০৮:৫২ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৩ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

তারল্য সংকটে স্থবির ঋণ প্রদান কর্মসংস্থান ব্যাংক

◉চাহিদা পরিমাণ ঋণ দেওয়ার সক্ষমতা নেই ব্যাংকটিতে
◉২০২০ সালে ৬ লাখ ৫৮ হাজার জনকে ঋণ প্রদান করা হয়
◉মূলধন ও আমানত ঘাটতিতে সংকটে পড়ে ব্যাংকটি
◉ঋণখেলাপিরা ঋণ পাওয়ার যোগ্য হবেন না

দেশের বেকার যুবসমাজের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও ঋণ প্রদানের লক্ষ্যে কাজ করে রাষ্ট্রায়ত্ত অ-তফসিলি কর্মসংস্থান ব্যাংক। ব্যাংকিং সুবিধা নিয়ে উদ্যোক্তারা বিশেষ করে যুব ও মহিলারাও যেন অর্থনৈতিক উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত হতে পারে। এতে দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতে সুফল বয়ে আনবে। তবে বর্তমানে তারল্য সংকটে থাকা ব্যাংকটিতে ঋণ প্রদান কার্যক্রম স্থবির হয়ে আছে। ব্যাংকটিতে তারল্য সংকট বাড়ছে। ফলে স্বাভাবিক কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য ক্রমেই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে।

সহজ শর্তে ও স্বল্প সুদে ঋণ প্রদানের মাধ্যমে বেকার যুবদের আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে অবদান রাখা লক্ষ্য হলেও তেমন অবদান রাখতে পারেনি ব্যাংকটি।

সূত্র জানায়, আমানতের পরিমাণ কম থাকায় ঋণ প্রদান করা সম্ভব হচ্ছে না। এছাড়া নানা প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ঋণ দেওয়া হতো ব্যাংকটিতে। তবে কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে সরকারের অনুমোদন সাপেক্ষে কোনো দাতা সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান হতে ঋণ অথবা অনুদান গ্রহণ এবং প্রাতিষ্ঠানিক সঞ্চয় সংগ্রহ করছে কর্মসংস্থান ব্যাংক।

 

এদিকে করোনা সময়কালীন দেশের বেকার ও অর্ধবেকারদের আত্মকর্মসংস্থানের জন্য জামানত ছাড়াই ২০ হাজার থেকে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ প্রদানের কর্মসূচি দিয়েছিল কর্মসংস্থান ব্যাংক। তখন এ কর্মসূচি বাস্তবায়নে ৭০০ কোটি টাকা ঋণসুবিধা দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। খবর নিয়ে জানা যায়, কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ৭০০ কোটি টাকার ঋণ সহায়তা পেলেও অর্ধেক টাকাও বিতরণ করেনি ব্যাংকটি। যদিও ব্যাংকটির একটি সূত্র জানায়, ৫৬৮ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। আর ঋণ পেয়েছেন ৩৮ হাজার জন। গড়ে একেকজন ঋণ পেয়েছেন দেড় লাখ টাকার বেশি। মুজিব বর্ষে ঋণ দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছিল ২ লাখ জনকে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কর্মসংস্থান ব্যাংক সৃষ্টির উদ্দেশ্য আজও বাস্তবায়ন হয়নি। নানা সীমাবদ্ধতায় ব্যাংকটি ধুঁকছে। ব্যাংকখাতের চলমান তারল্য সংকটে খাদের কিনারায় পড়তে বসেছে ব্যাংকটি।

 

১৯৯৮ সালে গঠিত হওয়া কর্মসংস্থান ব্যাংকটি ৩৩টি আঞ্চলিক কার্যালয় এবং ২৪টি শাখার মাধ্যমে নানা কর্যক্রম পরিচলানা করছে। ব্যাংকটি গঠনের উদ্দেশ্য ছিল বেকার যুবকদের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত করা, আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টি, কুটির শিল্পে বিনিয়োগে উৎসাহ দেওয়া, দারিদ্র্য বিমোচনে সহায়তা করা। প্রতিষ্ঠার পর থেকে ব্যাংকটি সেই উদ্দেশ্য পূরণে ঋণও দিয়ে যাচ্ছে। তবে যে পরিমাণ ঋণের চাহিদা রয়েছে, সে পরিমাণ ঋণ দেওয়ার সক্ষমতা নেই ব্যাংকটির।
২০২০ সালের এক পরিসংখ্যান অনুযায়ী ব্যাংকটি প্রত্যক্ষভাবে ৬ লাখ ৫৭ হাজার ৮৩০ জন ঋণ গ্রহীতাসহ পরোক্ষভাবে মোট ২৩ লাখ ৭৪ হাজার ৭৬৬ জন লোকের কর্মসংস্থান করেছে। একই সময়ে ব্যাংক ৬৯৬৪.৬৮ কোটি টাকা ঋণ বিতরণের পাশাপাশি ৬১৫০.৪৬ কোটি টাকা ঋণ আদায় করেছে। ব্যাংকের ঋণ আদায় হার ৯৫%।

 

ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর, বিসিক, বিডা, সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনসহ (এসডিএফ) অন্যান্য সরকার অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান থেকে প্রশিক্ষণ থাকতে হবে। ঋণখেলাপিরা ঋণ পাওয়ার যোগ্য হবেন না। একই গ্রাহক বা গ্রুপ একাধিক প্রকল্পে ঋণ পাওয়ার যোগ্য বলেও বিবেচিত হবেন না। তবে ৮ শতাংশ সরল সুদে ঋণ দেওয়া হলেও কিস্তি খেলাপি হলে এই সুদ নেওয়া হবে ১০ শতাংশ হারে।

 

ঋণের ক্ষেত্রে প্রকল্প এলাকায় স্থায়ীভাবে বসবাসকারী এবং যার বাড়িঘর ও জমিজমা আছে ও ঋণ পরিশোধে সক্ষম এমন কেউ জামিনদার হতে পারবেন। আবেদনকারীর পিতা, মাতা, স্বামী, স্ত্রী অথবা তৃতীয় কোনো ব্যক্তিও হতে পারবেন জামিনদার। একটি জেলার কোনো বাসিন্দা ওই জেলার আওতাধীন যেকোনো শাখার উদ্যোক্তার ঋণের বিপরীতে নিশ্চয়তা বা গ্যারান্টি দিতে পারবেন। জামিনদার হতে পারবেন সরকারি, আধা সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ব্যক্তিরাও।

 

কর্মসংস্থান ব্যাংক বেকারত্ব দূরীকরণে উৎপাদনমুখী, সেবা ও ব্যবসায়িক খাতে ঋণ প্রদান করার সুনাম থাকলেও কয়েক বছর ঋণ কার্যক্রমে স্থবিরতা লক্ষ্য করা যায়।
উল্লেখ্য, কর্মসংস্থান ব্যাংক বাংলাদেশের একটি রাষ্ট্রায়ত্ত অ-তফসিলী ব্যাংক। ব্যাংকটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বেকারদের অর্থ সহায়তা দিয়ে ক্ষুদ্র শিল্প গড়ে তুলতে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে। দেশের ক্রমবর্ধমান বেকার যুবক ও যুব মহিলাদের আত্ম-কর্মসংস্থানের মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচনের লক্ষ্যে ঋণ সহায়তা প্রদানের জন্য ১৯৯৮ সালে এ ব্যাংকটি প্রতিষ্ঠিত হয়। কিন্তু নানা প্রতিকূলতায় কাক্সিক্ষত লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছাতে পারছে না ব্যাংকটি।

জনপ্রিয় সংবাদ

এবার এনসিপি থেকে পদত্যাগ করেছেন তাসনিম জারা ও তার স্বামী খালেদ সাইফুল্লাহ

তারল্য সংকটে স্থবির ঋণ প্রদান কর্মসংস্থান ব্যাংক

আপডেট সময় : ০৭:০৯:৩৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৫ মে ২০২৪

◉চাহিদা পরিমাণ ঋণ দেওয়ার সক্ষমতা নেই ব্যাংকটিতে
◉২০২০ সালে ৬ লাখ ৫৮ হাজার জনকে ঋণ প্রদান করা হয়
◉মূলধন ও আমানত ঘাটতিতে সংকটে পড়ে ব্যাংকটি
◉ঋণখেলাপিরা ঋণ পাওয়ার যোগ্য হবেন না

দেশের বেকার যুবসমাজের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও ঋণ প্রদানের লক্ষ্যে কাজ করে রাষ্ট্রায়ত্ত অ-তফসিলি কর্মসংস্থান ব্যাংক। ব্যাংকিং সুবিধা নিয়ে উদ্যোক্তারা বিশেষ করে যুব ও মহিলারাও যেন অর্থনৈতিক উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত হতে পারে। এতে দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতে সুফল বয়ে আনবে। তবে বর্তমানে তারল্য সংকটে থাকা ব্যাংকটিতে ঋণ প্রদান কার্যক্রম স্থবির হয়ে আছে। ব্যাংকটিতে তারল্য সংকট বাড়ছে। ফলে স্বাভাবিক কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য ক্রমেই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে।

সহজ শর্তে ও স্বল্প সুদে ঋণ প্রদানের মাধ্যমে বেকার যুবদের আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে অবদান রাখা লক্ষ্য হলেও তেমন অবদান রাখতে পারেনি ব্যাংকটি।

সূত্র জানায়, আমানতের পরিমাণ কম থাকায় ঋণ প্রদান করা সম্ভব হচ্ছে না। এছাড়া নানা প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ঋণ দেওয়া হতো ব্যাংকটিতে। তবে কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে সরকারের অনুমোদন সাপেক্ষে কোনো দাতা সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান হতে ঋণ অথবা অনুদান গ্রহণ এবং প্রাতিষ্ঠানিক সঞ্চয় সংগ্রহ করছে কর্মসংস্থান ব্যাংক।

 

এদিকে করোনা সময়কালীন দেশের বেকার ও অর্ধবেকারদের আত্মকর্মসংস্থানের জন্য জামানত ছাড়াই ২০ হাজার থেকে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ প্রদানের কর্মসূচি দিয়েছিল কর্মসংস্থান ব্যাংক। তখন এ কর্মসূচি বাস্তবায়নে ৭০০ কোটি টাকা ঋণসুবিধা দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। খবর নিয়ে জানা যায়, কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ৭০০ কোটি টাকার ঋণ সহায়তা পেলেও অর্ধেক টাকাও বিতরণ করেনি ব্যাংকটি। যদিও ব্যাংকটির একটি সূত্র জানায়, ৫৬৮ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। আর ঋণ পেয়েছেন ৩৮ হাজার জন। গড়ে একেকজন ঋণ পেয়েছেন দেড় লাখ টাকার বেশি। মুজিব বর্ষে ঋণ দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছিল ২ লাখ জনকে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কর্মসংস্থান ব্যাংক সৃষ্টির উদ্দেশ্য আজও বাস্তবায়ন হয়নি। নানা সীমাবদ্ধতায় ব্যাংকটি ধুঁকছে। ব্যাংকখাতের চলমান তারল্য সংকটে খাদের কিনারায় পড়তে বসেছে ব্যাংকটি।

 

১৯৯৮ সালে গঠিত হওয়া কর্মসংস্থান ব্যাংকটি ৩৩টি আঞ্চলিক কার্যালয় এবং ২৪টি শাখার মাধ্যমে নানা কর্যক্রম পরিচলানা করছে। ব্যাংকটি গঠনের উদ্দেশ্য ছিল বেকার যুবকদের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত করা, আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টি, কুটির শিল্পে বিনিয়োগে উৎসাহ দেওয়া, দারিদ্র্য বিমোচনে সহায়তা করা। প্রতিষ্ঠার পর থেকে ব্যাংকটি সেই উদ্দেশ্য পূরণে ঋণও দিয়ে যাচ্ছে। তবে যে পরিমাণ ঋণের চাহিদা রয়েছে, সে পরিমাণ ঋণ দেওয়ার সক্ষমতা নেই ব্যাংকটির।
২০২০ সালের এক পরিসংখ্যান অনুযায়ী ব্যাংকটি প্রত্যক্ষভাবে ৬ লাখ ৫৭ হাজার ৮৩০ জন ঋণ গ্রহীতাসহ পরোক্ষভাবে মোট ২৩ লাখ ৭৪ হাজার ৭৬৬ জন লোকের কর্মসংস্থান করেছে। একই সময়ে ব্যাংক ৬৯৬৪.৬৮ কোটি টাকা ঋণ বিতরণের পাশাপাশি ৬১৫০.৪৬ কোটি টাকা ঋণ আদায় করেছে। ব্যাংকের ঋণ আদায় হার ৯৫%।

 

ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর, বিসিক, বিডা, সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনসহ (এসডিএফ) অন্যান্য সরকার অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান থেকে প্রশিক্ষণ থাকতে হবে। ঋণখেলাপিরা ঋণ পাওয়ার যোগ্য হবেন না। একই গ্রাহক বা গ্রুপ একাধিক প্রকল্পে ঋণ পাওয়ার যোগ্য বলেও বিবেচিত হবেন না। তবে ৮ শতাংশ সরল সুদে ঋণ দেওয়া হলেও কিস্তি খেলাপি হলে এই সুদ নেওয়া হবে ১০ শতাংশ হারে।

 

ঋণের ক্ষেত্রে প্রকল্প এলাকায় স্থায়ীভাবে বসবাসকারী এবং যার বাড়িঘর ও জমিজমা আছে ও ঋণ পরিশোধে সক্ষম এমন কেউ জামিনদার হতে পারবেন। আবেদনকারীর পিতা, মাতা, স্বামী, স্ত্রী অথবা তৃতীয় কোনো ব্যক্তিও হতে পারবেন জামিনদার। একটি জেলার কোনো বাসিন্দা ওই জেলার আওতাধীন যেকোনো শাখার উদ্যোক্তার ঋণের বিপরীতে নিশ্চয়তা বা গ্যারান্টি দিতে পারবেন। জামিনদার হতে পারবেন সরকারি, আধা সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ব্যক্তিরাও।

 

কর্মসংস্থান ব্যাংক বেকারত্ব দূরীকরণে উৎপাদনমুখী, সেবা ও ব্যবসায়িক খাতে ঋণ প্রদান করার সুনাম থাকলেও কয়েক বছর ঋণ কার্যক্রমে স্থবিরতা লক্ষ্য করা যায়।
উল্লেখ্য, কর্মসংস্থান ব্যাংক বাংলাদেশের একটি রাষ্ট্রায়ত্ত অ-তফসিলী ব্যাংক। ব্যাংকটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বেকারদের অর্থ সহায়তা দিয়ে ক্ষুদ্র শিল্প গড়ে তুলতে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে। দেশের ক্রমবর্ধমান বেকার যুবক ও যুব মহিলাদের আত্ম-কর্মসংস্থানের মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচনের লক্ষ্যে ঋণ সহায়তা প্রদানের জন্য ১৯৯৮ সালে এ ব্যাংকটি প্রতিষ্ঠিত হয়। কিন্তু নানা প্রতিকূলতায় কাক্সিক্ষত লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছাতে পারছে না ব্যাংকটি।