০৩:১৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৬ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সংরক্ষনের অভাবে লক্ষ্মীপুরে অস্তিত্ব সংকটে ১০ গণকবর

অস্তিত্বসংকটে লক্ষ্মীপুরের ১০ গণকবর। স্বাধীনতার ৫২ বছরেরও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত এই গণকবরগুলো সংরক্ষণে কোনো উদ্যোগ নেয়নি সরকার। সরকারি উদ্যোগে এই গণকবরগুলো সংরক্ষণের দাবি জানিয়েছেন জেলার মুক্তিযোদ্ধারা। মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক জেলা কমান্ডার হুমায়ূন কবির তোফায়েল জানান, ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়। লক্ষ্মীপুরে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আক্রমণ শুরু হয় মে মাসের শুরুর দিকে। ৩ ডিসেম্বর লক্ষ্মীপুর শহরের বাগবাড়ীর ক্যাম্প দখলের মাধ্যমে হানাদারমুক্ত হয় এই জেলা। মুক্তিযুদ্ধকালীন ওই ক্যাম্পে অনেক নিরীহ মানুষকে ধরে এনে হত্যা করে পাক হানাদার বাহিনী। পরে ক্যাম্পসংলগ্ন ভূমিতে মরদেহ মাটিচাপা দেয়। এ ছাড়া শহরের মাদাম ব্রিজের পশ্চিম পাড়ে অনেক মুক্তিকামী মানুষকে গুলি করে হত্যার পর মরদেহ মাটিচাপা দেয়। তা ছাড়া গণকবর রয়েছে সদর উপজেলার বাসুবাজার, কাজীর দীঘির পাড়, আব্দুলাহপুর, দালাল বাজার, বেলতলা, চন্দ্রগঞ্জ থানাধীন চরচামিতা মীরা বাড়ি, পশ্চিম লতিফপুর গ্রামের নুর মিয়া মুন্সী বাড়ি, নাগের হাট ব্রিজ এলাকায়। আর জকসিন পূর্ব বাজারে রয়েছে নোয়াখালীর ঐতিহাসিক বগাদিয়ার যুদ্ধে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের কবর। তার মধ্যে বাগবাড়ী গণকবরের একটি সীমিত অংশ সরকারিভাবে সংরক্ষণ করা হলেও বাকিগুলোর সংরক্ষণ করা হয়নি। বাসুবাজারের গণকবর স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্যোগে সংরক্ষণ করা হলেও অন্যগুলোর অস্তিত্ব এখন বিলীন হওয়ার পথে। এরই মধ্যে দালাল বাজার খোয়াসাগর দীঘির পশ্চিম পাড়স্থ বেলতলা নামক স্থানের গণকবরের ওপর দিয়ে রাস্তা নির্মাণ করায় তা পুরোপুরি বিলুপ্ত হয়ে গেছে। জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার খোরশেদ আলম জানান, শহরের মাদাম ব্রিজসংলগ্ন গণকবরের ওপর একজন আইনজীবীসহ কয়েকজন দখলদার ঘর তুলে দখল করে নিলেও সাবেক পৌর মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা এম এ তাহের পৌর মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর ঘরগুলো উচ্ছেদ করে একটি প্রাচীর নির্মাণ করে দেন।

বর্তমানে রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ওই স্থানটি ঝাড়জঙ্গলে ভরে আছে। এ স্থানটিতে গণকবর থাকার কোনো চিহ্ন বা সাইনবোর্ড না থাকায় এ স্থানটি যে গণকবর তা জানতে পারছেন না কেউ। ফলে তার অস্তিত্ব এখন হুমকির মুখে। মোহাম্মদ আলী নামে স্থানীয় এক সমাজকর্মী জানান, চন্দ্রগঞ্জ থানাধীন মীরা বাড়ির সংখ্যালঘু ৭ মুক্তিকামী শহীদের সমাধি পারিবারিকভাবে সংরক্ষণ করা হলেও পরে বাড়ির পরবর্তী মালিকরা গত কয়েক বছর আগে পুরো বাড়িটি মিনহাজ গ্র“পের মালিক মরহুম কামাল উদ্দিনের কাছে বিক্রি করে দিয়ে দেশত্যাগ করেন। পরে মিনহাজ গ্র“পের শ্রমিকরা ৭টি সমাধিসৌধ (মঠ) ভেঙে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেয়। পরে ওই জমি তারা এইচআর গ্র“পের কাছে বিক্রি করে দেয়। এইচআর গ্র“প সেখানে একটি এ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ স্থাপন করে। একই ভাবে চন্দ্রগঞ্জ থানাধীন পশ্চিম লতিফপুর গ্রামের নুর মিয়া মুন্সী বাড়ির বাসিন্দা যুবলীগ নেতা আমীর হোসেন আমু জানান, চন্দ্রগঞ্জ বাজারসংলগ্ন তাদের বাড়িতে ১৯৭১ সালে ১৪ জুন পাক বাহিনী হামলা করে। এতে ১৫ জন নিহত হন। তাদের বাড়িতে নিহতদের ৯ জনকে কবর দেওয়া হয়। এই গণকবরগুলো সংরক্ষণের জন্য তিনি জেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন স্থানে দৌড়ঝাঁপ করেও কোনো সহযোগিতা পাননি। সম্প্রতি বাড়ির লোকজনের উদ্যোগে সীমানাপ্রাচীর তৈরি করে গণকবরটি সংরক্ষণ করা হয়েছে। অপর দিকে বগাদিয়ার যুদ্ধে নোয়াখালীর আরেক শহীদ মুক্তিযোদ্ধা সামছুকে চন্দ্রগঞ্জ
থানাধীন জকসিন পূর্ব বাজারে নোয়াখালী-লক্ষ্মীপুর সড়কের উত্তর পাশের স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা ও এলাকাবাসী সমাহিত করেন। শহীদ সামছুর গ্রামের বাড়ির
ঠিকানা নিশ্চিত করতে না পারায় এলাকাবাসী ও মুক্তিযোদ্ধারা এই উদ্যোগ নেন।
পরবর্তী সময়ে মুক্তিযোদ্ধারা এই শহীদ সমাধিটি প্রাচীর দ্বারা সংরক্ষণ করলেও গত ৩-৪ বছর ধরে রাতের আঁধারে আস্তে আস্তে এই সমাধির সীমানা প্রাচীর কে বা কারা ভেঙে ফেলে। এই সমাধির ওপর দুটি আমগাছ থাকায় সমাধিটি পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন করা যায়নি। তবে এ স্থানে কোনো সমাধি থাকার চিহ্ন এখন আর বোঝা না যাওয়ায় তার ও অস্তিত্ব এখন বিলুপ্তির পথে ।

জনপ্রিয় সংবাদ

সংরক্ষনের অভাবে লক্ষ্মীপুরে অস্তিত্ব সংকটে ১০ গণকবর

আপডেট সময় : ১২:৫৩:৫৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৯ ডিসেম্বর ২০২৩

অস্তিত্বসংকটে লক্ষ্মীপুরের ১০ গণকবর। স্বাধীনতার ৫২ বছরেরও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত এই গণকবরগুলো সংরক্ষণে কোনো উদ্যোগ নেয়নি সরকার। সরকারি উদ্যোগে এই গণকবরগুলো সংরক্ষণের দাবি জানিয়েছেন জেলার মুক্তিযোদ্ধারা। মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক জেলা কমান্ডার হুমায়ূন কবির তোফায়েল জানান, ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়। লক্ষ্মীপুরে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আক্রমণ শুরু হয় মে মাসের শুরুর দিকে। ৩ ডিসেম্বর লক্ষ্মীপুর শহরের বাগবাড়ীর ক্যাম্প দখলের মাধ্যমে হানাদারমুক্ত হয় এই জেলা। মুক্তিযুদ্ধকালীন ওই ক্যাম্পে অনেক নিরীহ মানুষকে ধরে এনে হত্যা করে পাক হানাদার বাহিনী। পরে ক্যাম্পসংলগ্ন ভূমিতে মরদেহ মাটিচাপা দেয়। এ ছাড়া শহরের মাদাম ব্রিজের পশ্চিম পাড়ে অনেক মুক্তিকামী মানুষকে গুলি করে হত্যার পর মরদেহ মাটিচাপা দেয়। তা ছাড়া গণকবর রয়েছে সদর উপজেলার বাসুবাজার, কাজীর দীঘির পাড়, আব্দুলাহপুর, দালাল বাজার, বেলতলা, চন্দ্রগঞ্জ থানাধীন চরচামিতা মীরা বাড়ি, পশ্চিম লতিফপুর গ্রামের নুর মিয়া মুন্সী বাড়ি, নাগের হাট ব্রিজ এলাকায়। আর জকসিন পূর্ব বাজারে রয়েছে নোয়াখালীর ঐতিহাসিক বগাদিয়ার যুদ্ধে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের কবর। তার মধ্যে বাগবাড়ী গণকবরের একটি সীমিত অংশ সরকারিভাবে সংরক্ষণ করা হলেও বাকিগুলোর সংরক্ষণ করা হয়নি। বাসুবাজারের গণকবর স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্যোগে সংরক্ষণ করা হলেও অন্যগুলোর অস্তিত্ব এখন বিলীন হওয়ার পথে। এরই মধ্যে দালাল বাজার খোয়াসাগর দীঘির পশ্চিম পাড়স্থ বেলতলা নামক স্থানের গণকবরের ওপর দিয়ে রাস্তা নির্মাণ করায় তা পুরোপুরি বিলুপ্ত হয়ে গেছে। জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার খোরশেদ আলম জানান, শহরের মাদাম ব্রিজসংলগ্ন গণকবরের ওপর একজন আইনজীবীসহ কয়েকজন দখলদার ঘর তুলে দখল করে নিলেও সাবেক পৌর মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা এম এ তাহের পৌর মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর ঘরগুলো উচ্ছেদ করে একটি প্রাচীর নির্মাণ করে দেন।

বর্তমানে রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ওই স্থানটি ঝাড়জঙ্গলে ভরে আছে। এ স্থানটিতে গণকবর থাকার কোনো চিহ্ন বা সাইনবোর্ড না থাকায় এ স্থানটি যে গণকবর তা জানতে পারছেন না কেউ। ফলে তার অস্তিত্ব এখন হুমকির মুখে। মোহাম্মদ আলী নামে স্থানীয় এক সমাজকর্মী জানান, চন্দ্রগঞ্জ থানাধীন মীরা বাড়ির সংখ্যালঘু ৭ মুক্তিকামী শহীদের সমাধি পারিবারিকভাবে সংরক্ষণ করা হলেও পরে বাড়ির পরবর্তী মালিকরা গত কয়েক বছর আগে পুরো বাড়িটি মিনহাজ গ্র“পের মালিক মরহুম কামাল উদ্দিনের কাছে বিক্রি করে দিয়ে দেশত্যাগ করেন। পরে মিনহাজ গ্র“পের শ্রমিকরা ৭টি সমাধিসৌধ (মঠ) ভেঙে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেয়। পরে ওই জমি তারা এইচআর গ্র“পের কাছে বিক্রি করে দেয়। এইচআর গ্র“প সেখানে একটি এ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ স্থাপন করে। একই ভাবে চন্দ্রগঞ্জ থানাধীন পশ্চিম লতিফপুর গ্রামের নুর মিয়া মুন্সী বাড়ির বাসিন্দা যুবলীগ নেতা আমীর হোসেন আমু জানান, চন্দ্রগঞ্জ বাজারসংলগ্ন তাদের বাড়িতে ১৯৭১ সালে ১৪ জুন পাক বাহিনী হামলা করে। এতে ১৫ জন নিহত হন। তাদের বাড়িতে নিহতদের ৯ জনকে কবর দেওয়া হয়। এই গণকবরগুলো সংরক্ষণের জন্য তিনি জেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন স্থানে দৌড়ঝাঁপ করেও কোনো সহযোগিতা পাননি। সম্প্রতি বাড়ির লোকজনের উদ্যোগে সীমানাপ্রাচীর তৈরি করে গণকবরটি সংরক্ষণ করা হয়েছে। অপর দিকে বগাদিয়ার যুদ্ধে নোয়াখালীর আরেক শহীদ মুক্তিযোদ্ধা সামছুকে চন্দ্রগঞ্জ
থানাধীন জকসিন পূর্ব বাজারে নোয়াখালী-লক্ষ্মীপুর সড়কের উত্তর পাশের স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা ও এলাকাবাসী সমাহিত করেন। শহীদ সামছুর গ্রামের বাড়ির
ঠিকানা নিশ্চিত করতে না পারায় এলাকাবাসী ও মুক্তিযোদ্ধারা এই উদ্যোগ নেন।
পরবর্তী সময়ে মুক্তিযোদ্ধারা এই শহীদ সমাধিটি প্রাচীর দ্বারা সংরক্ষণ করলেও গত ৩-৪ বছর ধরে রাতের আঁধারে আস্তে আস্তে এই সমাধির সীমানা প্রাচীর কে বা কারা ভেঙে ফেলে। এই সমাধির ওপর দুটি আমগাছ থাকায় সমাধিটি পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন করা যায়নি। তবে এ স্থানে কোনো সমাধি থাকার চিহ্ন এখন আর বোঝা না যাওয়ায় তার ও অস্তিত্ব এখন বিলুপ্তির পথে ।