০৬:১৬ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

দেশে ছোটো মাছের চাষ বাড়াতে হবে

  • সবুজ বাংলা
  • আপডেট সময় : ০৭:৩৫:১০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৭ ডিসেম্বর ২০২৩
  • 223

সালমা আফরোজ

সুমনা রহমানের বাজারে যেতে একদমই ভালো লাগে না। মাছ, মাংস বা সবজিÑযে বাজারই হোক। তিনি আগে ছিলেন পুরান ঢাকার দিকে। বর্তমানে থাকেন মিরপুর এলাকায়। কিছুদিন যেতেই সুমনা খেয়াল করলেন তার বাসার নিচেই দৈনন্দিনের চাহিদার অনেক কিছু পাওয়া যায়। তিনি মাছ খেতে খুব ভালোবাসেন আর এ এলাকায় শীতকালে ছোটো-বড়ো মিলিয়ে বিভিন্ন ধরনের মাছ পাওয়া যায়। তবে বেশির ভাগই চাষের মাছ। সুমনা বলেন, আমার ধারণা ছিল চাষের মাছে তেমন পুষ্টিগুণ থাকে না। এ কারণে তাজা মাছ দেখেও কিনতাম না। পরে বেশ কয়েকজনের সঙ্গে আলাপ করে জানতে পারলাম সব মাছেই রয়েছে পুষ্টিগুণ। তবে ছোটো মাছে পুষ্টিগুণ বেশি।

আন্তর্জাতিক সংস্থা ওয়ার্ল্ড ফিশের পুষ্টি ও জনস্বাস্থ্য বিভাগের বৈশ্বিক প্রধান হিসাবে কাজ করছেন শকুন্তলা হারসিংগে থিলস্টেড। বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ছোটো মাছের পুষ্টিগুণ বিষয় জনপ্রিয় করতে তিনি ভূমিকা রেখেছেন। এজন্য ২০২১ সালে জাতিসংঘ থেকে বিশ্ব খাদ্য পুরস্কার পান ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জের ত্রিনিদাদে জন্ম নেওয়া এই বিজ্ঞানী।
শকুন্তলা গবেষণা করে জানতে পারেন, বাংলাদেশের মলা, ঢেলা, কাচকি, পুঁটিমাছের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ক্ষুদ্র পুষ্টিকণা বা মাইক্রো নিউট্রেন্ট, ফ্যাটি অ্যাসিড আছে, যা শিশু ও গর্ভবতী মায়েরা খেলে শিশুর পুষ্টি সমস্যার অনেকাংশের সমাধান হয়ে যাবে। কারণ, এসব মাছ শিশুর শারীরিক বৃদ্ধি ও মস্তিষ্ক গঠনে খুবই সহায়তা করে। তাই তিনি বলেন, বড়ো মাছের শরীরের শুধু মাংসের অংশটুকুই খাওয়া হয়। এগুলোর শরীরের অন্যান্য অংশে যেসব পুষ্টিকর উপাদান আছে, তা থেকে আমরা বঞ্চিত হই। কিন্তু ছোটো মাছ সাধারণত আমরা পুরোটা খাই। এর চোখ, কাঁটাসহ পুরো মাছ খাওয়ার ফলে এর শরীরের সব পুষ্টি উপাদান আমরা পাই। আর ছোটো মাছ মূলত ক্ষুদ্র প্রাণিকণা ও উদ্ভিদকণা খেয়ে বাঁচে। প্রাকৃতিক পরিবেশ ও খাবারের মাধ্যমে এরা বড়ো হওয়ার ফলে এদের শরীরে পুষ্টি উপাদানগুলো বেশি থাকে। যে কারণে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সুস্থ ও মেধাবী করে গড়ে তুলতে হলে ছোটো মাছের বিকল্প নেই।
এ কারণেই বড়ো মাছের সঙ্গে ছোটো মাছের চাষও বাড়াতে হবে। তাই চাষের হলেও ছোটো মাছের পুষ্টিগুণ কোনো অংশে কম নয়। বাংলাদেশে ৪০ লাখ পুকুর আছে। হাজারো বিল, হাওড়, নদী, খালসহ উন্মুক্ত জলাশয় আছে। সেখানে চাইলেই পরিকল্পিতভাবে ছোটো মাছের উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব। উৎপাদন বাড়লে ওই মাছের দামও কমে আসবে। বঙ্গোপসাগরেও প্রচুর পরিমাণে ছোটো মাছ আছে। পুঁটির মতো ছোটো মাছের দাম খুব একটা বেশি না। তবে সমুদ্র ও নদীর ছোটো মাছের একটা সমস্যা হচ্ছে, তা ভালোভাবে সংরক্ষণ করা কঠিন হয়ে যায়।

বর্তমানে প্রচুর ছোটো-বড়ো মলা মাছ পাওয়া যাচ্ছে। আকারে বড়োগুলো যে চাষের তা বোঝা যায়; কিন্তু কিছু কিছু মাছ বিক্রেতা জোর দিয়ে বলবে এগুলো দেশি বিলের মলা মাছ। চাষের না। সুমনা একদিন একটু বিরক্ত হয়ে তাই বলেছিলেন, ভাই চাষের হলে ক্ষতি কী, এই মাছেও প্রচুর পুষ্টি আছে।
মলা মাছের জনপ্রিয়তা ছড়িয়ে পড়ছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। হ্যাচারিতে মলার রেণু উৎপাদন করে জাতীয় পর্যায়ে সম্প্রতি স্বর্ণপদক পেয়েছেন ময়মনসিংহের মৎস্য খামারি নুরুল হক। দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে এই মাছ নিয়ে গবেষণায় আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিও মিলেছে।
দেশি মাছের চাষোপযোগী উন্নত জাত উদ্ভাবনের মাধ্যমে উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য দেশের বিজ্ঞানীদের কৃতিত্ব দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। এফএও এবং ইন্টারন্যাশনাল ফুড পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (ইফপ্রি) একাধিক প্রতিবেদনও বলছে, বাংলাদেশে পুকুরে মাছ চাষে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম বলেছেন, আমরা পুকুরে দেশি মাছের চাষ বাড়াতে গুরুত্ব দিচ্ছি। এজন্য মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটে দেশি মাছের জাত সংরক্ষণের মাধ্যমে সেগুলোকে পুকুরে চাষের উপযোগী করতে ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা হচ্ছে। তবে আমাদের অবশ্যই বঙ্গোপসাগরে মাছ উৎপাদনে জোর দিতে হবে।
মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা বলছেন, দেশের বিজ্ঞানীরা এ পর্যন্ত রুই, কাতলা, কই, তেলাপিয়া, কালিবাউশ ও সরপুঁটির উন্নত জাত উদ্ভাবন করেছেন। দেশের পুকুরে এখন যত মাছ চাষ হচ্ছে, এর অর্ধেকের বেশি এসব জাতের। তারা দেশের বিলুপ্তপ্রায় ২২ প্রজাতির মাছের চাষপদ্ধতিও উদ্ভাবন করেছেন। এ তালিকায় ট্যাংরা, পাবদা ও মলার মতো পুষ্টিকর মাছ রয়েছে।
ইফপ্রির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, বাংলাদেশের ৫৬ শতাংশ মাছ আসছে পুকুর থেকে। পুকুরে মাছ চাষের কারণে গত তিন দশকে দেশে উৎপাদন বেড়েছে প্রায় ছয়গুণ। মাছ চাষ ও বিক্রি ব্যবসায় প্রায় দুই কোটি মানুষ যুক্ত। দেখা যায়, ১৯৯০ সালে মানুষ বছরে মাথাপিছু সাড়ে সাত কেজি মাছ খেত। এখন সেটা ৩০ কেজিতে পৌঁছেছে।

স্বাদুপানির মাছ উৎপাদনে এবারও বাংলাদেশ তৃতীয় স্থান ধরে রেখেছে। আর চাষের মাছে বাংলাদেশ দুই ধাপ এগিয়ে তৃতীয় অবস্থানে উঠে এসেছে।
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) ‘দ্য স্টেট অব ওয়ার্ল্ড ফিশারিজ অ্যান্ড অ্যাকুয়াকালচার-২০২২’ বৈশ্বিক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। বিশ্বের সব দেশের ২০২০ সালে উৎপাদিত মাছের হিসাব নিয়ে তৈরি প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৯৮০ সালে বাংলাদেশে স্বাদুপানির মাছের উৎপাদন ছিল ৪ লাখ ৪০ হাজার টন। ২০২০ সালে তা ১২ লাখ ৫০ হাজার টনে উন্নীত হয়েছে, যা বিশ্বের মোট মাছ উৎপাদনের ১১ শতাংশ। বাংলাদেশের আগে রয়েছে ভারত ও চীন। ভারতে ১৮ লাখ টন এবং চীনে ১৪ লাখ ৬০ হাজার টন স্বাদুপানির মাছ উৎপাদিত হয়। বাংলাদেশের পরে রয়েছে মিয়ানমার, উগান্ডা ও ইন্দোনেশিয়া।

এ দেশে যে হারে জনসংখ্যা বাড়ছে, সে হারে মাছের উৎপাদন বাড়ছে না। দেশের ক্ষুধার্ত আর পুষ্টিহীন মানুষের খাদ্যের জোগান দিতে সবার আগে প্রয়োজন যথার্থ কৃষি ব্যবস্থাপনা। এরই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ হলো মৎস্যচাষ। মাছের উৎপাদন বৃদ্ধির ফলে আজ ‘মাছে-ভাতে বাঙালি’ প্রবাদটি আবার ফিরে এসেছে। তবে এটি ধরে রাখতে হলে সামুদ্রিক মাছ যেমন আহরণ করতে হবে তেমনই জলাশয়গুলোয় বড়ো মাছের সঙ্গে সঙ্গে ছোট মাছ চাষে আরও গুরুত্ব দিতে হবে। পিআইবি ফিচার

লেখক: সাংবাদিক, দৈনিক সবুজ বাংলা

জনপ্রিয় সংবাদ

সপরিবারে হিথ্রো বিমানবন্দরে পৌঁছেছেন তারেক রহমান

দেশে ছোটো মাছের চাষ বাড়াতে হবে

আপডেট সময় : ০৭:৩৫:১০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৭ ডিসেম্বর ২০২৩

সালমা আফরোজ

সুমনা রহমানের বাজারে যেতে একদমই ভালো লাগে না। মাছ, মাংস বা সবজিÑযে বাজারই হোক। তিনি আগে ছিলেন পুরান ঢাকার দিকে। বর্তমানে থাকেন মিরপুর এলাকায়। কিছুদিন যেতেই সুমনা খেয়াল করলেন তার বাসার নিচেই দৈনন্দিনের চাহিদার অনেক কিছু পাওয়া যায়। তিনি মাছ খেতে খুব ভালোবাসেন আর এ এলাকায় শীতকালে ছোটো-বড়ো মিলিয়ে বিভিন্ন ধরনের মাছ পাওয়া যায়। তবে বেশির ভাগই চাষের মাছ। সুমনা বলেন, আমার ধারণা ছিল চাষের মাছে তেমন পুষ্টিগুণ থাকে না। এ কারণে তাজা মাছ দেখেও কিনতাম না। পরে বেশ কয়েকজনের সঙ্গে আলাপ করে জানতে পারলাম সব মাছেই রয়েছে পুষ্টিগুণ। তবে ছোটো মাছে পুষ্টিগুণ বেশি।

আন্তর্জাতিক সংস্থা ওয়ার্ল্ড ফিশের পুষ্টি ও জনস্বাস্থ্য বিভাগের বৈশ্বিক প্রধান হিসাবে কাজ করছেন শকুন্তলা হারসিংগে থিলস্টেড। বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ছোটো মাছের পুষ্টিগুণ বিষয় জনপ্রিয় করতে তিনি ভূমিকা রেখেছেন। এজন্য ২০২১ সালে জাতিসংঘ থেকে বিশ্ব খাদ্য পুরস্কার পান ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জের ত্রিনিদাদে জন্ম নেওয়া এই বিজ্ঞানী।
শকুন্তলা গবেষণা করে জানতে পারেন, বাংলাদেশের মলা, ঢেলা, কাচকি, পুঁটিমাছের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ক্ষুদ্র পুষ্টিকণা বা মাইক্রো নিউট্রেন্ট, ফ্যাটি অ্যাসিড আছে, যা শিশু ও গর্ভবতী মায়েরা খেলে শিশুর পুষ্টি সমস্যার অনেকাংশের সমাধান হয়ে যাবে। কারণ, এসব মাছ শিশুর শারীরিক বৃদ্ধি ও মস্তিষ্ক গঠনে খুবই সহায়তা করে। তাই তিনি বলেন, বড়ো মাছের শরীরের শুধু মাংসের অংশটুকুই খাওয়া হয়। এগুলোর শরীরের অন্যান্য অংশে যেসব পুষ্টিকর উপাদান আছে, তা থেকে আমরা বঞ্চিত হই। কিন্তু ছোটো মাছ সাধারণত আমরা পুরোটা খাই। এর চোখ, কাঁটাসহ পুরো মাছ খাওয়ার ফলে এর শরীরের সব পুষ্টি উপাদান আমরা পাই। আর ছোটো মাছ মূলত ক্ষুদ্র প্রাণিকণা ও উদ্ভিদকণা খেয়ে বাঁচে। প্রাকৃতিক পরিবেশ ও খাবারের মাধ্যমে এরা বড়ো হওয়ার ফলে এদের শরীরে পুষ্টি উপাদানগুলো বেশি থাকে। যে কারণে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সুস্থ ও মেধাবী করে গড়ে তুলতে হলে ছোটো মাছের বিকল্প নেই।
এ কারণেই বড়ো মাছের সঙ্গে ছোটো মাছের চাষও বাড়াতে হবে। তাই চাষের হলেও ছোটো মাছের পুষ্টিগুণ কোনো অংশে কম নয়। বাংলাদেশে ৪০ লাখ পুকুর আছে। হাজারো বিল, হাওড়, নদী, খালসহ উন্মুক্ত জলাশয় আছে। সেখানে চাইলেই পরিকল্পিতভাবে ছোটো মাছের উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব। উৎপাদন বাড়লে ওই মাছের দামও কমে আসবে। বঙ্গোপসাগরেও প্রচুর পরিমাণে ছোটো মাছ আছে। পুঁটির মতো ছোটো মাছের দাম খুব একটা বেশি না। তবে সমুদ্র ও নদীর ছোটো মাছের একটা সমস্যা হচ্ছে, তা ভালোভাবে সংরক্ষণ করা কঠিন হয়ে যায়।

বর্তমানে প্রচুর ছোটো-বড়ো মলা মাছ পাওয়া যাচ্ছে। আকারে বড়োগুলো যে চাষের তা বোঝা যায়; কিন্তু কিছু কিছু মাছ বিক্রেতা জোর দিয়ে বলবে এগুলো দেশি বিলের মলা মাছ। চাষের না। সুমনা একদিন একটু বিরক্ত হয়ে তাই বলেছিলেন, ভাই চাষের হলে ক্ষতি কী, এই মাছেও প্রচুর পুষ্টি আছে।
মলা মাছের জনপ্রিয়তা ছড়িয়ে পড়ছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। হ্যাচারিতে মলার রেণু উৎপাদন করে জাতীয় পর্যায়ে সম্প্রতি স্বর্ণপদক পেয়েছেন ময়মনসিংহের মৎস্য খামারি নুরুল হক। দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে এই মাছ নিয়ে গবেষণায় আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিও মিলেছে।
দেশি মাছের চাষোপযোগী উন্নত জাত উদ্ভাবনের মাধ্যমে উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য দেশের বিজ্ঞানীদের কৃতিত্ব দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। এফএও এবং ইন্টারন্যাশনাল ফুড পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (ইফপ্রি) একাধিক প্রতিবেদনও বলছে, বাংলাদেশে পুকুরে মাছ চাষে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম বলেছেন, আমরা পুকুরে দেশি মাছের চাষ বাড়াতে গুরুত্ব দিচ্ছি। এজন্য মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটে দেশি মাছের জাত সংরক্ষণের মাধ্যমে সেগুলোকে পুকুরে চাষের উপযোগী করতে ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা হচ্ছে। তবে আমাদের অবশ্যই বঙ্গোপসাগরে মাছ উৎপাদনে জোর দিতে হবে।
মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা বলছেন, দেশের বিজ্ঞানীরা এ পর্যন্ত রুই, কাতলা, কই, তেলাপিয়া, কালিবাউশ ও সরপুঁটির উন্নত জাত উদ্ভাবন করেছেন। দেশের পুকুরে এখন যত মাছ চাষ হচ্ছে, এর অর্ধেকের বেশি এসব জাতের। তারা দেশের বিলুপ্তপ্রায় ২২ প্রজাতির মাছের চাষপদ্ধতিও উদ্ভাবন করেছেন। এ তালিকায় ট্যাংরা, পাবদা ও মলার মতো পুষ্টিকর মাছ রয়েছে।
ইফপ্রির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, বাংলাদেশের ৫৬ শতাংশ মাছ আসছে পুকুর থেকে। পুকুরে মাছ চাষের কারণে গত তিন দশকে দেশে উৎপাদন বেড়েছে প্রায় ছয়গুণ। মাছ চাষ ও বিক্রি ব্যবসায় প্রায় দুই কোটি মানুষ যুক্ত। দেখা যায়, ১৯৯০ সালে মানুষ বছরে মাথাপিছু সাড়ে সাত কেজি মাছ খেত। এখন সেটা ৩০ কেজিতে পৌঁছেছে।

স্বাদুপানির মাছ উৎপাদনে এবারও বাংলাদেশ তৃতীয় স্থান ধরে রেখেছে। আর চাষের মাছে বাংলাদেশ দুই ধাপ এগিয়ে তৃতীয় অবস্থানে উঠে এসেছে।
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) ‘দ্য স্টেট অব ওয়ার্ল্ড ফিশারিজ অ্যান্ড অ্যাকুয়াকালচার-২০২২’ বৈশ্বিক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। বিশ্বের সব দেশের ২০২০ সালে উৎপাদিত মাছের হিসাব নিয়ে তৈরি প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৯৮০ সালে বাংলাদেশে স্বাদুপানির মাছের উৎপাদন ছিল ৪ লাখ ৪০ হাজার টন। ২০২০ সালে তা ১২ লাখ ৫০ হাজার টনে উন্নীত হয়েছে, যা বিশ্বের মোট মাছ উৎপাদনের ১১ শতাংশ। বাংলাদেশের আগে রয়েছে ভারত ও চীন। ভারতে ১৮ লাখ টন এবং চীনে ১৪ লাখ ৬০ হাজার টন স্বাদুপানির মাছ উৎপাদিত হয়। বাংলাদেশের পরে রয়েছে মিয়ানমার, উগান্ডা ও ইন্দোনেশিয়া।

এ দেশে যে হারে জনসংখ্যা বাড়ছে, সে হারে মাছের উৎপাদন বাড়ছে না। দেশের ক্ষুধার্ত আর পুষ্টিহীন মানুষের খাদ্যের জোগান দিতে সবার আগে প্রয়োজন যথার্থ কৃষি ব্যবস্থাপনা। এরই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ হলো মৎস্যচাষ। মাছের উৎপাদন বৃদ্ধির ফলে আজ ‘মাছে-ভাতে বাঙালি’ প্রবাদটি আবার ফিরে এসেছে। তবে এটি ধরে রাখতে হলে সামুদ্রিক মাছ যেমন আহরণ করতে হবে তেমনই জলাশয়গুলোয় বড়ো মাছের সঙ্গে সঙ্গে ছোট মাছ চাষে আরও গুরুত্ব দিতে হবে। পিআইবি ফিচার

লেখক: সাংবাদিক, দৈনিক সবুজ বাংলা