➤জনগণের সেবা করলে ভোটের চিন্তা থাকবে না
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গাজার কোনো অংশ পুনর্দখলের ইসরায়েলি পরিকল্পনার বিরুদ্ধে এবং একইসঙ্গে গাজাবাসীকে তাদের নিজস্ব ভূখণ্ড থেকে বিতাড়িত না করা এবং ইসরায়েলের পাশাপাশি ফিলিস্তিনিদের একটি পৃথক স্বাধীন রাষ্ট্রের অধিকার প্রত্যাখ্যান না করার পক্ষে তার দৃঢ় অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেছেন।
ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের কাছে পাঠানো একটি চিঠিতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি এই সুযোগে গত ৮ অক্টোবর, ২০২৩ থেকে গাজা এবং পশ্চিম তীরে নিরবচ্ছিন্ন ইসরায়েলি গণহত্যায় শিশু, নারী ও পুরুষসহ নিরপরাধ মানুষের প্রাণহানির মর্মান্তিক ক্ষয়ক্ষতিতে ফিলিস্তিনের সরকার ও ভ্রাতৃপ্রতিম জনগণের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জানাচ্ছি।
তিনি আরো বলেন, আমি ১৯ মার্চ, ২০২৪ তারিখে আপনার দূত এবং ফাতাহ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদকের মাধ্যমে আমাকে লেখা চিঠির প্রাপ্তি স্বীকার করছি। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী একটি দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধবিরতির জন্য তার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করে বেসামরিক জীবন ও অবকাঠামো রক্ষায় সংশ্লিষ্ট সকলকে সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানান।
শেখ হাসিনা গাজার জন্য ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীর ‘ডে আফটার’ যুদ্ধোত্তর পরিকল্পনা সম্পর্কে অবগত রয়েছেন উল্লেখ করে তা নিয়ে মাহমুদ আব্বাসের গভীর উদ্বেগকে সমর্থন করে বলেন, পরিকল্পনাটি ফিলিস্তিনি জনগণের অধিকারের অবমাননা এবং আন্তর্জাতিক আইন ও চুক্তির লঙ্ঘন। এটা হতাশাজনক যে, পরিকল্পনাটি সংঘাত বন্ধে এই দীর্ঘস্থায়ী কোনো বাস্তব পথ প্রদর্শন করতে ব্যর্থ হয়েছে। বরং, এর উদ্দেশ্য হচ্ছে গাজায় ফিলিস্তিনিদের বৈধ জাতীয় আকাক্সক্ষাকে দমন করা এবং ভূমির ওপর ইসরায়েলি নিয়ন্ত্রণ স্থায়ী করা।
শেখ হাসিনা বলেন, এই প্রেক্ষাপটে আমরা আমাদের দৃঢ় অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করছি যে, আমরা গাজার যে কোনো অংশ পুনরুদ্ধার করার জন্য ইসরায়েলি পরিকল্পনার বিরুদ্ধে, গাজাবাসীদের তাদের নিজস্ব অঞ্চল থেকে বিতাড়িত করা হবে না, গাজা ভূখণ্ড ছোট করা হবে না, ইউএনআরডব্লিউএ-এর বাস্তবায়নের ক্ষমতার ওপর কোনো সীমাবদ্ধতা নেই। ম্যান্ডেট, এবং ইসরায়েলের পাশাপাশি একটি পৃথক ও স্বাধীন রাষ্ট্রে ফিলিস্তিনিদের অধিকার প্রত্যাখ্যান করা হবে না।
তিনি বলেন, আমরা আরো মনে করি যে, সামরিক উপায় এই সংঘাতের সমাধান নয়। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের রেজুলেশন এবং ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অফ জাস্টিসের আদেশের ওপর ভিত্তি করে চলমান সংকট সমাধানের জন্য একটি বিশ্বাসযোগ্য প্রক্রিয়া বাস্তবায়নের সময় এসেছে, যা শুধু ফিলিস্তিনি ও ইসরায়েলিদের পাশাপাশি বসবাসকারী দুই রাষ্ট্রীয় সমাধানের মাধ্যমেই অর্জন করা যেতে পারে।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলেন, দখলদারিত্ব ও গণহত্যার শিকার একটি জাতি হিসেবে আমরা প্রকৃতপক্ষে দখলকৃত ও নির্যাতিত ফিলিস্তিনিদের দুর্দশা অনুভব করি। এইভাবে, আমরা আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্মে ফিলিস্তিনের জনগণের সঙ্গে আমাদের পূর্ণ সংহতি প্রকাশ করছি, ইসরায়েলি দখলদারিত্বের নিন্দা জানাচ্ছি এবং আন্তর্জাতিক আইনের ভিত্তিতে একটি ন্যায়সঙ্গত সমাধানের পক্ষে কথা বলছি।
তিনি বলেন, মুসলিম ভাই হিসেবে, আমরা পূর্ব জেরুজালেমের রাজধানী হিসেবে ১৯৬৭ সালের সীমানাসহ স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্য আপনার যথার্থ আকাক্সক্ষার প্রতি আমাদের সমর্থনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং অবিচল থাকব। এই প্রেক্ষাপটে, আমরা সকল আন্তর্জাতিক ফোরামে এবং এর বাইরেও আমাদের সমর্থনের মাধ্যমে জাতিসংঘে ফিলিস্তিনের পূর্ণ সদস্যপদ পাওয়ার জন্য আপনার প্রচেষ্টাকে সমর্থন করার জন্য আমাদের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করছি।
তিনি বলেন, ন্যায়বিচার, শান্তি ও সম্প্রীতি বজায় রাখা ইসলাম এবং সকল মহান ধর্মের মূল শিক্ষা। এটাকে আমরা সকল দ্বন্দ্ব ও ভোগান্তি নিরসনে প্রতিষেধক বলে মনে করি।
এদিকে গতকাল সকালে তেজগাঁওয়ে নিজের কার্যালয়ের শাপলা হলে দুই সিটি করপোরেশন কুমিল্লা ও ময়মনসিংহের নবনির্বাচিত মেয়র এবং পাঁচ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এবং ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলরদের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে দেওয়া ভাষণে তিনি বলেন, জনগণের সেবা করলে ভোটের চিন্তা থাকবে না ।
স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধিদের জনকল্যাণে সর্বোচ্চ আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করার নির্দেশনা দিয়ে তিনি বলেন, জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস কোনোভাবেই হারাবেন না। তাই তাদের পাশে দাঁড়িয়ে সেই অনুযায়ী মানুষের জন্য কাজ করুন।
সরকার দেশের প্রতিটি এলাকার উন্নয়ন করেছে এবং তৃণমূলের মানুষকে ঘিরেই এই উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালিত হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা। তিনি জনপ্রতিনিধিদের জনগণের কাছে দেওয়া প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে কাজ করার এবং বর্তমান উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানান।
সরকারপ্রধান বলেন, জনগণকে উন্নত সেবা প্রদান, জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন ও পরিকল্পিত নগরী গড়ে তোলা সরকারের লক্ষ্য। এরই মধ্যে আমরা ঘোষণা দিয়েছি ‘আমার গ্রাম, আমার শহর’। অর্থাৎ গ্রামের মানুষ সব নাগরিক সুবিধা পাবে।
দুর্নীতি, মাদক ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জনপ্রতিনিধিদের সজাগ থাকার নির্দেশনা দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘দুর্নীতি, মাদক, জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসের পথ থেকে সবাই যেন দূরে থাকে, সেদিকে আপনাদের লক্ষ রাখতে হবে।’
























