চলতি মৌসুমে গাজীপুর জেলার শ্রীপুর উপজেলায় ব্যাপক পরিমাণ সরিষার আবাদ হয়েছে। সরিষা
চাষ প্রচুর লাভজনক হওয়ায় এবার অনেক কৃষক যোগ দিয়েছেন। এখন আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে
ভালো ফলন পাওয়ার আশা করছেন তারা।
শ্রীপুর উপজেলায় ২৮৯ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। সেখানে
আবাদ হয়েছে ২৯০ হেক্টর জমিতে। মাঠের পর মাঠ চোখ ধাঁধানো হলুদ ফুলের সমাহার। আর এ
ফুলের মৌ-মৌ ঘ্রাণ ও মৌমাছির গুনগুন শব্দের নয়নাভিরাম চিরচেনা সেই অপূর্ব নৈসর্গিক দৃশ্য।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের মাঠে এখন শুধু সরিষা ফুলের হলুদ রঙের
চোখ ধাঁধানো বর্ণিল সমারোহ। স্বল্প খরচ আর কম সময়ে সরিষা চাষ দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে
গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলায়। উন্নত জাতের সরিষা চাষ করে লাভবান হচ্ছেন চাষিরা। ফলে প্রতি
বছরই বাড়ছে সরিষা চাষ। প্রচলিত দেশি সরিষার চেয়ে বারি-১৪, বারি-১৭, বিনা-৯, বিনা -১১ ফলন
বেশি হওয়ায় চাষিরা আগ্রহী হচ্ছে বলে কৃষি বিভাগ জানিয়েছে। অনেকেই আমন ধান সংগ্রহের পর
জমি ফেলে না রেখে সরিষা চাষ করেছেন। এরপর আবার ধান রোপণ করবেন কৃষকেরা। তাতে করে
একই জমিতে বছরে তিনবার ফসল উৎপাদন হচ্ছে।
পৌরসভার উজিলাব গ্রামের কৃষক নাজিম উদ্দিন বলেন, বারি-১৭ গাছের উচ্চতা হয় দেড় থেকে ২
ফুটের মতো। আগে সরিষা গাছ বড় হলেও ফলন কম হতো। নতুন জাতের ছোট আকারের এ সরিষা
গাছের গোড়া থেকে মাথা পর্যন্ত ফল আসছে। বীজ বপনের ৭০ দিনের মধ্যেই খেত থেকে সরিষা
সংগ্রহ করা যায়। এবার প্রতি বিঘা জমি থেকে ৬-৭ মণ সরিষা উৎপাদনের আশা করছেন।
লাভজনক এবং সরিষা চাষের অনুকূল পরিবেশের কারণে এবার চলতি রবি মৌসুমে শ্রীপুরে
লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে সরিষার চাষ হয়েছে।
উপজেলার গাজীপুর ইউনিয়নের নিজ মাওনা গ্রামের রোমান বলেন, নিজের প্রয়োজন মেটাতে প্রতি
বছর ২ বিঘা জমিতে সরিষার চাষ করি। এবার আড়াই বিঘা জমিতে সরিষার চাষ করেছি। আশা করছি
অন্য বছরের তুলনায় এবার সরিষার ফলন ভালো হবে।
চাষি জামাল উদ্দিন জানান, প্রতিবিঘা জমিতে সরিষা চাষে খরচ হয় সর্বোচ্চ তিন হাজার টাকা।
প্রতি মণ সরিষা বিক্রি করা যায় ৩ হাজার থেকে ৩ হাজার ৫শ টাকা দরে। প্রতি বিঘাতে গড়ে সাত
মণ সরিষা উৎপাদন হলে বিঘা প্রতি ১৫-১৬ হাজার টাকা লাভ করা যায়। এছাড়া সরিষা আবাদে
যেমন সেচের প্রয়োজন হয় না। তাছাড়া কম সময়ে সরিষা আবাদ করা যায়। সরিষার বড় শত্রু জাব
পোকা। এবার জাব পোকার আক্রমাণ দেখা যাচ্ছে না।
শ্রীপুর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কৃষি কর্মকর্তা সুমাইয়া সুলতানা বন্যা বলেন,
শ্রীপুরের কৃষকরা সরিষা চাষাবাদে প্রথম দিকে তেমন আগ্রহ দেখা যায়নি। তবে তারা যখন
দেখলেন। স্বল্প LiP দিয়ে অনেক বেশি ফসল উৎপাদন করা যায়। এর পর থেকেই তারা সরিষা
চাষাবাদের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠেছে। উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নের ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক
চাষিদের মাঝে উন্নত জাতের বীজ বিতরণ ও কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শ অব্যাহত থাকবে। কৃষি
কর্মকর্তা আরও বলেন, দেশের কৃষকদের পাশাপাশি এখন যুবকরাও নতুন নতুন ফসল চাষাবাদের
প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠেছে। এটা কৃষি শিল্প সম্প্রসারণকে আরও সমৃদ্ধ করবে।এছাড়া জমিতে
সরিষার আবাদ করলে ওই জমিতে সরিষার পাতা পড়ে জমির খাদ্য চাহিদা অনেকাংশে মিটিয়ে থাকে।


























