০২:৩৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ইসরায়েলে হামলার ক্ষেপণাস্ত্র-ড্রোনের প্রদর্শনী ইরানের

গত ১৪ এপ্রিল ইরানের মাটি থেকে প্রথমবারের মতো ইসরায়েলের ভূখণ্ডে সরাসরি হামলা চালানো হয়। হামলায় ব্যবহৃত ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র নিয়ে সম্প্রতি এক প্রদর্শনীর আয়োজন করে ইরান। সেই প্রদর্শনীতে লেজার রশ্মি ব্যবহার করে অস্ত্রগুলো দেখাচ্ছিলেন তিনি। এ সময় ইরানের ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ডস কোরের ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আলী বেলালীকে বেশ উচ্ছ্বসিত দেখাচ্ছিল। হামলার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এটি শাস্তিমূলক পদক্ষেপ ছিল।’

 

 

ইসরায়েল ১ এপ্রিল সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে ইরানের কনস্যুলেটে হামলা চালায়। এর জবাবে ১৪ এপ্রিল শত শত ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে ইসরায়েলে পাল্টা হামলা চালায় ইরান। এতে মধ্যপ্রাচ্য সর্বাত্মক যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গিয়েছিল। এর দুই সপ্তাহ পরে এই প্রদর্শনীর আয়োজন করে ইরান। ইসরায়েলে হামলার মাধ্যমে তেহরান বিশ্বকে দেখাতে চেয়েছিল, বড় ধরনের যুদ্ধের মুখোমুখি হলেও তারা লড়াই করতে সক্ষম। ইসরায়েলও ১৯ এপ্রিল ইরানে হামলা চালিয়ে এর জবাব দেয়। ইরান ও ইসরায়েলের পাল্টাপাল্টি হামলায় দুই দেশের সামান্য ক্ষয়ক্ষতি হয়। তবে এই উত্তেজনা কিছুটা কমলেও ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলের আগ্রাসন চলমান থাকায় ওই অঞ্চলে যুদ্ধের আশঙ্কা প্রবল হয়ে উঠেছে। ইরানের প্রদর্শনীটি ছিল বিমান ও আকাশপথে তেহরানের সক্ষমতা দেখানোর আয়োজন।

 

 

গত মাসে ইসরায়েলে হামলা করার সময় ব্যবহৃত অস্ত্রও সেখানে প্রদর্শন করা হয়। সিএনএনকে এই প্রদর্শনী দেখার বিরল অনুমতি দেওয়া হয়। ইরান মার্কিন গণমাধ্যমকে এমন অনুমতি কখনো দেয় না। তেহরানের পশ্চিমাঞ্চলে রেভল্যুশনারি গার্ডের বিমানবাহিনীর স্থায়ী ওই প্রদর্শনীতে কয়েক ডজন দূরপাল্লার ও মাঝারি পাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের পাশাপাশি ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন দেখানো হয়। এই প্রদর্শনীর লক্ষ্য যেন ইরানের ড্রোন এবং ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির উন্নয়ন ও অগ্রগতি দেখানো। ইসরায়েলে হামলার সময় ড্রোন, ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করেছিল ইরান। ওই দিন রাতে ইসরায়েল যখন আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ব্যবহার করে হামলা প্রতিরোধ করে, তখন দেশটির বিভিন্ন শহরের আকাশে ছিল আলোর ঝলকানি। হামলা প্রতিরোধে ইসরায়েলের বিমানবাহিনীর সঙ্গে যোগ দেয় যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জর্ডান। তারা সাধ্যমতো ইরানের অসংখ্য ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করে। ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) মুখপাত্র দানিয়েলে হাগারি বলেছেন, ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে বিমানঘাঁটির অবকাঠামোর সামান্য ক্ষতি হয়েছে।

 

 

১৯৮৮ সালে শেষ হওয়া আট বছরব্যাপী ইরান-ইরাক যুদ্ধে ক্ষেপণাস্ত্র কমান্ডার ছিলেন ব্রিগেডিয়ার বেলালী। সিএনএনকে তিনি বলেন, এখন আমাদের ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র বিশ্বে শক্তি এবং ক্ষমতা প্রয়োগের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে উঠেছে। ইসরায়েলের বিরুদ্ধে হামলার সময় বিপুল পরিমাণ ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্রের ব্যবহার ইরানের একটি বড় সাফল্য। ন্যাটো, যুক্তরাষ্ট্র এবং এই অঞ্চলের আরব দেশগুলো আমাদের ড্রোন, ক্ষেপণাস্ত্র ও ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করার চেষ্টা করলেও তারা সফল হয়নি। বিশ্বের কেউ আমাদের থামাতে পারবে না।

 

 

দুটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের সামনে দাঁড়িয়ে ব্রিগেডিয়ার বেলালী দাবি করেন, ওই ক্ষেপণাস্ত্রগুলো যেকোনো লক্ষ্যবস্তুর পাঁচ মিটারের মধ্যে নির্ভুলভাবে আঘাত হানতে সক্ষম। এর একটি হলো ‘গদর’ অন্যটি ‘ইমাদ’। এসব ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হয়। ক্ষেপণাস্ত্রগুলো এক হাজার মাইলেরও বেশি দূরের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারে। পাশাপাশি ক্ষেপণাস্ত্রগুলো ৪৫০ থেকে ৫০০ কেজি ওয়ারহেড বহন করতে সক্ষম। খাইবার নামের আরেকটি ক্ষেপণাস্ত্রও ইসরায়েলে হামলার সময় ব্যবহার করা হয়, সেটি ৩২০ কেজি ওজনের ওয়ারহেড বহন করতে পারে।

 

 

এদিকে ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্র ও মধ্যপ্রাচ্যে তার মিত্ররা উদ্বেগ জানিয়ে আসছিল। ইরানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের যেকোনো চুক্তির ক্ষেত্রে তেহরানের ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি সীমিত করার বিষয় যুক্ত থাকার আহ্বান জানিয়ে আসছিল ওয়াশিংটনের মিত্ররা। যুক্তরাষ্ট্রের দাবি, মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের কাছে সবচেয়ে বেশি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের মজুত রয়েছে। এসব ক্ষেপণাস্ত্রই তার শক্তি বা সক্ষমতা বৃদ্ধির অন্যতম উৎস। তবে ইরান বারবার জোর দিয়ে বলে আসছে, শুধু আত্মরক্ষার্থেই ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি হাতে নিয়েছে তারা। এর আগে ওয়াশিংটন ডিসির উইসকনসিন প্রজেক্ট অব নিউক্লিয়ার আর্মস কন্ট্রোলের গবেষণা সহযোগী জন কিরজিজানিয়াক সিএনএনকে বলেছিলেন, ইসরায়েলের হামলার আগপর্যন্ত আন্তদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে মধ্যপ্রাচ্যে অন্তত পাঁচটি হামলা চালায় ইরান। এর মধ্যে সিরিয়ায় জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটসের ওপর দুই দফা হামলা চালায়। এছাড়া ইরাকে অবস্থানরত যুক্তরাষ্ট্রের সেনা, কুর্দি সশস্ত্র গোষ্ঠী ও ইসরায়েলের গোয়েন্দা বাহিনীর ওপর পৃথক হামলা চালায় তেহরান।

 

যুক্তরাষ্ট্রের লকহিড মার্টিন কোম্পানির তৈরি আর কিউ-১৭০ সেনটিনাল ড্রোনও প্রদর্শনীতে রয়েছে বলে জানায় ইরান। ২০১১ সালে এই মডেলের একটি ড্রোন ভূপাতিত করার দাবি করেছিল তেহরান। যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা ওই সময় সিএনএনকে বলেছিলেন, ওই ড্রোন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার (সিআইএ) নজরদারি কর্মসূচিতে ব্যবহার করা হতো। আফগানিস্তানে অবস্থানকারী মার্কিন গোয়েন্দা ও সামরিক বাহিনীর সদস্যরাও এই ড্রোন ব্যবহার করতেন। এর তিন বছর পরে ইরান জানায়, তারা এই ড্রোনের মতো ড্রোন তৈরি করেছে। বেলালী বলেন, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র উন্নয়ন দেশটির প্রতিরক্ষা কৌশলের মূল চাবিকাঠি। প্রতিরক্ষা সক্ষমতার ক্ষেত্রে আমরা কারও ওপর নির্ভর করি না। এই খাতে আমাদের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি রয়েছে এবং ভবিষ্যতে আমরা আরও উন্নতি করব। এই খাতে এমন অনেক অর্জন রয়েছে, যেগুলো নিয়ে এখনো কথা বলা হয়নি।

 

 

ক্ষেপণাস্ত্রের পাশাপাশি ড্রোনও ইরানের ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কোরের কাছে সমান গুরুত্বপূর্ণ। এই প্রদর্শনীতে বিভিন্ন ধরনের ড্রোন দেখানো হয়েছে। এর মধ্যে ইরান-ইরাক যুদ্ধে ব্যবহার করা আনম্যান্ড এরিয়েল ভেহিকেলও (ইউএভি) রয়েছে। ইরানিদের দাবি, এই মডেলের ড্রোন যেকোনো উপায়ে ফাঁকি দিতে সক্ষম। এর মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত ড্রোন শাহেদ-১৩৬। ইসরায়েলে হামলা চালানোর সময় শাহেদ-১৩৬ ড্রোন ব্যবহার করা হয় বলে স্বীকার করেছে ইরান। ইরান এই মডেলের শত শত ড্রোন রাশিয়াকেও দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেন। তাদের দাবি, মস্কো এসব ড্রোন ব্যবহার করে ইউক্রেনের বিভিন্ন শহর এবং জ্বালানি ও বিদ্যুৎ অবকাঠামোয় হামলা চালাচ্ছে। যদিও ইরান বারবার সেসব অভিযোগ অস্বীকার করছে।

ইসরায়েলে হামলার ক্ষেপণাস্ত্র-ড্রোনের প্রদর্শনী ইরানের

আপডেট সময় : ০৭:৪৪:৫৪ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৮ মে ২০২৪

গত ১৪ এপ্রিল ইরানের মাটি থেকে প্রথমবারের মতো ইসরায়েলের ভূখণ্ডে সরাসরি হামলা চালানো হয়। হামলায় ব্যবহৃত ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র নিয়ে সম্প্রতি এক প্রদর্শনীর আয়োজন করে ইরান। সেই প্রদর্শনীতে লেজার রশ্মি ব্যবহার করে অস্ত্রগুলো দেখাচ্ছিলেন তিনি। এ সময় ইরানের ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ডস কোরের ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আলী বেলালীকে বেশ উচ্ছ্বসিত দেখাচ্ছিল। হামলার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এটি শাস্তিমূলক পদক্ষেপ ছিল।’

 

 

ইসরায়েল ১ এপ্রিল সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে ইরানের কনস্যুলেটে হামলা চালায়। এর জবাবে ১৪ এপ্রিল শত শত ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে ইসরায়েলে পাল্টা হামলা চালায় ইরান। এতে মধ্যপ্রাচ্য সর্বাত্মক যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গিয়েছিল। এর দুই সপ্তাহ পরে এই প্রদর্শনীর আয়োজন করে ইরান। ইসরায়েলে হামলার মাধ্যমে তেহরান বিশ্বকে দেখাতে চেয়েছিল, বড় ধরনের যুদ্ধের মুখোমুখি হলেও তারা লড়াই করতে সক্ষম। ইসরায়েলও ১৯ এপ্রিল ইরানে হামলা চালিয়ে এর জবাব দেয়। ইরান ও ইসরায়েলের পাল্টাপাল্টি হামলায় দুই দেশের সামান্য ক্ষয়ক্ষতি হয়। তবে এই উত্তেজনা কিছুটা কমলেও ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলের আগ্রাসন চলমান থাকায় ওই অঞ্চলে যুদ্ধের আশঙ্কা প্রবল হয়ে উঠেছে। ইরানের প্রদর্শনীটি ছিল বিমান ও আকাশপথে তেহরানের সক্ষমতা দেখানোর আয়োজন।

 

 

গত মাসে ইসরায়েলে হামলা করার সময় ব্যবহৃত অস্ত্রও সেখানে প্রদর্শন করা হয়। সিএনএনকে এই প্রদর্শনী দেখার বিরল অনুমতি দেওয়া হয়। ইরান মার্কিন গণমাধ্যমকে এমন অনুমতি কখনো দেয় না। তেহরানের পশ্চিমাঞ্চলে রেভল্যুশনারি গার্ডের বিমানবাহিনীর স্থায়ী ওই প্রদর্শনীতে কয়েক ডজন দূরপাল্লার ও মাঝারি পাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের পাশাপাশি ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন দেখানো হয়। এই প্রদর্শনীর লক্ষ্য যেন ইরানের ড্রোন এবং ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির উন্নয়ন ও অগ্রগতি দেখানো। ইসরায়েলে হামলার সময় ড্রোন, ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করেছিল ইরান। ওই দিন রাতে ইসরায়েল যখন আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ব্যবহার করে হামলা প্রতিরোধ করে, তখন দেশটির বিভিন্ন শহরের আকাশে ছিল আলোর ঝলকানি। হামলা প্রতিরোধে ইসরায়েলের বিমানবাহিনীর সঙ্গে যোগ দেয় যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জর্ডান। তারা সাধ্যমতো ইরানের অসংখ্য ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করে। ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) মুখপাত্র দানিয়েলে হাগারি বলেছেন, ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে বিমানঘাঁটির অবকাঠামোর সামান্য ক্ষতি হয়েছে।

 

 

১৯৮৮ সালে শেষ হওয়া আট বছরব্যাপী ইরান-ইরাক যুদ্ধে ক্ষেপণাস্ত্র কমান্ডার ছিলেন ব্রিগেডিয়ার বেলালী। সিএনএনকে তিনি বলেন, এখন আমাদের ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র বিশ্বে শক্তি এবং ক্ষমতা প্রয়োগের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে উঠেছে। ইসরায়েলের বিরুদ্ধে হামলার সময় বিপুল পরিমাণ ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্রের ব্যবহার ইরানের একটি বড় সাফল্য। ন্যাটো, যুক্তরাষ্ট্র এবং এই অঞ্চলের আরব দেশগুলো আমাদের ড্রোন, ক্ষেপণাস্ত্র ও ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করার চেষ্টা করলেও তারা সফল হয়নি। বিশ্বের কেউ আমাদের থামাতে পারবে না।

 

 

দুটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের সামনে দাঁড়িয়ে ব্রিগেডিয়ার বেলালী দাবি করেন, ওই ক্ষেপণাস্ত্রগুলো যেকোনো লক্ষ্যবস্তুর পাঁচ মিটারের মধ্যে নির্ভুলভাবে আঘাত হানতে সক্ষম। এর একটি হলো ‘গদর’ অন্যটি ‘ইমাদ’। এসব ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হয়। ক্ষেপণাস্ত্রগুলো এক হাজার মাইলেরও বেশি দূরের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারে। পাশাপাশি ক্ষেপণাস্ত্রগুলো ৪৫০ থেকে ৫০০ কেজি ওয়ারহেড বহন করতে সক্ষম। খাইবার নামের আরেকটি ক্ষেপণাস্ত্রও ইসরায়েলে হামলার সময় ব্যবহার করা হয়, সেটি ৩২০ কেজি ওজনের ওয়ারহেড বহন করতে পারে।

 

 

এদিকে ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্র ও মধ্যপ্রাচ্যে তার মিত্ররা উদ্বেগ জানিয়ে আসছিল। ইরানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের যেকোনো চুক্তির ক্ষেত্রে তেহরানের ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি সীমিত করার বিষয় যুক্ত থাকার আহ্বান জানিয়ে আসছিল ওয়াশিংটনের মিত্ররা। যুক্তরাষ্ট্রের দাবি, মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের কাছে সবচেয়ে বেশি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের মজুত রয়েছে। এসব ক্ষেপণাস্ত্রই তার শক্তি বা সক্ষমতা বৃদ্ধির অন্যতম উৎস। তবে ইরান বারবার জোর দিয়ে বলে আসছে, শুধু আত্মরক্ষার্থেই ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি হাতে নিয়েছে তারা। এর আগে ওয়াশিংটন ডিসির উইসকনসিন প্রজেক্ট অব নিউক্লিয়ার আর্মস কন্ট্রোলের গবেষণা সহযোগী জন কিরজিজানিয়াক সিএনএনকে বলেছিলেন, ইসরায়েলের হামলার আগপর্যন্ত আন্তদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে মধ্যপ্রাচ্যে অন্তত পাঁচটি হামলা চালায় ইরান। এর মধ্যে সিরিয়ায় জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটসের ওপর দুই দফা হামলা চালায়। এছাড়া ইরাকে অবস্থানরত যুক্তরাষ্ট্রের সেনা, কুর্দি সশস্ত্র গোষ্ঠী ও ইসরায়েলের গোয়েন্দা বাহিনীর ওপর পৃথক হামলা চালায় তেহরান।

 

যুক্তরাষ্ট্রের লকহিড মার্টিন কোম্পানির তৈরি আর কিউ-১৭০ সেনটিনাল ড্রোনও প্রদর্শনীতে রয়েছে বলে জানায় ইরান। ২০১১ সালে এই মডেলের একটি ড্রোন ভূপাতিত করার দাবি করেছিল তেহরান। যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা ওই সময় সিএনএনকে বলেছিলেন, ওই ড্রোন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার (সিআইএ) নজরদারি কর্মসূচিতে ব্যবহার করা হতো। আফগানিস্তানে অবস্থানকারী মার্কিন গোয়েন্দা ও সামরিক বাহিনীর সদস্যরাও এই ড্রোন ব্যবহার করতেন। এর তিন বছর পরে ইরান জানায়, তারা এই ড্রোনের মতো ড্রোন তৈরি করেছে। বেলালী বলেন, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র উন্নয়ন দেশটির প্রতিরক্ষা কৌশলের মূল চাবিকাঠি। প্রতিরক্ষা সক্ষমতার ক্ষেত্রে আমরা কারও ওপর নির্ভর করি না। এই খাতে আমাদের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি রয়েছে এবং ভবিষ্যতে আমরা আরও উন্নতি করব। এই খাতে এমন অনেক অর্জন রয়েছে, যেগুলো নিয়ে এখনো কথা বলা হয়নি।

 

 

ক্ষেপণাস্ত্রের পাশাপাশি ড্রোনও ইরানের ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কোরের কাছে সমান গুরুত্বপূর্ণ। এই প্রদর্শনীতে বিভিন্ন ধরনের ড্রোন দেখানো হয়েছে। এর মধ্যে ইরান-ইরাক যুদ্ধে ব্যবহার করা আনম্যান্ড এরিয়েল ভেহিকেলও (ইউএভি) রয়েছে। ইরানিদের দাবি, এই মডেলের ড্রোন যেকোনো উপায়ে ফাঁকি দিতে সক্ষম। এর মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত ড্রোন শাহেদ-১৩৬। ইসরায়েলে হামলা চালানোর সময় শাহেদ-১৩৬ ড্রোন ব্যবহার করা হয় বলে স্বীকার করেছে ইরান। ইরান এই মডেলের শত শত ড্রোন রাশিয়াকেও দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেন। তাদের দাবি, মস্কো এসব ড্রোন ব্যবহার করে ইউক্রেনের বিভিন্ন শহর এবং জ্বালানি ও বিদ্যুৎ অবকাঠামোয় হামলা চালাচ্ছে। যদিও ইরান বারবার সেসব অভিযোগ অস্বীকার করছে।