১০:৩০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভে ফুঁসে উঠছে বিশ্ব

◉ রণক্ষেত্রে পরিণত যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো
◉ ইউরোপ-অস্ট্রেলিয়া-কানাডায় ছড়িয়েছে বিক্ষোভ
◉ বিক্ষোভ থেকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট প্রার্থী গ্রেপ্তার
◉ উত্তাল ইসরায়েল, চরম বিপাকে নেতানিয়াহু
◉ পদত্যাগ করছেন ইসরায়েলের সেনাপ্রধান

 

গোটা বিশ্বকে অবাক করে দিয়ে গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলি ভূখণ্ডে ঢুকে নজিরবিহীন হামলা চালায় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। এরপর থেকে গাজায় তাণ্ডবলীলা চালাচ্ছে তেলআবিব। রীতিমতো ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে গাজার বেশিরভাগ এলাকা। এতে নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৪ হাজার ৪৫৪ জন। এর মধ্যে সাড়ে ১৪ হাজারের বেশি শিশু রয়েছে। নারী রয়েছেন সাড়ে ৯ হাজার। আহত হয়েছেন ৭৭ হাজার ৫৭৫ জন ফিলিস্তিনি। আর এখন যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ফিলিস্তিনের পক্ষে এবং ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভে উত্তাল। ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্কিত কোম্পানি এবং ব্যক্তিদের বয়কট করার আহ্বান জানাচ্ছেন নামকরা প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থীরা। শিক্ষকরাও সমর্থন দিচ্ছেন তাদের। আন্দোলন ক্রমশই জোরালো হচ্ছে, ছড়িয়ে পড়ছে নতুন নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। বিক্ষোভে যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস যেনো রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। গত এক সপ্তাহে পুলিশ ৫৫০ জনেরও বেশি বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করেছে। পুলিশ ও বিক্ষোভকারীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নজিরবিহীন এই ছাত্র বিক্ষোভ দীর্ঘমেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের ইসরায়েলনীতি বদলে দিতে পারে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রই ইহুদিবাদী দেশটির বড় পৃষ্ঠপোষক, অস্ত্রদাতা এবং আর্থিক সহায়তাকারী। তবে তরুণ প্রজন্মের আন্দোলনে তাতে পরিবর্তন আসতে পারে।

ছাত্রের এই বিক্ষোভ প্রথম শুরু হয়েছিল নিউইয়র্কের কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটিতে। এরপর থেকে বিশ্বের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানেও ছড়িয়ে পড়ে। লস অ্যাঞ্জেলেস, ক্যালিফোর্নিয়া এবং আটলান্টায় বিভিন্ন ক্যাম্পাস থেকে বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে ৪০টির বেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভ চলছে। আন্দোলন চলছে ফ্রান্স ও অস্ট্রেলিয়া-কানাডার মতো দেশেও। যুক্তরাষ্ট্রে বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীদের দাবি, তাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কর্তৃপক্ষ যেন ইসরায়েলকে সরবরাহ করা অস্ত্রের উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ও ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর সঙ্গে যুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিনিয়োগ না করে এবং তাদের কাছ থেকে তহবিল না নেয়।

এদিকে গাজায় যুদ্ধবিরতির আলোচনার জন্য আজ মিসর যাচ্ছেন ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস প্রতিনিধিরা। হামাস কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সোমবার কায়রো যাবে হামাসের একটি প্রতিনিধি দল। সেখানে গাজায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা করবেন তারা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হামাসের এক কর্মকর্তা বলেন, মধ্যস্থতাকারীদের প্রস্তাবিত যুদ্ধবিরতি এবং ইসরায়েলের প্রতিক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করবে প্রতিনিধিদল।

অন্যদিকে ফিলিস্তিনের গাজাকে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিতে ভয়াবহ ছক কষেছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর নেতানিয়াহু। কিন্তু তার এই নীলনকশায় কোনোভাবেই সমর্থন দিতে চায় না সাধারণ ইসরায়েলিরা। এমনকি হামাস যেসব ইসরায়েলিকে ধরে নিয়ে গেছে তাদের এখনো মুক্ত করতে পারেনি নেতানিয়াহুর সরকার। তাদের মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভে উত্তাল গোটা ইসরায়েল। দেশটির বাসিন্দারা নেতানিয়াহুর হুটহাট সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। তারা আর যুদ্ধ চায় না। এমনকি নেতানিয়াহুকে সহ্যই করতে পারছেন না। তাই তো নতুন করে নির্বাচনের দাবিতে রাস্তায় নেমেছে হাজার হাজার ইসরায়েলি। গত শনিবার গাজায় আটক বন্দিদের মুক্তির দাবিতে এবং আগাম নির্বাচনের আহ্বান জানিয়ে লাখো মানুষ ইসরায়েলজুড়ে বিক্ষোভ করেছেন। ইসরায়েলি সম্প্রচার কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বিক্ষোভ সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলে শুরুতে ধস্তাধস্তি হলেও পরে পুলিশ এবং বিক্ষোভকারীদের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। পরে তারা তেলআবিবের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ঘেরাও করে। এমনকি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর বাসভবনের সামনে পর্যন্ত বিক্ষোভ হয়।

বিক্ষোভ থেকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট প্রার্থী গ্রেপ্তার : শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একাত্ম হয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট লুইসে অবস্থিত ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটিতে ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভে যোগ দিয়েছিলেন জিল স্টেইন। যুক্তরাষ্ট্রের আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তিনি বামপন্থী দল গ্রিন পার্টি থেকে জো বাইডেন এবং ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে লড়াই করবেন। গত শনিবার মার্কিন বামপন্থী নেতা জিল স্টেইনকে ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভ থেকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তারের আগে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দাঁড়িয়ে জিল স্টেইন বলেছিলেন, ‘আমরা এখানে ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দাঁড়িয়েছি। আমরা দাঁড়িয়েছি আমাদের সাংবিধানিক অধিকারের জন্য, দাঁড়িয়েছি আমেরিকার মানুষের জন্য যারা চান এই গণহত্যা এখনই বন্ধ হোক।’

মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্রের পদত্যাগ : ফিলিস্তিনের গাজায় চলমান যুদ্ধে ওয়াশিংটনের নীতির সঙ্গে মতপার্থক্যের জেরে পদত্যাগ করেছেন হালা রাহরিত নামের যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আরবি ভাষার মুখপাত্র। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম লিংকডইনে দেওয়া এক বার্তায় হালা রাহরিত বলেন, ‘টানা ১৮ বছর আমি মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে কাজ করেছি। চলতি এপ্রিলে পদত্যাগ করেছি। গাজা নীতি নিয়ে মতপার্থক্য থাকায় চাকরি ছেড়েছি আমি।’ গাজা নিয়ে মার্কিন নীতির প্রতিবাদে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে স্বেচ্ছায় চাকরি ছেড়ে দেওয়া তৃতীয় ব্যক্তি তিনি। গাজায় চলমান যুদ্ধ নিয়ে মার্কিন প্রশাসনের নীতি সমর্থন করতে না পারায় মাসখানেক আগে পদ ছাড়েন দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মানবাধিকার ব্যুরোর কর্মকর্তা অ্যানেল সিলাইন। এর আগে গত অক্টোবরে একই কারণে পদত্যাগ করেন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা জোস পল।

পদত্যাগ করছেন ইসরায়েলের সেনাপ্রধান : টানা প্রায় সাত মাস ধরে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে অবিরাম হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। তবে এরপরও ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসকে পরাজিত করতে পারেনি দেশটি। গত বছর হামাসের নজিরবিহীন হামলা ঠেকাতে ব্যর্থতার বিষয়েও আছে ক্ষোভ, আলোচনা-সমালোচনা। এমন অবস্থায় ইসরা পদত্যাগ করতে পারেন ইসরায়েলি সেনাবাহিনী প্রধান হারজি হালেভি। ইসরায়েলের বেসরকারি ‘চ্যানেল ১২’ জানিয়েছে, গত সপ্তাহে দেশটির সামরিক গোয়েন্দা প্রধান মেজর জেনারেল আহারন হালিভার পদত্যাগের পর এটা স্পষ্ট হয়ে গেছে, হামাসের হামলার পূর্বাভাস দিতে ব্যর্থ হওয়ার জন্য দায়ী সমস্ত কর্মকর্তাকে ‘ঘরে ফিরে যেতে হবে, চিফ অব স্টাফ থেকে শুরু করে (সবাইকে)। এর আগে গত সোমবার ইসরায়েলের সামরিক গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান মেজর জেনারেল আহারন হালিভা পদত্যাগের ঘোষণা দেন। ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী গাজা উপত্যকার ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী হামাসের গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে চালানো হামলার ঘটনায় গোয়েন্দা ব্যর্থতার দায় স্বীকার করে পদত্যাগের এই ঘোষণা দেন তিনি।

জনপ্রিয় সংবাদ

সানজিদা তন্বীর বিয়ের খবর জানালেন ফেসবুকে নিজের হৃদয়গ্রাহী পোস্টে

ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভে ফুঁসে উঠছে বিশ্ব

আপডেট সময় : ০৭:২৪:৪০ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪

◉ রণক্ষেত্রে পরিণত যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো
◉ ইউরোপ-অস্ট্রেলিয়া-কানাডায় ছড়িয়েছে বিক্ষোভ
◉ বিক্ষোভ থেকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট প্রার্থী গ্রেপ্তার
◉ উত্তাল ইসরায়েল, চরম বিপাকে নেতানিয়াহু
◉ পদত্যাগ করছেন ইসরায়েলের সেনাপ্রধান

 

গোটা বিশ্বকে অবাক করে দিয়ে গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলি ভূখণ্ডে ঢুকে নজিরবিহীন হামলা চালায় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। এরপর থেকে গাজায় তাণ্ডবলীলা চালাচ্ছে তেলআবিব। রীতিমতো ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে গাজার বেশিরভাগ এলাকা। এতে নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৪ হাজার ৪৫৪ জন। এর মধ্যে সাড়ে ১৪ হাজারের বেশি শিশু রয়েছে। নারী রয়েছেন সাড়ে ৯ হাজার। আহত হয়েছেন ৭৭ হাজার ৫৭৫ জন ফিলিস্তিনি। আর এখন যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ফিলিস্তিনের পক্ষে এবং ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভে উত্তাল। ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্কিত কোম্পানি এবং ব্যক্তিদের বয়কট করার আহ্বান জানাচ্ছেন নামকরা প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থীরা। শিক্ষকরাও সমর্থন দিচ্ছেন তাদের। আন্দোলন ক্রমশই জোরালো হচ্ছে, ছড়িয়ে পড়ছে নতুন নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। বিক্ষোভে যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস যেনো রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। গত এক সপ্তাহে পুলিশ ৫৫০ জনেরও বেশি বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করেছে। পুলিশ ও বিক্ষোভকারীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নজিরবিহীন এই ছাত্র বিক্ষোভ দীর্ঘমেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের ইসরায়েলনীতি বদলে দিতে পারে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রই ইহুদিবাদী দেশটির বড় পৃষ্ঠপোষক, অস্ত্রদাতা এবং আর্থিক সহায়তাকারী। তবে তরুণ প্রজন্মের আন্দোলনে তাতে পরিবর্তন আসতে পারে।

ছাত্রের এই বিক্ষোভ প্রথম শুরু হয়েছিল নিউইয়র্কের কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটিতে। এরপর থেকে বিশ্বের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানেও ছড়িয়ে পড়ে। লস অ্যাঞ্জেলেস, ক্যালিফোর্নিয়া এবং আটলান্টায় বিভিন্ন ক্যাম্পাস থেকে বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে ৪০টির বেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভ চলছে। আন্দোলন চলছে ফ্রান্স ও অস্ট্রেলিয়া-কানাডার মতো দেশেও। যুক্তরাষ্ট্রে বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীদের দাবি, তাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কর্তৃপক্ষ যেন ইসরায়েলকে সরবরাহ করা অস্ত্রের উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ও ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর সঙ্গে যুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিনিয়োগ না করে এবং তাদের কাছ থেকে তহবিল না নেয়।

এদিকে গাজায় যুদ্ধবিরতির আলোচনার জন্য আজ মিসর যাচ্ছেন ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস প্রতিনিধিরা। হামাস কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সোমবার কায়রো যাবে হামাসের একটি প্রতিনিধি দল। সেখানে গাজায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা করবেন তারা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হামাসের এক কর্মকর্তা বলেন, মধ্যস্থতাকারীদের প্রস্তাবিত যুদ্ধবিরতি এবং ইসরায়েলের প্রতিক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করবে প্রতিনিধিদল।

অন্যদিকে ফিলিস্তিনের গাজাকে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিতে ভয়াবহ ছক কষেছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর নেতানিয়াহু। কিন্তু তার এই নীলনকশায় কোনোভাবেই সমর্থন দিতে চায় না সাধারণ ইসরায়েলিরা। এমনকি হামাস যেসব ইসরায়েলিকে ধরে নিয়ে গেছে তাদের এখনো মুক্ত করতে পারেনি নেতানিয়াহুর সরকার। তাদের মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভে উত্তাল গোটা ইসরায়েল। দেশটির বাসিন্দারা নেতানিয়াহুর হুটহাট সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। তারা আর যুদ্ধ চায় না। এমনকি নেতানিয়াহুকে সহ্যই করতে পারছেন না। তাই তো নতুন করে নির্বাচনের দাবিতে রাস্তায় নেমেছে হাজার হাজার ইসরায়েলি। গত শনিবার গাজায় আটক বন্দিদের মুক্তির দাবিতে এবং আগাম নির্বাচনের আহ্বান জানিয়ে লাখো মানুষ ইসরায়েলজুড়ে বিক্ষোভ করেছেন। ইসরায়েলি সম্প্রচার কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বিক্ষোভ সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলে শুরুতে ধস্তাধস্তি হলেও পরে পুলিশ এবং বিক্ষোভকারীদের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। পরে তারা তেলআবিবের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ঘেরাও করে। এমনকি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর বাসভবনের সামনে পর্যন্ত বিক্ষোভ হয়।

বিক্ষোভ থেকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট প্রার্থী গ্রেপ্তার : শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একাত্ম হয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট লুইসে অবস্থিত ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটিতে ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভে যোগ দিয়েছিলেন জিল স্টেইন। যুক্তরাষ্ট্রের আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তিনি বামপন্থী দল গ্রিন পার্টি থেকে জো বাইডেন এবং ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে লড়াই করবেন। গত শনিবার মার্কিন বামপন্থী নেতা জিল স্টেইনকে ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভ থেকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তারের আগে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দাঁড়িয়ে জিল স্টেইন বলেছিলেন, ‘আমরা এখানে ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দাঁড়িয়েছি। আমরা দাঁড়িয়েছি আমাদের সাংবিধানিক অধিকারের জন্য, দাঁড়িয়েছি আমেরিকার মানুষের জন্য যারা চান এই গণহত্যা এখনই বন্ধ হোক।’

মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্রের পদত্যাগ : ফিলিস্তিনের গাজায় চলমান যুদ্ধে ওয়াশিংটনের নীতির সঙ্গে মতপার্থক্যের জেরে পদত্যাগ করেছেন হালা রাহরিত নামের যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আরবি ভাষার মুখপাত্র। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম লিংকডইনে দেওয়া এক বার্তায় হালা রাহরিত বলেন, ‘টানা ১৮ বছর আমি মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে কাজ করেছি। চলতি এপ্রিলে পদত্যাগ করেছি। গাজা নীতি নিয়ে মতপার্থক্য থাকায় চাকরি ছেড়েছি আমি।’ গাজা নিয়ে মার্কিন নীতির প্রতিবাদে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে স্বেচ্ছায় চাকরি ছেড়ে দেওয়া তৃতীয় ব্যক্তি তিনি। গাজায় চলমান যুদ্ধ নিয়ে মার্কিন প্রশাসনের নীতি সমর্থন করতে না পারায় মাসখানেক আগে পদ ছাড়েন দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মানবাধিকার ব্যুরোর কর্মকর্তা অ্যানেল সিলাইন। এর আগে গত অক্টোবরে একই কারণে পদত্যাগ করেন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা জোস পল।

পদত্যাগ করছেন ইসরায়েলের সেনাপ্রধান : টানা প্রায় সাত মাস ধরে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে অবিরাম হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। তবে এরপরও ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসকে পরাজিত করতে পারেনি দেশটি। গত বছর হামাসের নজিরবিহীন হামলা ঠেকাতে ব্যর্থতার বিষয়েও আছে ক্ষোভ, আলোচনা-সমালোচনা। এমন অবস্থায় ইসরা পদত্যাগ করতে পারেন ইসরায়েলি সেনাবাহিনী প্রধান হারজি হালেভি। ইসরায়েলের বেসরকারি ‘চ্যানেল ১২’ জানিয়েছে, গত সপ্তাহে দেশটির সামরিক গোয়েন্দা প্রধান মেজর জেনারেল আহারন হালিভার পদত্যাগের পর এটা স্পষ্ট হয়ে গেছে, হামাসের হামলার পূর্বাভাস দিতে ব্যর্থ হওয়ার জন্য দায়ী সমস্ত কর্মকর্তাকে ‘ঘরে ফিরে যেতে হবে, চিফ অব স্টাফ থেকে শুরু করে (সবাইকে)। এর আগে গত সোমবার ইসরায়েলের সামরিক গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান মেজর জেনারেল আহারন হালিভা পদত্যাগের ঘোষণা দেন। ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী গাজা উপত্যকার ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী হামাসের গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে চালানো হামলার ঘটনায় গোয়েন্দা ব্যর্থতার দায় স্বীকার করে পদত্যাগের এই ঘোষণা দেন তিনি।