০১:১৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ইসলামে ইদ সালামি

 

ইদ শব্দটি আরবি শব্দ যার অর্থ হলো আনন্দ। এর শাব্দিক অর্থ হলো বারবার ফিরে আসা। এ দিনটি বারবার ফিরে আসে বলে এর নামকরণ হয়েছে ইদ।

ইদ উৎসবের প্রধান আকর্ষণ থাকে ইদি বা সালামি। নতুন পোশাক পরে নামাজ শেষে কোলাকুলি করে সবাই। এরপরই শুরু হয় বড়দের সালাম করা আর ইদি নেওয়া।

ইদি নেওয়ার প্রথা বহু আগ থেকেই চলে আসছে। বড়রা ছোটদের সালামি দেবে, এটাই থাকে ইদের মূল আকর্ষণ। এদিন শিশু-কিশোরদের বিশেষভাবে আকর্ষণ করে ইদি বা ইদ সালামি। বড়দের পক্ষ থেকে পাওয়া এই সালামি ছোটদের আনন্দ বাড়িয়ে দেয়।

ইদ আল্লাহ তাআলার বিশেষ অনুগ্রহ, আনন্দ ও খুশির বার্তা নিয়ে আসে।
ইসলামের দৃষ্টিতে ইদ সালামি দেয়ার প্রথা কোনো আপত্তি বা ধর্মীয় বাধা-নিষেধ নেই। বরং এটি একটি সুস্থ ও সুন্দর সামাজিক রীতি। এর মাধ্যমে ছোটদের প্রতি স্নেহ, মমতা ও ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ ঘটে।

ইসলামের দৃষ্টিতে মানুষকে খুশি করা মর্যাদাপূর্ণ কাজ। তা ছাড়া ইসলামে উপহার দেয়া-নেয়ার প্রতি উৎসাহিত করা হয়েছে। কেননা এতে পারস্পারিক বন্ধন সুদৃঢ় হয়।

রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য (কাউকে কিছু) দেয়, আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই দেয়া থেকে বিরত থাকে; আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই যে ভালোবাসে আর আল্লাহর জন্যই যে ঘৃণা করে, সে তার ইমান পূর্ণ করল।’ (তিরমিজি: ২৫২১)

অন্য হাদিসে আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, নবীজি (স.) বলেছেন, ‘পরস্পর হাদিয়া দাও, মহব্বত বৃদ্ধি পাবে।’ (আল আদাবুল মুফরাদ: ৫৯৪) অন্য হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি আমাদের ছোটদের স্নেহ করে না এবং আমাদের বড়দের সম্মান বোঝে না, সে আমাদের দলভুক্ত নয়।’ (তিরমিজি ও আবু দাউদ) আরেক হাদিসে এরশাদ হয়েছে, নবী (সা.) বলেন, ‘উত্তম আমল হলো, তোমার মুসলিম ভাইকে খুশি করা।… (শুআবুল ইমান)

তবে ইদ সালামি আদায় করতে গিয়ে কোনভাবে কারো প্রতি জুলুম করা যাবে না। সূরা আশ শোয়ারার শেষ আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘জুলুমবাজরা তাদের জুলুমের পরিণতি অচিরেই জানতে পারবে, তাদের গন্তব্যস্থল কেমন?’

জুলুম সম্পর্কে কোরআনে আরো ইরশাদ হয়েছে, ‘আর তোমরা জালেমদের প্রতি ঝুঁকে পড়বে না, জালেমদের সহযোগী হবে না, তাহলে আগুন (জাহান্নামের) তোমাদেরও স্পর্শ করবে।’(সূরা হুদ : ১১৩)

আর হাদিসে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘কেউ যদি তার কোনো ভাইয়ের সম্মানহানি কিংবা কোনো জিনিসের ক্ষতি করে থাকে, তবে আজই (দুনিয়াতেই) তার কাছ থেকে তা বৈধ করে নেওয়া উচিত (অর্থাৎ ক্ষমা চেয়ে নেওয়া ও ক্ষতিপূরণ দেওয়া উচিত) এবং সেই ভয়াবহ দিন আসার আগেই এটা করা উচিত, যেদিন টাকাকড়ি দিয়ে কোনো প্রতিকার করা যাবে না, বরং তার কাছে কোনো নেক আমল থাকলে তার জুলুমের পরিমাণ হিসেবে মজলুমকে ওই নেক আমল দিয়ে দেওয়া হবে এবং তার কোনো অসৎ কাজ না থাকলেও ওই মজলুমের অসৎ কাজ তার ওপর বর্তানো হবে।’ (সহিহ বোখারি ও জামে তিরমিজি)

ঈদ সালামি দেওয়ার ক্ষেত্রে কয়েকটি বিষয় লক্ষ রাখা দরকার। তা হলো-

১। আমাদের দেশে ইদ সালামি অনেক সময় জোর করে আদায় করে এটি অনৈসলামিক কালচার। এর সম্প্রসারণ রোধ করা জরুরি। কেউ এমনটি করলে তাকে নিষেধ করতে হবে।

২। সেলামি দেয়ার ক্ষেত্রে ছোট ভাইবোন ও সন্তানদের কাউকে দেয়া হবে আর কাউকে বঞ্চিত করা হবে-এমনটি যেন না হয়। এতে কারো মনে আঘাত লাগতে পারে। যা পারস্পরিক মনোমালিন্যেরও কারণ হতে পারে।

৩। সবাইকে সমানভাবে উপহার দেয়া জরুরি নয় বরং বয়স ও অবস্থা অনুযায়ী কমবেশি করা যাবে। যেমন- বড়কে বেশি আর ছোটকে কম, বিবাহিতকে এক রকম অবিবাহিতকে অন্য রকম— এতে কোনো আপত্তি নেই।

৪। বাচ্চারা হাতে টাকা পেয়ে আজেবাজে ও গুনাহের কাজে ব্যয় করছে কি না— সেদিকে অভিভাবকদের খেয়াল রাখতে হবে।

ডিজিটাল যুগে সালামির দেওয়া নেওয়াতেও এসেছে নতুনত্ব। যুক্ত হয়েছে অনলাইন সেবা। এখন অনলাইনের মাধ্যমেও ঈদ সালামি আদান-প্রদানের ব্যবস্থা রয়েছে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ঈদ সালামির আনন্দকে ছড়িয়ে দিতে এই সুযোগ করে দিয়েছে। তাই দূরে থেকেও এখন সালামি বাদ যাবে না। মোবাইল ফোনের মাধ্যমেই ইদ সালামি পৌঁছে যায় প্রিয়জনের পকেটে। আর এই ইদ সালামির মাধ্যমে পারস্পরিক সৌহার্দ্য, সম্প্রীতি আর ভ্রাতৃত্বের বন্ধন সুদৃঢ় করার পাশাপাশি বিশেষ করে শিশুদের মধ্যে উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে দিতে এটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

মো.শামীম হোসাইন
শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
মোবাইল : ০১৭২০৯৮০১৮৭

জনপ্রিয় সংবাদ

সপরিবারে হিথ্রো বিমানবন্দরে পৌঁছেছেন তারেক রহমান

ইসলামে ইদ সালামি

আপডেট সময় : ১০:২৫:৪২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৯ এপ্রিল ২০২৪

 

ইদ শব্দটি আরবি শব্দ যার অর্থ হলো আনন্দ। এর শাব্দিক অর্থ হলো বারবার ফিরে আসা। এ দিনটি বারবার ফিরে আসে বলে এর নামকরণ হয়েছে ইদ।

ইদ উৎসবের প্রধান আকর্ষণ থাকে ইদি বা সালামি। নতুন পোশাক পরে নামাজ শেষে কোলাকুলি করে সবাই। এরপরই শুরু হয় বড়দের সালাম করা আর ইদি নেওয়া।

ইদি নেওয়ার প্রথা বহু আগ থেকেই চলে আসছে। বড়রা ছোটদের সালামি দেবে, এটাই থাকে ইদের মূল আকর্ষণ। এদিন শিশু-কিশোরদের বিশেষভাবে আকর্ষণ করে ইদি বা ইদ সালামি। বড়দের পক্ষ থেকে পাওয়া এই সালামি ছোটদের আনন্দ বাড়িয়ে দেয়।

ইদ আল্লাহ তাআলার বিশেষ অনুগ্রহ, আনন্দ ও খুশির বার্তা নিয়ে আসে।
ইসলামের দৃষ্টিতে ইদ সালামি দেয়ার প্রথা কোনো আপত্তি বা ধর্মীয় বাধা-নিষেধ নেই। বরং এটি একটি সুস্থ ও সুন্দর সামাজিক রীতি। এর মাধ্যমে ছোটদের প্রতি স্নেহ, মমতা ও ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ ঘটে।

ইসলামের দৃষ্টিতে মানুষকে খুশি করা মর্যাদাপূর্ণ কাজ। তা ছাড়া ইসলামে উপহার দেয়া-নেয়ার প্রতি উৎসাহিত করা হয়েছে। কেননা এতে পারস্পারিক বন্ধন সুদৃঢ় হয়।

রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য (কাউকে কিছু) দেয়, আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই দেয়া থেকে বিরত থাকে; আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই যে ভালোবাসে আর আল্লাহর জন্যই যে ঘৃণা করে, সে তার ইমান পূর্ণ করল।’ (তিরমিজি: ২৫২১)

অন্য হাদিসে আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, নবীজি (স.) বলেছেন, ‘পরস্পর হাদিয়া দাও, মহব্বত বৃদ্ধি পাবে।’ (আল আদাবুল মুফরাদ: ৫৯৪) অন্য হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি আমাদের ছোটদের স্নেহ করে না এবং আমাদের বড়দের সম্মান বোঝে না, সে আমাদের দলভুক্ত নয়।’ (তিরমিজি ও আবু দাউদ) আরেক হাদিসে এরশাদ হয়েছে, নবী (সা.) বলেন, ‘উত্তম আমল হলো, তোমার মুসলিম ভাইকে খুশি করা।… (শুআবুল ইমান)

তবে ইদ সালামি আদায় করতে গিয়ে কোনভাবে কারো প্রতি জুলুম করা যাবে না। সূরা আশ শোয়ারার শেষ আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘জুলুমবাজরা তাদের জুলুমের পরিণতি অচিরেই জানতে পারবে, তাদের গন্তব্যস্থল কেমন?’

জুলুম সম্পর্কে কোরআনে আরো ইরশাদ হয়েছে, ‘আর তোমরা জালেমদের প্রতি ঝুঁকে পড়বে না, জালেমদের সহযোগী হবে না, তাহলে আগুন (জাহান্নামের) তোমাদেরও স্পর্শ করবে।’(সূরা হুদ : ১১৩)

আর হাদিসে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘কেউ যদি তার কোনো ভাইয়ের সম্মানহানি কিংবা কোনো জিনিসের ক্ষতি করে থাকে, তবে আজই (দুনিয়াতেই) তার কাছ থেকে তা বৈধ করে নেওয়া উচিত (অর্থাৎ ক্ষমা চেয়ে নেওয়া ও ক্ষতিপূরণ দেওয়া উচিত) এবং সেই ভয়াবহ দিন আসার আগেই এটা করা উচিত, যেদিন টাকাকড়ি দিয়ে কোনো প্রতিকার করা যাবে না, বরং তার কাছে কোনো নেক আমল থাকলে তার জুলুমের পরিমাণ হিসেবে মজলুমকে ওই নেক আমল দিয়ে দেওয়া হবে এবং তার কোনো অসৎ কাজ না থাকলেও ওই মজলুমের অসৎ কাজ তার ওপর বর্তানো হবে।’ (সহিহ বোখারি ও জামে তিরমিজি)

ঈদ সালামি দেওয়ার ক্ষেত্রে কয়েকটি বিষয় লক্ষ রাখা দরকার। তা হলো-

১। আমাদের দেশে ইদ সালামি অনেক সময় জোর করে আদায় করে এটি অনৈসলামিক কালচার। এর সম্প্রসারণ রোধ করা জরুরি। কেউ এমনটি করলে তাকে নিষেধ করতে হবে।

২। সেলামি দেয়ার ক্ষেত্রে ছোট ভাইবোন ও সন্তানদের কাউকে দেয়া হবে আর কাউকে বঞ্চিত করা হবে-এমনটি যেন না হয়। এতে কারো মনে আঘাত লাগতে পারে। যা পারস্পরিক মনোমালিন্যেরও কারণ হতে পারে।

৩। সবাইকে সমানভাবে উপহার দেয়া জরুরি নয় বরং বয়স ও অবস্থা অনুযায়ী কমবেশি করা যাবে। যেমন- বড়কে বেশি আর ছোটকে কম, বিবাহিতকে এক রকম অবিবাহিতকে অন্য রকম— এতে কোনো আপত্তি নেই।

৪। বাচ্চারা হাতে টাকা পেয়ে আজেবাজে ও গুনাহের কাজে ব্যয় করছে কি না— সেদিকে অভিভাবকদের খেয়াল রাখতে হবে।

ডিজিটাল যুগে সালামির দেওয়া নেওয়াতেও এসেছে নতুনত্ব। যুক্ত হয়েছে অনলাইন সেবা। এখন অনলাইনের মাধ্যমেও ঈদ সালামি আদান-প্রদানের ব্যবস্থা রয়েছে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ঈদ সালামির আনন্দকে ছড়িয়ে দিতে এই সুযোগ করে দিয়েছে। তাই দূরে থেকেও এখন সালামি বাদ যাবে না। মোবাইল ফোনের মাধ্যমেই ইদ সালামি পৌঁছে যায় প্রিয়জনের পকেটে। আর এই ইদ সালামির মাধ্যমে পারস্পরিক সৌহার্দ্য, সম্প্রীতি আর ভ্রাতৃত্বের বন্ধন সুদৃঢ় করার পাশাপাশি বিশেষ করে শিশুদের মধ্যে উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে দিতে এটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

মো.শামীম হোসাইন
শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
মোবাইল : ০১৭২০৯৮০১৮৭