রপ্তানিকারকদের সহায়তার জন্য গঠিত ১০ হাজার কোটি টাকার রপ্তানি সহায়ক প্রাক অর্থায়ন তহবিল (ইএফপিএফ) থেকে ঋণ বিতরণে সব নীতিমালা খুব কঠোরভাবে অনুসরণ করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এজন্য বিতরণকৃত ঋণের লভ্যাংশসহ ফেরত আসার পরিমাণও ভালো। বাংলাদেশ ব্যাংকের সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
২০২২ সালের শেষের দিকে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) পরামর্শ মেনে আন্তর্জাতিক মানদ-ের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের হিসাব করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ জন্য রপ্তানি উন্নয়ন ফান্ডে (ইডিএফ) জোগান দেওয়া ৭ বিলিয়ন ডলারসহ মোট ৮ দশমিক ৪০ বিলিয়ন ডলার রিজার্ভে দেখাতে পারছিল না। এ কারণে তখন ইডিএফের আকার কমিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এক্ষেত্রে নতুন শঙ্কা দেখা দিয়েছিল রপ্তানি নিয়ে। সেজন্য ২০২৩ সালের প্রথমে রপ্তানিকারকদের সহায়তা দিতে ইডিএফের বিকল্প হিসেবে ১০ হাজার কোটি টাকার রপ্তানি সহায়ক প্রাক অর্থায়ন তহবিল (ইএফপিএফ) নামে একটি ফান্ড গঠন করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। অবশ্য ইডিএফ থেকে ডলারে ঋণ মিললেও ইএফপিএফ থেকে নিতে হয় টাকায়।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, এখন পর্যন্ত ৫১টি ব্যাংক ইএফপিএফ থেকে ঋণ নিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তি করেছে। এগুলোর মধ্যে ১৩টি ব্যাংক ঋণ কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেছে। ব্যাংকগুলো হলো ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএসি, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, কৃষি ব্যাংক, এনসিসি ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, যমুনা ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক, মার্কেন্টাইল ব্যাংক ও ইউনিয়ন ব্যাংক।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সূত্রটি বলছে, গত এক বছরে এই ফান্ড থেকে ১৩টি ব্যাংকের মাধ্যমে ৬ হাজার কোটি টাকা রপ্তানিকারকদের মধ্যে ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। এ সময়ে আদায় হয়েছে ২ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। আদায় হওয়া টাকার মূল অংশটা আবার ইএফপিএফ তহবিলে যোগ হচ্ছে আর লভ্যাংশ চলে যাচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাবে।
জানা গেছে, এই ঋণের মেয়াদ ১৮০ দিন। তবে রপ্তানি বিল যথাসময়ে ফেরত না আনতে পারলে একবার ৯০ দিন মেয়াদ বাড়ানো যাবে। স্থানীয় রপ্তানিমুখী শিল্পের উৎপাদনের কাঁচামাল আমদানি বা স্থানীয়ভাবে সংগ্রহের বিপরীতে এখান থেকে প্রাক-অর্থায়ন সুবিধা নেওয়া যাবে। কোনো ঋণখেলাপি কিংবা যথাসময়ে রপ্তানি বিল ফেরত না আনা প্রতিষ্ঠান ঋণ পাবে না। অবশ্য নিয়ন্ত্রণবহির্ভূত কারণে রপ্তানি মূল্য প্রত্যাবাসন করতে না পারলে আরেকবার ঋণ পাবেন।
আমদানি-রপ্তানির আড়ালে বিদেশে অর্থপাচারের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গঠন করা ১০ হাজার কোটি টাকার রপ্তানি সহায়তা ফান্ড থেকে ঋণ নিয়ে ব্যবসায়ীরা ওই টাকার সঠিক ব্যবহার করবে কি না এমন শঙ্কাও ছিল বিভিন্ন মহলে। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এখানে অনিয়ম করার কোনো সুযোগ নেই। এই ঋণে সময় বেঁধে দেয়া হয়। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই এই টাকা ফেরত দিতে হয়।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা দৈনিক সবুজ বাংলাকে বলেন, রপ্তানি সহায়তা ফান্ডের ঋণ বিতরণে শতভাগ স্বচ্ছতা বজায় রাখা হচ্ছে। এখানে নীতিমালা কঠোরভাবে অনুসরণ করা হচ্ছে। এখানে অনিয়ম করার কোনো সুযোগ নেই। ১৮০ দিনের মধ্যে রপ্তানি বিল ফেরত আনতে হবে। যুক্তিসংগত কোনো কারণে না আনতে পারলে একবার সময় বৃদ্ধি করা হয়। এখানে বার বার সময় বৃদ্ধির কোনো সুযোগ নেই। আর যারা এ নিয়ম পালনে ব্যর্থ হবে তারা পরবর্তীকালে আর ঋণ পাবে না।
ওই কর্মকর্তা বলেন, যারা ইডিএফ থেকে সুবিধা নিচ্ছেন তারা এই ফান্ড থেকে সুবিধা পাবেন না। ইডিএফ থেকে যারা সুবিধা পাচ্ছে না শুধু তারাই ইএফপিএফ তহবিল থেকে টাকা নিতে পারবে। এখানে দিন দিন গ্রাহক সংখ্যা বাড়ছে। অনলাইন সিস্টেম করা হচ্ছে। সেটা হলে লেনদেন আরও সহজে হবে। তখন রপ্তানিকারকরা এখান থেকে অনলাইনে আবেদন করতে পারবেন। গ্রাহক সংখ্যা তখন আরও বাড়বে।
স/মিফা


























