➤ ইসরায়েলের বিরুদ্ধে দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে যোগ চিলির
➤ জোট সরকার ভাঙার হুমকি ইসরায়েলের দুই মন্ত্রীর
➤ হামাসের অস্ত্রভাণ্ডার দেখে হতবাক ইসরায়েল
গত ৭ অক্টোবর থেকে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় দখলদার ইসরায়েলি বর্বর আগ্রাসন এখনো চলমান। এতে প্রতিনিয়ত বাড়ছে ফিলিস্তিনিদের লাশের মিছিল। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে ইসরায়েলি বর্বর হামলায় আরো প্রায় শতাধিক ফিলিস্তিনি নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গিয়েছে। এতে করে উপত্যকাটিতে নিহতের মোট সংখ্যা পৌঁছেছে প্রায় ৩৬ হাজার ৪০০ জনে। গত প্রায় আট মাস ধরে চলা এই হামলায় আরও ৮২ হাজার ৪০৭ জন মানুষ আহত হয়েছেন। অনেক মানুষ এখনও ধ্বংসস্তূপের নিচে এবং রাস্তায় আটকা পড়ে আছেন এবং উদ্ধারকারীরা তাদের কাছে পৌঁছাতে পারছেন না। মূলত ইসরায়েলি আক্রমণ গাজাকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে। জাতিসংঘের মতে, ইসরায়েলের বর্বর আক্রমণের কারণে গাজার প্রায় ৮৫ শতাংশ ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। এছাড়া অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডের ৬০ শতাংশ অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে।
গত শনিবার জাতিসংঘের শীর্ষ আদালতে দক্ষিণ আফ্রিকা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যে গণহত্যার অভিযোগ এনেছে তাতে যোগ দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন চিলির প্রেসিডেন্ট গ্যাব্রিয়েল বোরিক। গাজার ভয়াবহ মানবিক পরিস্থিতি তুলে ধরে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছ থেকে এ বিষয়ে নিশ্চিত পদক্ষেপের আহ্বান জানিয়ে ন্যাশনাল কংগ্রেসে তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে দক্ষিণ আফ্রিকা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যে মামলা দায়ের করেছে চিলি তাতে সমর্থন দিয়ে কেপটাউনের সঙ্গে যোগ দেবে। জাতিসংঘের এই আদালত গতমাসে গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় রাফা শহরে সামরিক অভিযান বন্ধে ইসরায়েলকে নির্দেশ দিয়েছে। যদিও ইসরায়েল এ নির্দেশ উপেক্ষা করেই রাফায় অভিযান চালিয়ে আসছে।
জোট সরকার ভাঙার হুমকি ইসরায়েলের দুই মন্ত্রীর :
গাজায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে জো বাইডেনের ঘোষিত পরিকল্পনায় ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু রাজি হলে তার মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ ও ক্ষমতাসীন জোট সরকার ভেঙে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন দেশটির কট্টর ডানপন্থি দুজন মন্ত্রী। ইসরায়েলের অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মটরিচ ও জাতীয় নিরাপত্তাবিষয়ক মন্ত্রী ইতামার বেন-গিভির বলেছেন, হামাসকে নির্মূল করার আগে তাদের সঙ্গে কোনো ধরনের চুক্তি সইয়ের বিরোধী তারা। তবে যুদ্ধবিরতির পরিকল্পনায় নেতানিয়াহু রাজি হলে তাঁর সরকারকে সমর্থন দেওয়ার অঙ্গীকার করেছেন বিরোধীদলীয় নেতা ইয়ার লাপিড। গত শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বাইডেন তিন পর্যায়ের যুদ্ধবিরতির পরিকল্পনা ঘোষণা করেন এবং ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের প্রতি তা মেনে নেওয়ার আহ্বান জানান। হামাস এক বিবৃতিতে এ পরিকল্পনাকে ‘ইতিবাচকভাবে’ বিবেচনা করার কথা জানিয়েছে। এর আগে প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু নিজেও হামাসের সামরিক ও গাজা শাসনের সক্ষমতার অবসান না ঘটানো এবং সব জিম্মি মুক্ত না করা পর্যন্ত কোনো স্থায়ী যুদ্ধবিরতিতে না যাওয়ার বিষয়ে জোর দিয়েছেন। ইসরায়েলের পার্লামেন্টে নেতানিয়াহুর জোট সরকারের সামান্য সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে। ক্ষমতায় থাকতে তাঁর সরকারকে বেন-গিভিরের ওটজমা ইয়েহুদিত পার্টি ও স্মটরিচের রিলিজিয়াস জায়োনিজম পার্টির মতো কয়েকটি দলের সঙ্গে জোট করতে হয়েছে। পার্লামেন্টে বেন-গিভিরের দলের আসন ছয়টি ও স্মটরিচের দলের সাতটি।
হামাসের অস্ত্রভাণ্ডার দেখে হতবাক ইসরায়েল :
ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী যোদ্ধাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নেমে যেন ঘুঘুর ফাঁদে পা দিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। অবস্থা এখন এমন যে পিঠ বাঁচাতে যুদ্ধ থামিয়ে দিতে চাইলেও সেই সুযোগ আর নেই। অন্যদিকে হামাসকে হাকলাভাবে নেওয়ার করুণ পরিণতিও ভোগ করতে হচ্ছে ধুঁকেধুঁকে। সম্প্রতি গাজা ও মিসর সীমান্তবর্তী ফিলাডেলফি করিডোরের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর হামাসের একটি অস্ত্রভাণ্ডার দেখে চোখ কপালে উঠেছে ইসরায়েলের। যোদ্ধাদের এমন অস্ত্রভাণ্ডারের সামনে ঠিক কতদিন নিজেদের মনোবল ধরে রাখতে পারবে নেতানিয়াহুর সেনারা তাই এখন বড় প্রশ্ন। ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম জেরুজালেম পোস্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর কর্মকর্তারা মনে করছেন- হামাসের হাতে যে অস্ত্রভাণ্ডার রয়েছে, তা দিয়ে আরও বহু দিন যুদ্ধ করতে পারবে সংগঠনটি। কয়েক দশক ধরে অস্ত্রের বিশাল মজুত গড়ে তুলেছে আল কাসসাম ব্রিগেড। ফলে ফিলাডেলফি করিডোর বন্ধ হলেও, অন্য স্থানে মজুত করা অস্ত্র ব্যবহার করবে হামাস। হামাসের টানেল এবং অস্ত্রের গুদাম এতো বিস্তৃত যে, তা খুঁজে বের করা ইসরায়েলি বাহিনীর দজন্য প্রায় অসম্ভব। ইসরায়েলি বাহিনী হামাসের সবগুলো ব্যাটিলিয়নকে ধ্বংস করার পরও সংগঠনটি আরো মারাত্মক হয়ে উঠার ক্ষমতা রাখে। গাজায় আল কাসসাম ব্রিগেডের প্রতিরোধ হামলাগুলো সেই বাস্তবতার প্রমাণ দেয়।
বন্দি বিনিময় চুক্তি অনুযায়ীই অগ্রসর হবে ইসরায়েল :
ইসরায়েল যুদ্ধ মন্ত্রিসভা কর্তৃক অনুমোদিত বন্দি বিনিময় চুক্তি অনুযায়ীই অগ্রসর হবে বলে জানিয়েছেন দেশটির যুদ্ধ মন্ত্রিপরিষদের সদস্য বেনি গ্যান্টজ। তিনি বলেন, সরকার বন্দি বিনিময় চুক্তির বিস্তৃত রূপরেখার প্রতি সমর্থন অব্যাহত রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। রূপরেখাটি আলোচনাকারী দল প্রণয়ন করছে এবং যুদ্ধ মন্ত্রিসভাও সর্বসম্মতভাবে অনুমোদিত হয়েছে। বন্দি বিনিময় চুক্তির এই রূপরেখা যুদ্ধের সব উদ্দেশ্য অর্জনের বৃহত্তর প্রচেষ্টার অংশ। পরবর্তী পদক্ষেপ নির্ধারণের জন্য আলোচনাকারী দলের সাথে যত দ্রুত সম্ভব, বৈঠকে বসবে যুদ্ধ মন্ত্রিসভা। যুক্তরাষ্ট্র সময়ের সাথে সাথে ধারাবাহিকভাবে ইসরায়েলের নিরাপত্তার প্রতি তার প্রতিশ্রুতির প্রমাণ দিয়েছে। তারা ইসরায়েলি বন্দিদের ফিরিয়ে আনার প্রতি আন্তরিকতা প্রকাশ করেছে। আমরা মার্কিন প্রেসিডেন্ট এবং সব মার্কিনি বন্ধুদের প্রতি গভীরভাবে কৃতজ্ঞ।


























