সৌদিতে ১০ বিলিয়নসহ পুরো গালফ দেশগুলোতে ৫০ বিলিয়ন গাছ লাগানোর উদ্যোগে বাংলাদেশ অংশ নেবে। এ বছরের দ্বিতীয়ার্ধে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান বাংলাদেশ সফরে আসার কথা রয়েছে বলেও জানান মন্ত্রী।
গতকাল সোমবার সম্প্রতি বিদেশ সফর শেষে দেশে ফিরে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী একথা জানান। তিনি বলেন, বলেন, সৌদি আরবের জেদ্দায় ৫ মার্চ গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ওআইসি পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বিশেষ বৈঠকে বাংলাদেশের সুদৃঢ় অবস্থান ও ইসরায়েলকে বয়কট করার প্রস্তাব অত্যন্ত প্রশংসিত হয়েছে।
পাশাপাশি সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফয়সাল বিন ফারহান আল সৌদ এবং ওআইসি মহাসচিব হিসেন ব্রাহিম তার সঙ্গে সাক্ষাত অত্যন্ত ফলপ্রসূ ছিলো উল্লেখ করে হাছান বলেন, সৌদি আরবে প্রায় ৩০ লাখ বাংলাদেশি প্রবাসী রয়েছে এবং সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশের জন্য অগ্রাধিকার রয়েছে বলে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার সৌদি আরবের সাথে পূর্বের শুধু জনশক্তি রপ্তানির সম্পর্ককে বহুমাত্রিক সম্পর্কে রূপ দিয়েছে।
এদিকে, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, রমজানে পণ্যমূল্য স্থিতিশীল রাখতে সরকার যেমন অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে বদ্ধপরিকর তেমনি জনগণকেও সোচ্চার হওয়ার আহবান জানাই।
গতকাল সোমবার দুপুরে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মিলনায়তনে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়কালে এক সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী এ কথা বলেন। তিনি বলেন, পণ্যের যথেষ্ঠ সরবরাহ থাকা সত্ত্বেও এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী অবৈধভাবে পণ্য মজুত করে ও অতিরিক্ত মুনাফা লাভের জন্য কৃত্রিম উপায়ে দাম বাড়ায় যা অত্যন্ত দু:খজনক। সারা বিশ্বে উৎসব পার্বণে দ্রব্যমূল্য কমে আর আমাদের দেশে অসাধু ব্যবসায়ীরা দাম বেশি রাখে। সরকার অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বদ্ধপরিকর এবং এ অভিযান চলমান।
অসাধু ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে জনগণ যখন মোর্চা গড়ে তুলবে তখন তারা কোথায় যাবে প্রশ্ন রাখেন হাছান মাহমুদ। ওআইসি ও এডিএফে যোগদান এবং ইউএই সফরে আলোকপাত সোমবার দুপুরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মিলনায়তনে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়ের আগে পররাষ্ট্রমন্ত্রী তুরস্ক, সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে টানা সফর নিয়ে ব্রিফ করেন। ড. হাছান জানান, পয়লা মার্চ থেকে তুরস্কে তিনদিনের আনাতালিয়া ডিপ্লোম্যাটিক ফোরামে ১৯ দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানসহ ৭৩ টি দেশের পররাষ্ট্র ও সংশ্লিষ্ট বিষয়ক মন্ত্রীদের সম্মেলনে যোগদানটি পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর বিভিন্ন দেশের সরকারপ্রধান ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সাথে সামনাসামনি পরিচিত হতে অত্যন্ত সহায়ক ছিলো।
আনাতালিয়া ফোরামের সাইডলাইনে তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদা ও সুইজারল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইগন্যাসিও ক্যাসিসের সঙ্গে বৈঠকে দ্বিপাক্ষিক বিভিন্ন ক্ষেত্রসহ রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ও জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় সহযোগিতা নিয়ে আলোচনার কথা জানান হাছান মাহমুদ। ৮ ও ৯ মার্চ সংযুক্ত আরব আমিরাত সফরে সে দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ আবদুল্লাহ বিন জায়েদ আল নাহিয়ান এবং মানবসম্পদ ও এমিরেটাইজেশন বিষয়ক মন্ত্রী ড. আব্দুল রহমান আল আওয়ারের সাথে বৈঠকের ওপরও আলোকপাত করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।
দু’দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে ইউএই’র রাষ্ট্রপতিকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমন্ত্রণপত্রটি পররাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ আবদুল্লাহকে হস্তান্তরের কথা জানিয়ে তার সাথে জ্বালানি নিরাপত্তা, খাদ্য নিরাপত্তা, দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বৃদ্ধিসহ দেশে ইউএই’র বিনিয়োগ বৃদ্ধিকল্পে মাতারবাড়ি এক্সক্লুসিভ ইকনোমিক জোন, বন্দর ও লজিস্টিক ব্যবস্থাপনা, চট্টগ্রামে রাঙ্গুনিয়ায় আধুনিক ইউএই’র প্রতিষ্ঠাতা শেখ জায়েদ ইবনে সুলতান আল নাহিয়ানকে উপহার দেওয়া ১১০ একর জমিতে হাসপাতাল নির্মাণে ইউএই’র বিনিয়োগ প্রস্তাব নিয়ে আলোচনার কথা উল্লেখ করেন হাছান। ইউএই’র মানবসম্পদমন্ত্রীর সাথে বৈঠকে বাংলাদেশি স্নাতক নার্স, কেয়ারগিভার, স্বাস্থ্যসেবা টেকনিশিয়ান, কৃষিবিদ, কৃষক ও বিভিন্ন পেশাজীবীসহ ইউএই’র সব আমিরাতে সব ট্রেডে আরও বাংলাদেশি নাগরিকদের নিয়োগ, ভিসা পদ্ধতি সহজ করা এবং এক নিয়োগকর্তার কাছ থেকে অন্য নিয়োগকর্তার কাছে ওয়ার্ক পারমিট স্থানান্তর সহজীকরণ নিয়ে আন্তরিক আলোচনা হয়েছে বলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
ইউরেশিয়ান ইকনোমিক ইউনিয়নের পর্যবেক্ষক হিসেবে বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তি এবং ইউরেশিয়ান ইকনোমিক কমিশনের সাথে বাংলাদেশের ফ্রি ট্রেড এগ্রিমেন্ট স্বাক্ষরে বেলারুশের সহযোগিতা ও বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অঞ্চল ও হাইটেক পার্কগুলোতে আরও বিনিয়োগ কামনা করেন মন্ত্রী। উভয় নেতা এ সময় রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনসহ বিভিন্ন বহুপক্ষীয় ফোরামে সহযোগিতা অব্যাহত রাখার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
এ দিন বিকেলে মন্ত্রণালয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতে আসেন ঢাকায় নিযুক্ত শ্রীলংকার হাইকমিশনার ধর্মপালা ভীরাক্কোডি সাক্ষাতকালে শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে আনন্দ প্রকাশ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, শ্রীলঙ্কার সংকটকালে বাংলাদেশ সবসময় পাশে আছে। উভয় দেশ বাণিজ্য, কৃষি, মৎস্য, আইসিটি এবং আতিথেয়তা খাত, নৌপরিবহন এবং সামুদ্রিক যোগাযোগ এবং জনগণের মধ্যে যোগাযোগের ক্ষেত্রে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা আরও জোরদার করার ওপর গুরুত্ব দেন ড. হাছান।
বৈঠকে দু’দেশের অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি (পিটিএ) স্বাক্ষর, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অঞ্চল ও হাইটেক পার্কগুলোতে আরও বিনিয়োগ, রোহিঙ্গাদের দ্রুত প্রত্যাবাসন ও সার্ক, বিমসটেক, ইন্ডিয়ান ওশান রিমের মতো আঞ্চলিক সংস্থাগুলিতে একসঙ্গে কাজের নানা ক্ষেত্র নিয়ে আলোচনা স্থান পায়।


























