◉রুশ হামলায় বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন ৫ লাখ গ্রাহক
◉রুশ ক্ষেপণাস্ত্র জাহাজ ধ্বংসের দাবি ইউক্রেনের
◉জব্দ করা রুশ সম্পদ ইউক্রেন যুদ্ধে ব্যবহার করতে চায় জি-৭?
রুশ বাহিনী প্রথমবারের মতো পারমাণবিক মহড়া শুরু করেছে। এই মহড়ায় রয়েছে ‘অ-কৌশলগত ‘পারমাণবিক অস্ত্র প্রস্তুত ও ব্যবহার’-এর ব্যবহারিক প্রশিক্ষণ’। গত মঙ্গলবার দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এ তথ্য জানিয়েছে। প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এ মাসের শুরুতে এ মহড়ার নির্দেশ দেন। মস্কো এগুলোকে রাশিয়ার জন্য নিরাপত্তা হুমকির সঙ্গে যুক্ত করেছে। পশ্চিমা কর্মকর্তারা পুতিনের পারমাণবিক হুমকিকে ‘যুদ্ধাংদেহি বিবৃতি’ বলে অভিহিত করেছেন।
ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ ও ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের মন্তব্যের উদ্ধৃতি দিয়ে রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, ‘পশ্চিমা’ হুমকির জবাবে ইউক্রেনের নিকটবর্তী অঞ্চলে পরমাণু সামরিক মহড়া শুরু করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, ফরাসি প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ ইউক্রেনে রাশিয়ার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য ইউরোপীয় সেনা পাঠানোর সম্ভাবনার কথা বলেছিলেন। আর ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন বলেছিলেন, রাশিয়ার অভ্যন্তরে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানার জন্য লন্ডনের সরবরাহ করা অস্ত্র ব্যবহার করার অধিকার ইউক্রেনের রয়েছে। নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, ইউক্রেনের যুদ্ধে পশ্চিমাদের আরও গভীরে প্রবেশ করা থেকে বিরত রাখতে পুতিনের একটি সতর্কতা সংকেত হিসাবে এই মহড়াটি নকশা করা হয়েছে। পশ্চিমারা কিয়েভকে অস্ত্র ও গোয়েন্দা তথ্য সরবরাহ করেছে তবে সেনা পাঠানো থেকে বিরত রয়েছে।
রুশ মন্ত্রণালয় বলেছে, রুশ ফেডারেশনের বিরুদ্ধে পশ্চিমা কর্মকর্তাদের উস্কানিমূলক বিবৃতি ও হুমকির জবাবে রুশ রাষ্ট্রের আঞ্চলিক অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্ব নিঃশর্তভাবে নিশ্চিত করার জন্য অ-কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্রের যুদ্ধ ব্যবহারের জন্য ইউনিট ও সরঞ্জাম যে প্রস্তুত রয়েছে, তা নিশ্চিত করাই এই মহড়ার লক্ষ্য। ইউক্রেন সংলগ্ন রাশিয়ার সাউদার্ন মিলিটারি ডিস্ট্রিক্ট ক্ষেপণাস্ত্র বাহিনী এই মহড়ায় অংশ নিয়েছে। ইউক্রেনের কাছ থেকে দখল করা অঞ্চলেও মহড়া চলছে।
কৌশলগত বা অ-কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্রগুলো পুরো শত্রু শহর নিশ্চিহ্ন করার জন্য নকশা করা। কিন্তু কৌশলগত অস্ত্রের চেয়ে অকৌশলগত অস্ত্র কম শক্তিশালী। তবুও এগুলোর বিশাল ধ্বংসাত্মক সম্ভাবনা রয়েছে।
গত মঙ্গলবার রাতভর ইউক্রেনের সুমি অঞ্চলের জ্বালানি স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। এতে পাঁচ লাখেরও বেশি গ্রাহক বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন। গতকাল সকালের মধ্যেই বেশিরভাগ স্থানে বিদ্যুৎ সরবরাহ সচল করা হয়েছে বলে জানিয়েছে জ্বালানি মন্ত্রণালয়। এ হামলার কারণে চের্নিহিভ এবং খারকিভ অঞ্চলেও বিদ্যুৎ সরবরাহ প্রভাবিত হয়েছিল। সেখানেও তা পুনরুদ্ধার করা হয়েছে। আঞ্চলিক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, হামলায় ব্যবহৃত সাতটি রুশ ড্রোনগুলো করে ভূপাতিত করেছে ইউক্রেনের বিমান বাহিনী। এদিকে ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র সজ্জিত একটি রুশ যুদ্ধজাহাজ ধ্বংস করেছে ইউক্রেন। গত মঙ্গলবার রুশ অধিকৃত ক্রিমিয়ায় অবস্থিত জাহাজটি ধ্বংসের দাবি করেছে দেশটির সামরিক বাহিনী। ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, একটি দূরপাল্লার আক্রমণ করেছে ইউক্রেনীয় বাহিনী। রোববারের ওই হামলায় একটি রুশ মাইন অপসারণকারী জাহাজ ধ্বংস হয়েছে। সামরিক বাহিনী আরও জানিয়েছে, হামলায় কী ক্ষতি হয়েছে তা নিশ্চিত করতে আরো সময় লাগবে।
জেনারেল স্টাফ বলেছেন, ১৯ মে রাতে সেভাস্তোপলে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র জাহাজ সিকলনে হামলা করেছে ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা বাহিনী। পরে ইউক্রেনের নৌবাহিনী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ বলেছে, জাহাজটি ধ্বংস করা হয়েছে।
এদিকে চলতি সপ্তাহে ইতালিতে গ্রুপ অব সেভেনের (জি ৭) অর্থমন্ত্রীদের বৈঠক হতে যাচ্ছে। আগামী শুক্রবার ও শনিবার ইতালির উত্তরাঞ্চলীয় স্ট্রেসা শহরে জড়ো হবেন যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, জার্মানি, ফ্রান্স, ব্রিটেন, ইতালি এবং কানাডা-এই সাত দেশের অর্থমন্ত্রী এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকাররা। এবারের বৈঠকে অন্যতম আলোচ্যবিষয় হিসেবে ইউক্রেন যুদ্ধে কীভাবে জব্দ করা রুশ সম্পদ ব্যবহার করা যাবে ও আন্তর্জাতিক বাজারে চীনের ক্রমবর্ধমান রপ্তানি শক্তিকে মোকাবিলা করা যাবে সে বিষয়গুলো স্থান পাবে। কর্মকর্তারা বলেছেন, বৈঠকে উভয় বিষয়ে একটি সাধারণ ভিত্তি খোঁজার চেষ্টা করবেন নেতারা।
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে রাশিয়া বিশেষ সামরিক অভিযান পরিচালনা শুরুর পরপরই দেশটির ৩০ হাজার কোটি ডলার মূল্যের সম্পদ জব্দ করেছিল পশ্চিমারা। সেই অর্থের সর্বোত্তম ব্যবহার কীভাবে করা যাবে তা নিয়ে কয়েক সপ্তাহ ধরেই আলোচনা করছেন জি ৭-এর আলোচকরা। এই সম্পদগুলো থেকে ভবিষ্যত আয় বাড়ানোর উপায় খুঁজে বের করার জন্য চাপ দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটি মনে করছে, একটি বন্ড ইস্যু করার মাধ্যমে অথবা সম্ভবত ইউক্রেনকে একটি ঋণ প্রদানের মাধ্যমে আয় বাড়ানো যেতে পারে। একাধিক কর্মকর্তা বলেছেন, এ ধরনের কিছু করতে গেলে অনেক আইনি এবং প্রযুক্তিগত দিক বিবেচনা করতে হবে। যার অর্থ, স্ট্রেসাতে একটি বিশদ চুক্তি হবে এমন কোনো সম্ভাবনা আপাতত নেই। এ ক্ষেত্রে একটি অনানুষ্ঠানিক আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সে লক্ষ্যে আগামী ১৩-১ জুন ইতালির দক্ষিণাঞ্চলীয় পুগলিয়াতে জি ৭-এর সরকার প্রধানরা জড়ো হবেন।
ইউক্রেনের জন্য জি ৭ একটি বন্ড ইস্যু করবে এমন ধারণাটি খেই হারিয়ে ফেলেছে। এর পরিবর্তে বরং জব্দ করা সম্পদ থেকে আয়ের প্রবাহ হিসেবে দেশটিকে এখন একটি ঋণ দেওয়ার প্রস্তাব রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে, এই ঋণটি কে পরিচালনা করবে- বিশ্বব্যাংক নাকি অন্য কোনো সংস্থা, এটি কীভাবে নিশ্চিত করা হবে, কীভাবে ভবিষ্যতের লাভ হিসেবে করা যেতে পারে এবং রাশিয়ার সঙ্গে ভবিষ্যত কোনো শান্তি চুক্তির ক্ষেত্রে এ নিয়ে কী কী ঘটতে পারে-এই সব দিকগুলো এখনও স্পষ্ট নয়। এ বিষয়ে ইউরোপীয় কর্মকর্তারা বিশেষভাবে সতর্ক রয়েছেন। এক ইইউ কূটনীতিক বলেছেন, চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর জন্য ‘কয়েক মাস না হলেও অন্তত কয়েক সপ্তাহ’ সময় তো লাগবেই।
























