বেলা তখন শেষের দিকে। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যার পথ ধরেছে সূর্য। যখন রিসোর্টে পৌঁছলাম সূর্যের সোনালী আলোয় পুরো এলাকা বর্ণিল হয়ে উঠলো। গেইটের ভেতরে প্রবেশ করতেই মঈন ভাই নির্মল একটা হাসি ও দারুণ ভঙ্গিতে মোলাকাত করলেন। কুশলাদি বিনিময়ের পর আমরা নানান প্রসঙ্গ তুলে দিগন্ত জোড়া সবুজের বুকে পা বাড়ালাম।

মধুরিমা রিসোর্টের সত্বাধিকারী মঈন ভাইয়ের সাথে প্রথম দেখা হলো। মধুরিমা রিসোর্ট হলো মঈন ভাইয়ের শখ ও স্বপ্নের জায়গা। থাকেন অষ্ট্রেলিয়া। প্রবাস জীবনে থেকেও এই একটা স্বপ্নের লালন করছেন দিনের পর দিন। দুনিয়ার এতো এতো জঞ্জালের ভিড়ে নিখাদ প্রকৃতি ও দেশকে ভালোবেসেই বুকে ধারণ করে আছেন এই মধুরিমা। গ্রামের প্রকৃতির মতো নির্মোহ জীবনের টানে পাহাড়িয়া অঞ্চলে গড়ে তুলছেন হিলসডেল মাল্টি ফার্ম ও মধুরিমা রিসোর্ট নামের স্বপ্ন ও নিজের অবসর যাপন কিংবা জীবনের শেষ ঠিকানা।
সবুজের দিকে পা বাড়াতেই দেখতে পাই নানান প্রজাতির ফুলের গাছ। যতোই সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি নিজের মুগ্ধতা ছড়িয়ে যেন স্বাগত জানাচ্ছে মধুরিমা। কোন কোন গাছে ফুটে আছে সুগন্ধি ফুল কিংবা কোনটার নেই সৌরভ। আমরা এই ফুলের সৌরভ ও প্রকৃতির হিমেল বাতাসে গিয়ে দাঁড়ালাম ঠিক মাঝামাঝি জায়গায় যেখান থেকে রিসোর্টের রাস্তা মোড় নেয় চতুর্দিকে। এখান থেকেই দেখা মিলবে পূর্বাকাশে সূর্যের হেসে উঠা কিংবা শেষ দিগন্তে অস্ত যাওয়ার দৃশ্য। মিলবে মন ও মেঘের মিতালি। আশ্বিনের প্রায় শেষ দিকে শীতের হালকা বাতাসে হিমভাব ঘিরে ধরেছে প্রকৃতিতে। এ যেন মেঘে মেঘে ভেসে যাওয়া অপূর্ব এক বিকেল।

রিসোর্টের মাঝখানে এসে দাঁড়াতেই মনে হলো যেন একখণ্ড নিউজিল্যান্ড ভেসে উঠলো আমার চোখে। স্রষ্টার অপার সুন্দরে অপলক তাকিয়ে থাকা। আমি এমন মোহময় প্রকৃতির মায়ায় নিজেকে ভ্রমণ করাতে লাগলাম চোখ ও মনের গভীরে। পাশ থেকে মঈন ভাই বলে উঠলেন……এই হলো আমের বাগান। ঘোর ভেঙে উনার কথায় ফিরে তাকালাম। পাহাড়ের এই বিস্তীর্ণ এলাকায় কয়েক প্রজাতির সারি সারি আমের বাগান। পূর্ব পাশেই পেপে, কলা ও বিভিন্ন ধরনের শাক- সবজির চাষে গড়ে তুলেছেন সবুজের সমারোহ।
আমরা হাঁটতে হাঁটতে দেখলাম রিসোর্টকে ঘিরে চলছে সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ। রিসোর্টের নানান প্রসঙ্গে আলাপে আমরা আগালাম। দেখালেন সদ্য লাগানো বিদেশি ফুলের বাগান, নির্মিত গোল চত্বর। সম্প্রতি একঝাঁক হরিণের সাথে যুক্ত হয়েছে ঘোড়া, ময়ূর ও তিতির পাখি। দেশি-বিদেশি বাহারি ফুল ও ফলের গাছ, লাগানো হয়েছে প্রায় পঁচাত্তর রকমের গোলাপ ও বিদেশি ফুলের গাছ। এছাড়াও আছে বিভিন্ন রকমের দোলনাসহ দৃষ্টিনন্দন বৈঠকখানা। চারপাশের নয়নাভিরাম সৌন্দর্য দেখার জন্য সারি সারি ফুলগাছে তৈরি করা হয়েছে প্রশস্ত রাস্তা। কোথাও বা গোল চত্বর ঘিরে বৈঠকখানা। ধীরে ধীরে পাহাড়িয়া লেক ও নান্দনিক কটেজের সৌন্দর্যে মুগ্ধতা ছড়াবে পর্যটকদের মন ও মননে। সূর্যের আলো ম্লান হয়ে আসতেই আমরা রিসোর্টের শেষ প্রান্তে এলাম। হাঁটার আলাপেই মঈন ভাই জুড়লেন মধুরিমা নিয়ে নানান গল্প। জানালেন ভিন্ন মাত্রার পরিকল্পনার কথা।

এতো এতো মুগ্ধতা ছড়িয়ে আছে এই মধুরিমায় তা ছিলো অজানা অধ্যায়ের পাতায়। চারদিকে মন মাতানো নৈসর্গিক সৌন্দর্য আর নিরিবিলি পরিবেশ। হঠাৎ চোখে পড়লো পাহাড়ের ভ্যালি থেকে নেমে আসা বনমোরগের ঝাঁক কিংবা চোখের অদূরে সবুজ ঘাসে ঘাসে উড়ে যাওয়া ঘুঘু, কোয়েল ও নামনাজানা পাখিদের দল। শেষ বেলায় পাখিদের ছোটাছুটি আপনাকে নিয়ে যাবে স্মৃতির শৈশব কিংবা দুরন্ত কৈশরে। আনমনা হাঁটতেই চোখে পড়বে সবুজ ঘাসে চড়ে বেড়ানো পাহাড়িয়া বনমোরগের দল। হঠাৎ লাফিয়ে উঠা খরগোশের ছানা। এমন দৃশ্য আপনাকে আনন্দ দিবে। এমন মন ভোলানো প্রকৃতি ও বুনোফুলের ছোঁয়ায়, নির্মোহ ভালোবাসা নিয়ে পাখিদের কোলাহলে ইচ্ছে করবে একজীবন যেন এখানেই পার দেয়ার।
রিসোর্টের শেষ প্রান্ত থেকে ফিরতে একেবারেই সন্ধ্যা নেমে এলো। দূর থেকে দেখা গেলো খামারের সামনে বাতি জ্বলে উঠলো। আমরা হালকা বাতির আলো ফলো করে সামনের দিকে এগিয়ে গেলাম। ততক্ষণে বাইরে চাঁদের আলোয় মধুরিমা হয়ে উঠলো পূর্ণ রূপবতী। এই রাতের সৌন্দর্যে মধুরিমার মায়াবী রুপ দেখেই ফিরলাম।

যেভাবে যাবেন– ঢাকা থেকে চট্টগ্রমামগামী যে কোন বাসে যাওয়া যাবে। চট্টগ্রামের প্রবেশমুখেই বারৈয়ারহাট পৌরসভায় নেমে সিএনজি যোগে সহজেই যেতে পারবেন এই মুধরিমা রিসোর্টে।


























