০৩:৩৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সিএএ কার্যকরের বিরুদ্ধে ভারতে বিক্ষোভ, সংঘর্ষ

মুসলমানদের উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই : স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

 

সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় সিপিআই-এম সমর্থকরা বিক্ষোভ করেন।

আসামের শিবসাগরে কৃষক মুক্তিসংগ্রাম সমিতির সদস্যরা সিএএ’র বিরুদ্ধে বিক্ষোভ বের করলে পুলিশ তাদের ধরপাকড় করেন।

ভারতে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) বাস্তবায়নের প্রতিবাদে আসাম, পশ্চিমবঙ্গ ও কেরালায় প্রতিবাদ-বিক্ষোভ হয়েছে। কংগ্রেস, তৃণমূল কংগ্রেস, কমিউনিস্ট পার্টি অব ইন্ডিয়া মার্ক্সিস্টসহ (সিপিআইএম) বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এই আইনের বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে। তাদের আশঙ্কা, সিএএ কার্যকর হলে ভারতের উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলোতে শরণার্থীর ঢল নামতে পারে; প্রকট হতে পারে সংরক্ষিত জনজাতির ভাষাগত ও সংস্কৃতিগত সংকট।
সিএএ বাস্তবায়নের ঘোষণার পর তামিলনাড়ুর রাজধানী চেন্নাইতে মোমবাতি জ্বালিয়ে শত শত মানুষ বিক্ষোভে অংশ নেয়। এ পরিস্থিতিতে রাজধানী নয়াদিল্লিতে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। রাতেই আসামের গুয়াহাটিতে আইনের নির্দেশিকার অনুলিপি পোড়ানোসহ বিক্ষিপ্ত প্রতিবাদ হয়। উত্তরপূর্ব আসামের শিবসাগর জেলায় আসাম পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের বড় ধরনের সংঘর্ষ হয়েছে। শিবসাগর জেলা ছাত্র সংসদ (এসডিএসইউ) আয়োজিত সমাবেশ পুলিশ রুখতে গেলে সন্ধ্যায় ছাত্রদের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে উভয় পক্ষের বেশ কিছু প্রতিনিধি আহত হয়েছেন। কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। এ আইন কার্যকরের প্রতিবাদে সোমবার সন্ধ্যায় গৌহাটির কটন বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে বিক্ষোভকারীরা সিএএ’র একটি নকল পুড়িয়ে প্রতিবাদ জানায়। এ সময় শহরজুড়ে বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়। আসামের ১৬টি বিরোধী দলের জোট ইউওএফএ হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে, তারা রাজ্যজুড়ে বন্ধ (হরতাল) পালন করবে; ঘেরাও করা হবে জনতা ভবন। তারা দিনটিকে আসামের ইতিহাসে ‘কালো দিন’ বলেও অভিহিত করেছে।

এদিকে ভারতের সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের (সিএএ) কারণে ভারতীয় মুসলিমদের স্বাধীনতা ও সুবিধা খর্ব করা হবে না বলে আশ্বাস দিয়েছে ভারতীয় সরকার। গতকাল দেশটির সরকার বিশ্বের যেকোনো প্রান্ত থেকে মুসলমানদের ভারতীয় নাগরিকত্ব নিতে কোনো বাধা নেই বলে ঘোষণা দেয়।

অমিত শাহের নেতৃত্বাধীন ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়, নাগরিকত্ব আইনের ৬ নম্বর ধারা অনুযায়ী বিশ্বের যে কোনো প্রান্ত থেকে আসা মুসলমানরা ভারতীয় নাগরিকত্ব চাইতে পারেন। এই আইনে আবেদনের ভিত্তিতে স্বাভাবিকভাবেই তিনি ভারতের নাগরিক বলে গণ্য হবেন। সিএএ স্বাভাবিকভাবে নাগরিকত্বের আবেদনের আইনকে বাতিল করে না। অতএব, বিদ্যমান আইন অনুসারে, ভারতীয় নাগরিক হতে ইচ্ছুক যে কোনো দেশ থেকে আসা মুসলিম অভিবাসীসহ যে কোনো ব্যক্তি নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারবেন। ভারতীয় মুসলমানদের উদ্বিগ্ন হওয়ার দরকার নেই কারণ সিএএ তাদের নাগরিকত্বকে প্রভাবিত করার মতো কোনো বিধান করেনি। বর্তমান ১৮ কোটি ভারতীয় মুসলমানের সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই।

আইনটি কী মুসলমান বিরোধী? : সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনকে মুসলমান বিরোধী বলে অভিযোগ করে পশ্চিমবঙ্গের সংখ্যালঘু যুব ফেডারেশনের প্রধান মুহম্মদ কামরুজ্জামানের আশঙ্কা, যারা দেশান্তরিত হয়ে ভারতে চলে এসেছেন, তাদের নাগরিকত্ব দেওয়া হোক এটা এখানকার মুসলমান সমাজও চায়। এমনকি এত বছর ধরে কেন তাদের নাগরিকত্ব দেওয়া হয়নি, সেটাও আমাদের প্রশ্ন। কিন্তু একই সঙ্গে এরকমটা হবে না তো, যে এখন অ-মুসলমানদের নাগরিকত্ব দেওয়া হল, এর পরে সেই সূত্র ধরে ভূমিপুত্র মুসলমানদের কাছেও নাগরিকত্বের প্রমাণ চাওয়া হবে? তবে এই আশঙ্কা অমূলক বলে মনে করে বিজেপি নেতা অধ্যাপক বিমল শঙ্কর নন্দ বলছেন, এটা কোনো দিক থেকে মুসলমান বিরোধী আইন? মুসলমানদের কথা তো আইনের কোথাও লেখাই নেই! হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান, জৈন, পার্সি আর শিখরা যারা পাকিস্তান, আফগানিস্তান আর বাংলাদেশ থেকে চলে এসেছেন ভারতে, তাদের নাগরিকত্ব দেওয়ার আইন এটা। কারও নাগরিকত্ব এই আইনের মাধ্যমে কেড়ে নেওয়া হবে, এটা সম্পূর্ণ ভুল প্রচার।

জনপ্রিয় সংবাদ

স্মৃতিসৌধে তারেক রহমান

সিএএ কার্যকরের বিরুদ্ধে ভারতে বিক্ষোভ, সংঘর্ষ

আপডেট সময় : ০৬:৫৩:৫৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৪ মার্চ ২০২৪

 

সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় সিপিআই-এম সমর্থকরা বিক্ষোভ করেন।

আসামের শিবসাগরে কৃষক মুক্তিসংগ্রাম সমিতির সদস্যরা সিএএ’র বিরুদ্ধে বিক্ষোভ বের করলে পুলিশ তাদের ধরপাকড় করেন।

ভারতে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) বাস্তবায়নের প্রতিবাদে আসাম, পশ্চিমবঙ্গ ও কেরালায় প্রতিবাদ-বিক্ষোভ হয়েছে। কংগ্রেস, তৃণমূল কংগ্রেস, কমিউনিস্ট পার্টি অব ইন্ডিয়া মার্ক্সিস্টসহ (সিপিআইএম) বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এই আইনের বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে। তাদের আশঙ্কা, সিএএ কার্যকর হলে ভারতের উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলোতে শরণার্থীর ঢল নামতে পারে; প্রকট হতে পারে সংরক্ষিত জনজাতির ভাষাগত ও সংস্কৃতিগত সংকট।
সিএএ বাস্তবায়নের ঘোষণার পর তামিলনাড়ুর রাজধানী চেন্নাইতে মোমবাতি জ্বালিয়ে শত শত মানুষ বিক্ষোভে অংশ নেয়। এ পরিস্থিতিতে রাজধানী নয়াদিল্লিতে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। রাতেই আসামের গুয়াহাটিতে আইনের নির্দেশিকার অনুলিপি পোড়ানোসহ বিক্ষিপ্ত প্রতিবাদ হয়। উত্তরপূর্ব আসামের শিবসাগর জেলায় আসাম পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের বড় ধরনের সংঘর্ষ হয়েছে। শিবসাগর জেলা ছাত্র সংসদ (এসডিএসইউ) আয়োজিত সমাবেশ পুলিশ রুখতে গেলে সন্ধ্যায় ছাত্রদের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে উভয় পক্ষের বেশ কিছু প্রতিনিধি আহত হয়েছেন। কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। এ আইন কার্যকরের প্রতিবাদে সোমবার সন্ধ্যায় গৌহাটির কটন বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে বিক্ষোভকারীরা সিএএ’র একটি নকল পুড়িয়ে প্রতিবাদ জানায়। এ সময় শহরজুড়ে বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়। আসামের ১৬টি বিরোধী দলের জোট ইউওএফএ হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে, তারা রাজ্যজুড়ে বন্ধ (হরতাল) পালন করবে; ঘেরাও করা হবে জনতা ভবন। তারা দিনটিকে আসামের ইতিহাসে ‘কালো দিন’ বলেও অভিহিত করেছে।

এদিকে ভারতের সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের (সিএএ) কারণে ভারতীয় মুসলিমদের স্বাধীনতা ও সুবিধা খর্ব করা হবে না বলে আশ্বাস দিয়েছে ভারতীয় সরকার। গতকাল দেশটির সরকার বিশ্বের যেকোনো প্রান্ত থেকে মুসলমানদের ভারতীয় নাগরিকত্ব নিতে কোনো বাধা নেই বলে ঘোষণা দেয়।

অমিত শাহের নেতৃত্বাধীন ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়, নাগরিকত্ব আইনের ৬ নম্বর ধারা অনুযায়ী বিশ্বের যে কোনো প্রান্ত থেকে আসা মুসলমানরা ভারতীয় নাগরিকত্ব চাইতে পারেন। এই আইনে আবেদনের ভিত্তিতে স্বাভাবিকভাবেই তিনি ভারতের নাগরিক বলে গণ্য হবেন। সিএএ স্বাভাবিকভাবে নাগরিকত্বের আবেদনের আইনকে বাতিল করে না। অতএব, বিদ্যমান আইন অনুসারে, ভারতীয় নাগরিক হতে ইচ্ছুক যে কোনো দেশ থেকে আসা মুসলিম অভিবাসীসহ যে কোনো ব্যক্তি নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারবেন। ভারতীয় মুসলমানদের উদ্বিগ্ন হওয়ার দরকার নেই কারণ সিএএ তাদের নাগরিকত্বকে প্রভাবিত করার মতো কোনো বিধান করেনি। বর্তমান ১৮ কোটি ভারতীয় মুসলমানের সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই।

আইনটি কী মুসলমান বিরোধী? : সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনকে মুসলমান বিরোধী বলে অভিযোগ করে পশ্চিমবঙ্গের সংখ্যালঘু যুব ফেডারেশনের প্রধান মুহম্মদ কামরুজ্জামানের আশঙ্কা, যারা দেশান্তরিত হয়ে ভারতে চলে এসেছেন, তাদের নাগরিকত্ব দেওয়া হোক এটা এখানকার মুসলমান সমাজও চায়। এমনকি এত বছর ধরে কেন তাদের নাগরিকত্ব দেওয়া হয়নি, সেটাও আমাদের প্রশ্ন। কিন্তু একই সঙ্গে এরকমটা হবে না তো, যে এখন অ-মুসলমানদের নাগরিকত্ব দেওয়া হল, এর পরে সেই সূত্র ধরে ভূমিপুত্র মুসলমানদের কাছেও নাগরিকত্বের প্রমাণ চাওয়া হবে? তবে এই আশঙ্কা অমূলক বলে মনে করে বিজেপি নেতা অধ্যাপক বিমল শঙ্কর নন্দ বলছেন, এটা কোনো দিক থেকে মুসলমান বিরোধী আইন? মুসলমানদের কথা তো আইনের কোথাও লেখাই নেই! হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান, জৈন, পার্সি আর শিখরা যারা পাকিস্তান, আফগানিস্তান আর বাংলাদেশ থেকে চলে এসেছেন ভারতে, তাদের নাগরিকত্ব দেওয়ার আইন এটা। কারও নাগরিকত্ব এই আইনের মাধ্যমে কেড়ে নেওয়া হবে, এটা সম্পূর্ণ ভুল প্রচার।