➤শিক্ষার্থীদের ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন চলছে
➤ ছাত্ররাজনীতি ফেরাতে ছাত্রলীগের চার কর্মসূচি
➤প্রধানমন্ত্রীকে খোলা চিঠি আন্দোলনকারীদের
ছয় দফা দাবিতে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন কর্মসূচি চতুর্থ দিনের মতো অব্যাহত রেখেছে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থীরা। ফলে ক্যাম্পাসজুড়ে সুনসান নীরবতা, শিক্ষার্থীরা নেই, তবে স্বাভাবিক আছে দাপ্তরিক কাজকর্ম। আর নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতি ফিরিয়ে আনতে চার দফা কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। ছাত্ররাজনীতি বন্ধ রাখার দাবিতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে খোলা চিঠি দিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে ক্যাম্পাস ঘুরে দেখা যায়, ছাত্ররাজনীতি নিয়ে বুয়েটের শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের দুই মেরুতে অবস্থানের মধ্যে এমন থমথমে অবস্থা চলছে ক্যাম্পাসে। শিক্ষকরা অপেক্ষায় থাকলেও ক্লাস-পরীক্ষায় অংশ নেননি শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসগুলো যথারীতি খোলা আছে। সেখানে দাপ্তরিক কাজ চলছে স্বাভাবিক সময়ের মতোই। শিক্ষার্থীরা জানান, মঙ্গলবার তাদের রুটিন অনুযায়ী কোনো ক্লাস বা পরীক্ষা নেই। তাই তারা ক্যাম্পাসে আসেননি। তবে আজ (বুধবার) একটি পরীক্ষা আছে। সেই পরীক্ষা তারা অংশগ্রহণ করবেন কি না, সেটি তারা নিশ্চিত নন। ৪ এপ্রিল থেকে শিক্ষার্থীরা ঈদের ছুটিতে বাড়ি যাবে। যে পরীক্ষাগুলো বাকি রয়েছে, সেগুলো হবে ঈদের পরে।
এদিকে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে যোগ হয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হ্যাশট্যাগ আন্দোলন। এই মুভমেন্টের অংশ হিসেবে তারা নিজেদের নাম, টার্ম ও সেশন উল্লেখ করে ক্যাম্পাস পূর্বের অবস্থায় ফিরে না যাওয়া পর্যন্ত ক্লাসে (একাডেমিক) না ফেরার ঘোষণা দিয়েছেন। গতকাল সন্ধ্যায় বুয়েটের ড. এম এ রশীদ প্রশাসনিক ভবনের সামনে সংবাদ সম্মেলনে খোলা চিঠি পাঠ করেন শিক্ষার্থীরা। খোলা চিঠিতে শিক্ষার্থীরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্দেশে লেখেন, বুয়েটের শিক্ষার্থীরা বরাবরই একটি নিরাপদ এবং সুপ্ত ক্যাম্পাস চেয়ে এসেছে, যেখানে ক্ষমতাচর্চার লোভ লালসার শিকলে আবারও জিম্মি হয়ে যাবে না সবার নিরাপত্তা, শিক্ষাঙ্গনের উপযুক্ত পরিবেশ। সুপ্ত নেতৃত্ব এবং নৈতিকতা বিকাশের সব উপাদান ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতির উপস্থিতি ছাড়াও গত কয়েক বছরে উপস্থিত ছিল এবং এতে সুস্থ নেতৃত্বের চর্চার শিক্ষার্থীরা তাদের উপযুক্ত পরিবেশ পেয়েছে।
এদিকে বুয়েটে ‘নিয়মতান্ত্রিক’ ছাত্ররাজনীতির ঘোষণা দিয়েছে ছাত্রলীগ। নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতি ফিরিয়ে আনতে চার দফা কর্মসূচি ঘোষণা করেছে তারা। গতকাল দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে বুয়েটের উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে সংবাদ সম্মেলন তারা এই ঘোষণা দেন সংগঠনটির কেন্দ্রীয় নেতারা। ঘোষিত কর্মসূচিগুলো হলো, আবাসিক হলে রাব্বীর সিট ফিরিয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে বুয়েট শহীদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচি; আধুনিক, স্মার্ট ও পলিসিনির্ভর নিয়মতান্ত্রিক ছাত্ররাজনীতি প্রতিষ্ঠার কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণে বুয়েট শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মতামত আহ্বান ও তাদের সঙ্গে আলোচনা; সাম্প্রদায়িক-মৌলবাদী-জঙ্গি কালোছায়া থেকে বুয়েটকে মুক্ত করতে সেমিনার ও সাংস্কৃতিক উৎসব আয়োজন এবং বুয়েটে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দাবিতে প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেন বলেন, প্রশাসন বুয়েট ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা বাংলাদেশ ছাত্রলীগ অতীতেও সমর্থন করেনি, বর্তমানেও করে না। বাংলাদেশ ছাত্রলীগ বারবার বলার চেষ্টা করেছে, বাংলাদেশের মহান সংবিধান ও বুয়েট আইন কোনোটিই ছাত্ররাজনীতি বন্ধের এই সিদ্ধান্তকে বৈধতা দেয় না। বুয়েট পরিবারের অংশীজনদের আবেগ-অনুভূতির প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ আহ্বান জানিয়েছে, ধ্বংস দেখে ভয় কেন তোর? প্রলয় নূতন সৃজন-বেদন।
বুয়েটে ছাত্রলীগ কবে কমিটি দিতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করেই আমরা পরবর্তী কর্মসূচি করব। তাদের সঙ্গে মুক্ত আলোচনা করব। তারপর আমরা কমিটি নিয়ে ভাবব। বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশেষায়িত ছাত্ররাজনীতি থাকবে।
এর আগে গত ২৭ মার্চ দিবাগত রাত ১টায় ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতাদের নেতৃত্বে বুয়েট ক্যাম্পাসে প্রবেশ করেন ছাত্রলীগের একদল নেতাকর্মী। এর প্রতিবাদে শুক্রবার আন্দোলনে নামেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা। এ সময় শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধসহ ছয় দফা দাবি পেশ করেন। বুয়েটে প্রশাসন শিক্ষার্থীদের আংশিক দাবি মেনে নিয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। বিজ্ঞপ্তিতে অভিযুক্ত শিক্ষার্থী ইমতিয়াজ হোসেন রাহিম রাব্বির হলের সিট বাতিল, তদন্ত কমিটি গঠন ও তদন্ত অনুযায়ী সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং পরীক্ষাসহ সব একাডেমিক কার্যক্রম চলমান থাকার কথা জানানো হয়। শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলনের মধ্যে বুয়েটে নিয়মতান্ত্রিক ছাত্ররাজনীতি চালুর দাবিতে গত রোববার দুপুরে ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমাবেশ করে ছাত্রলীগ। ছাত্ররাজনীতিতে নিষেধাজ্ঞার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে সোমবার হাই কোর্টে রিট মামলা করেন হল থেকে বহিষ্কৃত ইমতিয়াজ হোসেন রাহিম রাব্বী। তার আবেদনের শুনানি করেই বুয়েটের নিষেধাজ্ঞার আদেশ স্থগিত করার পাশাপাশি রুল জারি করে বিচারপতি মো. খসরুজ্জামান ও বিচারপতি কেএম জাহিদ সারওয়ারের বেঞ্চ। এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বুয়েটের উপাচার্য অধ্যাপক সত্য প্রসাদ মজুমদার বলেন, কোর্ট যেটা বলবে আমাদের সেটা মানতে হবে। কোর্টের আদেশ শিরোধার্য। আদালত অবমাননা আমরা করতে পারব না। তবে শিক্ষার্থীরা নিজেদের প্রত্যাশার জায়গায় অনড় থাকার কথা জানিয়ে হাই কোর্টের ওই আদেশের বিপক্ষে আইনি লড়াই চালাতে উপাচার্যের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।


























