০৪:৫০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

যশোরে কপির চারা উৎপাদনে কৃষকের ভাগ্য বদল

  • সবুজ বাংলা
  • আপডেট সময় : ১১:৪০:০৪ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৮ ডিসেম্বর ২০২৩
  • 101

বিল্লাল হোসেন, যশোর

যশোর সদর উপজেলার চুড়ামনকাটি ইউনয়নের আব্দুলপুরে কপির চারা উৎপাদনে চাষিদের ভাগ্য বদলে গেছে। প্রতি মৌসুমে চাষিরা বীজ অঙ্কুরোদগমের মাধ্যমে চারা তৈরি করে প্রতি মৌসুমে তারা ২০ কোটির টাকার বেশি বেশি বিক্রি করছেন বলে জানা গেছে। ইতিমধ্যে নিজেদের তৈরি করা কপির চারা বিক্রি করে অর্ধশত চাষি লাখপতি হয়েছেন। এখানকার চারার সুনাম থাকার কারণে মৌসুমে চাহিদা বাড়ছে।
স্থানীয় উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আষাঢ় মাস থেকে কার্তিক মাসের শেষ অবধি বাঁধাকপি ও ফুলকপির চারা উৎপাদন চলবে। এরই মধ্যেই চারা বিক্রি করা হয় । বেড তৈরি করে একই জমিতে তিন বার চারা উৎপাদন করতে পারেন চাষিরা।

চারা উৎপাদন পদ্ধতি সম্পর্কে জানা গেছে, বীজতলার আকার ১ মিটার পাশে ও লম্বায় ৩ মিটার হওয়া উচিত। সমপরিমাণ বালি, মাটি ও জৈবসার মিশিয়ে ঝুরাঝুরা করে বীজতলা তৈরি করতে হয়। দ্বিতীয় বীজতলায় চারা রোপণের আগে ৭/৮ দিন পূর্বে প্রতি বীজতলায় ১০০ গ্রাম ইউরিয়া, ১৫০ গ্রাম টিএসপি ও ১০০ গ্রাম এমওপি সার ভালভাবে মিশিয়ে দিতে হবে। পরে চারা ঠিকমত না বাড়লে প্রতি বীজতলায় প্রায় ১০০ গ্রাম পরিমাণ ইউরিয়া সার ছিটিয়ে দেয়া ভাল।
আব্দুলপুর গ্রামের চাষি আজিজুর রহমান জানান, আষাঢ়ের শুরুতে জমিতে বেড দিয়ে বীজতলা প্রস্তুত করা হয়। তারপর বপন করা হয় বাঁধাকপি ও ফুলকপির বীজ। বীজ থেকে চারা গজাতে এক মাস সময় লাগে। এই চারা চাষিদের কাছে বিক্রি করা হয়। তিনি ৮ বছর ধরে কপির চারা উৎপাদন করছেন। আজিজর রহমান জানান, এবারও তিনি ১২ কাটা জমিতে মোট ৮০ টি বেড তৈরি করে বাঁধা কপির বীজ বপন করে। প্রতি বেডে চারা উৎপাদনে খরচ হয় আনুমানিক খরচ ১ হাজার টাকা। কিন্তু বেড প্রতি আড়াই হাজার টাকার বেশি চারা বিক্রি করেছেন। তিনবার চারা উৎপাদনে লক্ষাধিক টাকা লাভের সম্ভাবনার কথা জানান। এবার ফুলকপির ভালো মানের চারা (সনোবক্স) ১ টাকা ৫০ পয়সা থেকে ১ টাকা ৬০ পয়সায় বিক্রি করেছেন। একটু দুর্বল চারা বিক্রি হচ্ছে ১ টাকা পিস। আর বাঁধাকপির প্রতিটি চারা (গ্রিন-৬০) ৫০ পয়সা থেকে ৬৫ পয়সা বিক্রি হচ্ছে বলে জানান চাষি আজিজুর রহমান।

সরেজমিনে দেখা গেছে, আব্দুলপুর গ্রামের ৪শ’ বিঘার বেশি জমিতে কপির চারা উৎপাদন করা হয়। বর্তমানে গ্রামটি কপি পল্লী হিেিসব খ্যাতি অর্জন করেছে। চারা উৎপাদন লাভজনক হওয়ায় আবাদকারীদের সংখ্যাও বেড়েছে। বর্তমানে ২শ’ চাষি চারা উৎপাদন করছেন। নিজস্ব জমি না থাকলেও জমি লিজ নিয়ে ঝুঁকেছেন কয়েকজন।
আরেক চাষি ওসমান গনি জানান, তিনি এক জমিতে চারা উৎপাদন করেন। এখানকার কপির চারার মান ভালো হওয়ায় দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে সুনাম রয়েছে। ফলে চারা বেশি দামেও বিক্রি করতে পারেন তারা।
তিনি আরো জানান, যশোর ছাড়াও খুলনা, সাতক্ষীরা, নড়াইল, মাগুরা, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গাসহ বিভিন্ন জেলা থেকে চাষিরা এসে কপির চারা কিনে নিয়ে যান। কপির চারা উৎপাদন করে তিনি লাখ লাখ টাকা লাভবান হয়েছেন।
আইয়ুব আলী জানান, গতবারের মতো এবারো ১ বিঘা জমিতে বীজ বোপনের পর চারা উৎপাদন করেছিলেন। সাড়ে ৪ লাখ টাকার চারা বিক্রি করেছেন। সব মিলিয়ে তিনি মোটা অংকের টাকা লাভ করতে পারবেন বলে আশাবাদী। এক প্রশ্নের উত্তরে জানান, এক বিঘা জমিতে বীজ রোপন করে চারা উৎপাদন করতে ১ লাখ টাকার সামান্য বেশি টাকা খরচ হয়।
আরো কয়েকজন চাষি জানান, এবারের মৌসুমে তারা ২০ কোটির বেশি টাকা কপির চারা বিক্রি করেছেন। আগামী মৌসুমে আরও বেশি টাকার চারা বিক্রি করতে পারবেন বলে আশাবাদী।

চুড়ামনকাটি ইউনিয়নের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সম্পা রানী জানান,বীজ থেকে কপির চারা উৎপাদন অন্য এলাকার চাষিদের জন্য আদর্শ দৃষ্টান্ত হতে পারে। এখানকার চারার যথেষ্ট সুনাম রয়েছে। যে কারণে চাষিদের যে কোন সমস্যার সমাধানে নিয়মিত পরামর্শ প্রদান করা হয়। কপির চারা উৎপাদন করে অনেক চাষি নিজেদের ভাগ্যের পরিবর্তন করতে পেরেছেন। ভরা মৌসুমে নারী পুরুষ মিলে জমিতে ব্যস্ত সময় পার করেন।
যশোর কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ পরিচালক মঞ্জুরুল হক জানান, চুড়ামনকাটি ইউনিয়নের আব্দুলপুরে বানিজ্যিকভাবে ফুল কপি ও বাধা কপির চারা উৎপাদন করা হয়। এখানকার চারা কিনে সবজির চাষ করে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের চাষিরা। কপির চারা পল্লীতে বাড়তি খেয়াল রাখার জন্য স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তাদের নির্দেশনা রয়েছে।

জনপ্রিয় সংবাদ

যশোরে কপির চারা উৎপাদনে কৃষকের ভাগ্য বদল

আপডেট সময় : ১১:৪০:০৪ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৮ ডিসেম্বর ২০২৩

বিল্লাল হোসেন, যশোর

যশোর সদর উপজেলার চুড়ামনকাটি ইউনয়নের আব্দুলপুরে কপির চারা উৎপাদনে চাষিদের ভাগ্য বদলে গেছে। প্রতি মৌসুমে চাষিরা বীজ অঙ্কুরোদগমের মাধ্যমে চারা তৈরি করে প্রতি মৌসুমে তারা ২০ কোটির টাকার বেশি বেশি বিক্রি করছেন বলে জানা গেছে। ইতিমধ্যে নিজেদের তৈরি করা কপির চারা বিক্রি করে অর্ধশত চাষি লাখপতি হয়েছেন। এখানকার চারার সুনাম থাকার কারণে মৌসুমে চাহিদা বাড়ছে।
স্থানীয় উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আষাঢ় মাস থেকে কার্তিক মাসের শেষ অবধি বাঁধাকপি ও ফুলকপির চারা উৎপাদন চলবে। এরই মধ্যেই চারা বিক্রি করা হয় । বেড তৈরি করে একই জমিতে তিন বার চারা উৎপাদন করতে পারেন চাষিরা।

চারা উৎপাদন পদ্ধতি সম্পর্কে জানা গেছে, বীজতলার আকার ১ মিটার পাশে ও লম্বায় ৩ মিটার হওয়া উচিত। সমপরিমাণ বালি, মাটি ও জৈবসার মিশিয়ে ঝুরাঝুরা করে বীজতলা তৈরি করতে হয়। দ্বিতীয় বীজতলায় চারা রোপণের আগে ৭/৮ দিন পূর্বে প্রতি বীজতলায় ১০০ গ্রাম ইউরিয়া, ১৫০ গ্রাম টিএসপি ও ১০০ গ্রাম এমওপি সার ভালভাবে মিশিয়ে দিতে হবে। পরে চারা ঠিকমত না বাড়লে প্রতি বীজতলায় প্রায় ১০০ গ্রাম পরিমাণ ইউরিয়া সার ছিটিয়ে দেয়া ভাল।
আব্দুলপুর গ্রামের চাষি আজিজুর রহমান জানান, আষাঢ়ের শুরুতে জমিতে বেড দিয়ে বীজতলা প্রস্তুত করা হয়। তারপর বপন করা হয় বাঁধাকপি ও ফুলকপির বীজ। বীজ থেকে চারা গজাতে এক মাস সময় লাগে। এই চারা চাষিদের কাছে বিক্রি করা হয়। তিনি ৮ বছর ধরে কপির চারা উৎপাদন করছেন। আজিজর রহমান জানান, এবারও তিনি ১২ কাটা জমিতে মোট ৮০ টি বেড তৈরি করে বাঁধা কপির বীজ বপন করে। প্রতি বেডে চারা উৎপাদনে খরচ হয় আনুমানিক খরচ ১ হাজার টাকা। কিন্তু বেড প্রতি আড়াই হাজার টাকার বেশি চারা বিক্রি করেছেন। তিনবার চারা উৎপাদনে লক্ষাধিক টাকা লাভের সম্ভাবনার কথা জানান। এবার ফুলকপির ভালো মানের চারা (সনোবক্স) ১ টাকা ৫০ পয়সা থেকে ১ টাকা ৬০ পয়সায় বিক্রি করেছেন। একটু দুর্বল চারা বিক্রি হচ্ছে ১ টাকা পিস। আর বাঁধাকপির প্রতিটি চারা (গ্রিন-৬০) ৫০ পয়সা থেকে ৬৫ পয়সা বিক্রি হচ্ছে বলে জানান চাষি আজিজুর রহমান।

সরেজমিনে দেখা গেছে, আব্দুলপুর গ্রামের ৪শ’ বিঘার বেশি জমিতে কপির চারা উৎপাদন করা হয়। বর্তমানে গ্রামটি কপি পল্লী হিেিসব খ্যাতি অর্জন করেছে। চারা উৎপাদন লাভজনক হওয়ায় আবাদকারীদের সংখ্যাও বেড়েছে। বর্তমানে ২শ’ চাষি চারা উৎপাদন করছেন। নিজস্ব জমি না থাকলেও জমি লিজ নিয়ে ঝুঁকেছেন কয়েকজন।
আরেক চাষি ওসমান গনি জানান, তিনি এক জমিতে চারা উৎপাদন করেন। এখানকার কপির চারার মান ভালো হওয়ায় দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে সুনাম রয়েছে। ফলে চারা বেশি দামেও বিক্রি করতে পারেন তারা।
তিনি আরো জানান, যশোর ছাড়াও খুলনা, সাতক্ষীরা, নড়াইল, মাগুরা, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গাসহ বিভিন্ন জেলা থেকে চাষিরা এসে কপির চারা কিনে নিয়ে যান। কপির চারা উৎপাদন করে তিনি লাখ লাখ টাকা লাভবান হয়েছেন।
আইয়ুব আলী জানান, গতবারের মতো এবারো ১ বিঘা জমিতে বীজ বোপনের পর চারা উৎপাদন করেছিলেন। সাড়ে ৪ লাখ টাকার চারা বিক্রি করেছেন। সব মিলিয়ে তিনি মোটা অংকের টাকা লাভ করতে পারবেন বলে আশাবাদী। এক প্রশ্নের উত্তরে জানান, এক বিঘা জমিতে বীজ রোপন করে চারা উৎপাদন করতে ১ লাখ টাকার সামান্য বেশি টাকা খরচ হয়।
আরো কয়েকজন চাষি জানান, এবারের মৌসুমে তারা ২০ কোটির বেশি টাকা কপির চারা বিক্রি করেছেন। আগামী মৌসুমে আরও বেশি টাকার চারা বিক্রি করতে পারবেন বলে আশাবাদী।

চুড়ামনকাটি ইউনিয়নের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সম্পা রানী জানান,বীজ থেকে কপির চারা উৎপাদন অন্য এলাকার চাষিদের জন্য আদর্শ দৃষ্টান্ত হতে পারে। এখানকার চারার যথেষ্ট সুনাম রয়েছে। যে কারণে চাষিদের যে কোন সমস্যার সমাধানে নিয়মিত পরামর্শ প্রদান করা হয়। কপির চারা উৎপাদন করে অনেক চাষি নিজেদের ভাগ্যের পরিবর্তন করতে পেরেছেন। ভরা মৌসুমে নারী পুরুষ মিলে জমিতে ব্যস্ত সময় পার করেন।
যশোর কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ পরিচালক মঞ্জুরুল হক জানান, চুড়ামনকাটি ইউনিয়নের আব্দুলপুরে বানিজ্যিকভাবে ফুল কপি ও বাধা কপির চারা উৎপাদন করা হয়। এখানকার চারা কিনে সবজির চাষ করে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের চাষিরা। কপির চারা পল্লীতে বাড়তি খেয়াল রাখার জন্য স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তাদের নির্দেশনা রয়েছে।