওয়া যায় না। আমি নির্বাচিত হলে সাধারণ মানুষ যেন সবসময় তাদের পাশে পায় এই অঙ্গিকার ব্যক্ত করছি প্রথমে।
তিনি আরও বলেন, গত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে শুধু একটি আসনেই কাজ এবং উন্নয়ন হয়েছে। উন্নয়নের ক্ষেত্রে একটি বিশাল বৈষম্য ছিল এ জেলায়। সরিষাবাড়ী উপজেলায় কোন উন্নয়ন হয় নাই গত ২৫ বছরে। জামালপুরের পাঁচটি আসনের মধ্যে সবচেয়ে অবহলিত উপজেলা ছিল সরিষাবাড়ী। এখানে রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা একদম ভেঙ্গে পরেছে। দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ যমুনা সার কারখানা কিছু দিন পরপর বন্ধ হয়ে যায়। এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় কৃষক। ভেঙ্গে পরেছে অর্থনৈতিক ব্যবস্থা, প্রাচ্যের দ্বিতীয় ড্যান্ডি খ্যাত সরিষাবাড়ী পাটকলগুলি ইতিমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে। কিন্তু এর বিকল্প কোন উদ্যোগ বা প্রতিষ্ঠান করা হয়নি। এতে হাজার হাজার শ্রমিক হঠাৎ বেকার হয়ে গেছে। ব্যাহত হয়েছে সরিষাবাড়ীর অর্থনৈতিক গতি।
তিনি বলেন, আমাদের সরিষাবাড়ী বৃটিশ আমল থেকেই অর্থনৈতিক দিক থেকে সমৃদ্ধ একটি উপজেলা। কিন্তু আজ সরিষাবাড়ী একটি পিছিয়ে থাকা উপজেলা। গত ২৫ বছরে চোখে পরার মত কোন ব্রীজ, কালভার্ট এবং উন্নয়ন হয় নাই। যা অর্থনীতিকে আরও গতিশীল করতে পারে এমন কোন উন্নয়নও চোখে পড়ে নাই। ববং মিল, কারখানা বন্ধ হয়েছে, কারখানা গ্যাস সংকটে বন্ধ রাখা হয়েছে। রেল, সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে। কৃষক তার ফসলের ন্যায্য মূল্য কখনোই পায় নাই। আমার বাবাকে সবসময় দেখেছি কৃষকের ফসলের ন্যায্য মূল্য, শ্রমিকের বেতন, মানুষের অধিকার নিয়ে আন্দোলন সংগ্রাম করতে। এই আন্দোলন সংগ্রামের কারনে আমরা বাবাকে খুব একটা পেতাম না। ছেড়েছেন সরকারী বড় কর্মকর্তার চাকরী।
মেরিন ইঞ্জিনিয়ার কমরেড মাহবুব জামান জুয়েল বলেন, আমি নির্বাচনে এসেছি জেতার জন্য। আমার সাথে তরুণ, যুবক এবং মেহনতী মানুষ আছে। আমি বিজয়ী হলে আমার বলা সব অঙ্গীকার বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করবো। সরিষাবাড়ীতে গতিশীল অর্থনীতি চলমান রাখার জন্য কাজ করো। বিগত দিনে যারা এই আসন থেকে নির্বাচিত হয়েছে তারা এই উপজেলার অর্থনীতি এবং উন্নয়নধারা অব্যাহত রাখে নাই বরং ক্ষতিগ্রস্ত করছে।
এমআর/সবা























