১১:৫৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

লোকসভা নির্বাচন বাম-কংগ্রেস জোট কি তৃণমূলের পথের কাঁটা

 

➤ কংগ্রেস ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিলেন এশিয়ার সবচেয়ে ধনী নারী
➤ বিজেপির আসন দ্বিগুণ হলে তৃণমূলকে বঙ্গোপসাগরে ছুড়ব শুভেন্দু

 

তিন দশকের বেশি সময়ের বাম শাসনের অবসান ঘটিয়ে ২০১১ সালে পশ্চিমবঙ্গের শাসনক্ষমতায় এসেছিল তৃণমূল কংগ্রেস। তখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নেতৃত্বাধীন দপঠা শীর্ষ নেতারা জোর গলায় বলেছিলেন, আগামী ৫০ বছরেও রাজ্যের শাসনক্ষমতা থেকে তৃণমূলকে হটানো যাবে না। ‘সততার প্রতীক’ হয়ে রাজ্য শাসন করবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু এক যুগ যেতে না যেতেই দৃশ্যপট পাল্টে গেছে। মমতার সরকারের ওপর পড়েছে কালিমা। দুর্নীতিতে জড়িয়েছেন দলের শীর্ষ নেতাদের অনেকে। এই আবহেই শুরু হচ্ছে লোকসভা নির্বাচন। এদিকে তৃণমূল কংগ্রেসের দুর্নীতি নিয়ে সরব বিরোধী শিবির। প্রতিদিনই দুর্নীতির নানা অভিযোগ উঠছে শাসক দলের নেতা-কর্মী ও মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে। তৃণমূলের শীর্ষ নেতাদের অনেকেই এখন কারাগারে। কারাবন্দি নেতাদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের মতো শীর্ষস্থানীয় নেতারা।

 

এবার পশ্চিমবঙ্গে মূলত লড়াই হবে তৃণমূলের সঙ্গে কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন দল বিজেপির। তৃণমূল ধর্মনিরপেক্ষ হলেও দুর্নীতিতে জড়িয়ে বিতর্কের মুখে পড়েছে। জনমত সমীক্ষায় তৃণমূলের জনপ্রিয়তায় ভাটার টানের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। জরিপে উঠে এসেছে, ৪২ আসনের মধ্যে তৃণমূল ২৩ আর বিজেপি ১৯ আসন পেতে পারে। শূন্য হাতে ফিরতে হতে পারে বাম ও কংগ্রেস জোটকে। কংগ্রেস-বাম জোট অবশ্য এবার ভালো ফল করার বিষয়ে বেশ আশাবাদী। গত লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেস দুটি আসন পেলেও বাম দলগুলো কোনো আসনেই জিততে পারেনি।

 

দুর্নীতির কারণে তৃণমূলের জনপ্রিয়তায় এবার যেমন কমেছে, তেমনি কিছুটা হলেও জনপ্রিয়তা বেড়েছে বিজেপি এবং কংগ্রেস-বাম জোটের। তাই বাম-কংগ্রেস জোট মনে করছে, তৃণমূলের দুর্নীতির ছায়া এবার লোকসভা নির্বাচনে পড়বেই। এদিকে বিজেপি নেতা ও ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ দলের নেতাদের বলেছেন, এবার পশ্চিমবঙ্গে বিজেপিকে ৩৫ আসনে জিততে হবে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সব আসন চান। বিজেপির জয়ের লক্ষ্যমাত্রা ৪২ আসনই। তৃণমূলও বলছে, তারা এবার রাজ্যের সব আসনে জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী।

 

এদিকে অতীত ভুলে বাম-কংগ্রেস জোট এবার ভালো ফলের আশা করছে। জোট নেতাদের দাবি, রাজ্যের মানুষ যেমন তৃণমূলের দুর্নীতি নিয়ে ক্ষুব্ধ, তেমনি বিজেপির ধর্মান্ধ রাজনীতি নিয়েও তারা বীতশ্রদ্ধ। ফলে এবার বহু ভোটারই তৃণমূল ও বিজেপিকে ভোট না দিয়ে তাদের ভোট দেবেন। এতে বহু আসনে ত্রিমুখী লড়াইয়ে জয় পেতে পারেন জোটের প্রার্থীরা। যদিও এই যুক্তি মানছে না তৃণমূল ও বিজেপি।

 

তৃণমূল বলছে, ভোটাররা আবার তৃণমূলের দিকেই ঝুঁকতে শুরু করেছেন। মানুষ বুঝেছে, তৃণমূল এই রাজ্যে যে উন্নয়ন করেছে, তা অন্য দলগুলোর পক্ষে সম্ভব নয়। অন্যদিকে বিজেপি মনে করছে, তৃণমূল যেভাবে দুর্নীতি ও চাঁদাবাজি করেছে, তাতে রাজ্যের মানুষ তৃণমূলকে ভোট দেবেন না, ভোট দেবেন বিজেপিকে। কারণ, তারা এখন বিজেপিকেই তৃণমূলের বিকল্প মনে করছে।

 

বিজেপি বলছে, বাম ও কংগ্রেস জোটের এখন আর সেই শক্তি নেই যে, তারা যৌথভাবে এই রাজ্য শাসন করতে পারবে। এটা ভাবলে সেটা হবে তাদের দুরাশা। তবে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, এবার তৃণমূলের ভোট কমবে, বাড়বে বাম-কংগ্রেস জোটের। জোটের ভোটই তৃণমূলের পথের কাঁটা হয়ে উঠতে পারে। আবার তৃণমূল ও বিজেপির হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের ফাঁকে জোটের প্রার্থীও জিতে যেতে পারেন। এতে শেষ পর্যন্ত ভোটের হিসাবে হয়তো এগিয়ে থাকলেও অতীতের তুলনায় বিজেপির চেয়ে আরো পিছিয়ে পড়তে পারে মমতার তৃণমূল।

 

এদিকে নির্বাচনকে সামনে রেখে এবার কংগ্রেস ছেড়ে ক্ষমতাসীন বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন দেশের সবচেয়ে ধনী নারী এবং হরিয়ানার সাবেক মন্ত্রী সাবিত্রী জিন্দাল। প্রায় আড়াই লাখ কোটি রুপির মালিক সাবিত্রীকে শুধু ভারত নয়, পুরো এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে ধনী নারী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। গত বুধবার রাতে কংগ্রেস ছাড়ার ঘোষণা দিয়ে বৃহস্পতিবার বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন ৭৪ বছর বয়সি সাবিত্রী। কয়েক দিন আগেই তার ছেলে শিল্পপতি নবীন জিন্দালও কংগ্রেস ছেড়ে গেরুয়া শিবিরে যোগ দিয়েছিলেন। হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী নয়াব সিং সাইনি এবং সাবেক মুখ্যমন্ত্রী মনোহর লাল খট্টরের উপস্থিতিতে একটি অনুষ্ঠানে বিজেপিতে যোগ দেন সাবিত্রী। এর আগে গতকাল রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কংগ্রেস ছাড়ার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি লিখেছিলেন, ‘আমি গত ১০ বছর বিধায়করূপে হিসারের মানুষের সেবা করেছি। মন্ত্রীরূপে রাজ্যের মানুষের জন্য নিঃস্বার্থ সেবা করেছি। হিসারের মানুষই আমার পরিবার। সেই পরিবারেরই পরামর্শে আজ আমি কংগ্রেসের প্রাথমিক সদস্যপদ ত্যাগ করছি।’

 

হরিয়ানা রাজ্যে ভূপিন্দর সিং হুদার নেতৃত্বাধীন আগের কংগ্রেস সরকারে মন্ত্রী ছিলেন সাবিত্রী। ২০১৪ সালে তিনি হিসার আসনে বিজেপির প্রার্থীর কাছে হেরেছিলেন। তার এই দল বদলকে বিরোধী দল কংগ্রেসের জন্য একটি বড় ধাক্কা হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। চলতি বছরের শুরুতেই সাবিত্রীকে ভারতের সবচেয়ে ধনী নারীর হিসেবে আখ্যায়িত করেছিল ফোর্বস। সে সময় সাবিত্রীর সম্পদের পরিমাণ ছিল ২৯.১ বিলিয়ন ডলার। সাবিত্রীর স্বামী ছিলেন ভারতের ইস্পাত সাম্রাজ্যের একচ্ছত্র অধিপতি ওমপ্রকাশ জিন্দাল। ২০০৫ সালে হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় ওমপ্রকাশের। স্বামীর মৃত্যুর পর তাঁর ব্যবসায়িক সাম্রাজ্য নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন সাবিত্রী। অসমের তিনসুকিয়া জেলার বাসিন্দা সাবিত্রীর জন্ম ১৯৫০ সালের ২০ মার্চ। সত্তরের দশকে ওমপ্রকাশের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। ব্যবসার পাশাপাশি স্বামীর মতো রাজনীতির আঙিনায়ও পা রাখেন তিনি। ২০০৫ সালে স্বামীর মৃত্যুর পর তার কেন্দ্র থেকেই নির্বাচনে অংশ নেন। কংগ্রেসের টিকিটে সেই কেন্দ্রে জয়ী হয়ে পা রাখেন হরিয়ানা বিধানসভায়। পরের বিধানসভা নির্বাচনেও জয় পান তিনি। ২০১৩ সালে হয়েছিলেন হরিয়ানার ক্যাবিনেট মন্ত্রী।

 

 

অন্যদিকে গতকাল বিকালে দক্ষিণ কলকাতার যাদবপুরের রানিকুঠি এলাকার বিজয়গড়ের ১২ ভূতের খেলার মাঠে এক নির্বাচনী সভায় পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার বিরোধী দলের নেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেছেন, ‘এ রাজ্য থেকে বিজেপির পাওয়া লোকসভার আসন ১৮ থেকে এবার দ্বিগুণ করে দিন, ৬ মাসের মধ্যে তৃণমূলের রাজ্য সরকারকে বঙ্গোপসাগরে ছুড়ে দেব। আমাদের আসন ১৮ থেকে ৩৬ করুন। আমরা ছয় মাসের মধ্যে বিদায় করে দেব এই রাজ্যের তৃণমূল সরকারকে। এবার সিপিএমকে একটি ভোটও নয়। ওরা তৃণমূলকে জেতাতে চায়। ওপরে ওপরে ওরা তৃণমূলের বিরোধিতা করলেও এই সিপিএমের শীর্ষ নেতা সীতারাম ইয়েচুরি পিসি (মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) ভাইপোর (অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়) সঙ্গে ডিনার করেন। তাই সিপিএমকে একটি ভোটও নয়। কারণ, সিপিএম ভোট কেটে তৃণমূলকে জেতাতে চায়। যদিও রাজ্যে তৃণমূলের মুখপাত্র জয় প্রকাশ মজুমদার বলেছেন, বিজেপি জানে না যে, তাদের পায়ের তলার মাটি সরে গেছে। মানুষ মমতাকে চায়। এবারও বিপুল ভোটে জিতবেন মমতা।

 

জনপ্রিয় সংবাদ

স্মৃতিসৌধে তারেক রহমান

লোকসভা নির্বাচন বাম-কংগ্রেস জোট কি তৃণমূলের পথের কাঁটা

আপডেট সময় : ০৭:০৪:৫৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৩০ মার্চ ২০২৪

 

➤ কংগ্রেস ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিলেন এশিয়ার সবচেয়ে ধনী নারী
➤ বিজেপির আসন দ্বিগুণ হলে তৃণমূলকে বঙ্গোপসাগরে ছুড়ব শুভেন্দু

 

তিন দশকের বেশি সময়ের বাম শাসনের অবসান ঘটিয়ে ২০১১ সালে পশ্চিমবঙ্গের শাসনক্ষমতায় এসেছিল তৃণমূল কংগ্রেস। তখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নেতৃত্বাধীন দপঠা শীর্ষ নেতারা জোর গলায় বলেছিলেন, আগামী ৫০ বছরেও রাজ্যের শাসনক্ষমতা থেকে তৃণমূলকে হটানো যাবে না। ‘সততার প্রতীক’ হয়ে রাজ্য শাসন করবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু এক যুগ যেতে না যেতেই দৃশ্যপট পাল্টে গেছে। মমতার সরকারের ওপর পড়েছে কালিমা। দুর্নীতিতে জড়িয়েছেন দলের শীর্ষ নেতাদের অনেকে। এই আবহেই শুরু হচ্ছে লোকসভা নির্বাচন। এদিকে তৃণমূল কংগ্রেসের দুর্নীতি নিয়ে সরব বিরোধী শিবির। প্রতিদিনই দুর্নীতির নানা অভিযোগ উঠছে শাসক দলের নেতা-কর্মী ও মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে। তৃণমূলের শীর্ষ নেতাদের অনেকেই এখন কারাগারে। কারাবন্দি নেতাদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের মতো শীর্ষস্থানীয় নেতারা।

 

এবার পশ্চিমবঙ্গে মূলত লড়াই হবে তৃণমূলের সঙ্গে কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন দল বিজেপির। তৃণমূল ধর্মনিরপেক্ষ হলেও দুর্নীতিতে জড়িয়ে বিতর্কের মুখে পড়েছে। জনমত সমীক্ষায় তৃণমূলের জনপ্রিয়তায় ভাটার টানের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। জরিপে উঠে এসেছে, ৪২ আসনের মধ্যে তৃণমূল ২৩ আর বিজেপি ১৯ আসন পেতে পারে। শূন্য হাতে ফিরতে হতে পারে বাম ও কংগ্রেস জোটকে। কংগ্রেস-বাম জোট অবশ্য এবার ভালো ফল করার বিষয়ে বেশ আশাবাদী। গত লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেস দুটি আসন পেলেও বাম দলগুলো কোনো আসনেই জিততে পারেনি।

 

দুর্নীতির কারণে তৃণমূলের জনপ্রিয়তায় এবার যেমন কমেছে, তেমনি কিছুটা হলেও জনপ্রিয়তা বেড়েছে বিজেপি এবং কংগ্রেস-বাম জোটের। তাই বাম-কংগ্রেস জোট মনে করছে, তৃণমূলের দুর্নীতির ছায়া এবার লোকসভা নির্বাচনে পড়বেই। এদিকে বিজেপি নেতা ও ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ দলের নেতাদের বলেছেন, এবার পশ্চিমবঙ্গে বিজেপিকে ৩৫ আসনে জিততে হবে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সব আসন চান। বিজেপির জয়ের লক্ষ্যমাত্রা ৪২ আসনই। তৃণমূলও বলছে, তারা এবার রাজ্যের সব আসনে জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী।

 

এদিকে অতীত ভুলে বাম-কংগ্রেস জোট এবার ভালো ফলের আশা করছে। জোট নেতাদের দাবি, রাজ্যের মানুষ যেমন তৃণমূলের দুর্নীতি নিয়ে ক্ষুব্ধ, তেমনি বিজেপির ধর্মান্ধ রাজনীতি নিয়েও তারা বীতশ্রদ্ধ। ফলে এবার বহু ভোটারই তৃণমূল ও বিজেপিকে ভোট না দিয়ে তাদের ভোট দেবেন। এতে বহু আসনে ত্রিমুখী লড়াইয়ে জয় পেতে পারেন জোটের প্রার্থীরা। যদিও এই যুক্তি মানছে না তৃণমূল ও বিজেপি।

 

তৃণমূল বলছে, ভোটাররা আবার তৃণমূলের দিকেই ঝুঁকতে শুরু করেছেন। মানুষ বুঝেছে, তৃণমূল এই রাজ্যে যে উন্নয়ন করেছে, তা অন্য দলগুলোর পক্ষে সম্ভব নয়। অন্যদিকে বিজেপি মনে করছে, তৃণমূল যেভাবে দুর্নীতি ও চাঁদাবাজি করেছে, তাতে রাজ্যের মানুষ তৃণমূলকে ভোট দেবেন না, ভোট দেবেন বিজেপিকে। কারণ, তারা এখন বিজেপিকেই তৃণমূলের বিকল্প মনে করছে।

 

বিজেপি বলছে, বাম ও কংগ্রেস জোটের এখন আর সেই শক্তি নেই যে, তারা যৌথভাবে এই রাজ্য শাসন করতে পারবে। এটা ভাবলে সেটা হবে তাদের দুরাশা। তবে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, এবার তৃণমূলের ভোট কমবে, বাড়বে বাম-কংগ্রেস জোটের। জোটের ভোটই তৃণমূলের পথের কাঁটা হয়ে উঠতে পারে। আবার তৃণমূল ও বিজেপির হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের ফাঁকে জোটের প্রার্থীও জিতে যেতে পারেন। এতে শেষ পর্যন্ত ভোটের হিসাবে হয়তো এগিয়ে থাকলেও অতীতের তুলনায় বিজেপির চেয়ে আরো পিছিয়ে পড়তে পারে মমতার তৃণমূল।

 

এদিকে নির্বাচনকে সামনে রেখে এবার কংগ্রেস ছেড়ে ক্ষমতাসীন বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন দেশের সবচেয়ে ধনী নারী এবং হরিয়ানার সাবেক মন্ত্রী সাবিত্রী জিন্দাল। প্রায় আড়াই লাখ কোটি রুপির মালিক সাবিত্রীকে শুধু ভারত নয়, পুরো এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে ধনী নারী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। গত বুধবার রাতে কংগ্রেস ছাড়ার ঘোষণা দিয়ে বৃহস্পতিবার বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন ৭৪ বছর বয়সি সাবিত্রী। কয়েক দিন আগেই তার ছেলে শিল্পপতি নবীন জিন্দালও কংগ্রেস ছেড়ে গেরুয়া শিবিরে যোগ দিয়েছিলেন। হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী নয়াব সিং সাইনি এবং সাবেক মুখ্যমন্ত্রী মনোহর লাল খট্টরের উপস্থিতিতে একটি অনুষ্ঠানে বিজেপিতে যোগ দেন সাবিত্রী। এর আগে গতকাল রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কংগ্রেস ছাড়ার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি লিখেছিলেন, ‘আমি গত ১০ বছর বিধায়করূপে হিসারের মানুষের সেবা করেছি। মন্ত্রীরূপে রাজ্যের মানুষের জন্য নিঃস্বার্থ সেবা করেছি। হিসারের মানুষই আমার পরিবার। সেই পরিবারেরই পরামর্শে আজ আমি কংগ্রেসের প্রাথমিক সদস্যপদ ত্যাগ করছি।’

 

হরিয়ানা রাজ্যে ভূপিন্দর সিং হুদার নেতৃত্বাধীন আগের কংগ্রেস সরকারে মন্ত্রী ছিলেন সাবিত্রী। ২০১৪ সালে তিনি হিসার আসনে বিজেপির প্রার্থীর কাছে হেরেছিলেন। তার এই দল বদলকে বিরোধী দল কংগ্রেসের জন্য একটি বড় ধাক্কা হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। চলতি বছরের শুরুতেই সাবিত্রীকে ভারতের সবচেয়ে ধনী নারীর হিসেবে আখ্যায়িত করেছিল ফোর্বস। সে সময় সাবিত্রীর সম্পদের পরিমাণ ছিল ২৯.১ বিলিয়ন ডলার। সাবিত্রীর স্বামী ছিলেন ভারতের ইস্পাত সাম্রাজ্যের একচ্ছত্র অধিপতি ওমপ্রকাশ জিন্দাল। ২০০৫ সালে হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় ওমপ্রকাশের। স্বামীর মৃত্যুর পর তাঁর ব্যবসায়িক সাম্রাজ্য নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন সাবিত্রী। অসমের তিনসুকিয়া জেলার বাসিন্দা সাবিত্রীর জন্ম ১৯৫০ সালের ২০ মার্চ। সত্তরের দশকে ওমপ্রকাশের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। ব্যবসার পাশাপাশি স্বামীর মতো রাজনীতির আঙিনায়ও পা রাখেন তিনি। ২০০৫ সালে স্বামীর মৃত্যুর পর তার কেন্দ্র থেকেই নির্বাচনে অংশ নেন। কংগ্রেসের টিকিটে সেই কেন্দ্রে জয়ী হয়ে পা রাখেন হরিয়ানা বিধানসভায়। পরের বিধানসভা নির্বাচনেও জয় পান তিনি। ২০১৩ সালে হয়েছিলেন হরিয়ানার ক্যাবিনেট মন্ত্রী।

 

 

অন্যদিকে গতকাল বিকালে দক্ষিণ কলকাতার যাদবপুরের রানিকুঠি এলাকার বিজয়গড়ের ১২ ভূতের খেলার মাঠে এক নির্বাচনী সভায় পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার বিরোধী দলের নেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেছেন, ‘এ রাজ্য থেকে বিজেপির পাওয়া লোকসভার আসন ১৮ থেকে এবার দ্বিগুণ করে দিন, ৬ মাসের মধ্যে তৃণমূলের রাজ্য সরকারকে বঙ্গোপসাগরে ছুড়ে দেব। আমাদের আসন ১৮ থেকে ৩৬ করুন। আমরা ছয় মাসের মধ্যে বিদায় করে দেব এই রাজ্যের তৃণমূল সরকারকে। এবার সিপিএমকে একটি ভোটও নয়। ওরা তৃণমূলকে জেতাতে চায়। ওপরে ওপরে ওরা তৃণমূলের বিরোধিতা করলেও এই সিপিএমের শীর্ষ নেতা সীতারাম ইয়েচুরি পিসি (মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) ভাইপোর (অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়) সঙ্গে ডিনার করেন। তাই সিপিএমকে একটি ভোটও নয়। কারণ, সিপিএম ভোট কেটে তৃণমূলকে জেতাতে চায়। যদিও রাজ্যে তৃণমূলের মুখপাত্র জয় প্রকাশ মজুমদার বলেছেন, বিজেপি জানে না যে, তাদের পায়ের তলার মাটি সরে গেছে। মানুষ মমতাকে চায়। এবারও বিপুল ভোটে জিতবেন মমতা।