লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর উপ-প্রধান শেখ নাঈম কাসেম বলেছেন, হিজবুল্লাহ অভিযানের পরিধি না বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে তাদের বাধ্য করা হলে তারা তা (পরিধি বাড়াতে) করতে প্রস্তুত। তারা ‘যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত এবং ইসরায়েলকে কোনো বিজয় নিশ্চিত করতে দেবে না। লেবাননের বিরুদ্ধে ইসরায়েল যেকোনো সম্প্রসারণ করলে ইসরায়েল ধ্বংসযজ্ঞ ও বাস্তুচ্যুতির সম্মুখীন হবে। ইসরায়েল যদি সর্বাত্মক যুদ্ধ করতে চায় তাহলে আমরা তার জন্য প্রস্তুত।
এক্স-এ প্রকাশিত একটি ভিডিওতে লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর সঙ্গে যুদ্ধের আহ্বান জানিয়ে ইসরায়েলের কট্টর ডানপন্থি নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন-গভির বলেন, হিজবুল্লাহর সব শক্ত ঘাঁটি পুড়িয়ে ধ্বংস করতে হবে। যুদ্ধ! লেবাননে শান্তি বিরাজ করার সময় ইসরায়েলের কিছু অংশে হামলা এবং লোকজনকে সরিয়ে নেওয়া অগ্রহণযোগ্য। বিশেষ করে দক্ষিণ লেবানন থেকে আসা গোলাবর্ষণে শহরটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গত বছরের ৭ অক্টোবর গাজায় ইসরায়েলের হামলা শুরুর পর থেকে ফিলিস্তিনের সমর্থনে ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলে কয়েক হাজার ড্রোন, ক্ষেপণাস্ত্র ও রকেট হামলা চালিয়েছে হিজবুল্লাহ।
ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিতে স্লোভেনিয়ার পার্লামেন্টে বিল পাস:
রাষ্ট্র হিসেবে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিতে ইউরোপের দেশ স্লোভেনিয়ার পার্লামেন্টে একটি বিল পাস হয়েছে। গত মঙ্গলবার এ বিল পাস হয়। গত সপ্তাহে ইউরোপের তিন দেশ স্পেন, নরওয়ে ও আয়ারল্যান্ড রাষ্ট্র হিসেবে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার পর একই উদ্যোগ নেয় স্লোভেনিয়া সরকার। এরই ধারাবাহিকতায় এবার দেশটির পার্লামেন্টে বিল পাস হয়েছে। সরকার-সমর্থিত বিলের পক্ষে স্লোভেনিয়ার পার্লামেন্টের ৯০ সদস্যের মধ্যে ৫১ জন ভোট দেন। এর আগে ঘণ্টা ছয়েক বিলটি নিয়ে পার্লামেন্টে বিতর্ক হয়। এ সময় দেশটির বিরোধী দলের সংসদ সদস্যরা ভোটাভুটি বর্জন করেন। তাঁদের মধ্যে একজন ভোটাভুটির সময় উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু ভোট দেননি। ফিলিস্তিনের স্বীকৃতির বিষয়ে গণভোট আয়োজনের দাবি তুলেছিলেন বিরোধীরা। তবে বিলের পক্ষে ভোট দেওয়া ৫২ সংসদ সদস্য সেই প্রস্তাব খারিজ করে দিয়েছেন। ভোটাভুটির পর স্লোভেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী রবার্ট গোলব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে একটি পোস্ট দেন। এতে তিনি লিখেন, আজ ফিলিস্তিনকে স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার এই উদ্যোগ পশ্চিম তীর আর গাজায় বসবাসকারী ফিলিস্তিনিদের কাছে আশার বার্তা পৌছে দেবে।
এবার আইসিসিকে শায়েস্তা করতে যুক্তরাষ্ট্রে বিল পাস:
গাজায় গণহত্যা নিয়ে দখলদার ইসরায়েলকে কাঠগড়ায় তুলেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি)। এতে ক্ষুদ্ধ হয়ে আইসিসির বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নিতে বিল পাস করেছে মার্কিন আইনসভার নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদ। প্রতিনিধি পরিষদের সংখ্যাগরিষ্ঠ দল রিপাবলিকানদের সঙ্গে ৪২ জন ডেমোক্রেটও আইসিসির বিরুদ্ধে বিল পাসের পক্ষে ভোট দেন। যার ফলে সবমিলিয়ে ভোটাভুটিতে বিল পাস হয় ২৪৭ ভোটে। বিলের বিপক্ষে ভোট পড়েছিল ১৫৫টি। বিলটি এখন অনুমোদনের জন্য সিনেটে তোলা হবে। সেখানে বিলটি আইনে পরিণত হলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইসরাইলের বিরুদ্ধে বিচারকাজের সঙ্গে যুক্ত আইসিসির কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নিতে পারবেন। যদিও ধারণা করা হচ্ছে, এই বিলটি আইনে পরিণত হবে না। তবে যদি আইনে পরিণত না-ও হয়, তবু ইসরাইলের প্রতি মার্কিন কংগ্রেসের ‘অকুণ্ঠ’ সমর্থনের আরেকটি দলিল হয়ে থাকবে এই বিল। সপ্তাহখানেক আগে আইসিসির প্রধান কৌঁসুলি করিম খান ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু এবং দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রীর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানার জন্য আদালতের কাছে আবেদন করেন। সে সিদ্ধান্তে ক্ষুদ্ধ হয়েই আইসিসির বিরুদ্ধে বিল পাস করতে উদ্যত হয়েছে প্রতিনিধি পরিষদ।
ইসরায়েলকে আরো অস্ত্র দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র:
ইসরায়েল লকহিড মার্টিন দ্বারা নির্মিত ২৫টি উন্নত এফ-৩৫ স্টিলথ ফাইটার জেটের তৃতীয় স্কোয়াড্রন কেনার জন্য তিন বিলিয়ন ডলারের একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এটি ২০২৮ সালে হাতে পাবে ইসরায়েল। গত মঙ্গলবার চুক্তি ঘোষণা করে এক বিবৃতিতে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট বলেন, এমন সময় যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল এই চুক্তি স্বাক্ষর করেছে যখন আমাদের কিছু প্রতিপক্ষ আমাদের সবচেয়ে বড় মিত্রের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ককে দুর্বল করার লক্ষ্যে অনেক চেষ্টা করেছে। আমরা কেবল আমাদের সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করেছি। এই চুক্তির ফলে বিশ্বে আমাদের শত্রুদের কাছে একটি সতর্ক বার্তা। এই চুক্তির ফলে ইসরায়েলের অস্ত্রবহরে এফ-৩৫-এর সংখ্যা দাঁড়াবে ৭৫টিতে। আইডিএফকে বিমান সরবরাহ করা শুরু হবে ২০২৮ সালে। প্রতি বছর তিন থেকে পাঁচটি বিমান দেবে যুক্তরাষ্ট্র।
রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলে যুদ্ধ প্রলম্বিত করছেন নেতানিয়াহু :
গত মঙ্গলবার প্রকাশিত ব্রিটিশ সাময়িকী টাইমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বাইডেন বলেছেন, এটি মনে করার ‘যৌক্তিক কারণ’ আছে যে, ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলে গাজায় যুদ্ধ টেনে নিয়ে যাচ্ছেন। মূলত তিনি নিজের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার বাঁচানোর লক্ষ্যে এমনটা করছেন। যুদ্ধ-পরবর্তী গাজার ভবিষ্যৎ কী হবে, সে বিষয়ে নেতানিয়াহুর সঙ্গে তার ‘বড় ধরনের মতানৈক্য’ আছে। লোকজনের কাছে এমন উপসংহারে পৌঁছানোর মতো যথেষ্ট কারণ আছে। ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের সৃষ্টি নিয়ে তার এবং নেতানিয়াহুর মধ্যে বড় ধরনে মতানৈক্য আছে। নেতানিয়াহুর সঙ্গে আমার প্রধান মতবিরোধ হলো, গাজা (যুদ্ধ) শেষ হওয়ার পরে কী হবে? ইসরায়েলি বাহিনী কী ঘরে ফিরে যাবে?
গাজা ইস্যুতে বিশ্বমানবতা ব্যর্থ হয়েছে :
গত মঙ্গলবার আগ্রাসনের শিকার নিরীহ শিশুদের আন্তর্জাতিক দিবসে গাজায় ঝুঁকিতে থাকা শিশুদের রক্ষা করতে জাতিসংঘকে কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে আহ্বান জানিয়ে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান বলেছেন, গাজা উপত্যকায় ইসরায়েল শুধু শিশুহত্যাই করছে না, তারা মানবতাকেও ছিন্নভিন্ন করছে। গাজা ইস্যুতে বিশ্বমানবতা ব্যর্থ হয়েছে। মাসের পর মাস গাজায় নিরীহ শিশুদের গণহত্যা চালানো হচ্ছে, এর বিরুদ্ধে জাতিসংঘকে কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে আহ্বান জানাই। বিশ্ব কিন্তু পাঁচের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। আগ্রাসনের শিকার নিরীহ শিশুদের আন্তর্জাতিক দিবসে আমি দুঃখভারাক্রান্ত হৃদয়ে স্মরণ করছি, ৭ অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত গাজায় প্রাণ হারানো সে ১৫ হাজার শিশুর কথা, যাদের বর্বরভাবে হত্যা করা হয়েছে। গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন ইস্যুতে বিশ্বমানবতা ব্যর্থ হয়েছে, গাজায় শুধু শিশুদেরই নয়, মানবতাকেও হত্যা করা হয়েছে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে বিশ্ব এই পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়েছে।


























