১২:২২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

গাজা আগ্রাসনের ২০০ দিন

ইসরায়েল লজ্জাজনক পরাজয়ের অপেক্ষা করছে : হামাস

❖ গাজার অর্ধেক মানুষ ‘অনাহারে’ : ডব্লিউএফপি
❖ যুদ্ধের মাঝেও যেভাবে হচ্ছে বিয়ে

গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের ২০০ দিন পূর্ণ হয়েছে। এই সময়ে ইসরায়েলি আগ্রাসনে অন্তত ৩৪ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত এবং প্রায় ৭৭ হাজার আহত হয়েছে। কিন্তু হামাস শেষ হয়ে যায়নি, বরং ইসরায়েলি বাহিনী গাজার চোরাবালিতে আটকে গেছে এবং লজ্জাজনক পরাজয়ের অপেক্ষা করছে। গত মঙ্গলবার গাজার নিয়ন্ত্রক গোষ্ঠী হামাসের সামরিক শাখা ইজ্জুদ্দিন আল-কাসাম ব্রিগেডের মুখপাত্র আবু উবায়দা এক ভিডিও ভাষণে এমনটাই বলেছেন।

 

আবু উবায়দা বলেন, ২০০ দিন পরেও শত্রুরা এখনো গাজার চোরাবালিতে আটকে আছে। তাদের সামনে কোনো লক্ষ্য নেই, কোনো আশা নেই, এমনকি জিম্মিদের মুক্ত করারও তাড়না তাদের নেই। শত্রু সরকার (ইসরায়েল সরকার) বিশ্ববাসীকে এই মিথ্যা বিশ্বাস করানোর চেষ্টা করছে যে, তারা আল-কাসাম ব্রিগেডকে নির্মূল করে ফেলেছে এবং কেবল রাফাহ ব্যাটালিয়ন অবশিষ্ট রয়ে গেছে।

 

 

তিনি বলেন, ইসরায়েলি দখলদার সরকার এখনো তাদের হারানো ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করছে, যা ৭ অক্টোবর ভূলুণ্ঠিত হয়েছিল। তারা তাদের বিজয়কে রাফাহ আক্রমণের সঙ্গে যুক্ত করে উপস্থাপনের চেষ্টা করছে এই মিথ্যা বারবার বিক্রি করার চেষ্টা করছে যে, তারা রাফাহ ব্যাটালিয়ন ছাড়া সমস্ত প্রতিরোধ গোষ্ঠীকে (হামাস) পরাজিত করেছে।

 

 

তবে এমনটা হয়নি উল্লেখ করে আবু উবায়দা বলেন, আমাদের প্রতিরোধ অভিযান নতুন রূপ নেবে এবং নতুন উপযুক্ত কৌশলের সঙ্গে সমন্বয় করে এগিয়ে যাবে। ছাইভস্ম থেকে উঠে এসে, ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে জেগে উঠে প্রতিরোধ যোদ্ধারা (ইসরায়েলি সেনাদের) বিতাড়িত করছেন এবং তা অব্যাহত রাখবেন। সারা বিশ্ব প্রতিরোধযোদ্ধাদের শক্তির সাক্ষ্য দিচ্ছে।

 

 

এদিকে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে টানা প্রায় সাত মাস ধরে চলা নির্বিচার এই হামলার জেরে গাজার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা এরই মধ্যে ভেঙে পড়েছে। এর সঙ্গে অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডটিতে দেখা দিয়েছে তীব্র মানবিক সংকট। এমন অবস্থায় গাজার অর্ধেক মানুষ ‘অনাহারে’ আছে বলে মন্তব্য করেছে জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি)। এমনকি গাজায় বর্তমানে যে পরিমাণ সাহায্য ঢুকছে তা প্রয়োজনের খুবই অল্প।

 

 

গতকাল বুধবার কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজার জনসংখ্যার আনুমানিক ২৩ লাখ মানুষ অর্ধেক অনাহারে রয়েছে রয়েছে জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) জানিয়েছে। ডব্লিউএফপি প্রতি মাসে গাজায় ১০ লাখেরও বেশি মানুষকে খাদ্য সহায়তা প্রদান করছে। সংস্থাটি সোশ্যাল মিডিয়ায় দেওয়া এক পোস্টে বলেছে, তারা খাদ্য সহায়তা প্রদান করলেও বাস্তবিকভাবে সহায়তার প্রয়োজন এতটাই তীব্র যে, তাদের এই ধরনের প্রচেষ্টা প্রয়োজনের তুলনায় সাগরে কেবল একটি ফোঁটার মতো। গাজায় অবিলম্বে মানবিক যুদ্ধবিরতি প্রয়োজন।

 

 

এর আগে গাজার ফিলিস্তিনিরা ‘দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে’ রয়েছে বলে গত মার্চ মাসের তৃতীয় সপ্তাহে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের জন্য জাতিসংঘের সংস্থা (ইউএনআরডব্লিউএ) জানায়, গাজার মানুষ দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে। এই পরিস্থিতিতে গাজায় ফিলিস্তিনিদের জন্য মানবিক সহায়তা বিতরণ করাই হচ্ছে ‘সবচেয়ে কার্যকর এবং নিরাপদ উপায়। গাজা উপত্যকায় সহায়তার নিরাপদ, নিরবচ্ছিন্ন এবং টেকসই প্রবেশাধিকার এখন জীবন ও মৃত্যুর বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।’

 

 

অন্যদিকে প্রায় ২০০ দিন ধরে সংঘাত চলছে গাজায়। ইসরায়েলি বাহিনীর বিরামহীন বোমাবর্ষণ ও গোলার আঘাতে মাটিতে মিশে গেছে গাজার বেশির ভাগ বাড়ি-ঘর। উদ্বাস্তু হয়ে আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে অবস্থান করছেন শহরের প্রায় সব মানুষ। তবে এর মধ্যেও কেউ কেউ বিয়ের কথা ভাবছেন। যুদ্ধ পরিস্থিতিই আবার কোনো কোনো যুগলকে এক করে দিয়েছে।

 

 

গত মঙ্গলবার দ্য ন্যাশনালের এক প্রতিবেদনে বিধ্বস্ত গাজায় একাধিক যুগলের পরিচয় ও বিয়ের গল্প তুলে ধরা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে প্রথমেই বলা হয়েছে ইমাদ হালাওবা নামে এক যুবকের কথা। যুদ্ধের আগে থেকেই তিনি বিয়ের জন্য পাত্রী খুঁজছিলেন। শেষ পর্যন্ত আরো অনেক গাজাবাসীর মতো তিনি যুদ্ধ পরিস্থিতির মধ্যেই বিয়ের কাজটি সেরে ফেলতে চাইছেন।

 

 

দ্য ন্যাশনালকে ইমাদ বলেন, যুদ্ধের আগে বিয়ের জন্য আমি একটি উপযুক্ত পাত্রী খুঁজছিলাম। আমার মা বেশ কয়েকটি পাত্রীও দেখেছিলেন। কিন্তু যুদ্ধের আগে বিয়ে করা আমার ভাগ্যে ছিল না।

 

 

গত বছরের অক্টোবরে যুদ্ধ যখন ছড়িয়ে পড়ে সেই সময়টিতে একজন ইলেকট্রনিক প্রোগ্রামার হিসেবে কাজ করছিলেন ইমাদ। এই যুদ্ধে এরই মধ্যে পরিবারের ছয় সদস্যকে হারিয়েছেন তিনি। এর ফলে বিয়ের ইচ্ছেটাই মরে গিয়েছিল তার। কিন্তু পরিস্থিতি সম্পূর্ণ বদলে যায় যখন মোনা আল আনসারির সঙ্গে তার দেখা হয়ে যায়। এই জুটি এবার শিগগিরই বিয়ে করতে যাচ্ছেন। দ্য ন্যাশনাল জানিয়েছে, চলমান সংঘাতের মধ্যে গাজার লোকসংখ্যার ৮৫ শতাংশেরও বেশি প্রায় ১৯ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। মূলত এমন পরিস্থিতিই এক করে দিয়েছে ইমাদ এবং মোনাকে। ঘর-বাড়ি হারিয়ে উদ্বাস্তু হয়ে পড়েছিলেন ইমাদের মায়ের বান্ধবী। পরে গাজার বেই লাহিয়ায় অবস্থিত ইমাদদের বাড়িতে নিজের ২৩ বছর বয়সি কন্যা মোনাকে নিয়ে বেড়াতে এসেছিলেন তিনি। ঠিক তখনই ইমাদের নজর কেড়েছিলেন মোনা। ইমাদ বলেন, আমি মোনাকে দেখলাম এবং তাকে দেখে আমার মনে হয়েছিল সে আমার জন্য উপযুক্ত সঙ্গী হতে পারে।

 

 

এরপর যখন মায়ের কাছে ইমাদ নিজের পছন্দের কথা জানালে তার মা অবাকই হয়েছিলেন। মোনাকে প্রস্তাব পাঠানোর অনুমতি চেয়েছিলেন তিনি মায়ের কাছে। ইমাদের প্রস্তাবে রাজি হন মোনাও। পরে বিয়ের জন্য তারা প্রয়োজনীয় নথিপত্র সংগ্রহ করেন। শত প্রতিকূলতার মাঝেও বিয়ের বাগদান অনুষ্ঠানে তারা আত্মীয়-স্বজনদের জড়ো করেছিলেন। মোনা-ইমাদ আশা করছেন, চার মাস পর বড় করে তারা বিয়ের অনুষ্ঠান সম্পন্ন করবেন। এই সময়ের মধ্যে যুদ্ধ থেমে যাবে।

 

 

এদিকে যুদ্ধের আগে নিজের জীবন নিয়ে আকাশ-সমান প্রত্যাশা ছিল ২০ বছর বয়সী শিরীন আল কাফারনার। স্বপ্ন ছিল-বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রি নিয়ে তিনি নিজের পায়ে দাঁড়াবেন। কিন্তু যুদ্ধ সবকিছু বদলে দিয়েছে। বেইত হানুনে অবস্থিত তার বাড়িটি বিধ্বস্ত হয়ে যাওয়ায় উদ্বাস্তু হয়ে শিরীনকে আশ্রয় নিতে হয় একটি স্কুলে। জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থার অধীনে সেখানে একটি আশ্রয় শিবির খোলা হয়েছিল। সেই আশ্রয় শিবিরেই অপ্রত্যাশিতভাবে একটি বিয়ের প্রস্তাব পেয়েছেন শিরীন। যিনি প্রস্তাবটি দিয়েছিলেন তিনিও উদ্বাস্তু হয়ে একই স্কুলে অবস্থান করছিলেন। দ্য ন্যাশনালকে শিরীন বলেন, শুরুতে আমি প্রত্যাখ্যান করেছিলাম। কারণ এই পরিস্থিতির মধ্যে বিয়ে করার কথা আমি চিন্তাও করতে পারছিলাম না।’

 

 

তবে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলার পর শেষ পর্যন্ত মোহম্মদ কাসিমের ওই বিয়ের প্রস্তাবে সম্মতি দিয়েছিলেন শিরীন। ২৬ বছর বয়সি কাসিম বেইত হানুনের একটি স্কুলে শিক্ষকতা করতেন। বর্তমানে তিনি ব্যবসা করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। পরিবারের কয়েক সদস্যকে হারানো শিরীন বর্তমানে সুখী হওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করছেন। তার বাগদান অনুষ্ঠান হয়েছিল একটি ক্লাসরুমের ভেতর। যুদ্ধ শেষ হলে তিনি তার পড়াশোনা চালিয়ে যাবেন বলেও আশা করছেন। মোহম্মদ কাসিম তাকে সব ধরনের সহযোগিতা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। শিরীন বলেন, ‘যুদ্ধ শেষ পর্যন্ত আমার জন্য যদি ভালো কিছু করে থাকে তবে তা হলো- মোহাম্মদের সঙ্গে দেখা হয়ে যাওয়া।’

 

দোহায় অবস্থানে হামাসকে যে শর্ত কাতারের গাজায় উপত্যকায় যুদ্ধাবসানের জন্য স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস যদি কার্যকর ভূমিকা পালনের প্রতিশ্রুতি দেয় এবং তা পালন করে, কেবল তাহলেই সশস্ত্র এই রাজনৈতিক গোষ্ঠীর নেতারা কাতারে অবস্থান করতে পারবেন।

 

গত মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে এ ইস্যুতে দোহার অবস্থান স্পষ্ট করে বক্তব্য দিয়ে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাজেদ আল আনসারি বলেন, আমরা গাজা উপত্যকায় যুদ্ধাবসানের জন্য তৎপরতা অব্যাহত রেখেছি। এই তৎপরতায় হামাসের ভূমিকা যদি ইতিবাচক এবং কার্যকর হয়, কেবল তাহলেই গোষ্ঠীটির নেতারা দোহায় অবস্থান করতে পারবেন। আমরা এখন (ইসরায়েল-ফিলিস্তিন ইস্যুতে) আমাদের অবস্থান পুনর্মূল্যায়ন করছি। এই পর্যায় শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত এ ইস্যুতে কোনো সিদ্ধান্ত আমরা নেব না।

 

প্রসঙ্গত, যুক্তরাষ্টের অনুমোদনক্রমে ২০১২ সাল থেকে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকা নিয়ন্ত্রণকারী গোষ্ঠী হামাসের জ্যেষ্ঠ নেতাদের আতিথ্য প্রদান করে আসছে কাতার। গত ৭ অক্টোবর হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধ বাঁধার পর থেকে যে তিন দেশ দু’পক্ষের মধ্যে মধ্যস্থতার ভূমিকায় রয়েছে তাদের মধ্যে কাতার অন্যতম। বাকি দুটি দেশ হলো মিসর ও যুক্তরাষ্ট্র।

জনপ্রিয় সংবাদ

স্মৃতিসৌধে তারেক রহমান

গাজা আগ্রাসনের ২০০ দিন

আপডেট সময় : ০৭:২৬:২৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪

❖ গাজার অর্ধেক মানুষ ‘অনাহারে’ : ডব্লিউএফপি
❖ যুদ্ধের মাঝেও যেভাবে হচ্ছে বিয়ে

গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের ২০০ দিন পূর্ণ হয়েছে। এই সময়ে ইসরায়েলি আগ্রাসনে অন্তত ৩৪ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত এবং প্রায় ৭৭ হাজার আহত হয়েছে। কিন্তু হামাস শেষ হয়ে যায়নি, বরং ইসরায়েলি বাহিনী গাজার চোরাবালিতে আটকে গেছে এবং লজ্জাজনক পরাজয়ের অপেক্ষা করছে। গত মঙ্গলবার গাজার নিয়ন্ত্রক গোষ্ঠী হামাসের সামরিক শাখা ইজ্জুদ্দিন আল-কাসাম ব্রিগেডের মুখপাত্র আবু উবায়দা এক ভিডিও ভাষণে এমনটাই বলেছেন।

 

আবু উবায়দা বলেন, ২০০ দিন পরেও শত্রুরা এখনো গাজার চোরাবালিতে আটকে আছে। তাদের সামনে কোনো লক্ষ্য নেই, কোনো আশা নেই, এমনকি জিম্মিদের মুক্ত করারও তাড়না তাদের নেই। শত্রু সরকার (ইসরায়েল সরকার) বিশ্ববাসীকে এই মিথ্যা বিশ্বাস করানোর চেষ্টা করছে যে, তারা আল-কাসাম ব্রিগেডকে নির্মূল করে ফেলেছে এবং কেবল রাফাহ ব্যাটালিয়ন অবশিষ্ট রয়ে গেছে।

 

 

তিনি বলেন, ইসরায়েলি দখলদার সরকার এখনো তাদের হারানো ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করছে, যা ৭ অক্টোবর ভূলুণ্ঠিত হয়েছিল। তারা তাদের বিজয়কে রাফাহ আক্রমণের সঙ্গে যুক্ত করে উপস্থাপনের চেষ্টা করছে এই মিথ্যা বারবার বিক্রি করার চেষ্টা করছে যে, তারা রাফাহ ব্যাটালিয়ন ছাড়া সমস্ত প্রতিরোধ গোষ্ঠীকে (হামাস) পরাজিত করেছে।

 

 

তবে এমনটা হয়নি উল্লেখ করে আবু উবায়দা বলেন, আমাদের প্রতিরোধ অভিযান নতুন রূপ নেবে এবং নতুন উপযুক্ত কৌশলের সঙ্গে সমন্বয় করে এগিয়ে যাবে। ছাইভস্ম থেকে উঠে এসে, ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে জেগে উঠে প্রতিরোধ যোদ্ধারা (ইসরায়েলি সেনাদের) বিতাড়িত করছেন এবং তা অব্যাহত রাখবেন। সারা বিশ্ব প্রতিরোধযোদ্ধাদের শক্তির সাক্ষ্য দিচ্ছে।

 

 

এদিকে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে টানা প্রায় সাত মাস ধরে চলা নির্বিচার এই হামলার জেরে গাজার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা এরই মধ্যে ভেঙে পড়েছে। এর সঙ্গে অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডটিতে দেখা দিয়েছে তীব্র মানবিক সংকট। এমন অবস্থায় গাজার অর্ধেক মানুষ ‘অনাহারে’ আছে বলে মন্তব্য করেছে জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি)। এমনকি গাজায় বর্তমানে যে পরিমাণ সাহায্য ঢুকছে তা প্রয়োজনের খুবই অল্প।

 

 

গতকাল বুধবার কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজার জনসংখ্যার আনুমানিক ২৩ লাখ মানুষ অর্ধেক অনাহারে রয়েছে রয়েছে জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) জানিয়েছে। ডব্লিউএফপি প্রতি মাসে গাজায় ১০ লাখেরও বেশি মানুষকে খাদ্য সহায়তা প্রদান করছে। সংস্থাটি সোশ্যাল মিডিয়ায় দেওয়া এক পোস্টে বলেছে, তারা খাদ্য সহায়তা প্রদান করলেও বাস্তবিকভাবে সহায়তার প্রয়োজন এতটাই তীব্র যে, তাদের এই ধরনের প্রচেষ্টা প্রয়োজনের তুলনায় সাগরে কেবল একটি ফোঁটার মতো। গাজায় অবিলম্বে মানবিক যুদ্ধবিরতি প্রয়োজন।

 

 

এর আগে গাজার ফিলিস্তিনিরা ‘দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে’ রয়েছে বলে গত মার্চ মাসের তৃতীয় সপ্তাহে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের জন্য জাতিসংঘের সংস্থা (ইউএনআরডব্লিউএ) জানায়, গাজার মানুষ দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে। এই পরিস্থিতিতে গাজায় ফিলিস্তিনিদের জন্য মানবিক সহায়তা বিতরণ করাই হচ্ছে ‘সবচেয়ে কার্যকর এবং নিরাপদ উপায়। গাজা উপত্যকায় সহায়তার নিরাপদ, নিরবচ্ছিন্ন এবং টেকসই প্রবেশাধিকার এখন জীবন ও মৃত্যুর বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।’

 

 

অন্যদিকে প্রায় ২০০ দিন ধরে সংঘাত চলছে গাজায়। ইসরায়েলি বাহিনীর বিরামহীন বোমাবর্ষণ ও গোলার আঘাতে মাটিতে মিশে গেছে গাজার বেশির ভাগ বাড়ি-ঘর। উদ্বাস্তু হয়ে আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে অবস্থান করছেন শহরের প্রায় সব মানুষ। তবে এর মধ্যেও কেউ কেউ বিয়ের কথা ভাবছেন। যুদ্ধ পরিস্থিতিই আবার কোনো কোনো যুগলকে এক করে দিয়েছে।

 

 

গত মঙ্গলবার দ্য ন্যাশনালের এক প্রতিবেদনে বিধ্বস্ত গাজায় একাধিক যুগলের পরিচয় ও বিয়ের গল্প তুলে ধরা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে প্রথমেই বলা হয়েছে ইমাদ হালাওবা নামে এক যুবকের কথা। যুদ্ধের আগে থেকেই তিনি বিয়ের জন্য পাত্রী খুঁজছিলেন। শেষ পর্যন্ত আরো অনেক গাজাবাসীর মতো তিনি যুদ্ধ পরিস্থিতির মধ্যেই বিয়ের কাজটি সেরে ফেলতে চাইছেন।

 

 

দ্য ন্যাশনালকে ইমাদ বলেন, যুদ্ধের আগে বিয়ের জন্য আমি একটি উপযুক্ত পাত্রী খুঁজছিলাম। আমার মা বেশ কয়েকটি পাত্রীও দেখেছিলেন। কিন্তু যুদ্ধের আগে বিয়ে করা আমার ভাগ্যে ছিল না।

 

 

গত বছরের অক্টোবরে যুদ্ধ যখন ছড়িয়ে পড়ে সেই সময়টিতে একজন ইলেকট্রনিক প্রোগ্রামার হিসেবে কাজ করছিলেন ইমাদ। এই যুদ্ধে এরই মধ্যে পরিবারের ছয় সদস্যকে হারিয়েছেন তিনি। এর ফলে বিয়ের ইচ্ছেটাই মরে গিয়েছিল তার। কিন্তু পরিস্থিতি সম্পূর্ণ বদলে যায় যখন মোনা আল আনসারির সঙ্গে তার দেখা হয়ে যায়। এই জুটি এবার শিগগিরই বিয়ে করতে যাচ্ছেন। দ্য ন্যাশনাল জানিয়েছে, চলমান সংঘাতের মধ্যে গাজার লোকসংখ্যার ৮৫ শতাংশেরও বেশি প্রায় ১৯ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। মূলত এমন পরিস্থিতিই এক করে দিয়েছে ইমাদ এবং মোনাকে। ঘর-বাড়ি হারিয়ে উদ্বাস্তু হয়ে পড়েছিলেন ইমাদের মায়ের বান্ধবী। পরে গাজার বেই লাহিয়ায় অবস্থিত ইমাদদের বাড়িতে নিজের ২৩ বছর বয়সি কন্যা মোনাকে নিয়ে বেড়াতে এসেছিলেন তিনি। ঠিক তখনই ইমাদের নজর কেড়েছিলেন মোনা। ইমাদ বলেন, আমি মোনাকে দেখলাম এবং তাকে দেখে আমার মনে হয়েছিল সে আমার জন্য উপযুক্ত সঙ্গী হতে পারে।

 

 

এরপর যখন মায়ের কাছে ইমাদ নিজের পছন্দের কথা জানালে তার মা অবাকই হয়েছিলেন। মোনাকে প্রস্তাব পাঠানোর অনুমতি চেয়েছিলেন তিনি মায়ের কাছে। ইমাদের প্রস্তাবে রাজি হন মোনাও। পরে বিয়ের জন্য তারা প্রয়োজনীয় নথিপত্র সংগ্রহ করেন। শত প্রতিকূলতার মাঝেও বিয়ের বাগদান অনুষ্ঠানে তারা আত্মীয়-স্বজনদের জড়ো করেছিলেন। মোনা-ইমাদ আশা করছেন, চার মাস পর বড় করে তারা বিয়ের অনুষ্ঠান সম্পন্ন করবেন। এই সময়ের মধ্যে যুদ্ধ থেমে যাবে।

 

 

এদিকে যুদ্ধের আগে নিজের জীবন নিয়ে আকাশ-সমান প্রত্যাশা ছিল ২০ বছর বয়সী শিরীন আল কাফারনার। স্বপ্ন ছিল-বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রি নিয়ে তিনি নিজের পায়ে দাঁড়াবেন। কিন্তু যুদ্ধ সবকিছু বদলে দিয়েছে। বেইত হানুনে অবস্থিত তার বাড়িটি বিধ্বস্ত হয়ে যাওয়ায় উদ্বাস্তু হয়ে শিরীনকে আশ্রয় নিতে হয় একটি স্কুলে। জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থার অধীনে সেখানে একটি আশ্রয় শিবির খোলা হয়েছিল। সেই আশ্রয় শিবিরেই অপ্রত্যাশিতভাবে একটি বিয়ের প্রস্তাব পেয়েছেন শিরীন। যিনি প্রস্তাবটি দিয়েছিলেন তিনিও উদ্বাস্তু হয়ে একই স্কুলে অবস্থান করছিলেন। দ্য ন্যাশনালকে শিরীন বলেন, শুরুতে আমি প্রত্যাখ্যান করেছিলাম। কারণ এই পরিস্থিতির মধ্যে বিয়ে করার কথা আমি চিন্তাও করতে পারছিলাম না।’

 

 

তবে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলার পর শেষ পর্যন্ত মোহম্মদ কাসিমের ওই বিয়ের প্রস্তাবে সম্মতি দিয়েছিলেন শিরীন। ২৬ বছর বয়সি কাসিম বেইত হানুনের একটি স্কুলে শিক্ষকতা করতেন। বর্তমানে তিনি ব্যবসা করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। পরিবারের কয়েক সদস্যকে হারানো শিরীন বর্তমানে সুখী হওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করছেন। তার বাগদান অনুষ্ঠান হয়েছিল একটি ক্লাসরুমের ভেতর। যুদ্ধ শেষ হলে তিনি তার পড়াশোনা চালিয়ে যাবেন বলেও আশা করছেন। মোহম্মদ কাসিম তাকে সব ধরনের সহযোগিতা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। শিরীন বলেন, ‘যুদ্ধ শেষ পর্যন্ত আমার জন্য যদি ভালো কিছু করে থাকে তবে তা হলো- মোহাম্মদের সঙ্গে দেখা হয়ে যাওয়া।’

 

দোহায় অবস্থানে হামাসকে যে শর্ত কাতারের গাজায় উপত্যকায় যুদ্ধাবসানের জন্য স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস যদি কার্যকর ভূমিকা পালনের প্রতিশ্রুতি দেয় এবং তা পালন করে, কেবল তাহলেই সশস্ত্র এই রাজনৈতিক গোষ্ঠীর নেতারা কাতারে অবস্থান করতে পারবেন।

 

গত মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে এ ইস্যুতে দোহার অবস্থান স্পষ্ট করে বক্তব্য দিয়ে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাজেদ আল আনসারি বলেন, আমরা গাজা উপত্যকায় যুদ্ধাবসানের জন্য তৎপরতা অব্যাহত রেখেছি। এই তৎপরতায় হামাসের ভূমিকা যদি ইতিবাচক এবং কার্যকর হয়, কেবল তাহলেই গোষ্ঠীটির নেতারা দোহায় অবস্থান করতে পারবেন। আমরা এখন (ইসরায়েল-ফিলিস্তিন ইস্যুতে) আমাদের অবস্থান পুনর্মূল্যায়ন করছি। এই পর্যায় শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত এ ইস্যুতে কোনো সিদ্ধান্ত আমরা নেব না।

 

প্রসঙ্গত, যুক্তরাষ্টের অনুমোদনক্রমে ২০১২ সাল থেকে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকা নিয়ন্ত্রণকারী গোষ্ঠী হামাসের জ্যেষ্ঠ নেতাদের আতিথ্য প্রদান করে আসছে কাতার। গত ৭ অক্টোবর হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধ বাঁধার পর থেকে যে তিন দেশ দু’পক্ষের মধ্যে মধ্যস্থতার ভূমিকায় রয়েছে তাদের মধ্যে কাতার অন্যতম। বাকি দুটি দেশ হলো মিসর ও যুক্তরাষ্ট্র।