১২:৩৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

জমে উঠেছে শেষ সময়ের কেনাকাটা

◆ অভিজাত পাড়ায় বেড়েছে বেচাকেনা
◆ফুটপাতেও ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড়
◆ বেচাকেনায় বেড়েছে ক্যাসলেস লেনদেন
◆ টুপি-আতর-জায়নামাজের দোকানে মুসল্লিদের ভিড়
◆প্রসাধনীর দোকানে তরুণীদের সরগমর
◆ মসলার বাজারে ‘আগুন’ দর

 

 

ঈদের আগ মুহূর্তে রাজধানীর শপিং মল ও বিপণি বিতানগুলোতে দেখা যাচ্ছে ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড়। গত দুই দিন সরকারি ছুটি থাকায় মার্কেটগুলোতে জমজমাট বেচাকেনা হয়েছে। মার্কেটের সামনের ফুটপাত থেকে শুরু করে মূল দোকানে বাড়তে থাকে ক্রেতা সমাগম। ইফতারের পর যেন এসব এলাকায় পা ফেলার জায়গা নেই। সবখানেই মানুষ আর মানুষ। কেউ কিনছেন, কেউবা দেখছেন।

 

ঈদে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে বিক্রিও বেশি হয়। তবে অন্য বছরের তুলনায় এবার বেচাবিক্রি কম বলেও জানালেন ব্যবসায়ীরা। শপিংমলগুলোতে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে একসঙ্গে কেনাকাটা করার দৃশ্য চোখে পড়েছে।

রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকায় দেখা যায়, শুধু শপিংমল নয়, ফুটপাতের দোকানেও ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড়। তুলনামূলকভাবে দাম কম হওয়ায় এখান থেকেই পছন্দের পোশাক কিনছেন অনেকেই। নিউমার্কেট এলাকার ফুটপাতেও একদামে বিক্রি হয় কাপড়, ফলে ক্রেতারাও দরদাম করা ছাড়া স্বাচ্ছন্দ্যে কেনাকাটা করতে পারছেন। এছাড়া স্বল্প আয়ের মানুষের শেষ ভরসাও ফুটপাতের দোকানে।

বিক্রেতারা জানান, দোকান ভাড়া সেভাবে না থাকায় এবং খরচ কম হওয়ায় অনেকটা কম দামে কাপড় বিক্রি করতে পারেন তারা। তাই তাদের দোকানে ক্রেতা সমাগমও বেশি।

ফুটপাতের এসব দোকান ঘুরে দেখা যায়, ছেলেদের টি-শার্ট ১০০ টাকা থেকে ২০০ টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে। জিনসের প্যান্ট ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা, শার্ট ২০০ থেকে ২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া মেয়েদের প্লাজু ১০০ টাকা, জামা ৩০০ টাকা, ওড়না ১৫০ থেকে ২০০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। বাচ্চাদের হাফ প্যান্ট বিক্রি হচ্ছে ২৫-৩০ টাকায়, সুতি কাপড়ের জামা মিলছে ৩০০ টাকায়।

রাজধানীর নিউমার্কেটের ফুটপাতে মেয়েদের কামিজ সুলভ মূল্যে বিক্রি করেন মো. সেকান্দার মিয়া। তিনি বলেন, সপ্তাহান্তে এক শুক্রবার অন্তত দেড়শ-দুইশ পিস জামা বিক্রি করি। অথচ আজ সকাল থেকে শুরু করে এখন ইফতারের সময় হয়ে আসছে, বিক্রি হয়েছে বড়জোর ৪০টি জামা। পবিত্র ঈদুল ফিতরের আগে শেষ সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্রবার সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত রাজধানীর নিউমার্কেট, ইস্টার্ন প্লাজা, ধানমন্ডির রাপা প্লাজা, বসুন্ধরা সিটিসহ বড় বড় বিপণিবিতান ঘুরে দেখা গেল ক্রেতার ভিড় আছে, তবে সেটি উপচেপড়া নয়।

 

বেচাবিক্রি কেমন জানতে চাইলে সাকিব নামে এক বিক্রেতা বলেন, বেচাকেনা গত বছরের তুলনায় অনেক কম। মানুষজনের কাছে টাকাপয়সা হয়তো কম। নিউমার্কেট মসজিদের মূল ফটকের ডানে ছোট জুয়েলারি দোকানে বিকালে ইমিটেশন জুয়েলারি গহনা দেখছিলেন আনোয়ারা। তিনি বলেন, সকালে এসেছি, বড় মেয়ের জন্য সাড়ে তিন হাজার টাকার মধ্যে একটি আলিয়াকাট নিয়েছে, ছোট মেয়ে একটি আফগান নিয়েছে। নামে আফগান হলেও এটা ইন্ডিয়ান ড্রেস, এটার প্রতি মেয়েদের নজর বেশি মনে হলো। ছেলে আরিফের শার্ট, পাঞ্জাবি ও প্যান্ট কিনেছি।

বসুন্ধরা সিটি শপিংমলে স্ত্রী রাবেয়া রহমান ও মেয়ে রুবিনা রহমানকে নিয়ে ঈদের কেনাকাটায় এসেছেন সরকারি কর্মকর্তা রাজীব হাসান। তিনি বলছিলেন, মেয়ের জামা-জুতা নিলাম। জুতা ২ হাজার ৯০০ টাকা নিয়েছে, মেয়ের জামায় গেল সাড়ে ৬ হাজার টাকা। হাজার তিনেকের মধ্যে একটি শাড়ি নেব চিন্তা করেছি স্ত্রীর জন্য, নিজের জন্য একটি পাঞ্জাবি।

গুলশান, বনানী ও বসুন্ধরা এলাকার পোশাকের দোকানগুলোতে বেচাকেনা বেড়েছে বলে জানালেন বিক্রেতারা। বনানীতে ভারতীয় ফ্যাশন ব্র্যান্ড বিবার কর্মী জাকিয়া সুলতানা বলছিলেন, শেষ দিকে এখন বেচাবিক্রি একটু বেড়েছে। সামনের কয়েকটা দিন আরো বেশি হবে আশা করছি। গুলশান পিংক সিটির চার তলায় বিদেশি পোশাকের দোকান এইচটু গ্যালারি থেকে বের হচ্ছিলেন নিকেতনের তরুণী নওশিন রহমান দোলা।

এদিকে সায়েন্স ল্যাব মোড়ের বায়তুল মামুর মসজিদ মার্কেটের নিচতলা ও দোতলায় পাঞ্জাবির দোকানে বেশ ভিড় দেখা গেল। পাশের প্রিয়াঙ্গন শপিং সেন্টারের নিচতলায় সামনের দোকান খাদি মিউজিয়াম ও বনি ফ্যাশনে কিছুটা ভিড় দেখা গেলেও অন্য দোকানগুলো ততটা ক্রেতাসরব নয়। এসব দোকানে ভারতীয় পাঞ্জাবির আধিক্য চোখে পড়ার মতো।

 

এলিফ্যান্ট রোডে জুতার দোকানগুলোতে বেশ ক্রেতাসমাগম দেখা গেল। স্থানীয় ও আমদানিকৃত জুতার চেয়ে ব্র্যান্ডের শোরুমগুলোতে ক্রেতার উপস্থিতি অনেক। অ্যাপেক্স, বাটা, বে, ওরিয়নের জুতার এলিফ্যান্ট রোডের শোরুমে ক্রেতা অনেক। এদিকে নতুন জামাকাপড় কেনার পাশাপাশি ঈদের নামাজের জন্য চাই নতুন টুপি, নতুন পাঞ্জাবি ও সুগন্ধি আতর। ঈদে মুসল্লিদের মাঝে ভিন্নমাত্রা যোগ করে অতিগুরুত্বপূর্ণ এই অনুসঙ্গগুলো। রাজধানীর ফুটপাতের সুরমা, আতর, টুপি, তসবি আর জায়নামাজের দোকানগুলোতে তাই ঈদের আগে দেখা যায় উপচে পড়া ভিড়।

 

সরেজমিনে দেখা গেছে, ঈদকে সামনে রেখে জমে উঠেছে রাজধানীর ঈদবাজার। জুমার নামাজ শেষে ছোট-বড় মার্কেট, বিপণিবিতান এবং ফুটপাতের টুপি, আতর ও তসবির দোকানগুলোতে ভিড় করছেন মুসল্লিরা। রাজধানীর বায়তুল মোকাররমের ও পীর ইয়ামেনি মার্কেট ঘুরে এমন দৃশ্য দেখা গেছে।
ভিড় বাড়ছে প্রসাধনীর দোকানে: এবারের ঈদ পড়ছে গ্রীষ্মের খরতাপের মধ্যে। এ কারণে ঈদের সাজের ক্ষেত্রে সচেতন মেয়েরা মাথায় রাখছেন প্রকৃতি ও পরিবেশের কথা। চৈত্রের কাঠফাটা রোদ থেকে ত্বককে রক্ষা করতে হবে ঠিকই, কিন্তু দাবদাহে ভারি মেকআপও ফেলতে পারে অস্বস্তিতে। এবারের ঈদে তাই হালকা ও স্নিগ্ধ সাজসজ্জার প্রতিই তরুণীদের ঝোঁক।

 

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আনান কোরেশি ছোট বোনকে নিয়ে এসেছিলেন শপিং মলে। প্রসাধনীর দোকানে খুঁজছিলেন পছন্দের মেকআপ। আনানের মতো আরো অনেক মেয়েই এখন গয়না ও প্রসাধনীর বাজারে ভিড় করছেন। তাদের পোশাক-আশাক, জুতা কেনা হয়েছে আগেই। শেষ সময়ে প্রসাধনীতে সাজগোজ সম্পূর্ণ করার প্রস্তুতি চলছে এখন।

সারা বিশ্বেই এখন ‘নো মেকআপ-মেকআপ লুক’-এর ধারা জনপ্রিয়। বাংলাদেশের নারীরাও এদিকে ঝুঁকছেন। সাজের এই ধারায় মেকআপ করার পরও মনে হবে না কোনো মেকআপ করা হয়েছে। আতিশয্যহীন এই সাজে স্বাভাবিক সৌন্দর্য আভা ছড়ায়। বিশেষ করে রাজধানী ঢাকায় এবারের ঈদে এই ধারা জোরদারভাবে দেখা যাবে বলে জানিয়েছেন রূপ বিশেষজ্ঞ ও প্রসাধনী বিক্রেতারা। তবে সহজ স্বাভাবিক ‘লুক’ আনলেও এ ধরনের সজ্জার খরচ কম নয়। এর বাইরে ত্বকের যত্ন নিয়ে বাড়তি সচেতনতা দেখা যাচ্ছে তরুণীদের মধ্যে।

পোশাক কেনার পাশাপাশি বেড়েছে মসলার চাহিদা। সেসুবাদে বেড়েছে দাম। মসলার বাজারে যেন ‘আগুন’ দর। পবিত্র ঈদুল ফিতর ঘিরে ভিড় জমে উঠেছে রাজধানীর বিভিন্ন মসলার বাজারে। কয়েকটি মসলার দাম কমলেও বাজারে যেন দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির আগুন। ঈদ সামনে রেখে বাহারি রান্নার অন্যতম উপকরণগুলোর দামও বেড়েছে কয়েকগুণ। মসলার প্রকারভেদে কেজিপ্রতি ২০ টাকা থেকে বেড়েছে ২ হাজার ৬০০ টাকা পর্যন্ত।

বাজার ঘুরে দেখা গেছে, রমজানের আগে ইন্ডিয়ান জিরা কেজিপ্রতি ১২০০ টাকায় বিক্রি হলেও কেজিপ্রতি ৪০০ টাকা কমে এখন ৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কেজিপ্রতি ১৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে শাহী জিরা আর ৪০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে মিষ্টি জিরা।

বেড়েছে ক্যাশলেস পেমেন্ট: নিউমার্কেটের গাউছিয়া, চাঁদনীচক, ধানমন্ডি হকার্স মার্কেটসহ দেশি কাপড়ের বেশ কিছু দোকানির সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে নগদ মূল্য পরিশোধের হার কমেছে। মানুষ এসেই জিজ্ঞেস করে কার্ডে কিংবা মোবাইল ব্যাংকিংয়ে পেমেন্ট হবে কি না। এ জন্য অনেকেই ব্যবস্থা রাখতে বাধ্য হচ্ছেন।

জনপ্রিয় সংবাদ

স্মৃতিসৌধে তারেক রহমান

জমে উঠেছে শেষ সময়ের কেনাকাটা

আপডেট সময় : ০৭:৫০:৫৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৭ এপ্রিল ২০২৪

◆ অভিজাত পাড়ায় বেড়েছে বেচাকেনা
◆ফুটপাতেও ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড়
◆ বেচাকেনায় বেড়েছে ক্যাসলেস লেনদেন
◆ টুপি-আতর-জায়নামাজের দোকানে মুসল্লিদের ভিড়
◆প্রসাধনীর দোকানে তরুণীদের সরগমর
◆ মসলার বাজারে ‘আগুন’ দর

 

 

ঈদের আগ মুহূর্তে রাজধানীর শপিং মল ও বিপণি বিতানগুলোতে দেখা যাচ্ছে ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড়। গত দুই দিন সরকারি ছুটি থাকায় মার্কেটগুলোতে জমজমাট বেচাকেনা হয়েছে। মার্কেটের সামনের ফুটপাত থেকে শুরু করে মূল দোকানে বাড়তে থাকে ক্রেতা সমাগম। ইফতারের পর যেন এসব এলাকায় পা ফেলার জায়গা নেই। সবখানেই মানুষ আর মানুষ। কেউ কিনছেন, কেউবা দেখছেন।

 

ঈদে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে বিক্রিও বেশি হয়। তবে অন্য বছরের তুলনায় এবার বেচাবিক্রি কম বলেও জানালেন ব্যবসায়ীরা। শপিংমলগুলোতে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে একসঙ্গে কেনাকাটা করার দৃশ্য চোখে পড়েছে।

রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকায় দেখা যায়, শুধু শপিংমল নয়, ফুটপাতের দোকানেও ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড়। তুলনামূলকভাবে দাম কম হওয়ায় এখান থেকেই পছন্দের পোশাক কিনছেন অনেকেই। নিউমার্কেট এলাকার ফুটপাতেও একদামে বিক্রি হয় কাপড়, ফলে ক্রেতারাও দরদাম করা ছাড়া স্বাচ্ছন্দ্যে কেনাকাটা করতে পারছেন। এছাড়া স্বল্প আয়ের মানুষের শেষ ভরসাও ফুটপাতের দোকানে।

বিক্রেতারা জানান, দোকান ভাড়া সেভাবে না থাকায় এবং খরচ কম হওয়ায় অনেকটা কম দামে কাপড় বিক্রি করতে পারেন তারা। তাই তাদের দোকানে ক্রেতা সমাগমও বেশি।

ফুটপাতের এসব দোকান ঘুরে দেখা যায়, ছেলেদের টি-শার্ট ১০০ টাকা থেকে ২০০ টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে। জিনসের প্যান্ট ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা, শার্ট ২০০ থেকে ২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া মেয়েদের প্লাজু ১০০ টাকা, জামা ৩০০ টাকা, ওড়না ১৫০ থেকে ২০০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। বাচ্চাদের হাফ প্যান্ট বিক্রি হচ্ছে ২৫-৩০ টাকায়, সুতি কাপড়ের জামা মিলছে ৩০০ টাকায়।

রাজধানীর নিউমার্কেটের ফুটপাতে মেয়েদের কামিজ সুলভ মূল্যে বিক্রি করেন মো. সেকান্দার মিয়া। তিনি বলেন, সপ্তাহান্তে এক শুক্রবার অন্তত দেড়শ-দুইশ পিস জামা বিক্রি করি। অথচ আজ সকাল থেকে শুরু করে এখন ইফতারের সময় হয়ে আসছে, বিক্রি হয়েছে বড়জোর ৪০টি জামা। পবিত্র ঈদুল ফিতরের আগে শেষ সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্রবার সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত রাজধানীর নিউমার্কেট, ইস্টার্ন প্লাজা, ধানমন্ডির রাপা প্লাজা, বসুন্ধরা সিটিসহ বড় বড় বিপণিবিতান ঘুরে দেখা গেল ক্রেতার ভিড় আছে, তবে সেটি উপচেপড়া নয়।

 

বেচাবিক্রি কেমন জানতে চাইলে সাকিব নামে এক বিক্রেতা বলেন, বেচাকেনা গত বছরের তুলনায় অনেক কম। মানুষজনের কাছে টাকাপয়সা হয়তো কম। নিউমার্কেট মসজিদের মূল ফটকের ডানে ছোট জুয়েলারি দোকানে বিকালে ইমিটেশন জুয়েলারি গহনা দেখছিলেন আনোয়ারা। তিনি বলেন, সকালে এসেছি, বড় মেয়ের জন্য সাড়ে তিন হাজার টাকার মধ্যে একটি আলিয়াকাট নিয়েছে, ছোট মেয়ে একটি আফগান নিয়েছে। নামে আফগান হলেও এটা ইন্ডিয়ান ড্রেস, এটার প্রতি মেয়েদের নজর বেশি মনে হলো। ছেলে আরিফের শার্ট, পাঞ্জাবি ও প্যান্ট কিনেছি।

বসুন্ধরা সিটি শপিংমলে স্ত্রী রাবেয়া রহমান ও মেয়ে রুবিনা রহমানকে নিয়ে ঈদের কেনাকাটায় এসেছেন সরকারি কর্মকর্তা রাজীব হাসান। তিনি বলছিলেন, মেয়ের জামা-জুতা নিলাম। জুতা ২ হাজার ৯০০ টাকা নিয়েছে, মেয়ের জামায় গেল সাড়ে ৬ হাজার টাকা। হাজার তিনেকের মধ্যে একটি শাড়ি নেব চিন্তা করেছি স্ত্রীর জন্য, নিজের জন্য একটি পাঞ্জাবি।

গুলশান, বনানী ও বসুন্ধরা এলাকার পোশাকের দোকানগুলোতে বেচাকেনা বেড়েছে বলে জানালেন বিক্রেতারা। বনানীতে ভারতীয় ফ্যাশন ব্র্যান্ড বিবার কর্মী জাকিয়া সুলতানা বলছিলেন, শেষ দিকে এখন বেচাবিক্রি একটু বেড়েছে। সামনের কয়েকটা দিন আরো বেশি হবে আশা করছি। গুলশান পিংক সিটির চার তলায় বিদেশি পোশাকের দোকান এইচটু গ্যালারি থেকে বের হচ্ছিলেন নিকেতনের তরুণী নওশিন রহমান দোলা।

এদিকে সায়েন্স ল্যাব মোড়ের বায়তুল মামুর মসজিদ মার্কেটের নিচতলা ও দোতলায় পাঞ্জাবির দোকানে বেশ ভিড় দেখা গেল। পাশের প্রিয়াঙ্গন শপিং সেন্টারের নিচতলায় সামনের দোকান খাদি মিউজিয়াম ও বনি ফ্যাশনে কিছুটা ভিড় দেখা গেলেও অন্য দোকানগুলো ততটা ক্রেতাসরব নয়। এসব দোকানে ভারতীয় পাঞ্জাবির আধিক্য চোখে পড়ার মতো।

 

এলিফ্যান্ট রোডে জুতার দোকানগুলোতে বেশ ক্রেতাসমাগম দেখা গেল। স্থানীয় ও আমদানিকৃত জুতার চেয়ে ব্র্যান্ডের শোরুমগুলোতে ক্রেতার উপস্থিতি অনেক। অ্যাপেক্স, বাটা, বে, ওরিয়নের জুতার এলিফ্যান্ট রোডের শোরুমে ক্রেতা অনেক। এদিকে নতুন জামাকাপড় কেনার পাশাপাশি ঈদের নামাজের জন্য চাই নতুন টুপি, নতুন পাঞ্জাবি ও সুগন্ধি আতর। ঈদে মুসল্লিদের মাঝে ভিন্নমাত্রা যোগ করে অতিগুরুত্বপূর্ণ এই অনুসঙ্গগুলো। রাজধানীর ফুটপাতের সুরমা, আতর, টুপি, তসবি আর জায়নামাজের দোকানগুলোতে তাই ঈদের আগে দেখা যায় উপচে পড়া ভিড়।

 

সরেজমিনে দেখা গেছে, ঈদকে সামনে রেখে জমে উঠেছে রাজধানীর ঈদবাজার। জুমার নামাজ শেষে ছোট-বড় মার্কেট, বিপণিবিতান এবং ফুটপাতের টুপি, আতর ও তসবির দোকানগুলোতে ভিড় করছেন মুসল্লিরা। রাজধানীর বায়তুল মোকাররমের ও পীর ইয়ামেনি মার্কেট ঘুরে এমন দৃশ্য দেখা গেছে।
ভিড় বাড়ছে প্রসাধনীর দোকানে: এবারের ঈদ পড়ছে গ্রীষ্মের খরতাপের মধ্যে। এ কারণে ঈদের সাজের ক্ষেত্রে সচেতন মেয়েরা মাথায় রাখছেন প্রকৃতি ও পরিবেশের কথা। চৈত্রের কাঠফাটা রোদ থেকে ত্বককে রক্ষা করতে হবে ঠিকই, কিন্তু দাবদাহে ভারি মেকআপও ফেলতে পারে অস্বস্তিতে। এবারের ঈদে তাই হালকা ও স্নিগ্ধ সাজসজ্জার প্রতিই তরুণীদের ঝোঁক।

 

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আনান কোরেশি ছোট বোনকে নিয়ে এসেছিলেন শপিং মলে। প্রসাধনীর দোকানে খুঁজছিলেন পছন্দের মেকআপ। আনানের মতো আরো অনেক মেয়েই এখন গয়না ও প্রসাধনীর বাজারে ভিড় করছেন। তাদের পোশাক-আশাক, জুতা কেনা হয়েছে আগেই। শেষ সময়ে প্রসাধনীতে সাজগোজ সম্পূর্ণ করার প্রস্তুতি চলছে এখন।

সারা বিশ্বেই এখন ‘নো মেকআপ-মেকআপ লুক’-এর ধারা জনপ্রিয়। বাংলাদেশের নারীরাও এদিকে ঝুঁকছেন। সাজের এই ধারায় মেকআপ করার পরও মনে হবে না কোনো মেকআপ করা হয়েছে। আতিশয্যহীন এই সাজে স্বাভাবিক সৌন্দর্য আভা ছড়ায়। বিশেষ করে রাজধানী ঢাকায় এবারের ঈদে এই ধারা জোরদারভাবে দেখা যাবে বলে জানিয়েছেন রূপ বিশেষজ্ঞ ও প্রসাধনী বিক্রেতারা। তবে সহজ স্বাভাবিক ‘লুক’ আনলেও এ ধরনের সজ্জার খরচ কম নয়। এর বাইরে ত্বকের যত্ন নিয়ে বাড়তি সচেতনতা দেখা যাচ্ছে তরুণীদের মধ্যে।

পোশাক কেনার পাশাপাশি বেড়েছে মসলার চাহিদা। সেসুবাদে বেড়েছে দাম। মসলার বাজারে যেন ‘আগুন’ দর। পবিত্র ঈদুল ফিতর ঘিরে ভিড় জমে উঠেছে রাজধানীর বিভিন্ন মসলার বাজারে। কয়েকটি মসলার দাম কমলেও বাজারে যেন দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির আগুন। ঈদ সামনে রেখে বাহারি রান্নার অন্যতম উপকরণগুলোর দামও বেড়েছে কয়েকগুণ। মসলার প্রকারভেদে কেজিপ্রতি ২০ টাকা থেকে বেড়েছে ২ হাজার ৬০০ টাকা পর্যন্ত।

বাজার ঘুরে দেখা গেছে, রমজানের আগে ইন্ডিয়ান জিরা কেজিপ্রতি ১২০০ টাকায় বিক্রি হলেও কেজিপ্রতি ৪০০ টাকা কমে এখন ৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কেজিপ্রতি ১৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে শাহী জিরা আর ৪০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে মিষ্টি জিরা।

বেড়েছে ক্যাশলেস পেমেন্ট: নিউমার্কেটের গাউছিয়া, চাঁদনীচক, ধানমন্ডি হকার্স মার্কেটসহ দেশি কাপড়ের বেশ কিছু দোকানির সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে নগদ মূল্য পরিশোধের হার কমেছে। মানুষ এসেই জিজ্ঞেস করে কার্ডে কিংবা মোবাইল ব্যাংকিংয়ে পেমেন্ট হবে কি না। এ জন্য অনেকেই ব্যবস্থা রাখতে বাধ্য হচ্ছেন।