⦿ একমাত্র যুক্তরাষ্ট্রই যুদ্ধ বন্ধ করতে পারে : আব্বাস
⦿ নেতানিয়াহুকে গাজার কসাই বললেন এরদোগান
⦿ পদত্যাগ করছেন ইসরায়েল সামরিক বাহিনীর প্রধান
⦿ ইসরায়েলজুড়ে ফের সরকারবিরোধী বিক্ষোভ
⦿ নিহত বেড়ে প্রায় সাড়ে ৩৪ হাজার
গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ৬৬ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। সেই সঙ্গে নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৪ হাজার ৪৫৪ জন। ফিলিস্তিনি নিহতের সংখ্যা হয়তো এর চেয়েও বেশি হবে। আহত হয়েছেন ৭৭ হাজার ৫৭৫ জন ফিলিস্তিনি। নিহতদের মধ্যে সাড়ে ১৪ হাজারের বেশি শিশু রয়েছে। শুধু তাই না, নারী রয়েছেন সাড়ে ৯ হাজার। ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বাহিনী বিগত ছয় মাসের বেশি সময় ধরে হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে। এ যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া অস্ত্র আন্তর্জাতিক আইন মেনে ইসরায়েল ব্যবহার করছে কি না, অর্থাৎ ইসরায়েল সেখানে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করছে কি না- তা নিয়ে বিভক্ত হয়ে পড়েছে মার্কিন প্রশাসন। এদিকে গতকাল সৌদি আরবের এক সম্মেলনে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস বলেন, অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি আগ্রাসন একমাত্র যুক্তরাষ্ট্রই বন্ধ করতে পারে। গাজায় অবিরত হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী। রাফাহ অঞ্চলে ইসরায়েলি এই হামলা একমাত্র যুক্তরাষ্ট্রই বন্ধ করতে পারে। গাজায় আরো ইসরায়েলি হামলার আশঙ্কা করেন তিনি।
ইসরায়েল বলছে, তারা আন্তর্জাতিক আইন মেনে গাজায় মার্কিন অস্ত্র ব্যবহার করছে। তবে কিছু মার্কিন কর্মকর্তা আমেরিকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনকে জানিয়েছেন, ইসরায়েলের এই প্রতিশ্রুতির পক্ষে তারা বিশ্বাসযোগ্য কোনো প্রমাণ পাননি। এ সংক্রান্ত মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি অভ্যন্তরীণ মেমো বার্তা সংস্থা রয়টার্সের হস্তগত হয়েছে।
গত ফেব্রুয়ারিতে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন একটি জাতীয় নিরাপত্তা স্মারক (এনএসএম) জারি করেন। সেখানে বলা হয়, গাজায় যুক্তরাষ্ট্রের সরবরাহ করা অস্ত্র আন্তর্জাতিক আইন মেনে ইসরায়েল ব্যবহার করছে কি না, তা নিয়ে ব্লিঙ্কেনকে অবশ্যই ৮ মে-এর মধ্যে কংগ্রেসে প্রতিবেদন জমা দিতে হবে। ২৪ মার্চের মধ্যে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাতটি ব্যুরো তাদের মতামতের মেমো ব্লিঙ্কেনকে পাঠান। একজন মার্কিন কর্মকর্তা বলেন, ‘কিছু মতামত ইসরায়েলের পক্ষে গেছে। আবার কিছু ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গেছে। আবার কেউ কেউ কোনো পক্ষই নেয়নি।’
মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ডেমোক্রেসি হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড লেবার, পপুলেশন, রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেশন, গ্লোবাল ক্রিমিনাল জাস্টিস অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন অ্যাফেয়ার্স গাজা যুদ্ধে ইসরায়েলের আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে। এই চারটি ব্যুরো জানায়, ইসরায়েলের পক্ষ থেকে তারা আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন না করার বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ পায়নি। সেই সঙ্গে তারা ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর আটটি অভিযান নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তাদের দাবি, এগুলোর মাধ্যমে আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের সম্ভাব্য লঙ্ঘন সম্পর্কে গুরুতর প্রশ্ন উত্থাপন করা যেতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের অফিস অব দ্য স্পেশাল এনভয় টু মনিটর কমব্যাট অ্যান্টিসেমিটিজম জানায়, তারা ইসরাইলের প্রতিশ্রুতির বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ পেয়েছে। তবে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের লিগ্যাল ব্যুরো আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন নিয়ে ইসরায়েলের প্রতিশ্রুতি নিয়ে কোনো গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান নেয়নি। এ নিয়ে দপ্তরটির মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার বলেছেন, তারা ফাঁস হওয়া নথিগুলোর বিষয়ে মন্তব্য করবেন না। এর আগে বাইডেন প্রশাসন বারবারই বলেছে, গাজায় আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে ইসরায়েল হামলা চালাচ্ছে তার প্রমাণ তারা পায়নি।
এদিকে গত শুক্রবার ইস্তান্বুলে ইন্টারন্যাশনাল জেরুজালেম প্ল্যাটফর্মে দেওয়া এক ভাষণে অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় চলমান সামরিক আগ্রাসন ও নৃশংসতার জন্য ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুকে গাজার কসাই বলেছন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান। তিনি বলেন, ইতিহাসে নেতানিয়াহুর এই লজ্জাজনক ইতিহাস লেখা থাকবে। ইতিহাস তাকে গাজার কসাই হিসেবে স্মরণ করবে। গণহত্যার মুখে কেউ আমাদের নীরবতা আশা করতে পারে না। তুরস্ক একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য তার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবে। ওই স্বাধীন ও সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের রাজধানী হবে পূর্ব জেরুজালেম।
অন্যদিকে হামাসকে পরাজিত করতে না পারা, হামাসের হাত থেকে ইসরায়েলি জিম্মিদের উদ্ধার করতে না পারা, ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী হামাসের হামলার পূর্বাভাস দিতে ব্যর্থ হওয়াসহ একাধিক অভিযোগের প্রেক্ষিতে পদত্যাগ করতে পারেন ইসরায়েল সামরিক বাহিনীর চিফ অব স্টাফ। এর আগে গত সোমবার ইসরায়েলের সামরিক গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান মেজর জেনারেল আহারন হালিভা পদত্যাগের ঘোষণা দেন। গত শনিবার তুরস্কভিত্তিক বার্তা সংস্থা আনাদোলু এজেন্সির এক বলা হয়েছে, সামরিক বাহিনীর ব্যর্থতার প্রতিবাদে ইসরায়েলজুড়ে চলছে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ। এমন পরিস্থিতিতে ইসরায়েল সামরিক বাহিনীর চিফ অব স্টাফ পদত্যাগ করতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর চিফ অব স্টাফ মেজর জেনারেল হার্জি হালেভি ‘কিছুদিনের মধ্যে পদত্যাগ করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।’
হামাসের হাতে আটক থাকা বন্দিদের উদ্ধার এবং আগাম নির্বাচনের দাবিতে ইসরায়েলের রাস্তায় বিক্ষোভ করেছেন হাজার হাজার মানুষ। সম্প্রতি হামাসের প্রকাশিত একটি ভিডিওতে গাজায় আটক দুই বন্দি ইসরায়েলি সরকারের কাছে তাদের মুক্তি নিশ্চিত করার জন্য বন্দিবিনিময় চুক্তি করার দাবি জানায়। এই ভিডিও প্রকাশ পাওয়ার পর ইসরায়েলে আবারও তীব্র বিক্ষোভ শুরু হয়। বিক্ষোভকারীরা ইসরায়েলের কাপলান স্কোয়ারে জড়ো হয়ে গাজায় হামাসের সঙ্গে বন্দিবিনিময় চুক্তি এবং আগাম নির্বাচনের দাবি জানান। গাজায় আটক বন্দিদের পরিবারের সদস্যরাও এদিনের বিক্ষোভে অংশ নেয় এবং বিক্ষোভকারীদের সামনে বক্তৃতা দেয়। এদিন হাজার হাজার ইসরায়েলি তেল আবিবের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সামনে বিগিন স্ট্রিটে জড়ো হয়েছিলেন। পশ্চিম জেরুজালেমে ইসরায়েলি প্রেসিডেন্ট আইজ্যাক হারজোগের বাড়ির কাছেও বিক্ষোভ করেছেন অনেকে। সিজারিয়ায় প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর বাসভবনের কাছে এবং হাইফায়ও কয়েক হাজার ইসরায়েলি বিক্ষোভ করেছেন। বিক্ষোভের একপর্যায়ে কাপলান স্কোয়ারে পুলিশ ও বিক্ষোভকারীদের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়।


























