যে জায়গাতে আবহাওয়ার তাপমাত্রা ১৩ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের উপরে এবং ৩৮ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের নিচে থাকে সেখানে কমলালেবু চাষ করার জন্য উপযুক্ত স্থান। তবে বেলে এবং দোঁআশ মাটিতে কমলালেবু চাষ করা ভালো।
কমলা চাষ উপযোগী অঞ্চল : আমাদের দেশে বৃহত্তর সিলেট, চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম ও পঞ্চগড় জেলা এ ফল চাষ উপযোগী। আমাদের দেশে কমলালেবু চাষের যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া বর্তমানে সমতলেও বর্তমানে অনেকে কমলালেবু চাষ করে ব্যাপক সফলতা পেয়েছেন।
বংশবিস্তার : বীজ থেকে জাইগোটিক চারা দুর্বল এক্ষেত্রে মাতৃগাছের গুণাগুণ বজায় থাকে না এবং ফল ধরতে প্রায় ৪-৫ বছর লাগে। গাছে ফল ধরতে ৪-৫ বছর লাগে।
অঙ্গজ : ভিনিয়ার/ক্লেফট গ্রাফটিং এবং টি-বাডিং প্রক্রিয়ায় উৎপাদিত চারা থেকে ২-৩ বছরের মধ্যেই ফল আসে। এ পদ্ধতি বেশ জনপ্রিয়।
চারা রোপণের উপযুক্ত সময় : আমাদের দেশের আবহাওয়ায় আপনি বছরের যে কোনো সময়েই কমলা লাগাতে পারেন। বর্ষার শুরুতে অর্থাৎ মে-জুন মাসে চারা রোপণ করতে হয়। উল্লেখ্য যে, সেচের সুবিধা থাকলে যে কোনো সময় কমলালেবুর চারা রোপণ করা যায়।
মাদা তৈরি ও রোপণ পদ্ধতি : কমলালেবুর চারা রোপণের জন্য সমতল জমিতে বর্গাকার, আয়তকার এবং পাহাড়ি জমিতে কন্টুর পদ্ধতিতে মাদা তৈরি করতে হবে। মাদার গর্তের আকার ৬০দ্ধ৬০দ্ধ৬০ সেন্টিমিটার এবং চারা থেকে চারা ৪ মিটার দ্ধ ৪ মিটার দূরত্বে রোপণ করতে হবে।
সার ব্যবস্থাপনা
মাদাপ্রতি সার সুপারিশমালা : গোবর ১০ কেজি, ইউরিয়া ২০০ গ্রাম, টিএসপি ২০০ গ্রাম, এমওপি ২০০ গ্রাম, চুন ৫০০ গ্রাম দিতে হবে।
উল্লেখ্য যে, চারা রোপণের ১৫ থেকে ২০ দিন আগে সার প্রয়োগ করতে হবে।
সেচ ব্যবস্থাপনা : খরা মৌসুমে বয়স্ক গাছে ২ থেকে ৩টি সেচ দিতে হবে। গাছে ফল পরিপক্ব হওয়ার সময় সেচ দিলে ফল আকারে বড় ও রসযুক্ত হয়।
সতকর্তা : গাছের গোড়ায় পানি জমলে মাটিবাহিত রোগ হতে পারে। তাই পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে হবে।
পরিচর্যা : আগাছা যে কোনো ফসল উৎপাদনে একটি বিরাট অন্তরায়, তাই আগাছা পরিষ্কার রাখতে হবে। কমলার চারা রোপণ করা হলে এর চার পাশের মাটিকে উঁচু করে দিতে হবে যেন গাছের গোড়ায় পানি না জমে। চারা লাগানো শেষ হলে গাছের গোড়ার মাটি চেপে দিতে হবে। গাছ লাগানোর পর ফল ধরার আগ পর্যন্ত ধীরে ধীরে ডাল ছেঁটে গাছকে নির্দিষ্ট আকারে রাখতে হবে। ডাল ছাঁটাইয়ের পর কাটা অংশে বর্দোপেস্ট দিতে হবে। এজন্য দুটি পাত্রে ৭০ গ্রাম তুঁতে ও ১৪০ গ্রাম চুন আলাদাভাবে মিশ্রণ করে এক লিটার পানির সঙ্গে মিশিয়ে বর্দোপেস্ট তৈরি করতে হবে।
ফল সংগ্রহ : কমলা জনপ্রিয় এক প্রকারের লেবু জাতীয় রসালো ফল। এ ফল পরিপক্ব হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রঙ বদলাতে শুরু করে। গাছে কমলা ভালোভাবে পাকার পর ফল সংগ্রহ করলে মিষ্টি হয়।
ফলন : একেকটি গাছে প্রচুর পরিমাণে কমলা ধরে। একটি পূর্ণ বয়স্ক কমলা গাছ থেকে বছরে গড়ে প্রায় ৩০০-৪০০টি কমলা পাওয়া যায়। উল্লেখ্য যে, বেশি বয়স্ক কমলা গাছ বছরে এক হাজার থেকে দেড় হাজার পর্যন্ত ফল দিয়ে থাকে। একটি কমলা গাছ সাধারণত ৫০ থেকে ৭০ বছর পর্যন্ত ফল দিয়ে থাকে।
সম্ভাব্য আয় : একটি বাগান থেকে অনেক টাকা আয় করা যায়। কমলালেবু চাষ করে প্রতি মৌসুমে ৪০ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা আয় করা সম্ভব।
আপনিও শুরু করতে পারেন। আর নিজের সচ্ছলতার পাশাপাশি দেশের অর্থনীতিতে রাখতে পারেন অবদান।


























