এক ঘণ্টার কথা বলা হলেও প্রায় তিন ঘণ্টা মন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনার সময় নেন বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) ও বাংলাদেশ হকি ফেডারেশনের (বাহফে) কর্তারা। আগের দিন আট ফেডারেশনের সঙ্গে বসেও বড় অঙ্কের হিসাব পাননি মন্ত্রী। নিজে যা ভেবে এসেছিলেন তার কিয়দংশও মিলেনি। পাপন নিজেই সে কথা বলেছিলেন। তবে তা পেলেন গতকাল বাফুফে ও বাহফের কাছ থেকে। তারাও বুঝেশুনেই প্রস্তাব রেখেছেন। যদিও ফুটবল-হকির আর্থিক সাহায্যের পরিমাণটি বেশ স্বাভাবিকই দেখছেন নতুন মন্ত্রী। তার কথায়, ‘ফুটবলের ব্যাপ্তি অত্যন্ত বেশি। দেশি-বিদেশে খেলায় অংশগ্রহণে নানা ব্যয় হয়। ফলে তাদের বাজেটের চাহিদাও বেশি থাকবে স্বাভাবিক। আর তৃণমূল থেকে হকিকে উঠিয়ে আনতে বাজেটটা বড় হবেই।’
অতীতে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনকে (বাফুফে) সরকার ২০ কোটি টাকা সিড (স্থায়ী আমানত) মানি দিয়েছিল। তবে অভিযোগ রয়েছে বাফুফে সেই অর্থ সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবহার করেনি। উপরন্তু গত অর্থবছরে সরকারের কাছে আরও ৪৮০ কোটি টাকা চেয়েছিল বাফুফে। যদিও অর্থ মন্ত্রণালয়ে বাফুফের সেই প্রকল্প বাতিল করেছিল সাময়িক সময়ের জন্য। গতকাল বুধবার যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ে মন্ত্রী নাজমুল হাসান পাপনের সঙ্গে বসেছিলেন বাফুফের কর্তারা।
সেখানে সেই প্রকল্পের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে কি না এমন প্রশ্নের উত্তরে বাফুফে সহ-সভাপতি কাজী নাবিল আহমেদ বলেন, ‘আমরা আগের প্রকল্প সরাসরি দেইনি মন্ত্রীকে, তবে সেই প্রকল্পের অনেক বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি।’ প্রকল্পের অর্থ পেলে সঠিকভাবে ব্যয় হবে কি না এমন প্রশ্নের উত্তরে বাফুফের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও ফিন্যান্স কমিটির চেয়ারম্যান আবদুস সালাম মুর্শেদী এমপি বলেন, ‘আমরা সরকারের নির্দেশনা অনুসরণ করব।’
বাফুফে কর্মকর্তারা নতুন মন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতে স্টেডিয়াম সংকটের পাশাপাশি সিডমানির বিষয়টিও উত্থাপন করেছেন। স্থায়ী আমানতের সুদ দিয়ে ফুটবল ফেডারেশন বিভিন্ন কর্মকান্ড পরিচালনা করবে। তবে বাফুফের সিডমানি নিয়ে এখনই ভাবছেন না ক্রীড়ামন্ত্রী, ‘এখনই ১০০ কোটি টাকার সিডমানি নিয়ে ভাবছি না। এটা নিয়ে মন্ত্রণালয় ও সরকারের সঙ্গে বসতে হবে। তাদের রাজি করানো যাবে কি না জানি না।’
ক্রীড়ামন্ত্রী সিডমানির চেয়ে ফুটবলের বর্তমান সংকট নিরসনকে বেশি প্রাধান্য দিয়েছেন, ‘আপাতত সামনে যে খেলাগুলো রয়েছে সেগুলো স্পন্সর করতে হবে। অবকাঠামো সমস্যা যা রয়েছে, সেগুলো সমাধান করার দিকেই নজর বেশি দিতে হবে।’
জাহিদ আহসান রাসেল যুব ও ক্রীড়ামন্ত্রী থাকা অবস্থায় ফুটবল ফেডারেশনকে ২০ কোটি টাকা সিডমানি দিয়েছিলেন। শর্ত ছিল স্থায়ী আমানতের সুদ দিয়ে বাফুফে চলবে। সেই টাকা বাফুফে রাখতে পারেনি বলে অভিযোগ ছিল। এ প্রসঙ্গে নতুন মন্ত্রী বলেন, ‘সিডমানির ব্যাপারটা আমি যতটুকু জানি, পুরোপুরি সঠিক কি না জানি না। কোভিডের সময় নানা সমস্যায় তারা সেই টাকা খরচ করে ফেলেছে হয়তো। সিডমানি নেই। ’
বাফুফে আগের সিডমানির নির্দেশনা সঠিকভাবে পালন করতে পারেনি। নতুন অর্থ বরাদ্দ দিলে পারবে কি না সেটাও বড় সংশয়। এই বিষয়ে নতুন ক্রীড়া মন্ত্রী আগের দিনের বক্তব্যটাই গতকাল আবার দিয়েছেন, ‘আগে কি হয়েছে জানি না, শুনতেও চাই না। এখন থেকে যে সাপোর্ট দেওয়া হবে এর সম্পূর্ণ তদারকিতে থাকবে। যারা কথা শুনবে না, তাদের বলে দেওয়া হবে আমাদের পক্ষ থেকে আর সাপোর্টও পাবে না।’
কমলাপুর স্টেডিয়ামের বিষয়ে মন্ত্রীর কথা, ‘কমলাপুর স্টেডিয়াম উন্নয়নের বিষয়টিও আমরা ভাবছি। যদি আরো উন্নত করা যায়, তাহলে সেখানেও তারা অনেক টুর্নামেন্ট বা নানাভাবে ব্যবহার করতে পারে।’ অন্যদিকে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম নিয়ে পাপন বলেন, ‘বাফুফের মাঠ সংকট প্রকট। বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম তাদের দরকার। ৩১ ডিসেম্বর একটা ডেডলাইন রয়েছে। এটি যেন আর বিলম্ব না হয় সেদিকে আমাদের সচেষ্ট থাকতে হবে। বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের প্রকৃত চিত্র সশরীরে দেখতে চাই। দেখে এসে পর্যালোচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে পারব।’
ফলে সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে নির্ধারিত থাকলেও এই স্টেডিয়ামে হচ্ছে না সাবিনাদের সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের খেলা। সেক্ষেত্রে কিংস অ্যারেনা বা অন্য কোনো ভেন্যু দেখতে হবে বাফুফেকে। নাজমুল হাসান পাপন আগামী সপ্তাহের শুরুতে এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের (এসিসি) সভায় যাবেন। সেই সভা থেকে ফিরবেন ৩ ফেব্রুয়ারি। এর পরপরই বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম পরিদর্শন করবেন। নানা সীমাবদ্ধতার মধ্যেও ফুটবল ফেডারেশন নতুন ক্রীড়ামন্ত্রীকে এশিয়া কাপের স্বপ্ন দেখিয়েছে। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে কী কী প্রয়োজন সেটা চেয়েছেন ক্রীড়ামন্ত্রী, ‘তারা (বাফুফে) বলেছে কয়েক বছরের (৩ বছর) মধ্যে এশিয়া কাপ খেলা সম্ভব। এজন্য কি প্রয়োজন সেটার বিস্তারিত চাওয়া হয়েছে। তাদের যা চাহিদা, আমরা কতটুকু পূরণ করতে পারি, দেখব।’
পাপনের সঙ্গে সাক্ষাতের পর বাফুফের সিনিয়র সহসভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদী নিজেদের চাওয়া-পাওয়া নিয়ে বলেছেন, ‘নতুন মন্ত্রী আমাদের ক্রীড়াঙ্গনের মানুষ। সুন্দর আলোচনা হয়েছে। সমস্যাগুলো শুনেছেন। এই মুহূর্তে মূল সমস্যা বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামের সংস্কার কাজ, এটা যত দ্রুত শেষ করা যায়। এখানে প্রিমিয়ার লিগসহ অনেক খেলা হয়ে থাকে। অনেক দিন হলো সেখানে খেলা হচ্ছে না। এছাড়া শুধু ফুটবলের জন্য আলাদা স্টেডিয়াম চেয়েছি। যেসব জেলায় খেলা হয়, সেখানে ডিএফএ যেন মাঠ পায়। লিগ যেন চালাতে পারে। মন্ত্রী মহোদয় ব্যবস্থা নেবেন বলে জানিয়েছেন।’
নতুন ক্রীড়ামন্ত্রী এর আগেও হকি ফেডারেশনকে আর্থিক সাহায্য করেছেন। এক কোটি টাকা দিয়েছিলেন বিদেশি কোচের জন্য। সে টাকার কোনো হিসাব দেওয়া হয়েছে কি না সেটি অনেকেই জানেন না। অনেকটা ফুটবল ফেডারেশনের মতো। সে যাই হোক, বাহফে সিনিয়র সহসভাপতি আব্দুর রশিদ সিকদার জানান, নতুন ক্রীড়ামন্ত্রীর সঙ্গে আমাদের ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। ইনডোর হকি কিংবা ফাইভ এ সাইড হকিতে আমাদের বিশ্বকাপ খেলার সম্ভাবনা আছে বলে জানিয়েছি। তাছাড়া তৃণমূলে হকির প্রসারে টার্ফের কথা বলেছি। উনি আমাদের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনেছেন এবং আশ^স্ত করেছেন।’
বাহফের পক্ষ থেকে মন্ত্রীকে জানানো হয়েছে আউটডোর হকিতে না হলেও খুব দ্রুত ফাইভ এ সাইড ইনডোর হকিতে তাদের বিশ্বকাপ খেলা সম্ভব। নাজমুল হাসান সেটিকে স্বাগত জানিয়েছেন। ইনডোর স্টেডিয়ামের দাবিও ছিল। মন্ত্রী জানিয়েছেন তিনি এ ব্যাপারেও ইতিবাচক। তাছাড়া হকি ঢাকার বাইরে থেকে খেলোয়াড় তুলে আনতে ফরিদপুর, রাজশাহী ও চট্টগ্রামে হকি টার্ফ চেয়েছেন, নাজমুলও মনে করেছেন এটা প্রয়োজন। ক্রীড়ামন্ত্রীর কথায়, ‘এটি আসলেই প্রয়োজন। হকির অবকাঠামো ছাড়া খেলোয়াড় উঠে আসবে কোথা থেকে। আমরা তাই ওদের চাহিদা পূরণের চেষ্টা করব।’
স/মিফ


























