০৭:৫১ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

স্ত্রীকে ভালোবেসে ৩৬৫ পুকুর খনন করেন রাজা “চান্দিলাল”

 ইতিহাসের পাতায় বিভিন্ন ভালোবাসার কাহিনি লিখা রয়েছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ভালোবাসা প্রকাশের পদ্ধতির ও পরিবর্তন হয়েছে। শাহজাহান-মমতাজের ভালোবাসার কথা পৃথিবীর বুকে তাদের স্মৃতিচিহ্ন তাজমহল আজও তাদের ভালোবাসাকে অমর করে রেখেছে।
কথাগুলো রূপকথার গল্প মনে হলেও এমন ভালোবাসার নিদর্শন রেখেছেন কথিত পাল বংশের রাজা চান্দিলাল পাল। নিজ রাণীর সুস্থতার জন্য নওগাঁয় ৩৬৫টি পুকুর খনন করে রূপকথার জন্ম দিয়েছিলেন সেই সময়।
নওগাঁ জেলার ধামইরহাট উপজেলার ইসবপুর ইউনিয়নের চকচান্দিরা গ্রামের লোকমুখে প্রচলিত, অষ্টাদশ শতাব্দীতে রাজা চান্দিলাল পাল প্রথম বিয়ে করে রাণীকে প্রাসাদে নিয়ে আসেন। কয়েক বছর পর প্রেমে পড়ে দ্বিতীয় রাণীকেও বিয়ে করে নিয়ে আসেন। দ্বিতীয় রাণীকে রাজা প্রচণ্ড ভালোবাসতেন। কিছুদিন পর দ্বিতীয় রাণী দুরারোগ্য রোগে আক্রান্ত হয়।
রাজা চান্দিলাল রাজ্যের সব কবিরাজ-হেকিমকে ডেকেও কোনো সুফল পান না, পরে পাশের রাজ্যের এক হেকিমের খবর পান। তিনি দূত মারফত হেকিমকে নিজ রাজ্যে আসার জন্য আমন্ত্রণ জানান। হাকিম আসার পর রাণীর রোগ সম্পর্কে সব খুলে বলেন রাজা। শুনে হাকিম রাজাকে পরামর্শ দেন, ৩৬৫টি পুকুর খনন করে রাণীকে প্রতিদিন একটি করে পুকুরে যদি গোসল করানো হয়, তাহলে রাণী দুরারোগ্য ব্যাধি থেকে মুক্তি পাবেন।
হেকিমের কথায় রাজা চিন্তায় পড়ে যান। এত অল্প সময়ে কীভাবে এত পুকুর খনন করবেন? ভালো বাসার স্ত্রী বলে কথা, দ্রুত রাজ্যের সব প্রজাকে দিয়ে পুকুর খননের কাজ শুরু করেন। দিনে একটি পুকুর খনন করা শেষ হয় আর রাণী সেখানে গোসল করেন। এক বছর পর রাণী কঠিন দুরারোগ্য ব্যাধি থেকে মুক্তি পান।
সরেজমিনে চকচান্দিরা গ্রামে গেলে দেখা যায়, ৩৬৫টি পুকুর প্রতিটি পুকুরের পাড়ে বন বিভাগের সুবিশাল সবুজ বনায়ন। বনের গাছের ডালে বিভিন্ন পাখির কলরব শুনতে পাওয়া যায়। এ ছাড়া এর পাশে ১ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে রয়েছে বন বিভাগের নিজস্ব সবুজ বনায়ন, যেটি ভ্রমণপিপাসুদের জন্য অনেক আকর্ষণীয়। তবে যোগাযোগ ব্যবস্থা খুবই লাজুক। যোগাযোগ ব্যাবস্থা ভালো হলে অনেক দর্শনার্থী বারবে বলে জানান এলাকাবাসী।
স্থানীয় ব্যক্তিরা আঃ জোব্বার জানান, তারা তাদের বাপ-দাদাদের কাছ থেকে শুনেছেন রাজা চান্দিপাল তার ছোট রাণীর সুস্থতার জন্য এখানে প্রায় দেড় কিলোমিটারজুড়ে ৩৬৫টি পুকুর খনন করেন। রাণী সুস্থ হওয়ার পর দুই রাণী পাশাপাশি প্রাসাদে বসবাস করতেন। দুই রাণীর গোসলের জন্য আলাদা দুটি পুকুর খনন করা ছিল, যে দুটি পুকুর এখন ‘দুই সতিনের পুকুর নামে পরিচিত। পুকুর দুটিতে গোসল করতে নামলে ইট-পাথরসহ অনেক মূল্যবান বস্তুর দেখা মেলে।
তারা আরও জানান, ৩৬৫টি পুকুর দেখার জন্য দূরদূরান্ত থেকে অনেক মানুষ আসেন। এখানকার যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো না হওয়ার কারণে অনেকেই এসে দুর্ভোগে পড়েন।

স্ত্রীকে ভালোবেসে ৩৬৫ পুকুর খনন করেন রাজা “চান্দিলাল”

আপডেট সময় : ০৫:২৯:০৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩ মে ২০২৪
 ইতিহাসের পাতায় বিভিন্ন ভালোবাসার কাহিনি লিখা রয়েছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ভালোবাসা প্রকাশের পদ্ধতির ও পরিবর্তন হয়েছে। শাহজাহান-মমতাজের ভালোবাসার কথা পৃথিবীর বুকে তাদের স্মৃতিচিহ্ন তাজমহল আজও তাদের ভালোবাসাকে অমর করে রেখেছে।
কথাগুলো রূপকথার গল্প মনে হলেও এমন ভালোবাসার নিদর্শন রেখেছেন কথিত পাল বংশের রাজা চান্দিলাল পাল। নিজ রাণীর সুস্থতার জন্য নওগাঁয় ৩৬৫টি পুকুর খনন করে রূপকথার জন্ম দিয়েছিলেন সেই সময়।
নওগাঁ জেলার ধামইরহাট উপজেলার ইসবপুর ইউনিয়নের চকচান্দিরা গ্রামের লোকমুখে প্রচলিত, অষ্টাদশ শতাব্দীতে রাজা চান্দিলাল পাল প্রথম বিয়ে করে রাণীকে প্রাসাদে নিয়ে আসেন। কয়েক বছর পর প্রেমে পড়ে দ্বিতীয় রাণীকেও বিয়ে করে নিয়ে আসেন। দ্বিতীয় রাণীকে রাজা প্রচণ্ড ভালোবাসতেন। কিছুদিন পর দ্বিতীয় রাণী দুরারোগ্য রোগে আক্রান্ত হয়।
রাজা চান্দিলাল রাজ্যের সব কবিরাজ-হেকিমকে ডেকেও কোনো সুফল পান না, পরে পাশের রাজ্যের এক হেকিমের খবর পান। তিনি দূত মারফত হেকিমকে নিজ রাজ্যে আসার জন্য আমন্ত্রণ জানান। হাকিম আসার পর রাণীর রোগ সম্পর্কে সব খুলে বলেন রাজা। শুনে হাকিম রাজাকে পরামর্শ দেন, ৩৬৫টি পুকুর খনন করে রাণীকে প্রতিদিন একটি করে পুকুরে যদি গোসল করানো হয়, তাহলে রাণী দুরারোগ্য ব্যাধি থেকে মুক্তি পাবেন।
হেকিমের কথায় রাজা চিন্তায় পড়ে যান। এত অল্প সময়ে কীভাবে এত পুকুর খনন করবেন? ভালো বাসার স্ত্রী বলে কথা, দ্রুত রাজ্যের সব প্রজাকে দিয়ে পুকুর খননের কাজ শুরু করেন। দিনে একটি পুকুর খনন করা শেষ হয় আর রাণী সেখানে গোসল করেন। এক বছর পর রাণী কঠিন দুরারোগ্য ব্যাধি থেকে মুক্তি পান।
সরেজমিনে চকচান্দিরা গ্রামে গেলে দেখা যায়, ৩৬৫টি পুকুর প্রতিটি পুকুরের পাড়ে বন বিভাগের সুবিশাল সবুজ বনায়ন। বনের গাছের ডালে বিভিন্ন পাখির কলরব শুনতে পাওয়া যায়। এ ছাড়া এর পাশে ১ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে রয়েছে বন বিভাগের নিজস্ব সবুজ বনায়ন, যেটি ভ্রমণপিপাসুদের জন্য অনেক আকর্ষণীয়। তবে যোগাযোগ ব্যবস্থা খুবই লাজুক। যোগাযোগ ব্যাবস্থা ভালো হলে অনেক দর্শনার্থী বারবে বলে জানান এলাকাবাসী।
স্থানীয় ব্যক্তিরা আঃ জোব্বার জানান, তারা তাদের বাপ-দাদাদের কাছ থেকে শুনেছেন রাজা চান্দিপাল তার ছোট রাণীর সুস্থতার জন্য এখানে প্রায় দেড় কিলোমিটারজুড়ে ৩৬৫টি পুকুর খনন করেন। রাণী সুস্থ হওয়ার পর দুই রাণী পাশাপাশি প্রাসাদে বসবাস করতেন। দুই রাণীর গোসলের জন্য আলাদা দুটি পুকুর খনন করা ছিল, যে দুটি পুকুর এখন ‘দুই সতিনের পুকুর নামে পরিচিত। পুকুর দুটিতে গোসল করতে নামলে ইট-পাথরসহ অনেক মূল্যবান বস্তুর দেখা মেলে।
তারা আরও জানান, ৩৬৫টি পুকুর দেখার জন্য দূরদূরান্ত থেকে অনেক মানুষ আসেন। এখানকার যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো না হওয়ার কারণে অনেকেই এসে দুর্ভোগে পড়েন।