০২:২২ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৩ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

৭ ত্রাণকর্মী হত্যায় বিশ্বজুড়ে নিন্দার ঝড়

◉ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দেবে স্পেন
◉ত্রাণ খালাস না করেই গাজা ছাড়ল জাহাজ

 

 

 

অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর বিমান হামলায় সাত ত্রাণকর্মী নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্য, পোল্যান্ড ও ফিলিস্তিনের নাগরিক ছিলেন। তারা ওয়াশিংটনভিত্তিক ত্রাণ সহায়তাকারী অলাভজনক প্রতিষ্ঠান ওয়ার্ল্ড সেন্ট্রাল কিচেনের কর্মী ছিলেন। গাজায় ক্ষুধার্ত মানুষের মধ্যে ত্রাণ সরবরাহকারীদের ওপর এমন নির্মম হামলায় বিশ্বজুড়ে নিন্দার ঝড় বইছে।

 

সেন্ট্রাল কিচেন জানায়, তাদের কর্মীরা সংঘাতহীন এলাকায় দুটি গাড়িতে করে ঘুরছিলেন। গাড়িতে ত্রাণকর্মী হিসেবে লোগোও লাগানো ছিল। গাজার দায়ের আল-বালাহ এলাকায় ১০০ টনের বেশি খাদ্য সরবরাহ করে তারা ফিরছিলেন। সার্বিক বিষয় ইসরায়েল পর্যবেক্ষণও করেছে। তারপরও তাদের কর্মীদের ওপর বিমান হামলা হয়। সংস্থার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এরিন গোরে বলেন, ইসরায়েলের হামলায় এত সুন্দর জীবনগুলো শেষ হয়ে গেল! তারা মানুষকে খাবার দিতে পছন্দ করতেন; সব কিছুর ঊর্ধ্বে রেখেছিলেন মানবতাকে। মানুষের জন্য জীবন দেওয়ার মাধ্যমে তারা যে প্রভাব রেখে গেছেন, তা অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবে।

 

ত্রাণ সংস্থাটি বিশ্বের বিপর্যয়ে পড়া এলাকায় খাবার সরবরাহ করে। গাজায় দুর্ভিক্ষের মুখে থাকা লাখ লাখ মানুষকে ত্রাণ দেওয়া অল্প সংখ্যক সংস্থার একটি এটি। সামাজিক মাধ্যম এক্সে সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা আন্দ্রেস বলেন, ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর বিমান হামলায় তারা কয়েকজন ভাই ও বোনকে হারিয়েছেন। ইসরায়েলের সরকারের উচিত নির্বিচারে হত্যা বন্ধ করা; মানবিক সহায়তা সীমিত করার প্রচেষ্টা থামানো। তাদের অবশ্যই বেসামরিক মানুষ ও ত্রাণকর্মী হত্যা বন্ধ করতে হবে; খাদ্যকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতে হবে। যারা মারা গেছেন, সেই স্বর্গের দূতেরাই ইউক্রেন, গাজা, তুরস্ক, মরক্কো, বাহামাস, ইন্দোনেশিয়ায় দুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন।

 

নিহতদের মধ্যে জোমি ফ্রাঙ্ককমকে অস্ট্রেলীয় বলে চিহ্নিত করে দেশটির প্রধানমন্ত্রী আন্থনি আলবানিজ বলেন, অস্ট্রেলিয়া এ হত্যার তীব্র নিন্দা জানায় এবং জবাবদিহি প্রত্যাশা করে। এই জোমিই অস্ট্রেলিয়ায় দাবানল চলাকালে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করেছিলেন। এ ধরনের হত্যাকাণ্ড সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য।
নিহত পোলিশ কর্মীর নাম দামিয়ান সোবোল। এ নিয়ে পোল্যান্ড ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূতকে তলব করে ব্যাখ্যা চেয়েছে। গাড়িটির চালক ছিলেন ফিলিস্তিনের সাইফ ইসসাম আবু-তাহা। যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা কাউন্সিলের মুখপাত্র আদ্রিয়ানি ওয়াটসন এক্সে বলেন, এ হত্যার খবরে তিনি মর্মাহত ও গভীরভাবে ব্যথিত। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ওয়্যাং ওয়েনবিন বলেন, ত্রাণকর্মীদের ওপর হামলার খবরে বেইজিং মর্মাহত। অন্য ত্রাণ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোও এ নিয়ে নিন্দা ও শোক জানিয়েছে।

 

দ্য গার্ডিয়ান অনলাইন জানায়, ত্রাণকর্মী হত্যার ঘটনায় কড়া বার্তা দিয়েছেন যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন। তিনি এ ঘটনার ‘পূর্ণ ও স্বচ্ছ ব্যাখ্যা’ চেয়েছেন। সাইপ্রাসের প্রেসিডেন্ট নিকোস খ্রিস্টদৌলিদেস বলেন, অবিলম্বে এ হত্যার তদন্ত হওয়া উচিত। সেই সঙ্গে আমাদের উচিত গাজায় ত্রাণ সরবরাহ দ্বিগুণ করা। এ প্রেক্ষপটে ইউরোপীয় কমিশন ইসরায়েলের প্রতি আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেছে। হামলার নিন্দা জানিয়েছে স্পেনও। তবে হামলার ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেছে ইসরায়েল। আর হামাস হামলার নিন্দা জানিয়ে জাতিসংঘকে তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে। ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের জন্য জাতিসংঘের ত্রাণ ও কর্মসংস্থান সংস্থার (ইউএনআরডব্লিউএ) সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান অনুসারে, ইসরায়েলি হামলায় গত ছয় মাসে ১৭৪ জন মানবাধিকারকর্মী নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ১৭১ জনই ইউএনআরডব্লিউএ কর্মী। সংস্থাটির ইতিহাসে একে সবচেয়ে বড় প্রাণহানির ঘটনা বলে উল্লেখ করেছে জাতিসংঘ।

 

 

এদিকে গত মঙ্গলবার নিজের সঙ্গে জর্ডান সফরে যাওয়া সাংবাদিকদের স্পেন প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ জানান, চলতি বছরের জুলাই মাসের মধ্যে ফিলিস্তিনিকে স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দেবে স্পেন। পাশাপাশি এই দেশটি দখলদার ইসরায়েলকেও রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিতে আরব দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানাবে।স্পেনের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা ইএফই ও সংবাদপত্র এল পাইসসহ লা ভ্যানগার্ডিয়া বলছে, ফিলিস্তিনিকে স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দিতে ইউরোপের অন্যান্য দেশগুলোকেও রাজি করানোর চেষ্টা করছে স্প্যানিশ সরকার। স্পেনের প্রধানমন্ত্রীর বিশ্বাস, তারা যখন ফিলিস্তিনকে স্বাধীন দেশের স্বীকৃতি দেবে, তখন ইউরোপের অন্যান্য দেশগুলোও তাদের দেখানো পথে এগোবে। এরই মধ্যে স্লোভেনিয়া, মাল্টা ও আয়ারল্যান্ড স্পেনের আহ্বানে সম্মতি জানিয়েছে। গত ২২ মার্চ এক যৌথ বিবৃতিতে এই চারটি দেশ জানায়, যখন উপযুক্ত সময় আসবে, ঠিক তখনই ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দেবে তারা। এপ্রিলে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সভাপতির দায়িত্বে থাকবে মাল্টা। জাতিসংঘে নিযুক্ত দেশটির রাষ্ট্রদূত ভেনেসা ফ্রেজিয়ার জানিয়েছেন, তিনি এখনো ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে পূর্ণ সদস্যতার বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য আনুষ্ঠানিক অনুরোধ পাননি।

 

এর আগে, স্পেনের নেতৃত্বে ইউরোপের আরো তিনটি দেশের ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়ে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে ইসরায়েলের নেতানিয়াহু প্রশাসন। তাদের দাবি, এই মুহূর্তে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়া মানে, ‘সন্ত্রাসী গোষ্ঠীদের’ হাতে কাক্সিক্ষত পুরস্কার তুলে দেওয়া।

 

ধারণা করা হচ্ছে, নভেম্বরে হতে যাওয়া যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে ফিলিস্তিনকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়টি গতি পেতে পারে। তবে মধ্যপ্রাচ্য ও ইসলামিক দেশগুলো ফিলিস্তিনিকে স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দিলেও ইউরোপের বেশিরভাগ দেশই দেয়নি। ১৯৮৮ সাল থেকে, জাতিসংঘের ১৯৩টি সদস্য রাষ্ট্রের মধ্যে ১৩৯টি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিয়েছে।

 

অন্যদিকে গাজায় ইসরায়েলি হামলায় সাত ত্রাণকর্মী নিহত হওয়ার পর ত্রাণসামগ্রী খালাস না করেই সাইপ্রাসে ফিরে যাচ্ছে আন্তর্জাতিক ত্রাণ সহায়তা সংস্থা ওয়ার্ল্ড সেন্ট্রাল কিচেনের জাহাজ। গত সোমবারের ওই হামলার পরপরই ত্রাণ কার্যক্রম বন্ধের ঘোষণা দেয় সংস্থাটি। এর আগে জাহাজ থেকে মাত্র ১০০ টন খাদ্য খালাস করেছিলেন কর্মীরা। গত মঙ্গলবার সাইপ্রাসের কর্মকর্তারা গাজার জন্য ত্রাণবাহী জাহাজ ফিরে আসার কথা নিশ্চিত করেন বলে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। ত্রাণ কার্যক্রম বন্ধের ঘোষণা দেওয়ার পরপরই ২৪০ টন ত্রাণবাহী জাহাজ জেনিফার আবার সাইপ্রাসের উদ্দেশে ফিরে যায়। এক বিবৃতিতে সংস্থার সিইও এরিন গোর বলেন, নিহত ত্রাণকর্মীর দলটি ডব্লিউসিকে লোগোযুক্ত গাড়িতে করে যাওয়ার সময় হামলার শিকার হয়েছে। ইসরায়েলি সেনাবাহিনীকে জানানোর পরও দেইর আল বালাহর একটি গুদাম থেকে বের হওয়ার সময় দলটি বিমান হামলার শিকার হয়। এটি কেবল ডব্লিউসিকের বিরুদ্ধে আক্রমণ নয়, ‘এটি মানবিক সংস্থাগুলোর ওপর আক্রমণ। এ ঘটনায় অঞ্চলটিতে খাদ্যকে যুদ্ধের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহারের সবচেয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতির চিত্র উঠে এসেছে।’

 

 

জনপ্রিয় সংবাদ

স্মৃতিসৌধে তারেক রহমান

৭ ত্রাণকর্মী হত্যায় বিশ্বজুড়ে নিন্দার ঝড়

আপডেট সময় : ০৭:২৯:২৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৪ এপ্রিল ২০২৪

◉ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দেবে স্পেন
◉ত্রাণ খালাস না করেই গাজা ছাড়ল জাহাজ

 

 

 

অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর বিমান হামলায় সাত ত্রাণকর্মী নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্য, পোল্যান্ড ও ফিলিস্তিনের নাগরিক ছিলেন। তারা ওয়াশিংটনভিত্তিক ত্রাণ সহায়তাকারী অলাভজনক প্রতিষ্ঠান ওয়ার্ল্ড সেন্ট্রাল কিচেনের কর্মী ছিলেন। গাজায় ক্ষুধার্ত মানুষের মধ্যে ত্রাণ সরবরাহকারীদের ওপর এমন নির্মম হামলায় বিশ্বজুড়ে নিন্দার ঝড় বইছে।

 

সেন্ট্রাল কিচেন জানায়, তাদের কর্মীরা সংঘাতহীন এলাকায় দুটি গাড়িতে করে ঘুরছিলেন। গাড়িতে ত্রাণকর্মী হিসেবে লোগোও লাগানো ছিল। গাজার দায়ের আল-বালাহ এলাকায় ১০০ টনের বেশি খাদ্য সরবরাহ করে তারা ফিরছিলেন। সার্বিক বিষয় ইসরায়েল পর্যবেক্ষণও করেছে। তারপরও তাদের কর্মীদের ওপর বিমান হামলা হয়। সংস্থার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এরিন গোরে বলেন, ইসরায়েলের হামলায় এত সুন্দর জীবনগুলো শেষ হয়ে গেল! তারা মানুষকে খাবার দিতে পছন্দ করতেন; সব কিছুর ঊর্ধ্বে রেখেছিলেন মানবতাকে। মানুষের জন্য জীবন দেওয়ার মাধ্যমে তারা যে প্রভাব রেখে গেছেন, তা অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবে।

 

ত্রাণ সংস্থাটি বিশ্বের বিপর্যয়ে পড়া এলাকায় খাবার সরবরাহ করে। গাজায় দুর্ভিক্ষের মুখে থাকা লাখ লাখ মানুষকে ত্রাণ দেওয়া অল্প সংখ্যক সংস্থার একটি এটি। সামাজিক মাধ্যম এক্সে সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা আন্দ্রেস বলেন, ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর বিমান হামলায় তারা কয়েকজন ভাই ও বোনকে হারিয়েছেন। ইসরায়েলের সরকারের উচিত নির্বিচারে হত্যা বন্ধ করা; মানবিক সহায়তা সীমিত করার প্রচেষ্টা থামানো। তাদের অবশ্যই বেসামরিক মানুষ ও ত্রাণকর্মী হত্যা বন্ধ করতে হবে; খাদ্যকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতে হবে। যারা মারা গেছেন, সেই স্বর্গের দূতেরাই ইউক্রেন, গাজা, তুরস্ক, মরক্কো, বাহামাস, ইন্দোনেশিয়ায় দুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন।

 

নিহতদের মধ্যে জোমি ফ্রাঙ্ককমকে অস্ট্রেলীয় বলে চিহ্নিত করে দেশটির প্রধানমন্ত্রী আন্থনি আলবানিজ বলেন, অস্ট্রেলিয়া এ হত্যার তীব্র নিন্দা জানায় এবং জবাবদিহি প্রত্যাশা করে। এই জোমিই অস্ট্রেলিয়ায় দাবানল চলাকালে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করেছিলেন। এ ধরনের হত্যাকাণ্ড সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য।
নিহত পোলিশ কর্মীর নাম দামিয়ান সোবোল। এ নিয়ে পোল্যান্ড ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূতকে তলব করে ব্যাখ্যা চেয়েছে। গাড়িটির চালক ছিলেন ফিলিস্তিনের সাইফ ইসসাম আবু-তাহা। যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা কাউন্সিলের মুখপাত্র আদ্রিয়ানি ওয়াটসন এক্সে বলেন, এ হত্যার খবরে তিনি মর্মাহত ও গভীরভাবে ব্যথিত। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ওয়্যাং ওয়েনবিন বলেন, ত্রাণকর্মীদের ওপর হামলার খবরে বেইজিং মর্মাহত। অন্য ত্রাণ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোও এ নিয়ে নিন্দা ও শোক জানিয়েছে।

 

দ্য গার্ডিয়ান অনলাইন জানায়, ত্রাণকর্মী হত্যার ঘটনায় কড়া বার্তা দিয়েছেন যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন। তিনি এ ঘটনার ‘পূর্ণ ও স্বচ্ছ ব্যাখ্যা’ চেয়েছেন। সাইপ্রাসের প্রেসিডেন্ট নিকোস খ্রিস্টদৌলিদেস বলেন, অবিলম্বে এ হত্যার তদন্ত হওয়া উচিত। সেই সঙ্গে আমাদের উচিত গাজায় ত্রাণ সরবরাহ দ্বিগুণ করা। এ প্রেক্ষপটে ইউরোপীয় কমিশন ইসরায়েলের প্রতি আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেছে। হামলার নিন্দা জানিয়েছে স্পেনও। তবে হামলার ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেছে ইসরায়েল। আর হামাস হামলার নিন্দা জানিয়ে জাতিসংঘকে তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে। ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের জন্য জাতিসংঘের ত্রাণ ও কর্মসংস্থান সংস্থার (ইউএনআরডব্লিউএ) সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান অনুসারে, ইসরায়েলি হামলায় গত ছয় মাসে ১৭৪ জন মানবাধিকারকর্মী নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ১৭১ জনই ইউএনআরডব্লিউএ কর্মী। সংস্থাটির ইতিহাসে একে সবচেয়ে বড় প্রাণহানির ঘটনা বলে উল্লেখ করেছে জাতিসংঘ।

 

 

এদিকে গত মঙ্গলবার নিজের সঙ্গে জর্ডান সফরে যাওয়া সাংবাদিকদের স্পেন প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ জানান, চলতি বছরের জুলাই মাসের মধ্যে ফিলিস্তিনিকে স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দেবে স্পেন। পাশাপাশি এই দেশটি দখলদার ইসরায়েলকেও রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিতে আরব দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানাবে।স্পেনের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা ইএফই ও সংবাদপত্র এল পাইসসহ লা ভ্যানগার্ডিয়া বলছে, ফিলিস্তিনিকে স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দিতে ইউরোপের অন্যান্য দেশগুলোকেও রাজি করানোর চেষ্টা করছে স্প্যানিশ সরকার। স্পেনের প্রধানমন্ত্রীর বিশ্বাস, তারা যখন ফিলিস্তিনকে স্বাধীন দেশের স্বীকৃতি দেবে, তখন ইউরোপের অন্যান্য দেশগুলোও তাদের দেখানো পথে এগোবে। এরই মধ্যে স্লোভেনিয়া, মাল্টা ও আয়ারল্যান্ড স্পেনের আহ্বানে সম্মতি জানিয়েছে। গত ২২ মার্চ এক যৌথ বিবৃতিতে এই চারটি দেশ জানায়, যখন উপযুক্ত সময় আসবে, ঠিক তখনই ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দেবে তারা। এপ্রিলে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সভাপতির দায়িত্বে থাকবে মাল্টা। জাতিসংঘে নিযুক্ত দেশটির রাষ্ট্রদূত ভেনেসা ফ্রেজিয়ার জানিয়েছেন, তিনি এখনো ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে পূর্ণ সদস্যতার বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য আনুষ্ঠানিক অনুরোধ পাননি।

 

এর আগে, স্পেনের নেতৃত্বে ইউরোপের আরো তিনটি দেশের ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়ে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে ইসরায়েলের নেতানিয়াহু প্রশাসন। তাদের দাবি, এই মুহূর্তে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়া মানে, ‘সন্ত্রাসী গোষ্ঠীদের’ হাতে কাক্সিক্ষত পুরস্কার তুলে দেওয়া।

 

ধারণা করা হচ্ছে, নভেম্বরে হতে যাওয়া যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে ফিলিস্তিনকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়টি গতি পেতে পারে। তবে মধ্যপ্রাচ্য ও ইসলামিক দেশগুলো ফিলিস্তিনিকে স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দিলেও ইউরোপের বেশিরভাগ দেশই দেয়নি। ১৯৮৮ সাল থেকে, জাতিসংঘের ১৯৩টি সদস্য রাষ্ট্রের মধ্যে ১৩৯টি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিয়েছে।

 

অন্যদিকে গাজায় ইসরায়েলি হামলায় সাত ত্রাণকর্মী নিহত হওয়ার পর ত্রাণসামগ্রী খালাস না করেই সাইপ্রাসে ফিরে যাচ্ছে আন্তর্জাতিক ত্রাণ সহায়তা সংস্থা ওয়ার্ল্ড সেন্ট্রাল কিচেনের জাহাজ। গত সোমবারের ওই হামলার পরপরই ত্রাণ কার্যক্রম বন্ধের ঘোষণা দেয় সংস্থাটি। এর আগে জাহাজ থেকে মাত্র ১০০ টন খাদ্য খালাস করেছিলেন কর্মীরা। গত মঙ্গলবার সাইপ্রাসের কর্মকর্তারা গাজার জন্য ত্রাণবাহী জাহাজ ফিরে আসার কথা নিশ্চিত করেন বলে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। ত্রাণ কার্যক্রম বন্ধের ঘোষণা দেওয়ার পরপরই ২৪০ টন ত্রাণবাহী জাহাজ জেনিফার আবার সাইপ্রাসের উদ্দেশে ফিরে যায়। এক বিবৃতিতে সংস্থার সিইও এরিন গোর বলেন, নিহত ত্রাণকর্মীর দলটি ডব্লিউসিকে লোগোযুক্ত গাড়িতে করে যাওয়ার সময় হামলার শিকার হয়েছে। ইসরায়েলি সেনাবাহিনীকে জানানোর পরও দেইর আল বালাহর একটি গুদাম থেকে বের হওয়ার সময় দলটি বিমান হামলার শিকার হয়। এটি কেবল ডব্লিউসিকের বিরুদ্ধে আক্রমণ নয়, ‘এটি মানবিক সংস্থাগুলোর ওপর আক্রমণ। এ ঘটনায় অঞ্চলটিতে খাদ্যকে যুদ্ধের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহারের সবচেয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতির চিত্র উঠে এসেছে।’